the unlimited love part-14

#the_unlimited_love❤️
#part_14
#writer_nusrat

“এখানে শুধু সোহানির দোষ নেই, আমারও দোষ আছে৷ কেনো আমি ভালো করে যাচাই না করে আরুহিকে বাড়ি থেকে বেড় করে দিলাম৷ওর কথাও একবার শুনা উচিৎ ছিলো৷ঠিকই সবসময় রাগকে প্রাধান্য দিতে নেই৷”

আদিলের ভাবনার মধ্যেই আহিল দৌড়ে আসলো৷

“ভাইয়া সোহানি এক্সিডেন্ট করেছে!!!

“কীহ!!!!এক্সিডেন্ট কীভাবে করলো???

“কারের নিচে নাকি চাপা পরে গেছে অবস্থা খুব ক্রিটিকাল”৷

“ওহ”

সোহানির কথা শোনে আদিলের মধ্যে কোনো ভাবান্তর দেখা যায়নি৷

“আমরা মানুষের ক্ষতি করতে গিয়ে কীভাবে নিজেদের ক্ষতিই করে ফেলি বুুঝতেই পারিনা৷ সোহানি তো ওর কর্মের শাস্তি পেয়েছে৷ আমিও আমার কর্মের শাস্তি পাচ্ছি আরুহিকে হারিয়ে৷ ওকে যে আমি কতোটা মিস করি এটা কী ও বুঝেনা৷ ওর নাক ফুলিয়ে ঝগড়া করাটাও খুব খুব মিস করছি৷ আচ্ছা ও কী আমায় মিস করেনা৷ না মিস করবে কেনো আমি ওর সাথে রুড বিহেভ করেছি তারপরও আমাকে মিস করার কোনো প্রশ্নই উঠে না৷?ওর সাথে কাঠানো সেই দিনগুলি যে খুব মিষ্টি ছিলো৷ আমি আবারো সেই দিনগুলি ফিরে পেতে চাই৷ কিন্তু কে ফিরিয়ে দিবে আমায়৷ আদৌ কী তোমায় খুঁজে পাবো আরুহি ৷ তোমার মা বাবাকে তো কথা দিয়েছি তোমাকে ফিরিয়ে আনবো৷ আমি আদৌ পারবো তো তোমায় ফিরিয়ে আনতে৷”

♣️♣️♣️♣️♣️

ডিনারে বসেছি৷ হঠাৎই রিংকির আব্বু বলে উঠলেন,,

“আরুহি মা তুমি নাকি চাকরী করতে চাইছো???

“হ্যা আংকেল আমি চাকরী করতে চাই৷ নিজের পায়ে দাড়াঁতে চাই৷”

” সেটাতো বেশ ভালো৷ আমি কাল রিংকির কাছ থেকে শোনার পর আমারই এক বন্ধুর কাছে ফোন দিয়েছিলাম৷ সে বিরাট বড় বিজনেসম্যান৷কাল নাকি পিএ এর ইন্টারভিউ নেওয়া হবে৷ তুমি যেন সময় মতো চলে যাও৷”

“আচ্ছা আংকেল আমি ঠিক সময় চলে যাবো৷”

🏜️🏜️🏜️🏜️🏜️

সকালে ব্রেকফাস্ট শেষ করে বেরিয়ে পরলাম ইন্টারভিউয়ের উদ্দেশ্য৷ আংকেলের কথা অনুযায়ী অফিসে চলে এলাম৷ পুরো অফিস মানুষে গিজগিজ করছে৷ শুধু মাত্র ইন্টারভিউয়ের জন্যে৷ আমিও একটা ফাকা চেয়ারে বসে পরলাম৷ অনেক্ষন পর আমার নাম ডাকা হলো৷ আমার বুক ধুকপুক ধুকপুক করছে৷ পারবো তো আমি সব সঠিক উত্তর দিতে৷ ভয়ে ভয়েই চলে গেলাম ইন্টারভিউ দেওয়ার জন্যে৷ হে আল্লাহ তুমি আমায় রক্ষা করো৷

আমাকে যে সব প্রশ্ন ডাকা হয়েছে আমি সব প্রশ্নেরই ঠিক ঠিক উত্তর দিয়েছি৷ তবুও ভয় করছে৷

এখনো মানুষের ইন্টারভিউ নেওয়া হচ্ছে৷ প্রায় ২ঘন্টা পর ম্যানেজার এলেন হাতে কিছু পেপার নিয়ে৷ ম্যানেজার নাম ডাকার জন্য পেপার হাতে নিতেই আমার ভয় আরো বেশি বেড়ে গেলো,চোখ বন্ধ করে ফেললাম আমি৷যেনো এই মুহুর্তেই সেন্সল্যাস হয়ে যাবো৷

আরুহি রহমান নাম শুনে চমকে চোখ খুলে তাকালাম আমি৷ তারাতাড়ি নিজেকে ঠিক করে হাত তুলে দাঁড়ালাম৷

“কংগ্রাচুলেশন আপনাকে পিএ পোস্টের জন্য সিলেক্ট করা হয়েছে৷”

“আমি বিশ্বাসই করতে পারছিনা প্রথম বার ইন্টারভিউয়ে এসেই সিলেক্ট হয়ে যাবো৷ আল্লাহ তোমাকে অসংখ্য ধন্যবাদ৷ ”

২ বছর পর,,,,,,,,,,,,,, 🏞️🏞️🏞️🏞️🏞️

সময় ও স্রোত কারো জন্য অপেক্ষা করেনা৷ দেখতে দেখতে আমার জীবন থেকে ২টা বছর কীভাবে চলে গেল টেরই পায়নি৷ পিএ পোস্টেই চাকরী করছি আমি৷ যখন যা বলা হয় করার জন্য সব ঠিকঠাক ভাবেই করে ফেলি৷ অফিসের সবাই আমাকে খুব পছন্দ করে,ভালবাসে৷ সুখিই আছি আমি৷

♣️♣️♣️♣️

প্রতিদিনকার মতো আজও আদিল আরুহিকে খুঁজতে বেড়িয়েছে৷ এই দুইটা বছর আদিল সব জায়গায় খুঁজেছে তাকে৷ ফ্রেন্ড থেকে ধরে সব আত্নীয় স্বজনের বাড়ি খুঁজে দেখেছে৷ রিংকি ছোট বেলার বান্ধবী হওয়াতে ওকে তেমন কেউ চিনেনা৷ আদিল বাড়িতে ঢুকতেই ওর বাবা ওকে থামিয়ে দিলেন৷

“দাড়াঁও”

“কী হয়েছে বাবা??

“তোমাকে বিজনেসের ডিল করার জন্য চট্টগ্রাম যেতে হবে৷ তুমি চাইলে সেখানের এমডি ও হতে পারো৷”

“আমি পারবোনা বাবা৷ আহিলকে পাঠাও৷ ”

“আহিল এখান থেকে দেখাশুনা করবে৷ আমাকে এখন এসব থেকে মুক্তি দাও তোমরা৷ এই বিজনেস দেখতে দেখতে জীবনটাই গেলো৷আর তুমি আজই যাচ্ছো চট্টগ্রামে৷”

“আজই যাবো মানে??বাবা আমি চলে গেলে আরুহিকে কে খুঁজবে?ট্রাই টু আন্ডারস্ট্যান্ড “(ছলছল চোখে)

“কে খুঁজবে মানে৷ যখন ঘাড় ধাক্কা দিয়ে বেড় করে দিয়েছিলে তখন মনে ছিলোনা৷ এই দু’বছর খুঁজে চলেছো ওকে, পেয়েছো কোথাও পাওনিতো৷আর বোধহয় পাবেও না৷ আজ তুমি যাচ্ছো৷ আমি আর কোনো কথা শুনতে চাইনা৷”

♣️♣️♣️♣️
কিছু ভালো লাগছেনা আমার রিংকির সাথে ছাদে বসে অনেক্ষণ আড্ডা দিলাম৷ আড্ডা দিতে দিতে কখন যে বিকেল হয়ে গেলো বুঝতেই পারিনি৷ তারপর নামাজ পরে আন্টিকে গিয়ে রান্নায় হেল্প করলাম৷ডিনার শেষ করে অফিসের কাজ করতে লাগলাম৷ কাজ করতে করতে রাত ২টা হয়ে গেছে তাই আর লেইট না করে শুয়ে পরলাম৷

সকালে ঘুম থেকে উঠতেও লেইট হয়ে গেছে আমার৷ ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখলাম ১০ঃ৩০ বাজে৷ কোনোরকমে ফ্রেশ হয়ে নাস্তা করে দৌড়ে রিক্সায় উঠে অফিসে চলে গেলাম৷

অফিসের সবাই আমার দিকে কীভাবে যেনো তাকাচ্ছে৷ বেশ ভালই বুঝতে পারছি এরকম তাকানোর মানে৷আমি কোনোদিনই লেইট করে আসিনি৷ হঠাৎ লেইট করে আসাতে সবাই আমার দিকে এমন ভাবে তাকাচ্ছে৷ আজতো নতুন এমডি আসার কথা হয়তো এসেও গেছেন৷

ফাইল নিয়ে স্যারের কেবিনের সামনে দাঁড়িয়ে নক করলাম৷ ভিতর থেকে উত্তর আসলো,

“কাম”

আমি স্যারের দিকে এখনো তাকাইনি৷ফাইলটা দেখিয়ে বললাম,,

“স্যার আমাকে এই কাজগুলো করার জন্য দেওয়া হয়েছিলো৷ আমি সব কাজ কমপ্লিট করে ফেলেছি৷ আমি কথা বলে যাচ্ছি বাট কোনো রেসপন্স পাচ্ছিনা মুখ তুলে যাকে দেখলাম তাকে দেখে আমার হাত থেকে ফাইল মাটিতে পড়ে গেছে ৷ আমার সামনে স্বয়ং আদিল বসে আছে৷ উনি এক দৃষ্টিতে আমার দিকে তাকিয়ে আছেন৷ আমি দৌড়ে উনার কেবিন থেকে চলে এলাম৷ পথেই আরেকজন স্টাফ রিমির সাথে দেখা৷ রিমি আমায় দেখে বললো,,

“কী হয়েছে ম্যাম৷ আপনাকে নার্ভাস দেখাচ্ছে যে৷”

“ও কিচ্ছু না৷ বাট ওই যে পাশের কেবিনে একটা লোক উনি কে”??

“ম্যাম উনিতো আমাদের নতুন এমডি৷ আজই জয়েন করেছেন৷ আর এখন থেকে আপনাকে উনার সাথেই থাকতে হবে, কাজ করতে হবে”৷ কথাটা বলে রিমি চলে গেলো৷

“আমি এই লোকটার থেকে দুরে থাকার জন্য পালিয়ে চট্টগ্রাম এসেছি আর এখন উনার সাথেই কাজ করতে হবে নেভার৷ আমি চাকরী ছেড়ে দিবো তবুও উনার সাথে কাজ করবোনা কক্ষনো না৷”

এদিকে,,,,,,

“এ আমি কাকে দেখলাম এটা সত্যিই বাস্তব ছিলো নাকি স্বপ্ন৷ আরুহি আমার সামমে ছিলো,ওহ্ মাই গড৷ এই দুই বছর ধরে আরুহিকে খুঁজে চলেছি আমি৷ এখন আর পেয়েও হারাতে চাইনা৷” আদিল একজন স্টাফকে ডেকে পাঠালো৷

“স্যার আমায় ডাকছিলেন৷ ”

“হ্যা৷ আচ্ছা তোমাদের পিএ কে??

“আরে স্যার যে এখন আপনার কেবিন থেকে বেড়িয়ে গেছে সে ওই পিএ৷”

আদিল আরেকটু শিওর হওয়ার জন্য বললো,,

“তা নাম কী তার???

“আরুহি রহমান৷”

“আচ্ছা তুমি যাও৷”

ছেলেটা চলে গেলো৷

“আরুহি তুমি নিজেই আমায় ধরা দিয়েছো৷ এই দু’বছর ধরে তোমায় খুঁজে যাচ্ছি৷ এমন কোনোদিন বাদ যায়নি আমি তুমায় খুঁজিনি৷ এখন যখন ধরা দিয়েই দিছো তাই আর ছারছিনা তোমায়৷ আমি জানি তুমি আমায় এখানে দেখে চলে যাওয়ার চেষ্টা করবে৷বড্ড অভিমান যে তোমার আমার উপর৷ ”

♣️

এক ঘন্টা ধরে কেঁদেই যাচ্ছি আমি৷ মনে হচ্ছে যেন আজ সব চোখের পানি একসাথেই শেষ হয়ে যাবে৷ ভালবাসার মানুষটিকে এতো কাছে পেয়েও ভালো করে দেখতে পারিনি৷ আমি তো ভালোই ছিলাম৷ সব অতীত ভুলে গিয়ে৷ তাহলে কেনো আবার উনি আমার সামনে এসে সব অতীত আবার জাগিয়ে দিলেন, কেনো?অতীতের ক্ষতটাও যে শুকিয়ে গিয়েছিল সেটাও আবার তাজা হয়ে গেছে৷

“ম্যাম স্যার আপনাকে ডাকছে”

স্টাফের ডাকে ভাবনার জগৎ থেকে বেরিয়ে আসলাম আমি৷ তারাতাড়ি চোখ মুখ মুছলাম৷

“আশ্চর্য উনি আমায় কেনো ডাকছেন?? নাহ এই অফিস আমায় ছাড়তেই হবে৷ আপাতত উনি কেনো ডাকছেন সেটা শুনতে হবে৷ নাহলে অফিসের সবাই কী না কী ভাববে৷”

চলবে,,,,,,,,,

(গাইস বিজনেস সম্পর্কে আমার তেমন ধারনা নেই৷ তাই ভুল হলে ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন 🙏)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here