বাসর ঘরে আয়নার সামনে দাড়িয়ে আছি আমি৷আজ আমার স্বামী আমার সাথে খুব বড় অন্যায় করলেন৷অন্তত আজকের রাতে এসব না করলেও পারতেন৷ কিছুক্ষণ আগে আমার স্বামী এসে সবকিছু তচনচ করে দিয়ে চলে গেছেন৷
আয়নায় নিজেকে দেখছি আর নিজের সাথে ঘটে যাওয়া মুহুর্তগুলি স্মরণ করছি ৷
আমি আরুহি চৌধুরী৷ হঠাৎই আমার বিয়ে ঠিক হয়ে গেলো৷বিয়ে নিয়ে কোনো প্রিপারেশনই ছিলো না আমার তাই প্রথমে বিয়ে করতে রাজি ছিলাম না আমি৷ অনেক সময় পরিবারের দিকে তাকিয়েও রাজি হতে হয়৷আমিও আমার মা বাবার মুখের দিকে তাকিয়ে রাজি হয়েছি৷বাবা অনেক বার বলেছিলেন বরের ছবি দেখার জন্যে,কিন্তু আমি দেখিনি৷ দেখতে চাইনি,ইভেন সে কি করে,তার নাম কী সেটা পর্যন্ত জানতে চায়নি৷ ভেবেছিলাম বাসর ঘরে বসে সামনাসামনি কথা বলবো আর দেখবো তখন না হয় জেনে নিব৷ দেখতে দেখতে বিয়েটাও হয়ে গেলো আমার আমি এখন পর্যন্ত জানিনা কার সাথে বিয়ে হয়েছে,বর কি করে৷
বাসর ঘরে গুমটা দিয়ে বসে আছি আমি৷ এই বাসর নিয়ে কতই যে স্বপ্ন দেখেছি আর আজ আমারি বাসর ভাবতেই শরীরে শীতল শিহরন বয়ে গেলো৷ দরজার আওয়াজে ভাবনার জগৎ থেকে বেরিয়ে আসলাম আমি৷ বিয়ের আগে দাদি বলে দিয়েছিলেন বাসর ঘরে স্বামি আসার পর যেন তাকে সালাম করি৷ তাই আমিও ভদ্র মেয়ের মতো এগিয়ে গেলাম সালাম করার জন্য৷ যেমনি সালাম করবো ওমনি উনি সজোরে আমার গালে চড় মেরে বসলেন৷হঠাৎ চড় দেওয়ায় তাল সামলাতে না পেরে আমি গিয়ে ফ্লোরে ছিটকে পরলাম৷ গালে হাত দিয়ে নিচের দিকে তাকিয়ে আছি আর ভাবছি কেন মারলেন উনি আমায়,আমিকি কোনো অন্যায় করেছি, কিন্তু কি অন্যায় করলাম যার জন্য উনি আমায় বাসর রাতে চড় মারলেন৷ ভাবনার সাথে চোখের পানিও বিসর্জন দিচ্ছি৷ কখনো ভাবিনি বাসর রাতে আমার জন্য এতবড় সারপ্রাইজ অপেক্ষা করবে৷ উনি আবার আমার দিকে এগিয়ে আসলেন৷ এসেই এবার আমার চুলের মুঠি ধরে ধাক্কা মেরে বিছানায় ফেলে দিলেন৷ তারপর আমার মাথা থেকে ওরনা নিয়ে ফ্লোরে ছুরে মারলেন৷ এবার আমি উনার দিকে তাকালাম ভালো করে৷ খুব সুন্দর উনি একেবারে আমার কল্পনার রাজপুত্রের মতো৷ লম্বা,জীম করা বডি,স্পাইক করা চুল কপালে এসে পরেছে,অনেক ফর্সা,গোলাপি ঠোঁট, চিকন নাক,৷ একেবারে পার্ফেক্ট লুক৷ কিন্তু আমার সাথে এমন করছেন কেনো উনি সেটাই বুঝতে পারছিনা৷ আমার এসব ভাবনার মধ্যেই উনি আমার সব গয়না কখন টেনে খুলে ফেললেন আমি টেরই পায়নি৷ শাড়িতে হাত দিতেই আমি ছিটকে দূরে সরে গেলাম৷ কিন্তু আমি যতই পিছাচ্ছি উনি ততই এগুচ্ছেন একসময় টান দিয়ে খুলে ফেললেন শাড়িটা৷ তারপর উঠে পরলেন বিছানা থেকে৷ অবাক করার বিষয় হলো উনি সব কিছু গুছিয়ে গুছিয়ে উনার কাবার্ডে রাখছেন৷ সব কিছু মানে আমার গয়না আর শাড়ি যা আমার শশুড় বাড়ি থেকে দেওয়া হয়েছিলো৷ গুছিয়ে রাখার পর উনি এবার আমার দিকে এগিয়ে এসে বললেন,,, এই মেয়ে শুনো তোমায় আমি কোনোদিন নিজের স্ত্রী হিসেবে মানবোনা৷ আমার গার্লফ্রেন্ড আছে যাকে আমি কথা দিয়েছিলাম তাকে ছাড়া আর কাউকে বিয়ে করবোনা৷ আর এই জন্যেই আমি শাড়ি আর গয়না নিয়ে নিয়েছি কারন এসবে শুধু তার অধিকার আছে৷সে এখন দেশের বাহিরে আছে তাই আমার বিয়ের সম্পর্কে কিছু জানেনা৷শুধু মাত্র মায়ের কসম রক্ষার্থে আমি তোমাকে বিয়ে করেছি ৷ আর যতটুকু পাবে ততটুকু নিয়েই খুশি থাকবে৷ আমার কাছ থেকে তুমি সব পাবে শুধু ভালোবাসা ছাড়া৷ না আমি তোমায় এখন নিজের বউ হিসেবে মানছি আর না পরে মানব৷ কথাটা বলে রুম থেকে চলে গেলেন উনি৷ খুব কষ্ট হচ্ছে আমার বাসর ঘরে স্বামির মুখে এসব শুনব কখনো কল্পনাও করিনি৷ মানুষ ঠিকই বলে বেশি স্বপ্ন দেখতে নেই৷
এসব ভাবতে ভাবতে কখন যে রাত ৩টা বেজে গেছে টেরই পায়নি৷ ঘড়ির দিকে একবার থাকিয়ে বাথরুমে চলে গেলাম৷ একটু ফ্রেশ হওয়া দরকার৷ শাওয়ারের নিচে বসে কাদতে থাকলাম ইচ্ছে মতো ৷ চোখের পানি যে আর ধরে রাখা সম্ভব হচ্ছেনা,অঝোর ধারায় গরিয়ে পরছে নিচে৷ কোনো মেয়েয়ই বাসর রাতে চড় খেয়ে নিজের স্বামীর মুখে অন্য মেয়ের কথা শুনে ঠিক থাকতে পারবেনা৷ কোনো রকমে শাওয়ার সেরে একটা লং থ্রি-পিস পরে নিলাম ৷ উনি এখনো আসেননি হয়তো আর আসেবেনওনা৷ তাই দরজা বন্ধ করে শুয়ে পরলাম আমি৷
পরেরদিন,,,,,,,
সকালে দরজা ধাক্কানোর আওয়াজে ঘুম ভেঙ্গে গেলো আমার৷ ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখলাম সকাল ৫টা বাজে৷ এত সকালে আবার কে দরজা ধাক্কাচ্ছে৷ একরাশ বিরক্ত নিয়েই দরজা খুলে দিলাম৷ খুলে দেখি ওমা আমার জামাই সাহেব দরজার অপারে দাঁড়িয়ে আছেন৷ দরজা ছেড়ে দিয়ে রুমে চলে আসলাম আমি৷ তারপর উনিও রুমে ডুকে দরজা বন্ধ করে আমার দিকে তাকিয়ে বললেন,,, শুন কাল আমি তোমাকে যা বলেছি তার কিচ্ছুটি যেন আম্মুর কানে না যায়৷ আম্মু আমার গার্লফ্রেন্ড সোহানিকে একদম পছন্দ করেননা৷ কেন করেননা সেটাই বুঝিনা আর হঠাৎ তোমাকে দেখে পছন্দ হলো আর বিয়েটাও করিয়ে দিলেন৷সে যাইহোক কাল যা যা বলেছিলাম আশা করি মনে আছে৷ এটা৷ বলেই একমুহূর্তও দাঁড়ালেননা উনি৷ বাথরুম চলে গেলেন৷ আমি এখনো যেভাবে ছিলাম ঠিক সেইভাবেই দাঁড়িয়ে আছি৷ বুক ফেটে কান্না আসছে আমার৷ আমিতো কোনো ভুল করিনি তাহলে আমি কেন এত বড় শাস্তি পাচ্ছি৷ কোনোরকমে চোখ মুখ মুছে বেডে বসে পরলাম৷ আর ভাবতে থাকলাম কি থেকে কি হয়ে গেলো৷
কিছুক্ষন পর উনি বের হলেন বাথরুম থেকে৷ কাবার্ড থেকে একটা টি-শার্ট নিয়ে সেটা পরে রুম থেকে চলে গেলেন৷ যেনো আমাকে সহ্যই করতে পারছেননা৷
চলবে,,,,,,
(ভুলত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন৷ এন্ড কেমন হচ্ছে জানাবেন৷ রেসপন্স পেলে তবেই নেক্সট পার্ট দেবো)
#the_unlimited_love❤️
#part_1
#writer_nusrat