THE BOOK পর্ব-২৪

0
1920

#THE_BOOK

#পর্ব_২৪

#Ishita_Rahman_Sanjida(Simran)

নূরজাহানের স্থির লাশ পড়ে আছে অভিনবের পায়ের কাছে। অভিনব স্থির হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। লাবন্য পূর্ণাশাও একইভাবে দাঁড়িয়ে আছে। ওরা চায়নি নূরকে মারতে কিন্তু এতো দূর পর্যন্ত এসে কিভাবে থেমে যাবে ওরা??যেখানে রা’দের কারণেই লাবন্য অভিনব বেঁচে আছে সেখানে রা’দকে কিভাবে মৃত্যুর মুখে ঠেলে দেবে ওরা??লাবন্য আর পূর্ণাশার চোখে পানি চিকচিক করছে। রা’দ এসে এসব দেখলে কি হবে?? কেমন রিয়েক্ট করবে সে??
অভিনব জোরে শ্বাস টেনে বলল,”অবশেষে শেষ হলো ‘THE BOOK’ এর আত্মকাহিনী। আর কোন প্রাণহানি হবে না এর জন্য। এই বইয়ের সব আত্মাদের মুক্তি হয়েছে।”

“নূরজাহান,,,,,,!!!”

রা’দের গলার আওয়াজ শুনে ওরা তিনজনে চকিতে পিছন ফিরে তাকালো। রা’দ স্থির দৃষ্টিতে নূরের দিকে তাকিয়ে আছে। হাতে থাকা লতাপাতা গাছের শিকড় মাটিতে পড়ে গেল। নূরকে এই অবস্থায় দেখে ওর দম বন্ধ হয়ে আসছে। রা’দ দৌড়ে নূরের কাছে যেতে নিলে অভিনব ওকে জাপটে ধরে। রা’দ চিৎকার করে বলতে লাগলো,”নূরজাহান আপনার কি হয়েছে??এতো রক্ত কিসের নূর?? নূর আপনি উঠুন আমি এসে গেছি!!নূর,,,,।”
অভিনব রা’দকে ঝাড়ি মেরে বলল,”চুপ কর রা’দ। চল আমাদের সাথে।”

“নাহ, নূরের কি হয়েছে?? তোরা কি করেছিস বল?? নূর আমি এসে গেছি। আপনি তো বলেছিলেন আমার জন্য অপেক্ষা করবেন। তাহলে চুপ করে আছেন কেন??নূর উঠুন।”

অভিনব পূর্ণাশা লাবন্য মিলে রা’দকে টেনে বাইরে নিয়ে আসে। রা’দ ছোটাছুটি করতেছে। শেষবারের মতো ওর নূরকে ছুঁয়ে দেখতেও পারলো না। রা’দ চিৎকার করে নূরকে ডাকছে। অভিনব উপায় না পেয়ে রা’দের গালে চড় বসিয়ে দিল। অভিনবের কান্ডে লাবন্য পূর্ণাশা চমকে উঠে। রা’দ মাটিতে ধপ করে বসে পড়লো। চোখ থেকে অঝোর ধারায় পানি পড়তেছে তাঁর। অভিনব হাঁটু গেড়ে রা’দের সামনে বসে রা’দের দুই বাহু ধরে বলতে লাগলো,”ভালো করে চারিদিকে তাকিয়ে দেখ তুই কোথায় আছিস?? এইটা অতোটা গভীর জঙ্গল নয়। কিছুদূর গেলেই মেইন রোড। আর একটু আগে বলছিলি না যে ঝড় বৃষ্টি হচ্ছে?? ভালো করে তাকিয়ে দেখ এখানে কোন ঝড় বৃষ্টি হচ্ছে না।”

রা’দ অশ্রুসিক্ত নয়নে চারিদিকে তাকালো। তারপর বলল,”কিন্তু একটু আগেই তো ঝড় বৃষ্টি হচ্ছিল। আমিও তো ভিজে গেছি এইতো আমার শার্ট,,,”
রা’দ নিজের শার্টের দিকে তাকালো। আশ্চর্য শার্ট তো শুকনো। কিন্তু একটু আগেই তো রা’দ বৃষ্টি তে ভিজে ফিরলো। রা’দ উঠে দাঁড়িয়ে চারিদিকে তাকালো। এখানে থাকা বাড়িটাও উধাও। রা’দ অবাক হয়ে বলল,”বাড়িটা কোথায় গেল?? এখানেই তো ছিলো!!আর নূরজাহান??”
লাবন্য এগিয়ে এসে বলল,”এটা একটা ট্রাপ ছিল রা’দ। তুই বুঝতেই পারিসনি।”

“ট্রাপ?? কিসের??”
লাবন্য আবার বলল,”দ্যা বুক এর ট্রাপ। তোর গল্প চলছিলো এতক্ষণ রা’দ তুই সেটা বুঝতেই পারিসনি। আমরা ঠিক সময়ে না পৌঁছালে তোকে নূরজাহান নামের মেয়েটা মেরে ফেলতো।”

“কি আজে বাজে বকছিস তোরা?? আমার কিছু বিশ্বাস হচ্ছে না।”

অভিনব বলল,”আমি যেমন জলকন্যা রায়ার কথা বিশ্বাস করিনি তাই তুই ও করছিস না।এটাই স্বাভাবিক কিন্তু সবটা তোকে এখন বুঝতে হবে।”

রা’দ এবার ভাবনায় পড়ে গেল বলল,”কি হয়েছে একটু ক্লিয়ারলি বলবি??”
পূর্ণাশা এগিয়ে এসে বলল,”সে অনেক কথা রা’দ আগে তুই ফিরে চল। তবে একটা কথা জেনে রাখ যে নূরজাহান তোর গল্প হয়ে এসেছিল। আর এখন সে মুক্তি পেয়েছে তাই চলে গিয়েছে।”

“কিন্তু তুই বাচলি কিভাবে?? তোদের তো ওই ভাম্পায়ারটা ধরে নিয়ে গিয়েছিল।”
অভিনব রা’দের কাঁধে হাত রেখে বলল,”আগে বাড়িতে ফিরে চল। তোর বাবা মা তোকে এই তিনদিন না পেয়ে চিন্তা করছে খুব। বাড়িতে গিয়ে সবটা বলব।”

রা’দ আর কথা না বলে ওদের সাথে হাঁটতে লাগলো। যাওয়ার আগে একবার পিছন ফিরে তাকালো। এখানে তো নূরজাহানের বাড়িটা ছিলো কিন্তু কোথায় গেল??আর ওই ঘোড়াটা আর ময়ূরটা কোথায় গেল??রা’দের চোখ গেল নিজের পায়ের দিকে। ওর জুতোর সাথে ময়ূরের পালক লেগে রয়েছে। রা’দ ঝুঁকে পালকটা হাতে নিলো। চেয়ে রইল পালকের দিকে। এই পালকে তো নূরের ছোঁয়া আছে তাই সে পালকটা সাথে করে নিয়ে গেল। হয়তো নূরজাহান তার শেষ স্মৃতি রা’দকে দিতে চেয়েছিলো তাই পালকটা রা’দ পেয়েছে।

কিছুদূর জঙ্গলের পথ পাড়ি দিয়ে মেইন রোড এ পৌঁছে গেল ওরা। অভিনব গাড়ি নিয়েই এসেছিলো। গাড়িতে চেপে বসে সবাই আর অভিনব গাড়ি স্টার্ট দিলো। রা’দ একধ্যানে জঙ্গলের দিকে তাকিয়ে রইল। ভাবলো এই বুঝি নূরকে দেখতে পাবে। কিন্তু না,সে তো চলেই গেছে আর কখনো ফিরে আসবে না।

বাড়িতে আসতেই রা’দের মা রা’দকে ধরে কান্না করে দিলেন। রাইসা এসেও ভাইয়াকে দেখে কাঁদতে লাগলো। ওদের কান্না দেখে রা’দ প্রচন্ড বিরক্ত হয়ে গেলো। দু’জনকে ছাড়িয়ে রুমে গিয়ে দরজা বন্ধ করে দিলো। রা’দের মা অবাক হয়ে গেল। তার ছেলে তো কখনো তার সাথে এমন ব্যবহার করে না তাহলে??অভিনব রা’দের মা’কে শান্তনা দিয়ে বলল,”আন্টি ওর মাথাটা একটু গরম আছে। একটু পর ঠিক হয়ে যাবে। আপনি চিন্তা করবেন না। আজকে আমরা আসি কালকে আবার আসবো।”
অভিনব লাবন্য পূর্ণাশা চলে যায়। রা’দের মা চিল্লিয়ে বলতে লাগলো,”এবার তোর কোন কথা শুনব না। জাবিনকে তোকে বিয়ে করতেই হবে। কত সুন্দর শান্তশিষ্ট মেয়ে!!তাও নাকি ওর পছন্দ হয় না। হয় তুই জাবিনকে বিয়ে করবি না হয় আমি বিষ খাবো।”

বলতে বলতে তিনি আঁচলে মুখ গুজে কাঁদতে কাঁদতে চলে গেলেন। রা’দ শাওয়ারের নিচে দাঁড়িয়ে আছে। পানিধারা ওর শরীর বেয়ে পড়ছে। মনে হচ্ছে এটা কোন ঝর্ণা। রা’দ চোখ বন্ধ করে ঠান্ডা পানি উপভোগ করতেছে। চোখ বন্ধ করতেই নূরের মুখখানি ভেসে উঠলো তার সামনে। সাথে সাথে চোখ খুলে ফেলে রা’দ। নূরের জন্য ভিশন কষ্ট হচ্ছে রা’দের। এবার সে ঠিকই বুঝতে পারছে যে ভালোবাসার মানুষকে সহজে ভোলা যায় না। ভালোবাসার মানুষ কে হারানোর যন্ত্রণাটা আজ সে হারে হারে টের পাচ্ছে। যেমনটা অভিনব আর লাবন্য পাচ্ছে। রা’দ নিজের চোখে দেখেছিলো জলকন্যার জন্য অভিনব কতটা পাগল হয়ে গিয়েছিল। অবশ্য এখনো আছে তবে আগের মতো ভায়োলেন্স হয় না অভিনব। কষ্ট বুকের ভেতর চেপে রাখা যে কতটা ব্যথাতুর তা এখন রা’দ বুঝতে পারছে।

নূর এসেছিল ক্ষণিকের জন্য তাই চলে গেছে। কিন্তু রা’দের মন থেকে কি আদৌ যেতে পারবে?? এতদিন স্বপ্নে এসে রা’দকে তার প্রেমে পড়তে বাধ্য করেছে। তারপর ক্ষণিকের দেখা দিয়ে দূর অজানায় চলে গেছে। রা’দ এসব মানতে পারছে না। শাওয়ার শেষ করে বাইরে আসে রা’দ। সারাদিন রেস্ট নিলো। বিকেলে কাউকে কিছু না চুপচাপ বাইক নিয়ে বের হয়ে যায় রা’দ।

………………

খ্রিস্টান মন্দির,,,,,

অভিনব হাত জড়ো করে দাঁড়িয়ে আছে। চোখ বন্ধ করে জিসাসের কাছে প্রে করছে।অভিনব নিচু স্বরে বলতেছে,”আমি তোমার কাছে কখনোই কিছু চাইনি। আজকে চাইছি, আমার অতীতকে তুমি ভুলিয়ে দাও। আমি রায়াকে মনে রাখতে চাই না। ওর কথা মনে পড়লেই পুরোনো ঘা তাজা হয়ে ওঠে। যদি নিয়েই যাবে তাহলে ওকে আমার জীবনে কেন এনেছিলে??হয় ওকে ভুলিয়ে দাও নয়তো আমার জীবনটা তুমি নিয়ে নাও,,,।”

বলতে বলতে অভিনব খেয়াল করলো ওরা গাল বেয়ে পানি পড়ছে। তারমানে সে কাদতেছে। ঘাড়ে কারো স্পর্শ পেয়ে পিছনে ঘুরলো অভিনব। তাকিয়ে দেখলো ফাদার দাঁড়িয়ে আছে। অভিনব চোখ মুছে হাসার চেষ্টা করলো। ফাদার বলল,”সবার ভালোবাসা পূর্ণতা পায় না মাই সান। মানুষটা নেই তো কি হয়েছে?? তোমার হৃদয়ে তো তার বসবাস। সেটাকে নিয়ে সারাজীবন কাটিয়ে দেওয়ার নামই ভালোবাসা। তাই জিসাসের কাছে এটা প্রে করো যেন তোমার মন থেকে যেন তার নাম কখনো মুছে না যায়।”
অভিনব অবাক চোখে ফাদারের দিকে তাকিয়ে রইল। ফাদার একটা কথাও ভুল বলেনি। ঠিকই তো বলেছে ভালোবাসার মানুষ টি নেই তো কি হয়েছে তার অস্তিত্ব তো ওর ভেতরে রয়েছে। ওকে ভুলে গেলে তো অভিনবের অর্ধেক জীবন মুছে যাবে। অভিনব ফাদারকে বলল,”থ্যাঙ্কস ফাদার আমার ভুলটা ধরিয়ে দেওয়ার জন্য।”

অভিনব চোখ বন্ধ করে ফটাফট প্রে করে মোমবাতি জ্বালিয়ে বের হয়ে গেল। বাইরে এসে ও অবাক হয়। রা’দ তার বাইকে হেলান দিয়ে দাড়িয়ে আছে। অভিনব রা’দের কাছে গিয়ে বলল,”তুই এখানে??জানলি কিভাবে যে আমি এখানে এসেছি।”
রা’দ রাস্তায় চলতি গাড়িগুলোর দিকে তাকিয়ে বলল,”আমার সিক্স সেন্স বলছিলো তুই এখানে আছিস। এখন চল।”

“কোথায়??”
“লাবন্য আর পূর্ণাশার কাছে। আমি নূরের ব্যাপারে সবকিছু জানতে চাই।”
অভিনব কিছু বলল না। নিজের বাইক স্টার্ট দিয়ে চলল। রা’দ ও অভিনবের পিছু পিছু চলল। একটা রেস্টুরেন্টে গেল দুজনে। পূর্ণাশা আগেই এসে গেছে। রা’দ ফোন করে ওকে আসতে বলেছে। কিন্তু লাবন্য এখনো আসছে না। রা’দ পূর্ণাশাকে জিজ্ঞাসা করল,”লাবন্য কোথায়??”

“জানি না ফোন করছি দুপুর থেকে কিন্তু ফোন ধরছে না।”
“কি বলিস??”
“মনে হয় কিছু হয়েছে চল আমরা গিয়ে দেখি।”

তিনজন মিলে লাবন্যর বাসায় গেল। কলিং বেল বাজানো সত্ত্বেও দরজা খুলল না লাবন্য।ওরা তিনজনই অস্থির হয়ে পড়ে। হঠাৎ পূর্ণাশা বলল,”আমার কাছে মনে হয় এক্সট্রা চাবি আছে। যখন ওর বাসায় থাকতাম তখন নিয়েছিলাম।”
পূর্ণাশা ওর ব্যাগের ভেতর খুঁজতে লাগল পেয়েও গেলো। তাড়াতাড়ি দরজা খুলে ওরা ভেতরে ঢুকলো। চারিদিকে কাঁচ ছড়িয়ে আছে। কাঁচের টুকরার মধ্যে মেঝেতে অজ্ঞান হয়ে পড়ে আছে লাবন্য। ওর হাত থেকে রক্ত ঝরছে। ভাঙচুর করার সময় হয়তো হাতে লেগেছে। অভিনব রা’দ মিলে লাবন্যকে খাটের উপর শোয়ায়। তারপর হাতে ব্যান্ডেজ করে দেয়। পূর্ণাশা ততক্ষণে কাঁচগুলো সরিয়ে ফেলে। লাবন্যর জ্ঞান ফেরানোর জন্য চোখে পানির ছিটা দিলো।
লাবন্য পিটপিট করে চোখ খুললো। চোখটা ফুলে গেছে দেখে মনে হচ্ছে অনেক কেঁদেছে।
লাবন্যকে উঠিয়ে বসায় রা’দ তারপর বলে,”কি হয়েছে লাবন্য??এত ভাংচুর করেছিস কেন??”
লাবন্য রা’দের কাঁধে মাথাটা এলিয়ে দিয়ে চোখের পানি ছেড়ে দেয়। রা’দ একহাতে লাবন্যর বাহু ধরলো। লাবন্য কাঁদতে কাঁদতে বলল,”আমি আর পারছি না রা’দ। সব ঠিক হয়েও হলো না। আমি খুব স্বার্থপর রা’দ। নিজেকে বাঁচাতে গিয়ে প্রিতমকে মেরে ফেলেছি আমি। ওর মৃত্যুর জন্য আমি দায়ী। কেন সবকিছু ঠিক হলো না?? আমি কিভাবে থাকবো রা’?আমার মৃত্যু হচ্ছে না কেন বল?
মৃত্যু টা যে আমার ভিশন প্রয়োজন।”

লাবন্যর কান্না দেখে নিজের কষ্টটা সামাল দিতে পারলো না রা’দ। ও তো নিজেই একজনের ভালোবাসার দহনে পুড়ছে। কিভাবে সে লাবন্যকে শান্তনা দেবে??রা’দ নিজেও চোখের পানি ফেলছে। অভিনব গিয়ে লাবন্য আর রা’দকে জড়িয়ে ধরলো। ওরা তিনজনই যে একই দহনে পুড়ে মরছে। ভালোবাসা হারানোর যন্ত্রণায় মরে যেতে ইচ্ছে করছে।
পূর্ণাশা দেওয়ালে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে ওদের কান্না দেখতেছে। ভালোবাসার এ কোন নির্মম পরিহাস??দ্যা বুক থেকে ওরা বেঁচে গেছে ঠিকই। কিন্তু এভাবে বাঁচার থেকে ওদের মরে যাওয়াটাই উওম ছিল। ভালোবাসাহীন বেঁচে থাকার কোন মানেই হয় না। আচ্ছা কি দরকার ছিল ওই বইতে ভালোবাসার গল্প লেখার??এর থেকে আরো ভয়ংকর গল্প লেখা যেতো না??কেনো মানুষের হৃদয় ভাঙে এমন গল্প লিখলো।

বব হেনরির তো হৃদয় ভেঙেছিলো। সেও তার ভালোবাসার মানুষটিকে পায়নি। হয়তো সেই জন্যই এরকম গল্প আবদ্ধ করেছে এই বইতে।
নিজের কষ্টটা মানুষ কে বোঝানোর জন্যই বোধহয় এই বইটা তৈরি করে গেছেন তিনি।এসব ভাবতে ভাবতে দীর্ঘশ্বাস ছাড়লো পূর্ণাশা।

চলবে,,,,,,,,,,

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here