#the_unlimited_love❤️
#part_3
#writer_nusrat
একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে চলে আসলাম সেখান থেকে৷ লিভিং রুমে ঢুকে দেখলাম সবাই আমাদের রিসিপশন নিয়ে ব্যস্ত বাসা প্রায় সাজানোও কমপ্লিট৷ মা উনার গেস্টদের ফোন করে ইনভাইট করছেন৷ “এমা আমিতো ভুলেই গিয়েছিলাম আজতো আমাদের রিসিপশন৷কি যে করিসনা তুই আরুহি৷ প্রথম দিনেই ১০টা বাজিয়ে ঘুম থেকে উঠলি তারমধ্যে আজ যে তোর রিসিপশন সেটাও ভুলে গেলি৷ ধ্যত,,,নিজেকে একপ্রকার গালি দিয়ে রুমে চলে এলাম”৷
রুমে ঢুকে দেখলাম রুবা আগে থেকেই লেহেঙ্গা আর অর্নামেন্টস নিয়ে বসে আছে৷ আমাকে দেখে একটা মিষ্টি হাসি দিয়ে বললো,,, “ভাবি পার্লারের মেয়েরা চলে এসেছে তোমাকে সাজানোর জন্য৷ তুমি যদি বলো তাহলে আমি তাদের ডেকে দিতে পারি৷ আমিও মাথা নাড়িয়ে হ্যা বললাম৷ রুবা একটা হাসি দিয়ে চলে গেলো”৷
লেহেঙ্গা পড়ে আয়নার সামনে বসে আছি আর নিজেকে দেখছি৷ নিজেকে দেখে নিজেই চিনতে পারছিনা৷ এতোটা সুন্দর লাগছে আমায়৷ লেহেঙ্গাটা খুব সুন্দর পার্পল কালারের মধ্যে সাদা স্টোনের পাথর দিয়ে গর্জিয়াস ভাবে কাজ করা৷ আর তার সাথে মেচিং করা অর্নামেন্টস৷মেয়েগুলো খুব সুন্দর করেই সাজিয়েছে আমাকে৷চুলগুলো কার্ল করে এক সাইডে এনে রেখেছে৷ তারমধ্যে কয়েকটা অর্কিড ফুলও গেতে দিয়েছে৷
“আমি এখনো আমার বদমেজাজী হাজবেন্ডকে দেখিনি৷ হয়তো কোনো এক কোনায় মুখ ফুলিয়ে দাঁড়িয়ে আছেন৷ যাকগে আমারকি”৷
“ইন দ্যা রিসিপশন “,,,,,,
আমাদের দুজনকেই দুটো সাজানো চেয়ারে বসানো হয়েছে৷ এমন সময় একজন লোক আমার দিকে এগিয়ে আসছেন দেখে আমিও দাড়িয়ে পরলাম৷ আদিল উনাকে দেখেই বলে উঠলেন,,,”আব্বু তুমি কখন এলে?কতক্ষণ যাবত খুজছি তোমায়৷ আজকের দিনে এটলিস্ট বিজন্যাস দেখা বন্ধ করলে কি এমন হতো বলোতো”৷
বাবাও হেসে বললেন,,,”অনেক বড় ডিল ছিলো তাই ক্লাইন্টদের সাথে মিট করতে চলে গিয়েছিলাম৷ আর এখন এসেছিতো”৷ উনাদের কথা অনুযায়ী বুঝতে পারলাম ইনি হলেন আদিলের বাবা আমার শশুর মশাই৷ আমিও সাথে সাথে উনার পায়ে হাত দিয়ে সালাম করে নিলাম৷ উনি আমার মাথায় হাত দিয়ে বললেন,,”সুখি হও মা সুখি হও৷ আর একদম পায়ে হাত দিয়ে সালাম করবেনা৷তুমি হলে আমার ঘরের লক্ষি৷ এখন থেকে মুখে সালাম দিবে”৷ আমিও একটা মুচকি হাসি দিয়ে বললাম “ঠিক আছে৷ তারপর জিজ্ঞেস করলাম,,” কেমন আছেন বাবা?”,,উনিও উত্তরে একটু হেসে বললেন “অনেক ভালো আছি মা আর এখন থেকেতো আরও ভালো থাকবো”৷আরও কিছুক্ষন কথা বলে চলে গেলেন উনি৷
“আমি শুধু আড়চোখে তাকিয়ে আমার বরকে দেখে যাচ্ছি৷ খুব সুন্দর লাগছে উনাকে৷ উনিও পার্পল কালারের পাঞ্জাবি পরেছেন চুলগুলো জেল দিয়ে ফিট করে রেখেছেন খুব হ্যান্ডসাম লাগছে দেখতে৷আমি যে উনার পাশেই বসে আছি এটা বোধহয় উনি জানেনই না৷ নাহলে একবার ওতো তাকিয়ে দেখতে পারতেন৷ আমি কেন শুধু শুধু হেংলার মতো তাকিয়ে আছি৷ আমিও উনার দিক থেকে চোখ সরিয়ে সামনে তাকালাম৷তাকাতেই দেখলাম কয়েকটা মেয়ে আমার বোলাবালা বরটার দিকে ড্যাবড্যাব করে তাকিয়ে আছে৷ দেখে মনে হচ্ছে যেন কোনোদিন ছেলে দেখে নাই৷ উনার দিকে তাকিয়ে দেখলাম উনিও একটা ভাব নিয়ে বসে আছেন৷ মনে তো চাচ্ছে সবগুলার সাথে সাথে উনারও চুল টেনে ছিড়ে ফেলি৷ কিন্তু না আমি এখন নতুন বউ তাই এসব করলে মানুষ ব্লেম করবে৷ তাই ওদের দিকে তাকিয়ে একটা ভেংচি কাটলাম৷
একটু পর ক্যামেরা ম্যান এসে বললো আমাদের ছবি তুলবে৷ দুজনই উঠে ক্যামেরা ম্যানের কথা অনুযায়ী নানান পোজ দিয়ে ছবি তুলতে থাকলাম৷মেয়েগুলোর দিকে তাকিয়ে দেখলাম ওরা বিরক্তি নিয়ে আমার দিকে তাকিয়ে আছে৷ আমিও ওদেরকে জালানোর জন্যে উনার বুকে হাত রাখছি একবার মাথা রাখছি একবার৷ কিন্তু আশ্চর্য উনি একটুও আমার দিকে তাকাচ্ছেন পর্যন্ত না৷যেন তাকালেই পাপ হয়ে যাবে৷
অবশেষে উনি আমার দিকে তাকালেন,তাও মায়ের ধমক শুনে৷ কিন্তু মুখে হাসি নেই৷ অদ্ভুততো একটু হাসলে কি এমন ক্ষতি হয়ে যাবে৷যাইহোক উনি যে আমার দিকে তাকিয়েছেন সেটাই অনেক৷ এসব ভাবছি আর মিটিমিটি হাসছি৷ উনার কাছে হয়তো আমার হাসি বিরক্ত লাগছে তাই কপাল আর ভ্রু কুচকে আমার দিকে তাকিয়ে আছেন৷ আমিও একটু দাঁত কেলিয়ে হেসে দিলাম৷ উনি সাথে সাথে মুখ ঘুরিয়ে নিলেন৷ ততক্ষণে আমাদের ছবি তোলাও কমপ্লিট হয়ে গেছে৷
রিলেটিভরাতো আমাকে দেখে প্রশংসায় পঞ্চমুখ৷ আর এই দিকে খাটাশ বরটা আমার দিকে তাকাচ্ছে পর্যন্ত না৷হুহ!!!!!”
সারাদিন এই বারি লেহেঙ্গা পরে থাকতে থাকতে অনেক বোরিং হয়ে পরেছি আমি, তাই লেহেঙ্গা আর অর্নামেন্টস খুলে ওয়াশরুমে চলে গেলাম৷ এখন একটু ফ্রেশ হওয়া দরকার৷
রাত্রে,,,,,,
ঘুমানো নিয়ে হলো আরেক ঝামেলা৷ আমি জানি উনি আমার সাথে এক খাটে ঘুমুবেননা৷ তাই আমি আগেবাগেই বিছানায় উঠে আসাম করে শুয়ে পরলাম৷ একটু পরে দরজা খুলার আওয়াজে বুঝতে পারলাম উনি এসে গেছেন৷ তাই আমিও ঘুমানোর ভান করে রইলাম৷
তার কিছুক্ষণ পর মুখে কিছু পরায় চোখ খুলে তাকালাম৷ তাকিয়ে দেখলাম বালিশ আমার মুখে পরে আছে৷ নিশ্চয় উনি ছুরে মেরেছেন৷ আমিও একটু হাল্কা রেগে বললাম “কি শুরু করেছেন কি আপনি৷ দেখতে পাচ্ছিলেন না আমি যে ঘুমুচ্ছিলাম৷জানেন না কেউ ঘুমিয়ে থাকলে তাকে সুন্দর করে ডাকতে হয়৷ এতটুকু ম্যানার্স পর্যন্ত আপনার নেই৷”
“উনিও রেগে বললেন,,,ম্যানার্স শিখাচ্ছো তুমি আমায়, লাইক সিরিয়াসলি৷ তুমি নিজে কতটুকু ম্যানার্স জানো৷ যদি জানতে তাহলে আমার খাটে তুমি শুতে না৷ উঠো আমার খাট থেকে আমি এখন ঘুমাবো৷ খুব ঘুম পাচ্ছে আমার৷”
“আমিও একটু হেসে দিয়ে বললাম,,,সরি জামাই,এখন আর আপনি সিঙ্গেল নন,মিঙ্গেল হয়ে গেছেন আর আমি আপনার বউ আর এটা আপনি ভুলে যাবেননা৷ আমি আমার স্বামীর খাটেই শুব৷ কার বাপের কী৷”
“কারো বাপের কিচ্ছু না বাট আমার অনেক কিছু৷ আর কাল রাতে কি বলেছিলাম ভুলে গেছো নাকি৷”
আমি একটু ভাবার ভান করে বললাম,,,”কই আপনিতো আমায় কাল কিচ্ছু বলেননি৷ আর দেখুন খাটে ঘুমালে ঘুমান নাহলে সোফায় গিয়ে ঘুমান৷একদম আমায় ডিস্টার্ব করবেননা কথাটা বলে গায়ে ব্লাঙ্কেট জড়িয়ে মুখ ঘুরে শুয়ে পরলাম৷ জানি উনি অনেক রেগে আছেন তাতে আমার কি৷ নিজে বিয়ে করে এনেছে আমায়৷ আমিকি বলেছিলাম নাকি যে আমায় বিয়ে করুন বিয়ে করুন আমি আপনাকে ছাড়া বাচবো না৷ তাহলে এখন কেন এমন করবে৷ আমি এতো ভালো নই যে সব কিছু সহ্য করে নিব৷যত্তসব,,,,
অনেক্ষন হয়ে গেছে তবুও উনার কোনো সাড়াশব্দ না পেয়ে ব্লাঙ্কেটটা সরিয়ে একটু উকি মেরে দেখলাম উনি কোথায়৷ এমা উনিতো সোফায় গিয়ে ঘুমিয়ে পরেছেন৷ আমিও আবার ব্লাঙ্কেটটা গায়ে দিয়ে শুয়ে পরলাম৷
পাখির কিচিরমিচির আওয়াজ আর সূর্যের প্রকট আলোর জন্যে ঘুম ভেঙে গেলো আমার৷ উঠে বসে যেমনি আড়মোরা ভাঙতে যাবো ওমনি ধপাসসসস,,,,
চলবে,,,,,,
(ভুলত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন৷ আর নাইস নেক্সট না লিখে গঠনমূলক মন্তব্য করুন৷ নাহলে আমি বুঝব কি করে যে আপনাদের কাছে গল্পটা কেমন লাগছে৷)