Ragging To Loving 2পর্ব-৮

0
2950

#Ragging_To_Loving__2
#পর্বঃ- ৮
#রিধিরা_নূর

নূর বাসের দিকে এগিয়ে গিয়ে দেখে বাস ছেড়ে দিয়েছে। দৌড়ে বাসের কাছে পৌঁছানোর পূর্বেই বাস ধরা ছোঁয়ার বাইরে চলে গেল। নূর দৌড়াতে দৌড়াতে বাসের পিছনে গেল।

নূর — আব্বে বাস থাম। থাম আমি রয়ে গিয়েছি। আরে….

কিন্তু ফলাফল শূন্য। চিৎকার করে বাস থামানোর চেষ্টা করছে কিন্তু তার পূর্বেই বাস অনেক দূর অতিক্রম করেছে। নূর হাটু চেপে ধরে নিশ্বাস নিচ্ছে। পিছন থেকে একজন ভদ্রলোক তাকে বলল।

লোকটা — জি বলুন কি বলবেন?

নূর — আমি কি বলব? (অবাক হয়ে)

লোকটা — আমি কি জানি আপনি কি বলবেন? আপনি তো বললেন আমাকে থামতে। আব্বাস থাম। আমি আব্বাস। এবার বলুন কি বলবেন।

নূর — আরে। আমি আব্বাস থাম বলিনি। আব্বে বাস থাম বলেছি। আমাকে রেখেই বাস চলে গেল।

লোকটা — ওহহহ।

নূর — কি ওহ। এদিকে বাস ছেড়ে দিয়েছে আমি বাসায় যাব কি করে? আমার সাথীরা, ব্যাগ, ফোন সব বাসে রয়ে গেল। এখন বাসে উঠব কি করে।

লোকটা — ওহহ। এই বাস প্রতি বাসস্ট্যান্ডে ১০ মিনিটের জন্য থামে। এখান থেকে পরবর্তী বাসস্ট্যান্ডে পৌঁছাতে ত্রিশ মিনিট লাগবে। এই সময়ের মাঝে যদি সেখানে পৌঁছাতে পারেন তাহলে বাস পেয়ে যাবেন।

নূর — অসংখ্য ধন্যবাদ আপনাকে।

নূর আশেপাশে যানবাহন খুঁজছে বাসস্ট্যান্ডে পৌঁছানোর জন্য। কিন্তু তাজ্জব ব্যাপার কোন গাড়ি নেই আশেপাশে। একটু আগেই তো দুটো খালি রিকশা ছিল। এখন একটাও নেই। কপালে হাত দিয়ে দুশ্চিন্তায় পড়ে গেল। এখন এখানে দাঁড়িয়ে সময় নষ্ট করলে পরবর্তী বাসস্ট্যান্ডেও পৌঁছাতে পারবে না। তাই থেমে না থেকে চলতে শুরু করল গন্তব্যের দিকে। অনেক পথ হেটেও একটা বাহন পেল না। লিফট নেওয়ার জন্যও অনেক চেষ্টা করল কিন্তু কেউ সাহায্য করল না। নূর প্রায় কেঁদে দেওয়ার মতো অবস্থা। পরিশেষে কেঁদেই দিল। নিরাশার অন্ধকারে আশার কিরণ হয়ে এলো আফরান। বাবার কাজ সেরে ঢাকা থেকে চট্টগ্রাম ফিরছে। দূর থেকে একটি কালো রঙের গাড়ি দেখতে পেল নূর।

নূর — নূর কিছু একটা কর। কোন একটা খুরাফাতি আইডিয়া বের কর।

প্রতি মূহুর্তে গাড়িটি সামনে আসতে লাগলো। আফরান আপন গতিতে ড্রাইভ করছে। মিউজিক শো এর জন্য গান অনুশীলন করছে। মনে মনে গান গুনগুন করছে। আচমকা এক ছায়া গাড়ির সামনে এসে দাঁড়ালো। আফরান তড়িঘড়ি ব্রেক কষলো। দ্রুত গাড়ি থেকে নেমে দেখল কারো আঘাত লাগেনি তো! চোখ মুখ কুঁচকে স্থির হয়ে দাঁড়িয়ে আছে এক তরূণী। উজ্জ্বল শ্যামলা গায়ের বর্ণ, সাদা রঙের গোল জামা পরিধান করায় তার স্নিগ্ধ রূপ ফুটে উঠেছে। মূহুর্তেই যেন আফরানের ধ্যান ভাঙল। রেগে তাকে কিছু বলতে যাবে হঠাৎ তার চোখ পড়ল মেয়েটির উপর। দেখে মনে হচ্ছে অন্তঃসত্ত্বা। আফরানের রাগ নিমিষেই সহানুভূতিতে পরিণত হলো।

আফরান — আপনি ঠিক আছেন তো? কোথাও লাগেনি তো আপনার? (চিন্তিত হয়ে)

নূর — (উপর আকাশের দিকে তাকিয়ে মনে মনে বলতে লাগলো। সরি। এতো বড় একটা মিথ্যা বলতে যাচ্ছি। কি করব বলুন এই বিপদে পড়েছি সাহায্য তো প্রয়োজন। গাড়ি চাইলাম পেলাম না। লিফট চাইলাম তাও পেলাম না। তাই এই নাটক করতে হচ্ছে। ক্ষমা কর আমায়।)

আফরান — কোন ভাবনায় পড়লেন? বলুন।

নূর — (লাইট ক্যামেরা একশন) ভ্যায়ায়া। ভ্যায়ায়া।

আফরান — আরে কি হয়েছে কাঁদছেন কেন? কোথায় লেগেছে আপনার?

নূর — আসলে আমি ঢাকা থেকে বাড়ি ফিরছিলাম। ভুলক্রমে বাস মিস করে ফেলি। আমার ব্যাগ, ফোন সব বাসে আমার সঙ্গীর সাথে। সেও জানে না আমি বাসে নেই। এখন আমার পরবর্তী বাসস্ট্যান্ডে পৌঁছাতে হবে বিশ মিনিটের মধ্যে। নাহলে অনেক বড় সমস্যা হতে পারে। আর দেখুন কি নিষ্ঠুর এই দুনিয়া। কবে থেকে রাস্তায় চলছি কেউ আমাদের লিফট দিল না।

আফরান — আমাদের? আর কে আছে আপনার সঙ্গে?

নূর — আমি এবং আমার পুচ্চু পুচ্চি। (পেট দেখিয়ে)

আফরান — পুচ্চু পুচ্চি! এই কেমন নাম!

নূর — (এ কেমন নাম। যেন ইনার বাচ্চার নাম রাখছি। নাম নিয়ে পড়ে আছে কেন? এদিকে আমার দেরি হয়ে যাচ্ছে।) আমার বাচ্চার নাম আমি রাখব। এখন বলুন আমাকে বাসস্ট্যান্ডে পৌঁছে দিবেন কিনা।

আফরান — ঠিক আছে চলুন।

আফরানের বলা দেরি নূর এক দৌড়ে গাড়িতে বসে পড়ল। আফরান অবাক হয়ে দেখছে একজন অন্তঃসত্ত্বা নারী এভাবে দৌড়াচ্ছে। বিস্মিত হয়ে বসে পড়ল ড্রাইভিং সিটে। তার পাশে বসা নূর৷ আফরান আড়চোখে নূরকে দেখছে। অদ্ভুতভাবে পেট চেপে ধরে আছে। আফরান কিছু বলতে চাইছে কিন্তু দ্বিধায় কিছু বলতে পারছে না। আফরান ধীর গতিতে গাড়ি চালায় নূর মনে মনে তাকে এক গাদা কথা শোনালো। দেরি হচ্ছে বলে দ্রুত চালাতে বলল। এবার বাঁধল আরেক বিপত্তি। মাঝপথেই ট্রাফিক সিগনাল। ফাঁটা কপাল তাদের গাড়ি অতিক্রম করার পূর্বেই পড়ল রেড সিগনাল। এদিকে নূরের রাগ দেখে কে। নূর উপরের দিকে তাকিয়ে মনে মনে বলল, “আবারও সরি। আজ একটি ভালো করতে গিয়ে না জানি কয়টা খারাপ কাজ করতে হয়। প্রথমে এসব নাটক করতে হলো, মিথ্যা বলতে হলো। তার জন্য ভীষণ অপরাধবোধ করছি। কিন্তু কি করব বলেন। না চাইতেও এসব করতে হচ্ছে। আর এখন আরেকটি অপরাধ করতে যাচ্ছি তার জন্য অগ্রীম দুঃখিত।” নূরকে এমন ঠোঁট নেড়ে বিড়বিড় করতে দেখে আফরান ভ্রু কুচকে তাকাল।

নূর — গাড়ি স্টার্ট করেন।

আফরান — রেড সিগনাল পড়েছে। কিছুক্ষণ অপেক্ষা করতে হবে।

নূর — সময় তো নেই। আবারও বাস ছুটে যাবে। আপনি গাড়ি চালু করেন।

আফরান — এটা আইনগত অপরাধ। ট্রাফিক আইন না মানার কারণে দৈনিক কত রোড এক্সিডেন্ট হয় জানেন?

নূর — আপনার ট্রাফিক আইনের গোষ্ঠী কিলাই।
(বলে গাড়ি স্টার্ট করে স্টেয়ারিং ঘুরালো। আফরান তাল সামলাতে না পেরে দ্রুত গাড়ি সামাল দিল। অন্যদিকে ট্রাফিক পুলিশ বাঁশি বাজিয়ে তাদের থামতে বলছে। আফরান রাগী দৃষ্টিতে তাকাল নূরের দিকে।)
দেখুন এখন যা হওয়ার হয়ে গিয়েছে। এখন প্লিজ দ্রুত চালান।

আফরান — আপনাকে সাহায্য করতে গিয়ে এখন আমি নিজেই বিপদে পড়লাম। আপনি তো চলে যাবেন বাসে করে এদিকে পুলিশ আমার গাড়ির নাম্বার নোট করে আমার পিছনে লাগবে। আপনার জন্য….. (রেগে স্টেয়ারিং-এ আঘাত করল)

নূরের মুখখানা মলিন হয়ে গেল। আসলে সে এতো সাতপাঁচ ভাবেনি। এটা তার বড় সমস্যা। ভেবে চিন্তে কিছু করে না। হুটহাট করে ঝামেলা বাঁধিয়ে বসে। পরে নিজেই অপরাধবোধ করে। এখনও অপরাধবোধ তাকে গ্রাস করে আছে। নূর ভাবলো তাকে সত্যটা বলে দিবে। যেই না বলার জন্য মুখ খুলল একটি বাইক ফুল স্পীডে এসে তাদের গাড়ির সামনে থামলো। আফরান দ্রুত ব্রেক কষলো। বাইক থেকে নেমে এলেন দুইজন পুলিশ। নূর আফরান দুজনেই একে অপরের দিকে তাকিয়ে ভয়ে ঢোক গিলল। আফরান সিট বেল্ট খুলে বাইরে বের হলো। পুলিশ অফিসার কাছে আসতেই নূর চিৎকার করতে লাগলো। আফরান চমকে উঠে দৌড়ে নূরের কাছে গেল।

আফরান — কি হয়েছে আপনার? (নূর চোখ টিপি দিতেই আফরান চমকে উঠল। চোখ দুটো বড় বড় করে তাকিয়ে আছে নূরের দিকে।)

নূর — ও গো পুচ্চু পুচ্চির আব্বা তোমার পুচ্চু পুচ্চি তো আইসা পড়তাছে। তাড়াতাড়ি চল হাসপাতালে। পেটের ভেতর ধুম ধাড়াম করতাছে। জলদি চল।

১ম পুলিশ অফিসার — ট্রাফিক আইন ভাঙার কারণে আপনার উপর জরিমানা চার্জ করা হয়েছে।

নূর — আরে মিয়া রাখেন আপনার জরিমানা। এদিকে আমার জরিমানা বাইর হইতা যাইতাছে। আমার পুচ্চু পুচ্চি।

২য় পুলিশ অফিসার — পুচ্চু পুচ্চি কে?

নূর — টুনটুনি বেগম আর ধলা মিয়ার পোলা মাইয়া।

২য় পুলিশ অফিসার — এখন আবার এই টুনটুনি বেগম আর ধলা মিয়া কে?

নূর — আরে আমি টুনটুনি বেগম। আর আমার ইনি (আফরানের দিকে ইশারা করে) হলেন ধলা মিয়া। দেখেন না মুলার মতো ধলা। আর এই যে এদিকে (পেট দেখিয়ে) এই হলো আমার পুচ্চু পুচ্চি। ও গো পুচ্চু পুচ্চির আব্বা খাড়াই আছো কেন জলদি চল।

১ম পুলিশ অফিসার — ওহ এই জন্য বুঝি সিগনাল ভেঙে ছিলেন। আজকের মতো যেতে দিলাম পরবর্তীতে কিন্তু কঠিন শাস্তি হতে পারে। (তারা চলে গেলেন)

আফরান বেচারা শকড খেয়ে স্থির দাঁড়িয়ে আছে। প্রথমত নূরের চোখ টিপি দেওয়ায় অবাক হলো, দ্বিতীয়ত তাকে পুচ্চু পুচ্চির আব্বা বলে সম্বোধন করায় খেল ঝাটকা, তৃতীয়ত তাকে নাম দিল ধলা মিয়া। তার মাথার উপর যেন ঠাডা পরল। এরপর পুলিশ অফিসারের সাথে এমন ভাষায় কথা বলায় এক্কেবারে ডিপ্রেশনে চলে গেল। নূর আফরানের হাত ধরে নাড়া দেওয়ায় তার ধ্যান ভাঙল। চোখ দুটো রসগোল্লার মতো বড় বড় করে তাকিয়ে আছে নূরের দিকে। নূর একেবারে নিষ্পাপ চেহারা বানিয়ে আফরানের দিকে তাকিয়ে আছে। যেন সে ধোয়া তুলসীপাতা। কিছুই জানে না। শ্যাম বর্ণ মসৃণ চেহারায় এমন মায়াভরা চেহারা বানিয়ে রাখায় আফরানের বুকের ভেতর ধুকপুক করে উঠল। ভীষণ মায়া হলো নূরের এমন নিষ্পাপ চেহারার উপর। কিছু একটা যেন আফরানকে তার কাছে টানছিল। আচমকা ধ্যান ভাঙতেই আফরান নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করে নিল। দ্রুত ড্রাইভিং সিটে বসে গাড়ি স্টার্ট করল। কোন সাড়াশব্দ ছাড়া এক নিষ্ঠায়, এক ধ্যানে ড্রাইভ করছে। নূর চোখ পিটপিট করে তাকাল আফরানের দিকে। আফরান অপলক দৃষ্টিতে সামনে তাকিয়ে ড্রাইভ করছে।

নূর — ও… আসলে… আমি… (আমতাআমতা করছে। গভীর এক নিশ্বাস নিয়ে অনবরত বলে উঠল) আসলে আমি দুঃখিত। আমি এসব কিছুই করতে চাইনি। বাসে আমার সঙ্গীরা কেউ জানে না আমি বাসে নেই। তাই তারা বাস থামাবে না। আর বাস শুধু দশ মিনিটের জন্যই বাসস্ট্যান্ডে থামবে। এরপর বাসে পৌঁছাতে পারব কি না জানি না। তাই যে করেই হোক পরবর্তী বাসস্ট্যান্ডেই আমাকে বাসে উঠতে হবে। তাই না চাওয়া স্বত্তেও আমার এসব করতে হলো। আই এম এক্সট্রিমলি সরি। (এক নিশ্বাসেই সব বলল)

আফরান — হুম। (আফরান এখনও শকডে আছে।)

নূর চেহারা মলিন করে জানালার বাইরে তাকিয়ে আছে। জানালার কাচ নামাতেই শীতল হাওয়ায় চুল এলোমেলো হয়ে উড়ছে। এক মিষ্টি ঘ্রাণ আফরানের নাকে লাগতেই শুরু হলো হাঁচি।

.
.
.

চলবে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here