না_চাইলেও_তুমি_আমার পর্বঃ ০৬

0
3730

না_চাইলেও_তুমি_আমার
পর্বঃ ০৬
জাহান আরা

আজকের আকাশ ঝকঝকে পরিষ্কার,আকাশীরং আকাশ টা দেখেই মুগ্ধ হচ্ছে বারবার চন্দ্র।অজানা কারনেই কেনো জানি চন্দ্রর ভীষণ ভালো লাগছে।
বেলকনিতে থাকা বনসাই শিউলি গাছটি ভরে আছে শিউলি ফুলে।এবার অন্যান্যবারের চাইতে বেশী ফুল ফুটেছে।
মাতাল করা শিউলি ফুলের ঘ্রাণে চন্দ্রর কেমন যেনো আনন্দ-আনন্দ লাগে।
আজ শপিং এ যাওয়ার কথা আছে চন্দ্রর বান্ধবীদের সাথে।

ফজরের নামাজের পরেই বাইক নিয়ে নিষাদ চলে এসেছে চন্দ্রর বাসার নিচে,চন্দ্রকে আজ খুব খুশি খুশি লাগছে দেখতে।
চন্দ্রকে একনজর দেখতে এসেছে নিষাদ,অফিসের কাজে আজ চিটাগাং যেতে হবে। ২ দিন পর আসবে চিটাগাং থেকে।
কাঁধ থেকে ক্যামেরা বাহির করে চন্দ্রর কয়েকটা ছবি তোলে নিষাদ।
এলোমেলো খোপা,টিশার্টে চন্দ্রকে লাগছে কোনো রাজ্যের বেখেয়ালি রাণীর মতো,যে কি-না মনের ভুলে রাণীর সাজ ছেড়ে সাধারণ সাজে বের হয়ে এসেছে।

আচ্ছা,ক্লিওপেট্রা কি এতো সুন্দর ছিলো?
চন্দ্রর মতো?

হতেই পারে না,আমার বউ সবার চাইতে সুন্দর,আমার রাজ্যের রাণী।
চন্দ্রকে উদ্দেশ্য করে মনে মনে বলে নিষাদ,”ভেবো না রাণী,তোমার হৃদয় রাজ্য আমি জয় করে নিবো,আজ হোক কাল হোক।”

নিষাদের ইচ্ছে করছে চন্দ্রর এলোমেলো খোপা ঠিক করে দিতে।কিন্তু ইচ্ছে থাকলেও উপায় নেই এখন নিষাদের।

ছবি তুলে বাইকে উঠে বাইক স্টার্ট দিয়ে চলে যায় নিষাদ।

মারিয়া বসে বসে শাহেদ কে কল দিচ্ছে,ওয়েটিং পাচ্ছে বারবার।
সর্বমোট ১৫৬ বার কল দিলো শাহেদকে মারিয়া।
তারপর ফোন রেখে দেয়।
৩ দিন পর রাত্রি আপুর বিয়ে,বিয়েতে পরে যাওয়ার জন্য শপিং এ যাবে আজ ৫ বান্ধবী মিলে।৫ জনই ম্যাচিং ড্রেস পরবে আগেই ঠিক করে রেখেছে।

শাড়ি পরে রেডি হয়ে বের হয়ে যায় মারিয়া,বাস স্টপে অপেক্ষা করছে লিপি,সিমি,ইতু।মারিয়া চন্দ্রকে কল দেয়।

চন্দ্র কল কেটে দেয়,২ মিনিটের মধ্যে চন্দ্র ও চলে আসে গাড়ি নিয়ে।
পিছনে লিপি,সিমি,ইতু উঠে বসে।মারিয়া সামনে বসে চন্দ্রর সাথে।

চন্দ্র গুনগুনিয়ে গান গাইছে আর ড্রাইভ করছে।চন্দ্রকে এতো খুশি দেখে মারিয়া জিজ্ঞেস করে,”কি রে,এতো খুশি যে আজকে?
রাত্রিপুর দেবর-টেবর আছে না-কি,লাইন হয়ে গেছে বুঝি তার সাথে?”

চন্দ্র কিছু বলার আগেই সিমি চিৎকার করে বলে উঠে,”খবরদার,রাত্রিপুর দেবর কিন্তু আমার,আমি আগেই বুকিং দিয়ে রাখছি,আমার পুরোপুরি হক আছে রাত্রিপুর দেবরের উপর”

“তোর লিস্টে রাত্রিপুর দেবর কতো নাম্বার রে সিমি,আগে সেটা বল?”

লিপির কথা শুনে সবাই হাহা করে হেসে উঠে সিমি ছাড়া।

হাসি থামিয়ে চন্দ্র বলে,”প্রথমত আপার দেবরের সাথে আমার লাইন-টাইন কিছুই হয় নি।দ্বিতীয়ত আপার দেবর আছে কি নাই তাই জানি না আমি।যদি থাকতো তবে তো এনগেজমেন্টের দিন দেখতাম সবাই”

ফাটা বেলুনের মতো চুপসে যায় সিমি।কিছুক্ষণ পর আবার সোল্লাসে চেঁচিয়ে উঠে বলে,”দোস্ত,শুন রবির কাস্টমার কেয়ারে কল দিছিলাম কাল।একটা ছেলে কথা বলছে এত্তো জোস ভয়েস ওর,জাস্ট ওয়াও!
আমি তো ওখানেই ফিদা।”

“কাস্টমার কেয়ারে কল দিলি কেনো?”

“আরে বলিস না,এই সেবা সেই সেবা,ডাইল-কচু কতো কিছুর মেসেজ আসে আর আমার ফোনের টাকা কেটে নিয়ে যায়।তার অভিযোগ করতে কল দিছি।”

“তা অভিযোগ কি করছস শেষ পর্যন্ত? ”

“না রে চন্দ্র,ওই ছেলের কথা শুনেই আমি ওরে নিয়ে কল্পনার জগতে চলে গেছি,মনেই ছিলো না আর অভিযোগ করার কথা”

পুনরায় হাসির রোল পড়ে যায় সিমির কথা শুনে।

পার্কিং-এ গাড়ি পার্ক করে সবাই শপিং মলে যায়।অনেকসময় ধরে খুঁজতে খুঁজতে অবশেষে শাড়ি পছন্দ হয়,মেরুনরং শাড়ি নেয় ৫ টা।

টুকটাক আরো কেনাকাটা করতে করতে আরো কিছু সময় যায়।
শপিং শেষ করে সবাই মিলে বের হতে যাবে সেই সময় লিমনের সাথে দেখা হয়ে যায় সবার।

নিষাদের বন্ধুদের সবাই চিনে ওরা।

“আসসালামু আলাইকুম ভাবী,কেমন আছেন?”

চন্দ্রর গলা শুকিয়ে কাঠ হয়ে যায় লিমনের মুখে ভাবী ডাক শুনে।
মনে মনে হাজারটা গালাগাল দেয় চন্দ্র নিষাদ কে।কেনো বিয়ে করলো নিষাদ।

“ওয়ালাইকুম সালাম,কেমন আছেন ভাইয়া?”মারিয়া জবাব দেয়।

হাঁফ ছেড়ে বাঁচে চন্দ্র যেনো।লিমনের চোখে সানগ্লাস ছিলো বলে মারিয়া বুঝতে পারে নি লিমন কার দিকে তাকিয়ে সালাম দিয়েছে।

লিমন বুঝতে পারে কি ভুল করে ফেলতে যাচ্ছিলো সে সবার সামনে চন্দ্রকে ভাবী ডেকে।
ভুল শুধরে নিয়ে সানগ্লাস খুলে মারিয়ার দিকে তাকায়।

” কাজটা ভালো করেন নি ভাবী,এভাবে কেউ কারো সাথে প্রতারণা করে না,ভালোবাসার মর্যাদা যদি রাখতে না-ই পারবেন তবে ভালোবাসলেন কেনো?”

“আমি ভুল করে ফেলেছি ভাইয়া,আমি সব ছেড়ে নিষাদের কাছে ফিরতে চাই।নিষাদ কি সত্যি বিয়ে করেছে ভাইয়া?”

“হ্যাঁ ”

“কাকে?”

“তা তো আমি বলবো না,সময় হলে দেখবেন সেটা”

লিমন চলে গেলো আর কিছু জিজ্ঞেস করার সুযোগ না দিয়ে।

গাড়িতে বসে মারিয়া অনবরত কাঁদতে থাকে। সবাইকে বাসায় ড্রপ করে দিয়ে চন্দ্র বাসায় ফিরে আসে।
ড্রয়িংরুমে ঢুকতেই মাইনুল ইসলাম ও আমিরের সামনে পড়ে চন্দ্র।

“কোথায় ছিলি এতোক্ষণ?”

বাবার প্রশ্নের উত্তর আমির নিজেই দেয়,”চন্দ্র বান্ধবীদের সাথে শপিং এ গিয়েছিল বাবা।”

“ওহ আচ্ছা, যা তাহলে খেয়ে নে গিয়ে,তোর বিকাশে টাকা পাঠিয়ে দিচ্ছি,কিছু কেনাকাটা বাদ থাকলে নিয়ে নিস”

বাবা ভাইয়ার সামনে যতোক্ষণ থাকে চন্দ্র আতংকিত হয়ে থাকে যেনো।ভীষণ অস্থির লাগে তখন চন্দ্রর।

রাত্রি ফ্লোরে শুয়ে বিছানায় পা তুলে দিয়ে কথা বলছে।

চন্দ্র রাত্রিকে এভাবে কথা বলতে দেখে ফিক করে হেসে উঠে।

“আপা,প্রথম প্রেমে পড়লে মানুষের যে অবস্থা হয় তোর ও এখন সেই অবস্থা।”

চন্দ্রর টিটকারি শুনে রাত্রি উঠে বসে ফ্লোরে।

“ভাইয়া যে সারাদিন তোর সাথে এতো কথা বলে,তো ডিউটি করে কখন রে,থানার ওসি হলে কি এরকম ফাঁকিবাজি করে না-কি,দেশের সেবা কি করে উনি?”

“আমার জামাই তো তা-ও অফিসে গিয়ে কথা বলে,তুই দেখিস তোর জামাই যখন হবে সে অফিসেই যাবে না।”

বলে রাত্রি হেসে উঠে।
চন্দ্রর মুখ থমথমে হয়ে যায়। বারান্দায় চলে যায় চন্দ্র।নিজেকে নিজেই বলে,”জামাই?
আমার ও তো আছে,সে যে কি ভীষণ যন্ত্রণার নাম আপা,তুই বুঝবি না,কি আগুনে আমি পুড়ছি তা শুধু আমি জানি”

বিকেলে সবাই বসে বসে গল্প করছে,বাসায় আত্মীয় স্বজনরা আসতে শুরু করেছে ইতোমধ্যে।
ডাইনিং টেবিলে বসে মাইনুল ইসলাম,আমির,সুরমা,রাত্রি,চন্দ্র বসে মেন্যু ঠিক করছে।

বাহিরে কলিং বেল বাজতেই আমির উঠে গিয়ে দরজা খোলে।
চারপাশে তাকিয়ে কাউকে দেখতে পায় না আমির।
ভিতরে এসে দরজা লাগাতে যাবে তখনই চোখে পড়ে,দরজার সামনে একটা ফুলের তোড়া পড়ে আছে।

আমির তুলে নিয়ে দরজা বন্ধ করে দেয়।
ডাইনিং টেবিলে গিয়ে সেটা রাখতেই চন্দ্রর কেমন বুক কেঁপে উঠে। সবগুলোই জারবেরা আর কাঠগোলাপ ফুল।
এগুলো তো চন্দ্রর প্রিয় ফুল,এই ফুল কে রেখে গেলো?
নিষাদ?

চন্দ্রর কেমন ভয় হতে লাগলো। এরকম সারপ্রাইজ দেওয়ার অভ্যাস নিষাদের আছে।

আমির তোড়া খুলতেই ভিতরে একটা ছোট বক্স আর চিঠি দেখতে পায়।
২ বোনের দিকে কড়াভাবে তাকিয়ে আমির চিঠি খোলে।জোরে জোরে পড়ে,

“প্রিয় বউ,
অতটা দূরে নয় আকাশ, যতোটা দূরত্বে তোমার বসবাস ”
-Ni…..

বক্স খোলে আমির।বক্সে একজোড়া পায়েল,নীল পাথরের।

চন্দ্রর দম আটকে আসছে যেনো এসব দেখে।নিষাদ এরকম একটা বোকামি কেনো করলো?
চন্দ্র কিছুতেই বুঝতে পারছে না।

ভালোবাসা দেখাতে এসেছে?
এভাবে চন্দ্রকে বিপদে ফেলে দিয়ে? কেনো বউ লিখতে গেলো নিষাদ?
এবার যদি বাবা-ভাইয়া বুঝে যায় ওদের বিয়ে হয়েছে।
নিষাদের উপর আরো রাগ উঠে চন্দ্রর।

সকাল বেলা মনে যে অজানা আনন্দ ছিলো এখন সেই আনন্দ আতংকে রূপ নিলো।দিন শেষে এই বিপদে পড়বে বলেই কি সকালে এতো ফুরফুরে ছিলো মেজাজ?

“এসব কার?”আমিরের প্রশ্নে চন্দ্রর চেয়ার সহ কেঁপে উঠে।

চন্দ্র কথা বলতে পারছে না।কি বলবে চন্দ্র এখন?

সুরমা,আমির,চন্দ্রর বাবা সবাই তাকিয়ে আছে চন্দ্রর দিকে।

আমিরের চোখমুখ শক্ত হয়ে উঠেছে।যেনো এক্ষুনি ঝাঁপিয়ে পড়বে চন্দ্রর উপর আমির।

ভয়ে চন্দ্রর গলা দিয়ে কথা বের হয় না।

চলবে???

#কবিতাঃ সালমান হাবিব ভাইয়ের লিখা।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here