#ভালোবাসি_প্রিয়
(রিপোস্ট)
#পর্ব_১৬
#জারিন তামান্না
_তবে চাইবো এমন কিছু ঘটার আগেই যেন আমার অস্তিত্ব ফুরিয়ে যায় এই পার্থিব জগতে ।কারণ, এখন মৃন্ময়ী ছাড়া অর্ধজীবিত থাকার মত মরণ যন্ত্রণা সহ্য করার ক্ষমতাটা শেষ হয়ে গেছে আমার…বহু আগেই। ভরাট শূন্যতায় ডোবা ওই শান্ত চোখের তারায়! পদ্মপাতার জলের মতো টলটলে চাহনীর ওই মুখখানায়!
সিফাতের এহেন কথায় পলক স্তব্ধীভূত।দুই একটা হার্টবিটও মিস করে গেল বুঝি সে।বিষ্ফোরিত নয়নে তাকিয়ে আছে সে। দৃষ্টি অনির্ধারিত কোথাও একটা।কিংবা কোথাও নয়। সিফাতের কথাগুলো তখনো দাপিয়ে বেড়াচ্ছে মস্তিষ্কের শিরায় শিরায়। নিশ্বাসের চলন ক্রমশ বাড়ছে তার।একপ্রকার ঘোরের মধ্যে আছে সে।মানুষটার সাথে আর পরিচয় মাসখানেকও হয়নি।তবে,মানুষটা তাকে তার অনেকটা আগে থেকেই চিনে,জানে। কিন্তু এতে করে কি কাউকে এভাবে নিজের জন্য চাওয়া যায়? তার অস্তিত্বের সাথে নিজের অস্তিত্ব জুড়ে নেওয়া যায়! কোন উত্তর ভেবে পায় না পলক।
এদিকে পলকের কোন সাড়া না পেয়ে হতাশ হলো সিফাত। মনে মনে ভাবলো,”মেয়েটা এমন কেন?এরপরেও কি সে বুঝবে না আমি তাকে কতটা চাই!নিজের করে চাই।”একটা হতাশার শ্বাস ছেড়ে গম্ভীর স্বরে ডাকলো পলককে।
_মৃন্ময়ী.. পলকের ঘোর কাটলো সিফাতের ঠান্ডা অথচ গম্ভীর স্বরে। চমকে তাকালো সে ফোনের স্ক্রিনে। দেখতো পেলো ভীষণরকম শান্ত চোখে সিফাত তাকিয়ে আছে তার দিকে।সেই দৃষ্টিতে কিছু একটা ছিল।হয় তো তখনো পলকের থেকে কিছু শোনার তাগিদটা সিফাতের চোখের ভাষায় প্রকাশ পাচ্ছিল। পলক সেটা দেখলোও কিন্তু ঠিক কি বলবে বুঝে উঠতে পারছিল না সে। তাই চুপ করে রইলো। পলকের এভাবে চুপ করে থাকাটা আর ভাল্লাগছিলনা সিফাতের। তাই এই মূহুর্তটাকে সযত্নেই এড়িয়ে গেল সে।কথার প্রসঙ্গ পাল্টে জিজ্ঞেস করলো,
_রাতে খাওয়া হয়েছে আজ?
একটা ছোট শ্বাস ফেললো পলক। তারপর স্বাভাবিকভাবেই উত্তর করলো সে,
_না। আপনি খেয়েছেন?
পলকের প্রশ্নের কোন জবাব দিল না সিফাত। চাইলেও পলকের প্রতি হওয়া হতাশাকে পুরোপুরি এড়িয়ে যেতে পারছে না সে। তাই পলকের প্রশ্নকে ছাপিয়ে গিয়ে বললো,
_যান। ফ্রেস হয়ে আসুন। তারপর, খেয়ে আমাকে জানান।
সিফাতের এই কথায় বোকার মত ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে আছে পলক। তা দেখে সিফাত আবারও বললো,
_কি হলো…কি বললাম আমি? নামো বিছানা থেকে….হারি আপ!
শেষ কথাটা একটু জোরেই বললো সিফাত। ধমকের স্বরে। না চাইতেও কি একটা চাপা রাগ কাজ করছে তার ভেতর। তার এহেন ধমকে কেঁপে উঠলো পলক। তারপর,বাধ্য মেয়ের মত তড়িঘড়ি করে নেমে গেল বিছানা থেকে। ছুটলো ওয়াসরুমের দিকে।
একটা দীর্ঘশ্বাস বেরিয়ে এলো সিফাতের ভেতর থেকে।পলক নেই ফোনের ওপারে। ভালো লাগছে না তার কিছু। এটাকে পুড়িয়ে নিঃশেষ করা প্রয়োজন।তাই,আস্তে করে ফোনের লাইনটা কেটে দিয়ে উঠে দাঁড়ালো সে। উদ্দেশ্য বেলকনিতে গিয়ে সিগারেট খাওয়া। বেড সাইড টেবিল থেকে সিগারেটের প্যাকেটটা হাতে নিতে যাবে ওমনি ল্যাপটপে একটা ই-মেইলের নোটিফিকেশন টোন বেজে উঠলো। প্যাকেটটা রেখে ল্যাপটপের কাছে এগিয়ে গেল সে। এয়ারলাইন্স এজেন্সি থেকে ই-মেইল এসেছে। হঠাৎ এ সময় ই-মেইল দেখে ভ্রু কুচকে গেল সিফাতের। কিঞ্চিৎ কৌতহল নিয়েই ওপেন করলো সেটা। একটা নোটিশ দিয়ে ই-মেইলটা করা হয়েছে। ই-মেইলটা পড়ার পর হতাশাটা আরও বেড়ে গেল তার।খানিকটা দোটানায় পড়ে গেল সে।খানিকটা সময় চুপ করে বসে রইলো । ভাবলো কিছু একটা। তারপর, আবারও ডায়াল করলো পলকের নাম্বারে। ব্যাপারটা পলককে জানানো দরকার। তার মতামতটাও জরুরি। ভীষণ জরুরি।
________________________________
ওয়াসরুম থেকে মাত্রই ফ্রেস হয়ে এসেছে পলক। ড্রেসিংটেবিলের সামনে বসে চুল আঁচড়াচ্ছে। এরপর খেতে যাবে সে।ঠিক সেই সময়ই ফোনটা বেজে উঠলো আবারও। মিনিট দশেকের মাঝেই আবার সিফাতের কল দেখে তটস্থ হলো পলক। সময় নিয়ে রিসিভ করলো ফোনটা। মৃদু স্বরে ‘হ্যালো’ বলতেই সিফাতের শান্ত কণ্ঠে জিজ্ঞেস করলো,
_খাওয়া হলো?
_না..এই তো যাচ্ছিলাম মাত্রই। ওমনি আপনি ফোন করলেন।
_অহ! কেমন খাপছাড়া শোনালো সিফাতের কন্ঠটা।
_জ্বী।
_আচ্ছা,যান তাড়াতাড়ি। আর খাওয়া শেষ করে এসে কল করবেন আমাকে। একটা ইম্পর্টেন্ট বিষয় ডিসকাস করার আছে।
কোন জরুরি কথা আলোচনা করবে এটা ভেবে কিছুটা চিন্তায় পড়ে গেল পলক নিজেও।জিজ্ঞেস করলো,
_কি কথা? বলুন আপনি।আমি পরে গিয়ে খেয়ে নিবো,সমস্যা নেই কোন।
_না।আপনি ধীরেসুস্থে খেয়ে আসুন। এসে নক দিন।আমি অপেক্ষা করবো।
_কিন্তু..আপনি বললে বলতে..
_উ…হুউউ,মৃন্ময়ী। এত বেশি বকো কেন মাঝে মাঝে? যেটা বললাম,করো সেটা। যাও এখনই। -বিরক্তি মাখা স্বরে আর বেশ কড়া গলায় বললো সিফাত,যেটা মূহুর্তেই কিঞ্চিৎ ভয় পাইয়ে দিল পলকে । মনে মনে ভাবলো,’উনি কি রেগে আছেন কোন কারণে!নয় তো আজ বারবার এভাবে বিনা মেঘের বজ্রপাতের মত আমার উপর গর্জে উঠতেছে ক্যান! ধুর…আজ দিনটাই খারাপ আমার!’ তারপর,আগের মতো শান্তস্বরে বললো,
_আচ্ছা।
_হুম।যান এবার। বলেই ফোন রেখে দিল সিফাত।
পলকও আর কথা না বাড়িয়ে চলে গেল ডাইনিরুমে।
_________________________________
২ দিন পর,
সিফাতদের বাসার বড় লিভিংরুমটায় একত্রিত হয়ে বসে আছে বাসার সব সদস্যরা। সকলেরই মুখ গম্ভীর। শুধুমাত্র সিফাতের বাবা ইশতিয়াক আলম আর সারা বাদে। তাদের ভাব এমন যে,যেটা ঘটেছে তাতে তাদের খুব একটা কিছু যায় আসে না।তারা সোফায় বসে আরামসে চা’য়ে চুমুক দিচ্ছে আর নিজেদের মত নিউজপেপার আর মোবাইল ঘাঁটছে।তবে বাকিদের মুখে চিন্তারভাব স্পষ্ট। একরকম গোমট পরিবেশ বিরাজমান। সিফাতের কোলে ইয়ানা। আজ সকাল সকাল ফোন করে রেহানা,সারা,জহিরুল আর রুকুকে বিকালে বাসায় আসার জন্য জরুরি তলব করে আনা হয়েছে। সিফাতের কি যেন জরুরি কথা আছে। রিহান অফিসিয়াল মিটিং এর জন্য দেশের বাইরে গেছে গতকাল।তবে তার মা রেহানা আর তাদের মামা জহিরুল সাহেব এসেছেন। সবাই চুপচাপ বসে আছে বেশকিছুক্ষণ যাবৎ। তারপর নিরবতা ভেঙে মিসেস. রেহনুমা বললেন,
_তোর এবার বছর না গেলেই হয় না? জীবনে সুযোগ তো কত সময়ই আসে রে বাবা! এদিকে প্রায় সবাইকেই বলা হয়ে গেছে। এখন পোস্টপর্ন করলে কেমন দেখায় না ব্যাপারটা?
_আমি কথা বলেছি এজেন্সির সাথে। লিস্টটা আগেই করা হয়েছে। যেতেই হবে। অনেকটা বড় সুযোগ এটা আমার জন্য। আমি চাইলেই এটা ছেড়ে দিতে পারি।কিন্তু,সেটার থেকেও বড় কথা এর আগে ইরেসপন্সিবল বিহেভিয়ারের জন্য আমাকে সাসপেন্ড করা হয়েছিল।সেটা একটা ব্যাড রেকর্ড আমার ক্যারিয়ারের জন্য।আর এখন যদি এই ট্রেনিংটাও ক্যান্সেল করে দেই শুধুমাত্র বিয়েটার জন্য তাহল এটা আরেকটা ব্যাড রেকর্ড হয়ে দাঁড়াবে আমার ক্ষেত্রে।
_পলক জানে এটা? -সিফাতের কথা শেষ হতেই পাশ থেকে জিজ্ঞেস করলো রুকু।
_হ্যাঁ। ই-মেইল পাওয়ার পরেই বলেছি ওকে।
_তো ও কি বললো? -রেহানা জিজ্ঞেস করলো সিফাতকে।
_ওর কোন আপত্তি নেই। তবে, আমার ফ্যামিলি থেকে ব্যাপারটা ওর ফ্যামিলিতে জানাতে বলেছে। তারপর মিসেস.রেহনুমাকে উদ্দেশ্য করে বললো,
_মা,তুমি একবার ফোন করে নয় তো ও বাড়ি গিয়ে ওদের সাথে আলোচনা করো নিও। তাছাড়া,বিয়েটা তো আর ক্যান্সেল হচ্ছে না। জাস্ট মাস দেড়েক পিছাচ্ছে। আর হ্যাঁ,তোমাদের বা তাদের যদি কোন আপত্তি না থাকে তবে আমি রেজিস্ট্রি করেও যেতে রাজি আছি। পরে না হয় ফাংশন করে অফিসিয়ালি বিয়েটা হলো আবার।
আচমকা এভাবে আকদের কথা শুনে চমকে উঠলো সবাই। ব্যাপারটা সত্যি ভেবে দেখার মত। বিয়েটা ঘরোয়াভাবে হয়ে থাকলেও হয়। খারাপ বলেনি সিফাত। মনে মনে ভাবলেন মিসেস.রেহনুমা। তারপর চিন্তিত স্বরে বললেন,
_হ্যাঁ, রে দেখি! কাল যাবো ওদের বাড়ি। কথা বলে দেখি। যদি সত্যিই আকদ করতে চায় তবে ওদেরও তো গোছগাছের একটা ব্যাপার আছে। এদিকে বিয়ের কার্ডও ছাপা হয়ে গেছে। কি একটা অসময়ে যে তোর ট্রেনিংটা পড়লো রে বাবা। ধুর!শেষ কথাগুলো খানিক বিরক্তির সুরেই বললেন তিনি।তারপর, তার স্বামী ইশতিয়াককে উদ্দেশ্য করে বললেন,
_হ্যাঁ গো। কাল কখন যাবে ও বাড়ি?
_আমি ও বাড়ি টাড়ি কোথাও যেতে পারবো না। তোমার ছেলের বিয়ে তুমি যা করার করো। আমার এর থেকেও অনেক ইম্পর্টেন্ট কাজ আছে অফিসে। এক রকম গা’ঝাড়া দিয়ে বললেন তিনি কথাগুলো।
এই বিয়ে নিয়ে তার শুরু থেকেই বেশ আপত্তি। একে তো পলক একেবারেই মধ্যবিত্ত পরিবারের মেয়ে। দেখতেও শ্যামলা। আর সিফাত!ছেলে তার পাইলট। এই যে ট্রেনিং এ যাচ্ছে এরপরে সে সিনিয়র পাইলট হয়ে যাবে।সাথে নিজেদের ফ্যামিলি বিজনেসও আছে তার।দেখতেও মাশাল্লাহ। আর তার তুলনায় পলক!সাধারণ মধ্যবিত্ত পরিবারের মেয়ে
বাবা একটা সরকারি স্কুলের হেডমাস্টার। এই মেয়ে কি তাদের বংশ,পরিবার, সোশাল স্ট্যাটাস এসবের সাথে যায় নাকি! তবুও,শুধুমাত্র সিফাতের একরোখা জেদের কারণে বিয়েটা হতে দিচ্ছেন তিনি। কিন্তু, কোন আয়োজন, অনুষ্ঠানের ব্যাপারগুলো থেকে তিনি নিজেকে গুটিয়ে রেখেছেন। এমনকি পানচিনির দিনও উনি ইচ্ছা করেই শহরের বাইরে মিটিং এ গিয়েছিলেন যেন অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকতে না হয়। আর এখন বিয়েটা যে পিছিয়ে যাচ্ছে এতেও তার কোন চিন্তা নেই। ঠিক এমন করেই বাবার মতই নাকউঁচু স্বভাব সারারও। এই বিয়েটা নিয়ে সেও চরম নাখোশ। তার অবশ্য অন্য একটা কারণও আছে। সে চেয়েছিল তার একমাত্র ননদ মাহির সাথে সিফাতের বিয়েটা দিতে। দেখতে সুন্দরী, হাই ক্লাস ফ্যামিলির মেয়ে মাহি।পরিবারের একমাত্র মেয়ে হওয়ায় অপার আদর-আহ্লাদ, স্বাধীনতায় কিছুটা বখে যাওয়া মেয়েও। সারার বিয়ের সময় থেকেই মাহি ভীষণ পছন্দ করে সিফাতকে। তার শশুড়বাড়ির লোকজনও একরকম এটাই চেয়েছিল। সারা নিজেও প্রস্তাব রেখেছিল এ বাড়িতে সিফাত আর মাহির বিয়ের। কিন্তু সিফাত না করে দিয়েছিল। তার কারণ, মাহির মত হাই সোসাইটির মর্ডাণ মেয়ে তার পছন্দ নয়।বলতে গেলে,ব্যক্তিগতভাবে মাহিকেই তার পছন্দ নয়। আর মাহিকে রিজেক্ট করে পলকের মত মধ্যবিত্ত ঘরের সাধারণ মেয়েকে বিয়ে করতে চাওয়ায় পলককে সে কিছুতেই মেনে নিতে পারেনি। নিহাত ভাইয়ের মুখের উপর কিছু বলতে পারে না বলে চুপ করে আছে। কিন্তু আদতে এই বিয়ে নিয়ে তার বিন্দুমাত্র কোন আগ্রহ নেই। পানচিনির দিনও কেবল আবিদের জোরাজুরিতেই যেতে বাধ্য হয়েছিল সে।
এদিকে মি.ইশতিয়াকের এহেন ধাঁচের কথায় তেঁতিয়ে উঠলেন মিসেস.রেহনুমা। ঝাঁঝালো গলায় বললেন,
_সমস্যা কি তোমার, হ্যাঁ? ছেলে কি শুধুই একার আমার? তোমার না?তোমার একমাত্র ছেলের বিয়ে, তো সেটার প্রতি কোন দায় দায়িত্ব নেই তোমার? কি একটা গা-ছাড়া ভাব শুরু করেছো তুমি!
_থাক না মা। যে যেটা চায় না সেটা তার উপর জোর করে চাপিয়ে দেওয়ার কিছু নেই। তুমি ছোটমা, মামা আর রুকু আপাকে এদের সাথে করে নিয়ে যেও। আমিও যেতাম বাট কিছু জরুরি কাজ আছে আমার। ট্রেনিং এ যাওয়ার আগে অফিসের কাজগুলো গুছিয়ে যেতে হবে। তুমি প্লিজ আমার তরফ থেকে স্যরি বলে দিও ওনাদেরকে।
_স্যরি বলার কি আছে ভাইয়া। তুমি যে তাদের মেয়েকে যেচে পড়ে বিয়ে করতে চাচ্ছো এটা তো তাদের সাতকুলের ভাগ্য। তো বিয়েটা তোমার যখন ইচ্ছা করবে,এতে তাদেরকে কিছু বলার কি আছে!-সিফাতের কথায় ফোঁড়ন কেটে বললো সারা।
_সারা! -ধমকে উঠলো রুকু।সে জানে তার বোনটা বরাবরই এমন। কিন্তু,তাই বলে নিজের ভাইয়ের হবু বউ,নিজের হবু ভাবীকে নিয়েও এমন করে বলার সাহস হয় কি করে!
_আমাকে ধমকাচ্ছো কেন আপা। যা সত্যি তাই তো বললাম। না জানি কি বলে কয়ে আমার ভাইটার ব্রেন ওয়াস করেছে ওই মেয়ে আর আমার ভাইটাও কি সুন্দর ওমন চালচুলোহীন মিডিলক্লাস ফ্যামিলির একটা মেয়েকে বিয়ে করতে একদম উঠে পড়ে লেগেছে। -বলেই একটা ভেংচি কাটলো সে।
সারার এহেন কথায় এবারে চরম মেজাজ খারাপ হলো রুকুর। সাথে ঘরে উপস্থিত বাকি মানুষগুলোও। মেয়েকে সাপোর্ট করে ইশতিয়াক সাহেব একটা তাচ্ছিল্যের হাসি হাসলেন পলকের প্রতি।তবে, সিফাত চুপচাপ ইয়ানাকে কোলে নিয়ে বসে রইলো। চোয়াল শক্ত হয়ে গেছে তার। মাথার শিরাও ফুলে গেছে। তবুও, সে চুপচাপ বসে আছে। কিছু বলছে না সারাকে। কিন্তু,রুকু চুপ করে নেই। আর না থেমে আছে বাকিরাও। সবাই একত্রে প্রতিবাদ করে উঠলো সারার কথার সাপেক্ষে। রেহানা বললেন,
_এসব কি কথা সারা। দুদিন পরেই যে মেয়েটা তোর ভাইয়ের বউ হবে তাকে নিয়ে এভাবে বলছিস তুই? এমন নিচু মন মানসিকতা কবে হলো তোর!
পাশ থেকে রেহনুমা আলমও বললেন,
_এই কতটুকু চিনিস তুই পলককে, হ্যাঁ? মেয়েটার মন মানসিকতা সম্পর্কে বিন্দুমাত্র ধারণা নেই তোর। আর কি যেন বললি,তোর ভাইয়ের ব্রেনওয়াস করছে ও,না? আরেএএ, ওরে তো তুই নাই চিনলি তুই,তোর ভাইকে তো তুই চিনিস। ব্রেন ওয়াস হওয়ার মত ছেলে সে? ওমন হইলে তো কবেই ওর ব্রেন ওয়াস করে তোর ওই ননদের সাথে তোর ভাইয়ের বিয়ে দিয়ে দিতি তুই।জানি তো আমি..সবই বুঝি।
_আ..মা..
_শোনো সারা, তোমার ভাইয়ের যথেষ্ট বয়স হয়েছে।নিজের বা আমাদের জন্যও সঠিক সিদ্ধন্ত নেওয়ার মত ক্ষমতা তার আছে। সে যখন পলক মাকে যখন সে পছন্দ করেছে তখন কিছু একটা ভেবেই করেছে। সেই উপযুক্ত হবে তার জন্য এমনকি এই পরিবারের জন্যও। আর তুমি নিজের কথাগুলোকে সংযত করতে শিখো।নিজের কথায় কাউকে হার্ট করার অধিকার তোমার নেই। সেই শিক্ষাও আশা করি আমার বোন বা এ পরিবারের কেউ তোমাকে দিয়েছে। -সারা তার মায়ের কথার পিঠে কিছু বলতে যাচ্ছিল।কিন্তু, তার আগেই তাকে থামিয়ে দিয়ে উক্ত কথাগুলো বললেন তার মামা জহিরুল সাহেব।
_মামা..মা..ছোটমা বাদ দাও এখন এসব। অশিক্ষিত মানুষকে কিছু বলে বোঝানো গেলেও শিক্ষিত মানুষকে তার নিজস্ব ধারণার বাইরে কিছুই বোঝানো যায় না। তোমরা বরং কাল একবার যেও ওদের বাড়ি। কথা বলে দেখো তারা কি করতে চায় এখন। তারপর রুকুকে উদ্দেশ্য করে বললো,
_আপা,তুই প্লিজ যাস ওদের সাথে। পলকের সাথে কথা বলিস।যদিও আমি বুঝিয়ে বলেছি আর জানিও যে ও বুঝেছে ব্যাপারটা।তারপরেও, তুই প্লিজ একটু..
_You don’t worry vai. আমি কথা বলবো পলকের সাথে।
_হুম।বলেই একটা শুকনো হাসি দিলো। ভাইয়ের এমন হাসির মানেটাও রুকু ঠিক বুঝলো।ভাই তার ভেতরে ভেতরে অনেকটা হার্ট হয়েছে আজ। একে তো বিয়েটা পিছিয়ে গেল তার উপর সারার কথাগুলো.. -এতসব ভেবে একটা ছোট শ্বাস বেড়িয়ে এলো রুকুর ভেতর থেকে।
নিজের কথা শেষ করেই উঠে দাঁড়ালো সিফাত। ইয়ানা অনেকক্ষণ আগেই ঘুমিয়ে গেছে তার কোলেই। তাই,ঘুমন্ত অবস্থাতেই তাকে কোলে নিয়েই সিঁড়ির দিকে পা বাড়ালো ।যাওয়ার আগে,রুকুকে বলে গেল,
_আজ রাতটা এখানেই থেকে যা আপা। কাল এখান থেকেই চলে যাস ওদের বাড়িতে ।ইয়ানাকে আমার ঘরে নিয়ে গেলাম। উঠলে পাঠিয়ে দিবো তোর কাছে। তারপর,সিঁড়ি বেয়ে উঠে গেল নিজের ঘরে যাওয়ার জন্য।
এদিকে সিফাতের ওই কথাগুলো যে ইনডাইরেক্টলি সারাকে উদ্দেশ্য করেই বলেছে সে, এটা সেখানে উপস্থিত সকলেই বুঝলো। কথাগুলো ছিল সহজ ভাষায় ভীষণরকম অপমানজনক, সেটাও জানে সকলেই। এমনকি সারাও বুঝলো ভাইয়ের এই কথাগুলো ছিল তার কথার জবাবে তার ঠান্ডা মাথায় করা তীব্র প্রতিবাদ ।তবে, এর প্রতিক্রিয়া হলো বিপরীত। ফলাফল,ভেতর ভেতর অপমানে আরও কিছুটা হিংস্র হয়ে উঠলো সারা। আর তার সব রাগ ক্ষোভ গিয়ে জড়ো হলো পলক নামের মেয়েটার প্রতি।
চলবে…