ভালোবাসার উষ্ণতা পাঠ-৯

#ভালোবাসার_উষ্ণতা
#৯ম_পর্ব

প্রাপ্তি এক মিনিট দেরি না করে অয়নের রুমের দিকে রওনা হয়। সেখানে যা দেখতে পায় তাতে মূহুর্তে হাত পা জমে যায় তার। অয়ন তখন একটা ইজি চেয়ারে হেলান দিয়ে বসে রয়েছে। ডান হাত থেকে টুপ টুপ করে রক্ত পড়ছে। ইজি চেয়ারের পাশে কালচে রক্তগুলো জমাট বেধে রয়েছে। লোকমান কাকা একমূহুর্ত দেরি না করে ডাক্তার ডেকে আনলেন। ডাক্তার হাতের রক্ত পরিষ্কার করে ব্যান্ডেজ করে দিয়েছে, সাথে ঘুমের ঔষধ খাওয়িয়ে তাকে ঘুম পাড়িয়ে দিয়েছে। চলে যাবার সময় যাতে ডান হাতে পানি না লাগে সেদিকে খেয়াল করতে বলেছেন। অতিরিক্ত এলকোহলের নেশায় ভাঙ্গচুর করতে করতে হাতটা বাজে ভাবে কেটে গেছে অয়নের। প্রাপ্তির এরুপ রুঢ় আচরণ যেন একদম মেয়ে নিতে পারে নি অয়ন। অয়নের এই দুইটা দোষ, ওর রাগ আর ওর জিদ। এই দুইটায় অন্ধ হয়ে জীবনে কতো এ ভুল করেছে তার হিসেব হয়তো জানা নেই। প্রাপ্তি নিজের রুমের দিকে যেতে নিলে লোকমান কাকা তাকে থামিয়ে দেয়,
– মা, তোমাকে কিছু বলার আছে আমার।
– কি হয়েছে লোকমান কাকা?
– আজ তোমাকে কিছু কথা বলব। কথাগুলান আগেই বলা উচিত ছিলো। কিন্তু অয়ন বাবার জন্য বলতে পারি নাই। হয়তো কথা গুলো শুনলে তুমি অয়ন বাবার উপর আরো রাইগে যাবা। কিন্তু কথা গুলো না বললে পরে ব্যাপারটা ঘোলাটেই থাকবে।
– কি কথা কাকা?
– তোমার বিয়া, বড় বাবার সাথে হয় নাই। হইছে অয়ন বাবার সাথে।
– জ্বী?? আপনি কি উল্টা পাল্টা কথা বলছেন?
– আমি উল্টা পাল্টা কথা বলি নাই মা, এটাই সত্যি। মা তোমাকে কিছু কথা কই, মন দিয়া শুনবা। তারপর তোমার যদি মনে হয় অয়ন বাবার ভুল আছে, তুমি ওরে যা শাস্তি দিবা অয়ন বাবা তাই মাইনে নিবে।
-…….
– বড় বাবা আর অয়ন বাবা আপন ভাই না। অয়ন বাবাকে দত্তক নিছিলেন ম্যাডাম। তারপর, একটা এক্সিডেন্টে সাহেব আর ম্যাডাম মারা যান। এর পর বড় ম্যাডাম মানে তাগোর দাদীজানই আবরার বাবা, আবীর বাবা আর অয়ন বাবাকে দেখাশুনা করেন, বড় করেন। আবীর আর আবরার বাবার বয়সের তফাৎ ২ বছর। বড় হইলে আবরার বাবাকে সিকদার কোম্পানীর সি.ই.ও বানানোর সিদ্ধান্ত নেন বড় ম্যাডাম। অয়ন বাবা পালিত বলে তারে কোনোদিন তাদের মধ্যে গুনতো না উনি। এই কারণে আবরার বাবাই অয়ন বাবার সব কিছু ছিলো। যেদিন আবরার বাবারে সব কিছুর দায়িত্ব দেবার চান বড় ম্যাডাম সেই দিন অয়ন বাবা মনে মনে খুব খুশি হইছিলেন। কিন্তু এই খুশি টিকলো না, আবীর বাবা হিংসার কারণে আবরার বাবার নানা রকম ক্ষতি করার কথা চিন্তা করেন। সেটার শাস্তি অবশ্য অয়ন বাবা তারে দিছে। তারপর সাত মাস আগে আবরার বাবা একটা মাইয়ার সাথে দেখা করার জন্য গাড়ি নিয়ে বাইর হইছিলো। তারপর আর কি আবীর বাবার কথায় একটা ট্রাক তার গাড়িরে এক্কেবারে পিসে ফালায়। তার ফলাফল তোমার সামনে। ছয় মাস আবরার বাবা কোমায় ছিলো। এতো চিকিৎসা কোনো কাজে আসে না। এগুলো শুধু বড় ম্যাডাম আর অয়ন বাবা জানতো। বড় ম্যাডাম সিদ্ধান্ত নেয়, আবরার বাবার এই ঘটনা ধামাচাপা রাখবেন। তাই উনি অয়ন বাবাকে বিভিন্ন মেক আপ এর দ্বারা আবরার বাবার মতো সাজায়ে সবার সামনে আনেন। সবাইরে জানান আবরার বাবার শুধু মুখটা পুইড়া গেছে আর হাটতে পারতেছেন যা পড়ে ঠিক হইয়া যাবে। এবং এই নাটকটারে আরো ও বাড়াইতে আবরার বাবার বিয়ের ঘোষণা দেয়। এই নিয়ে অয়ন বাবা আর বড় ম্যাডামের অনেক কথা কাটাকাটি হয়। নিজের সব সম্পত্তি আর উত্তরাধিকারীর ভালোর জন্য অয়ন বাবারে ঢাল বানাইয়ে রাখে বড় ম্যাডাম। বিয়ে করবে অয়ন বাবা, এমনকি বিয়ের পর বাচ্চাটাও তারই হবে কিন্তু সবাই জানবে আবরার বাবার বিয়ে হইছে, বাচ্চাটাও তার। তোমার সামনে আবরার বাবা যতবার দাঁড়াইছে সেটা অয়ন বাবা ছিলো। জানি বিশ্বাস করতে তোমার একটু কষ্ট হইতেছে কিন্তু এটা সত্যি। আর আবরার বাবা যখন ভালা হইয়ে যাবে তখন একটা ডিভোর্স এর একটা নাটক করতো। এই কারণেই ছোট পরিবারের একটা মেয়ে খুইজে বাইর করতে অয়ন বাবাকে আদেশ দিছিলেন। অয়ন বাবা বাধ্য হইছে এগুলা করতে। তবে ওর দোষ ছিলো, নিজের জিদের বসে তোমারে এই গোলকধাঁধাঁয় রাখছিলো। ও ভাবছিলো তুমি টাকার লোভে তারে বিয়ে করছিলা। ও ছোট বেলা থেকে ভালোবাসার জন্য ছেলেটা ক্ষুধার্ত ছিলো। সে চাইছিলো, তুমি যাতে তারে ভালোবাসো। তার সাথে বিয়া হইছে বা তার টাকার জন্য তার কাছে যাতে তুমি না থাকো। আমি জানি এতোদিন এই ব্যাপার গুলা তোমার কাছে লুকায়ে কাম ডা ভালা করে নাই অয়ন বাবা। কিন্তু বড় ম্যাডামের কথার উপর কথা বলার সাহস বা অধিকার কিছুই নাই তার। এখন তুমি একটু ভাইবে দেইখো তুমি কি করবা।

লোকমান কাকা কথাগুলো বলে রুমের বাইরে চলে গেলো। প্রাপ্তি ঠায় দাঁড়িয়ে আছে, তার চোখের পানি যেন থামতেই চাচ্ছে না। অয়নের সেই কাজগুলো করার কি দরকার ছিলো! তাহলে দুজনকেই এতোটা কষ্ট পেতে হতো না। আজ হয়তো তাদের ও একটা সুখের সংসার থাকতো। একদিকে ভালোই হয়েছে, এতোদিনের দোটানার অবসান ঘটলো। মনটা হয়তো একারণেই এই মানুষটার দিকে ঘুরতো। এই মানুষটার কথা সারাক্ষণ ভাবতে চাইতো বেহায়া মনটা। শুধু সম্পর্কের মার প্যাঁচে নিজেকে শিটিয়ে রাখতো প্রাপ্তি। আজ এই ধোঁয়াশাও পরিষ্কার হয়ে গেছে। কিন্যু এতো সহজে এই লোকটাকে ক্ষমা করে দিলে তো হবে না, শাস্তিতো পেতেই হবে। প্রাপ্তি মনে মনে ফন্দি আঁটে কিভাবে অয়নকে শাস্তি দেয়া যায়! এখন শুধু সকালের অপেক্ষা।

সকাল ৯টা,
মুখে পানির ছিটা পড়তেই ঘুম ভেঙে যায় অয়নের। পিটপিট করে চোখ খুলতেই দেখে কালো শাড়ি পড়ে এক নারী দাঁড়িয়ে আছে আয়নার সামনে। এই শাড়িটি কাল রাতে কিনে এনেছিলো অয়ন। খুব নিপুন করে চুল মুছছে সে। সকালের শুভ্রতা যেন নারীটি প্রতিটি কণায় জড়িত। নারীটি আর কেউ নয় তার মায়াবতী, তার প্রাপ্তি। প্রথমে মনে হয়েছিলো এটা হয়তো কল্পনা। ঘুমের ঔষধ আর এলকোহলের ঘোরে মিষ্টি স্বপ্ন দেখছে সে। সবচেয়ে আকর্ষণীয় লাগছে ঘাড়ের গাঢ় কালো তিলটি। খুব ছুয়ে দিতে মন চাচ্ছিলো, পরক্ষণে রাতের ঘটনাগুলো মনে পড়তেই মনটা ছোট হয়ে গেলো। চোখ কচলে সামনে তাকালে দেখতে পায় রাগী রাগী চোখে প্রাপ্তি তার দিকে তাকিয়ে রয়েছে। জিজ্ঞাসু চোখে তাকাতেই বলে উঠে,
– কি ভেবেছিলেন, সুইসাইডের নাটক করলে আমি পটে যাবো??
– তুমি কল্পনা নও?
– কল্পনা হতে যাবো কেনো? সশরীরে দাঁড়িয়ে আছি। সকাল সকাল নেশা করেছেন নাকি?? উঠুন, উঠুন। বেলা হয়ে এসেছে, নবাব এখানে ভস ভস করে ঘুমোচ্ছে।
– আমার ক্ষুদা লেগেছে।
– ফ্রেশ হয়ে নিচে আসুন, খাবার রেডি।
– প্রাপ্তি, তোমাকে কিছু বলবো
– আমি কিছু শুনবো না, এখনই ফ্রেশ হয়ে নিচে নামেন।

বলেই নিচে চলে আসে প্রাপ্তি। পেছনে ঘুরে তাকালে হয়তো অয়ন হতবাক চেহারাটা চোখে পড়তো। খুব হাসি পাচ্ছে তার। অপরদিকে প্রাপ্তির বদলে যাওয়া অয়নের মনে শত প্রশ্নের আবির্ভাব ঘটাচ্ছে। ফ্রেশ হয়ে নিচে যেতেই চক্ষু চোরাকগাছ, আজ সকালের নাস্তা সব অয়নের পছন্দের। লোকমান কাকার দিকে চোখ পড়তেই তিনি না সূচক মাথা নাড়লেন। তার মানে প্রাপ্তি এসব রান্না করেছে। মা মারা যাবার পর থেকে লোকমান কাকা ছাড়া অয়নের পছন্দ না পছন্দ কেউ খেয়াল রাখে নি।
– কি হলো, দাঁড়িয়ে আছেন কেন?
– এগুলো তুমি করেছো?
– না, আসমান থেকে ডেলিভারি এসেছে।
– সোজা কথার সোজা উত্তর দিতে কি হয় তোমার?
– কিছুই হয় না, বসুন বেড়ে দিচ্ছি।

আজ বহুদিন পর তৃপ্তি করে খাবার খেয়েছে অয়ন। কালরাতের ঘটনার পর, প্রাপ্তিকে এভাবে দেখবে আশা করে নি। খাওয়ার মাঝে ফোনটা বেজে উঠে। ফোনের স্ক্রিনে তাকাতেই “রাইসা আপু” নামটা ভেসে উঠে। ফোন রিসিভ করতেই উত্তেজিত হয়ে পড়লো অয়ন। অপরপাশ থেকে শুনতে পেলো…..

চলবে

( অনেকেই কমেন্ট করছেন আমি পরকিয়ার সিন লিখেছি, গল্পটা বাজে দিকে যাচ্ছে, আমি অরুচিকর জিনিস প্রমোট করছি। আজকের পর্বটা হয়তো আপনাদের মতামত বদলাতে পারবে। স্বামী স্ত্রীর মাঝে রোমাঞ্চকর কোনো দৃশ্য লেখা শুধু অরুচিকর হয় আমার বলার কিছু নেই। আমি হয়তো লেখক হিসেবে অপারগ হয়েছে আপনাদের কনসেপ্টটা বুঝাতে। এখন অনেকেই বলবেন এটা অবাস্তব। আমি আমার কল্পনা দিয়ে লিখি, হয়তো বাস্তব আর অবাস্তবতা মিলিয়ে লেখার চেষ্টা করি। তবে বাস্তবজীবনে যদি লেখার সকল ক্যারেক্টার পাওয়া যেত তবে আপনার আর আমার পাশে হিমু, মিছির আলী, কমলাকান্ত, শ্রীকান্ত, কিশোর, হ্যারি পটার, বেলা, সার্লোক হোমস, ফেলুদা, বমকেশ ইনারা সবাই বসবাস করতো। আমার কথায় যদি কেউ কষ্ট পেয়ে থাকেন তাহলে আমি ক্ষমাপার্থী। আপনারা আমার লেখা পড়েন বলেই আমি লেখিকা। আপনাদের সমালোচনা শিরধার্য। আজকে পর্ব হয়তো আপনাদের কিছু কিছু প্রশ্নের উত্তর দিতে সক্ষম। আগামীকাল ইনশাল্লাহ এই সময়ে পরবর্তী পর্ব পোস্ট করবো 😊)

মুশফিকা রহমান মৈথি

৮ম পর্বের লিংক

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here