গল্পঃ প্রেমমোহ
লেখিকাঃফারজানা আফরোজ
পর্বঃ ৫
মায়ের কথায় কষ্ট পেয়ে চলে যায় দিয়া। তার সমস্যা কিনা তার মা বুঝছে না। রাগে কষ্টে মেঝ ভাইয়ের কাছে ফোন দিয়ে কান্না মাখা কন্ঠে বলতে লাগলো,
–” ভাইয়া।”
–” বল।”
–” আমার কোনো জামা নেই। আমাকে কিছু জামা কিনে দিবে? ধরো এইগুলো আমাকে বিয়েতে গিফট করছ বিয়ের পর তো এমনিই দিবে তাই না?”
–” তারপর?”
–” ম্যাচিং জুতো, কানের দুল, লেডিস ব্যাগ, নিউ ব্র্যান্ডের ব্যাগ আসছে অনেক, দেখতে হেব্বি।”
–” তারপর?”
–” তারপর তারপর কি করছো? দিবে কিনা বলো?”
–” তারপর?”
–” ধ্যাত। কেউ আমাকে ভালোবাসে না।”
স্পন্দনের সাথে রাগ দেখিয়ে ফোন কেটে দিল দিয়া। ফোন কেটে দেওয়ার পর পরেই স্পন্দন ফোন দিল। সবার কাছে গম্ভীর থাকলেও ছোট বোনের কাছে সে মিশুক। অন্যদের বুঝতে দেয় না সে যে ছোট বোনের অতি প্রিয় একজন মানুষ। বোনের আবদার তাকে তো পুরন করতেই হবে।
দিয়া ফোন রিসিভ করতেই স্পন্দন একদমে বলে উঠলো,
–” এক ঘণ্টার মাঝে শপিং মলে চলে যাবি। ত্রিশ মিনিট ধরে যা ইচ্ছা তাই কিনবি। ত্রিশ মিনিট সময় জাস্ট। আমি এক্ষুনি বের হচ্ছি। তোর কারণে অর্ধেক কাজ রেখেই যেতে হচ্ছে।”
স্পন্দন ফোন কেটে দিল। দিয়া হতাশ হয়ে বিড়বিড় করে বলতে লাগলো,
–” এক ঘণ্টায় কিভাবে যাবো? রেডি হতেই তো দুই ঘণ্টা লাগবে। না থাক আজ বেশি সাজগোজ করবো না পরে দেখা যাবে কিছুই জুটবে না আমার কপালে।”
সাদা শাড়ি, সাজবিহিন শুভ্রতা দাঁড়িয়ে আছে দিয়ার জন্য। লম্বা চুলগুলো হাত খোঁপা করে চুপচাপ ওয়েট করছে সে। দিয়া নীল জামা, ম্যাচিং সব দেখে মনে হচ্ছে বিয়ে বাড়িতে যাচ্ছে। শুভ্রতা হেসে বলল,
–” শপিং করতে যাবে তাহলে এত সাজ কেন দিয়া পাখি?”
–” কই আর সাজলাম। মেঝ ভাইয়ার জন্য সাজার সময় পেয়েছি আমি? বাই দা ওয়ে তুমি রেডি হওনি কেন?”
–” আমি সেই কখন থেকে রেডি হয়ে দাঁড়িয়ে আছি তোমার জন্য। এখন চলো পরে দেখা যাবে তোমার ভাইয়া আমাদের রেখেই চলে আসবে।”
দিয়া তার চোখজোড়া শুভ্রতার দিকে নিক্ষেপ করলো। কানে নেই কোনো দুল, হাত,গলা পুরো শূন্য। মুখে নেই কোনো মেকআপ এমনকি কাজলটুকুও নেই। চুল হাত খোঁপা করে বেঁধে রেখেছে। পরনে সেই সাদা শাড়ি।
–” আপু তুমি এইভাবে যাবে? আসো একটু সাজিয়ে দেই।”
–” নাহ দিয়া আমি সাজগোজ একটুও পছন্দ করি না। চলো তাড়াতাড়ি।”
দুইজন তাড়াহুড়ো করতে গিয়ে শুভ্রতা উষ্টা খেয়ে তাল সামলাতে না পেরে পরে যেতে নিলো। শুভ্রতা পরার আগেই সাকিব তাকে ধরে ফেলল। সাকিব সম্পর্কে স্পন্দন ও দিয়ার বড় ভাই। অফিস থেকে মাত্র ফিরছিল তখনই তার সামনে শুভ্রতা পরে যাবার উপক্রম হয়। কোনো দিক খুঁজে না পেয়ে সেই ধরে ফেলে শুভ্রতাকে।
শুভ্রতার অস্বস্তি বোধ হয়। আকাশ ছাড়া এই নিয়ে তার হাত স্পর্শ করেছে দুইজন। সকালে স্পন্দন আর এখন সাকিব। সে পরে গেলোও হয়তো এতটা খারাপ লাগতো না যতটা কোনো ছেলে তাকে স্পর্শ করলে হয়। নিজেকে সামলিয়ে অনেকটা দূরে অবস্থান করে সে। সাকিব তাড়াহুড়ো করে বলে উঠলো,
–” আর ইউ ওকে শুভ্রতা? একটু সাবধানে চলবে না। একটুর জন্যই তো পরে গিয়ে ব্যাথা পেতে। আমি না আসলে কি হতো ভাবছো?”
–” আমি ঠিক আছি ভাইয়া। আপনি আমার নাম কিভাবে জানলেন?”
–” বোকা মেয়ে। আম্মু তোমার কথা বলেছিল সকালে কিন্তু সময় না থাকায় কথা বলতে পারিনি। জীবনে এই প্রথম আমার ছোট ভাই ভালো একটা কাজ করেছে। বাই দা ওয়ে কোথায় যাচ্ছ তোমরা?”
দিয়া খুশি হয়ে বলল,
–” শপিং করতে যাচ্ছি। আপুর তো পরার মতো কিছু নেই তাই আম্মু বলল আপুকে নিয়ে মার্কেটে যাওয়ার জন্য। তুমি যাবে?”
সাকিব কিছু একটা ভেবে বলল,
–” চল। একা একা তোদের পাঠানো হলো কোনো ছেলে কিছু বললেই ভ্যাঁ ভ্যাঁ করে কান্না শুরু করে দিবি।”
শুভ্রতা একবার সাকিবের মুখের দিকে তাকিয়ে চোখ জোড়া নামিয়ে আস্তে আস্তে বলল,
–” আপনি তো মাত্রই অফিস থেকে ফিরেছেন ভাইয়া। ক্লান্ত দেখা যাচ্ছে।”
ঠোঁট জোড়া কামড় দিয়ে বলল সাকিব,
–” সমস্যা নেই। তোমাদের জন্য হেল্প করতে পারলে আমার ক্লান্তি নিমিষেই উধাও হয়ে যাবে। সো যাওয়া যাক।”
তিনজন মিলে বের হলো। দিয়া নখ কামড়াচ্ছে। শপিং মলে যদি স্পন্দন সাকিবকে দেখে তাহলে তো আজ শেষ সব। স্পন্দন চায় না তার বোনের প্রতি ভালোবাসা অন্য কেউ দেখুক। সে নিজের মতো করে বোনকে ভালোবাসতে চায় কিন্তু এখন স্পন্দন তো রেগে যাবে। মনে মনে বলছে,
–” কোন দুঃখে যে বড় ভাইয়াকে বলতে গেলাম যাবার কথা। আমি কি জানতাম প্রথম বারেই সে রাজি হয়ে যাবে। ”
দূর থেকে স্পন্দনকে দেখা যাচ্ছে। গায়ে সাদা শার্ট। এই গরমে তার সাদা শার্ট ঘামে ভিজে একাকার। যার কারণে গায়ের কিছু অংশ স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে। বারবার হাত ঘড়ির দিকে তাকিয়ে মাথা ঝাকাচ্ছে। হতে পারে রাগ কমানোর বৃথা চেষ্টা তার। হঠাৎ স্পন্দনের চোখ পড়লো বাড়ির গাড়ি দেখে। রাগে গজগজ করতে করতে গাড়ির সামনে দাঁড়িয়ে ঝাঁঝালো কণ্ঠে বলল,
–” সাত মিনিট চার সেকেন্ড ধরে দাঁড়িয়ে আছি আর তুই কিনা মাত্র এসেছিস?”
সাকিব ছোট ভাইকে দেখে অবাক হলো সাথে ভীষণ খুশি এই ভেবে যে সেও বোনকে পাহারা দেওয়ার জন্য আগেই চলে আসছে।
–” স্পন্দন তুইও আসছিস? ভালো হয়েছে আমি একা এদের সামলাতে পারবো না। তুই থাকলে দিয়া মনির মনে একটা ভয় থাকবে আর আমি থাকলে সে রাতদিন চব্বিশ ঘণ্টাই কিনতে থাকবে।”
স্পন্দন সাকিবকে দেখে দিয়ার দিকে রাগী দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলো। দিয়া ইশারা করে বুঝালো সে কিছু জানে না। স্পন্দন কাজের বাহানা করে চলে যেতে নিবে তার আগেই তার দুটো চোখ সাদা শাড়ি পরিহিতা শুভ্রতার দিকে গেলো। শুভ্রতাকে দেখে তার মন বারবার বলতে শুরু করলো,
–” সৌন্দর্যৈর প্রতীক সাদা। সাদা শাড়ি পরা মেয়েটা কিছুতেই মানুষ হতে পারে না। কোনো অপ্সরী, জান্নাতী হুর।”
নাহ আর তাকানো যাবে না। নিজের চোখদুটো সরে নিয়ে স্বাভাবিক কণ্ঠে বলল সে,
–” সময় মাত্র ত্রিশ মিনিট। যা কিনার তাড়াতাড়ি কিনবে সবাই।”
আগে পথ বাড়ালো স্পন্দন তার পিছু পিছু দিয়া,শুভ্রতা এবং সাকিব হাঁটা দিলো।
দিয়া বিভিন্ন ধরনের জামা পছন্দ করছে আর কিনছে কারণ সময় মাত্র ত্রিশ মিনিট। জুতো থেকে ধরে সামনে যা পড়ছে তাই কিনছে। এ যেন জ্যাকপট খেলার মত। সময়ের মধ্যে যত পারো নেও। সময় শেষ হলে আপসোস করে লাভ নেই। খেলার মতো সেও তার সমস্ত শক্তি দিয়ে খেলতে ব্যাস্ত। সাকিব স্পন্দনের কানে কানে ফিসফিস করে বলতে লাগলো,
–” এই মেয়ে দেখবি আমাদের ফকির বানাবে তো বানাবে বেচারা ভবিষ্যতের জামাইকেও বানাবে। দেখ যে হারে জামা কাপড় প্যাকেট করতে বলছে ওইগুলো ও কোন জন্মে পড়বে? ওর আলমারিতে এখনও যেসব জামা আছে মনে হয় সবগুলো এখনও পরে দেখে নাই। কিছু বল নয়তো আমিই বলব এখন। অপচয় জিনিসটা আমি মোটেও দেখতে পারি না।”
–” ভাইয়া তুই চুপ যা। ওর যা ইচ্ছে ওকে করতে দে। একটা সময় ও নিজেই বুঝতে পারবে। আমরা বুঝালে ভাববে ওকে আর ভালোবাসি না কিন্তু যখন নিজ বুদ্ধি দিয়ে বুঝবে সেদিন এতদিনের ভুল নিজেই সমাধান করে নিবে।”
সাকিব স্পন্দনের কথায় সায় দিলো। স্পন্দনের চোখ এখন শুভ্রতার দিকে কারণ, শুভ্রতা যাই কিনছে সব সাদা। দুটো সাদা শাড়ি, দুটো সাদা জামা। সাজার জন্য কোনো কসমেটিক সে নেইনি। শুভ্রতার এমন বিহেভে অবাক হয়ে জিজ্ঞাসা করলো সাকিব,😑😐
–” শুভ্রতা? তোমার সাদা ছাড়া অন্য রঙ পছন্দ নয়? দেখো কালো, লাল, নীল, হলুদ বিভিন্ন রঙের সুন্দর সুন্দর জামা আছে ওইগুলো তো নিতে পারো।”
–” নাহ ভাইয়া। আমার এইটুকুই যতেষ্ট। কথায় আছে যারা বেশি অপচয় করে তারা শয়তানের ভাই। আমার যেটুকু আছে তাই হবে।”
দোকানদার শুভ্রতার দিকে তাকিয়ে বলল,
–” ম্যাম, ওই কালো রঙটা আপনাকে অনেক মানাবে। এই ডিজাইনটা নতুন আসছে। সাথে ভালো ডিসকাউন্ট।”
–” লাগবে না ভাইয়া।”
শুভ্রতা ও দিয়া অন্য জায়গায় চলে যেতেই সাকিব জামাটা প্যাক করে নেয়। সাকিবের এই কান্ড দিয়া ও শুভ্রতার চোখে না পরলেও স্পন্দনের চোখে ঠিকই ধরা পরলো। কিন্তু স্পন্দন জিজ্ঞাসা করলো না কার জন্য সে জামাটা নিয়েছে এমনকি মনের ভিতর তার কোনো ইচ্ছাও নেই জানার। ত্রিশ মিনিট পর দিয়ার সময় শেষ। এখন তাদের বাসায় ফিরার কথা,
চলবে,
বানান ভুল ক্রুটি ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন।