#যখন_দুজনে_একা
৫৫ পর্ব
নিঝুম রুবার পাশে গিয়ে বসলো। রুবাই প্রথম নিঝুমের সঙ্গে কথা বলল,
: এখন কেমন আছো আপু, খুব টেনশনে ছিলে কয়দিন!
: হুম এখন একটু রিল্যাক্স আছি । ।
: সরি রুবা তোমাকে একা খালি বাসায় থাকতে হলো !
: না আপু কি বলো এসব, যখন যেটা দরকার তখন সেটাই করতে হবে আমাদের!
: এটা ঠিক বলেছো , যখন যেটা দরকার তখন সেটাই করা দরকার!
সকালে গিয়েছিলাম তোমাদের বাসায়, ঘুমাচ্ছিলে তোমরা!
: ও বলেছে আমাকে আপু!
নিঝুম খেয়াল করলো রুবা এতটুকু কথাতেই একটু লজ্জা পেয়েছে ! চোখ নামিয়ে ফেলল!
: মাহি কোথায় রুবা , ওকে দেখছি না যে ?
: ও খালু কে দেখতে গেছে!
: ও আচ্ছা, খালাম্মা কবে আসবে ?
: মা কালকে চলে আসবে !
ওদের কথার মাঝখানে রিয়া বলে উঠলো,
: খালাম্মা তো আম্মুর কাছ থেকে শুনেই আব্বু র কথা, অস্থির হয়ে গেছে আসার জন্য ।আম্মুকে স্বান্তনা দিচ্ছিল!
নিঝুম রুবাকে দেখছে বারবার! আসলেই মেয়েটা অসম্ভব সুন্দর। কি গভীর বড় বড় চোখ, নাক কি নিখুঁত, পাতলা গোলাপী ঠোঁট, গায়ের রং যেন হলুদ কুসুম আভা ছড়ানো, সবচেয়ে আকর্ষণীয় ওর ফিগার কে বলবে দু’বছর আগে বিয়ে হয়েছে।
মেয়েদের কাছে ইর্সা জাগানো ফিগার আর পুরুষ মানুষের কাছে আকাঙ্খিত ।
মাহি কখনো সুন্দরের পূজারী ছিল না কিন্তু ভাগ্য ওর ,কি সুন্দর বউ পেয়েছে ! রুবা ওর সম্পর্কে আগে যাই হতো সে সব এখন ইতিহাস, আজ রুবা ওর সব কিছু । কি অস্থির হয়ে উঠে রুবার জন্য! নিজের ক্যারিয়ার, নিজের বন্ধুদের নিয়ে ব্যস্ত থাকা মাহি আজ সব বাদ দিয়েছে।
নিঝুম মনে মনে ভাবছে, রুবার দিকে যখন তাকিয়ে থাকে মাহি , কত মুগ্ধতা কত ভালোলাগা থাকে সেই চোখে । মাহি তোর প্রতিটি চোখের চাহনি আমার জানা!
তাই তো আজ সকালে তোর চোখ দেখেই আমি বুঝে গিয়েছিলাম , ভুল সময়ে আমি তোর ঘরে চলে গিয়েছি!
রিয়ার ডাকে নিঝুম তাকালো ,
: কি হয়েছে তোর কি খারাপ লাগছে নিঝুম , সকাল থেকে বসে আছিস তো ?
: আমি ঠিক আছি আপু !
মাহি বের হয়ে এলো সিসিইউ থেকে । নিঝুম মাহিকে দেখছে দূর থেকে। ওদের দিকে এগিয়ে আসছে। বুকের ভেতর টা আজও কাঁপে রে মাহি তোকে এক ঝলক দেখলে!
নিঝুম চোখ নামিয়ে নিতে পারছে না ! রুবার কাছে এসে দাঁড়ালো মাহি !
: কেমন দেখে এলি মাহি, রিয়া প্রশ্ন করলো ?
: একদম ফাইন , চিন্তার কিছু নেই !
: এখন বাসায় তাড়াতাড়ি নিয়ে যেতে পারলেই খুশি!
: হুম আপু সেটাই! মাহি নিঝুমের দিকে তাকালো !
: কি রে নিঝুম, চুপচাপ কেন টায়ার্ড বেশি ?
: না ঠিক আছি !
মাহি নিঝুমের চোখের দিকে তাকালো ! অন্যমনস্ক হয়ে আছে!
: কফি খাবে তোমরা , মাহি সবার উদ্দেশ্যে বলল?
দেখা গেল কেউ খাবে না কফি !
রুবা মাহির দিকে তাকালো!
: রুবা যাও ভেতরে খালুকে দেখে এসো !
আমি নিয়ে যাচ্ছি রুবাকে বলে রিয়া উঠে দাঁড়ালো !
ওরা যাওয়ার পর মাহি নিঝুমের দিকে তাকিয়ে বলল,
: তোর কি হয়েছে রে নিঝুম?
: কোথায় আমি ঠিক আছি!
: না তোর মুখ দেখে তো মনে হচ্ছে না ! সকালেও দেখলাম ভালো ছিলি এখন অন্যরকম লাগছে ?
নিঝুম মাথা নিচের দিকে নামিয়ে বলল,
: খুব ক্লান্ত লাগছে রে !
: মাহি নিঝুমের মাথায় হাত রাখলো, টেনশন করিস না খালু আউট অব ডেঞ্জার , নাউ হি ইজ ডুয়িং ওয়েল ! বাকিটা বাসায় নিয়ে গেলে ঠিক হয়ে যাবে দেখিস। আমরা তো আছিই। আজ রাতে আমি থাকব এখানে !
: অসম্ভব মাহি !
: কেন, মাহি অবাক হয়ে প্রশ্ন করলো? আমি থাকলে কি সমস্যা ?
: মাহি বোঝার চেষ্টা কর , রুবা একা থাকবে ব্যাপার টা ভালো দেখায় না !
: এক কাজ করি রুবাও আমার সঙ্গে এখানে চলে আসুক তাহলে তো তোদের সমস্যা নেই? মাহি হেসে বলল!
: এইটা ভালো বলেছিস ! নিঝুম হেসে দিল!
: শোন কয়টা দিন একটু এডজাস্ট তো করতে হবে সবাই কে তাই না , নিঝুম?
: মাহি সেই এডজাস্ট টা তুই আর রুবা কেন করবি ?
: একজন করলেই হলো, হোয়াই নট মী ? আর তুই মেয়ে মানুষ একা এখানে থাকবি আমি কখনো এটা হতে দিব না !
নিঝুম চোখ নিচু করে বলল, মাহি এভাবে বলিস না , এত টা অধিকারবোধ দেখাতে আসিস না আমার কষ্ট বেড়ে যায় !
:সেটা তুই যাই ভাবিস নিঝুম? এখানে অধিকারবোধের কিছু নেই! তোর জায়গায় রিয়া আপু, তানহা, মানহা যে ই থাকতো আমি এই কথাই বলতাম!
: সরি মাহি।
: এখন আবার সরি বলছিস কেন ?
: আজ সকালে তোর ঘরে চলে গিয়েছিলাম , তোর ঘুম ভাঙ্গালাম সেই জন্য !
: আশ্চর্য ! আমি ফোন টা সাইলেন্ট করে রাখাতেই তো ঝামেলা টা হলো , সরি তো আমার বলা উচিৎ !
: সে তুই যাই বলিস , আজ আমার যাওয়া উচিত হয়নি। আমি খুব অসময়ে গিয়েছি আজ নিঝুম বিড়বিড় করে বলল!
: কি বললি বুঝলাম না !
: কিছু না মাহি , বলে নিঝুম হাসছে।
: মাহি ও লজ্জা পেয়ে হেসে দিল !
ভালো থাক মাহি তোকে দেখে সত্যিই ভালো লাগছে। সবচেয়ে বেশি ভালো লাগছে রুবা কে দেখে , যেন তোর জন্য বানিয়েছে আল্লাহ!
: মাহি চুপ করে আছে !
আমি একটু নিচের থেকে আসছি তুই থাক এখানে মাহি, ওরা আসুক!
: নিচে কেন কিছু লাগবে ?
: আমার জন্য একজন অপেক্ষা করছে, দেখি সে কি বলে ?
: কে নিঝুম?
: এসে বলছি !
নিঝুম চলে গেল লিফটের দিকে !
নিঝুম চলে যাওয়ার পর পরই মাহির বড় মামা, মামি, ছোট মামি আর দুই বোন তানহা, মানহা এসে হাজির হলো!
মাহিকে দেখে ওরা ওয়েটিং রুমে এসে ঢুকলো। মাহি ওর বড় মামার কাছে এগিয়ে গিয়ে বলল,
: এত মানুষ, হসপিটালে র লোকজন বকবে মামা!
: আরে না আসলে ছোট আপা রাগ করবে , বড় মামা বলল!
: তা অবশ্য ঠিক বলেছো মামা!
রুবা আর রিয়া বের হয়ে এলো সিসিইউ থেকে !
সবাই গল্পে মশগুল। একজন একজন করে আবার রোগী ও দেখে আসছে ভেতরে গিয়ে। রিয়ার শ্বশুরবাড়ির লোকজন ও এসেছে। মাহি খেয়াল করে দেখলো হাসপাতাল তো একেবারে ফ্যামিলি গেট টুগেদার প্লেইস হয়ে গেছে এখন।
মাহি রুবাকে খেয়াল করছে, মনোযোগী শ্রোতা সবার কথা মনোযোগ দিয়ে শুনছে সে!
মাহি রুবাকে ইনবক্স করলো,
” রুবা ম্যাডাম আপনাকে দেখে যে আমি মুগ্ধ হয়ে তাকিয়ে থাকি তার কি হবে , বলেন তো ?”
রুবার কোন খবর নেই , সে গল্পে মগ্ন ! বেশ অনেকক্ষণ পর মাহির দিকে তাকালে মাহি ইশারা করলো মোবাইল দেখিয়ে!
মেসেজ পড়ে রুবা ঠোঁট চেপে হাসছে !
তারপর মাহিকে রিপ্লাই দিল,
” কি হবে , আমি জানি না ”
মাহি,
” জানতে হবে , আপনাকে ”
রুবা,
” ভেবে দেখব এখন চুপ করো , প্লিজ ”
মাহি,
” আমি তো চুপ করেই আছি , তুমি এত লজ্জা পাচ্ছো কেন ?”
রুবা,
” জানি না, স্টপ মাহি ”
মাহি,
” ওকে আমি আর মেসেজ দিচ্ছি না , ইউ উইল পে ফর ইট রুবা ম্যাডাম ”
: মাহি দূর থেকে দেখছে রুবার মুখটা , দেখলেই ওর শান্তি লাগে !
নিঝুম গ্রাউন্ড ফ্লোরে নামতেই নিয়াজ কে দেখলো । বসে আছে চেয়ারে। নিঝুম কে দেখেই উঠে দাঁড়ালো!
: বলো নিয়াজ ?
: ঐ দিক টায় যাই চলো, বলে নিয়াজ পার্কিং এর দিকে এগিয়ে গেল!
ওরা দুজন পার্কিং এ গিয়ে দাঁড়ালো । কিছুক্ষণ দুজনেই চুপচাপ দাঁড়িয়ে রইল।
তারপর নিয়াজ ই প্রথম মুখ খুলল,
: আই এম সরি নিঝুম ! সকালে আমি খুব অনধিকার চার্চ করে ফেলেছি ! আমার তোমাকে কোন ভাবেই এত বড় কথা বলা উচিত হয়নি।
: বাদ দাও নিয়াজ !
: বাদ না নিঝুম , আমার তোমাকে আরো কিছু কথা বলার আছে!
: কি কথা ?
নিয়াজ একটু দম নিলো! তারপর বলা শুরু করলো,
: নিঝুম , সব মানুষের জীবনে কেউ না কেউ আসে যাকে নিয়ে সে জীবনের ভবিষ্যৎ টা দেখতে চায় ! যাকে ঘিরেই সুখ, দুঃখ ,হাসি, আনন্দ কাটাতে চায় ! তুমি ও তোমার কৈশোর থেকে একটা মানুষ কে নিয়ে নিজের ভবিষ্যৎ টা সাজাতে চেয়ে স্বপ্ন দেখেছিলে , এটা দোষের কিছু না । তোমরা একে অপরকে ভালোবেসেছিলে , মাহির জীবনে একটা ট্রেজেডির জন্য মাহির নিজের ভাইয়ের বউ কে বিয়ে করতে হয়েছে !
তুমি রয়ে গেছো একা ! মাহির জন্য ও কষ্টকর ছিল । তোমার সঙ্গে সম্পর্ক না থাকলেও একটা পুরুষ মানুষের জন্য হুট করে একটা সম্পর্ক চেন্জ করে সেই মানুষটার সঙ্গে অন্য একটা সম্পর্কে ঢুকাও কষ্টের। আর সেটা যদি হয় স্বামী স্ত্রীর সম্পর্ক!
রুবা ভাবিকে দুটো বছর ভাইয়ের বউ হিসেবে দেখে হুট করে স্ত্রী হিসেবে গ্রহণ করতে ওর কতটা যুদ্ধ নিজের সঙ্গে করতে হয়েছে আমরা কেউ জানি না !
আমি শুনেছি রুবা ভাবির সাইকোলজিক্যাল সমস্যা ও চলছিল। রিয়াদ ভাই বলল, সাইকোলজিস্ট এর অনেক পরামর্শও মাহিকে নিতে হয়েছে।
: আমি এত কিছু তো জানি না , নিঝুম অবাক হয়ে তাকালো!
মাহি কে আমি স্যালুট জানাই। সে, যে সম্পর্কে নিজেকে বেঁধেছে সেই সম্পর্ক টা কে রেসপেক্ট করেছে, সেই সম্পর্ক টা কে এগিয়ে নিয়ে গেছে!
কিন্তু নিঝুম তুমি কি করছো নিজের সঙ্গে?
তুমি মাহিকে বুকে পুষে বসে আছো ! কেন?
জীবন টা অনেক ছোট এখানে অলিক কিছুর পথ চেয়ে বসে নিজেকে আটকে রাখার সময় নেই আমাদের হাতে ?
তুমি যদি সত্যি বন্ধু ভাবো আমাকে তাহলে বলব , প্লিজ তুমি সামনে এগিয়ে যাও। তোমাকেও কেউ ভালোবাসে, তোমার জন্যে ও অপেক্ষা করে কেউ ! খুব শান্ত ভাবে কথা গুলো বলল নিয়াজ।
কিছুক্ষণ চুপ করে থেকে নিঝুম বলল, নিয়াজ খুব সোজা এসব বলা কিন্তু এর ভেতর দিয়ে এগিয়ে যাওয়া অনেক কষ্টের!
: চেষ্টা তো করে দেখতে পারো নিঝুম ?
: তোমার কি মনে হয় আমি চেষ্টা করছি না ! আমি কতটা যুদ্ধ করি নিজের সঙ্গে জানো ? যখন মাহিকে আর রুবাকে দেখি। ওদের ভালোবাসা টা দেখি। খালাম্মার রুবার প্রতি আদর ভালোবাসা টা দেখি। আমার ভেতর যে কত কষ্ট হয় তোমাকে কিভাবে বলব সেটা।
: প্লিজ আমি তো চাই তুমি এই যুদ্ধ করাটা বন্ধ করো !
: তারপর ?
: তারপর নিজেকে নিয়ে শুধু ভাবো !
: নিঝুম আজ সরাসরি বলতে খুব ইচ্ছে করছে , আজো তোমাকে ভালোবাসি নিঝুম! আমি আজও তোমার অপেক্ষা করি ! আমাকে মাহির জায়গায় বসানোর দরকার নেই একবার আমার হাত ধরে আমার পাশে হেঁটে দেখো জীবনটা তোমার আমি সুখে ভরে দিতে পারি কিনা ?
নিঝুম এক দৃষ্টিতে নিয়াজের দিকে তাকিয়ে আছে , ওর চোখ দিয়ে পানি পড়ছে !
: নিয়াজ নিঝুমের চোখের পানি মুছে দিল , নিঝুম সময় নাও তুমি। আমি তোমার পাশে আছি । একবার তাকিয়ে দেখো মাহির বাহিরেও তোমার পৃথিবী টা অনেক সুন্দর , অনেক রঙিন । আমি তোমাকে সেই রঙিন পৃথিবী দেখাতে চাই !
: নিয়াজ আমাকে একটু সময় দাও প্লিজ , আমি খুব টায়ার্ড !
: অবশ্যই তুমি সময় নাও !
: মাহির বাহিরেও যে আমার কোন পৃথিবী আছে আমি এখনো ভাবতে পারি নাই !
: চেষ্টা করো আর না হয় আমাকে চেষ্টা করতে দাও আমি তোমাকে সাহায্য করি !
: নিয়াজ আমি উপরে যাচ্ছি ।
: তার আগে আমাকে একটা কিছু বলে যাও ?
: কি বলব ?
: কিছু তো একটা বলবে ?
: আমি চেষ্টা করবো যাও !
: আমাকেও চেষ্টা করতে দিবে , প্লিজ নিঝুম ?
: নিঝুম মাথা নাড়ল ।
নিয়াজ কে আর কিছু বলার সুযোগ না দিয়েই নিঝুম হসপিটালে র ভেতরে চলে গেল! দৌড়ে নিঝুম সিঁড়ির কাছে গিয়ে কেঁদে দিল । ওর খুব কান্না পাচ্ছে ।
সিঁড়ি দিয়ে কাঁদতে কাঁদতে উঠছে নিঝুম। হসপিটাল বলেই কেউ ওর কান্না দেখে অবাক হচ্ছে না।
মাহি এসেছিল কার্ডিওলজিস্ট এর সঙ্গে কথা বলতে। কথা বলে বের হয়ে যখন লিফটের জন্য অপেক্ষা করছিল।
হঠাৎ দেখে নিঝুম চোখের পানি নিয়ে সিঁড়ি বেয়ে উঠে এলো।
মাহি অবাক হয়ে তাকালো!
: কি হয়েছে নিঝুম ?
: নিঝুম কিছু না বলেই উপরে দৌড়ে উঠতে নিলো !
মাহিও নিঝুমের পিছন থেকে এসে আটকালো।
: কি হয়েছে তোর ? কার সাথে দেখা করতে আসলি আবার এভাবে কাদছিস কেন নিঝুম?
: নিঝুম কিছু বলছে না , অন্য দিকে ফিরে কেঁদেই যাচ্ছে !
: বলবি আমার টেনশন হচ্ছে?
নিঝুম মাহির বুকে ঝাঁপিয়ে পড়লো! খুব কান্নাকাটি শুরু করলো !
: কি হয়েছে বলবি তো নিঝুম ! আশ্চর্য!
মাহি কিছুই বুঝতে পারছে না !
মাহি এক রকম ধমকে উঠলো , বলবি নিঝুম!
: নিয়াজ !
: নিয়াজ এর কি হয়েছে ?
: ও আমাকে প্রোপোজ করেছে !
: মাহি দীর্ঘ শ্বাস ফেলে বলল, এই কথা !
: উঠ নিঝুম চোখ মুছ , তো কি হয়েছে ?
: আমি তো পারছিনা তোর কাছ থেকে নিজের মন কে সরাতে ?
: নিঝুম প্লিজ এভাবে কান্নাকাটি করে অসুস্থ হয়ে যাবি !
আমার আর তোকে কিছু বলার নেই নিঝুম। সব তুই জানিস সব ভাবে বলেছি, চেয়েছি তোকে বোঝানোর ! এখন অন্য পথ ধরতে হবে মনে হচ্ছে !
: নিঝুম চোখ মুছতে মুছতে বলল, অন্য পথ টা মানে ?
: জোর করেই তোকে বিয়ে দিয়ে দিতে হবে !
: নিঝুম তাকালো মাহির দিকে , যা তা কথা বলবি না !
: কি বলব , সত্যি করে বল নিঝুম! আমার তো আর মাথা কাজ করে না।
: একটা কথা বলবো , মাহি তোকে আমি আগে যতটা ভালোবাসতাম তার চেয়েও বহু গুণ ভালোবেসেছি তোর বিয়ের পর, কেন বলতো ?
আমি পারিই না তোর কাছ থেকে দূরে যেতে !
: তাহলে বলব আমি অবসেস হয়ে গেছি এখানে প্রকৃত ভালোবাসা টা আর নেই ! আমার প্রতি মোহ , আমাকে পাওয়ার একটা নেশা হয়ে গেছে তোর! নেশাকে ভালোবাসা বলিস না।
: এভাবে বলিস না মাহি প্লিজ।
: তাহলে আর কিভাবে বলব ?তুই বলে দে আমাকে?
: আমি জানি না মাহি ?
: আমার কাছে আয় নিঝুম, একটু বোঝার চেষ্টা কর নিয়াজ অনেক ভালো ছেলে । তোকে অনেক ভালোবাসে । সেই সেকেন্ড ইয়ার থেকে তোর জন্য পাগল হয়ে আছে ছেলেটা।
: নিজে ফিরিয়ে দিয়েছিস বলে আমাকে এখন গছাতে চাইছিস নিয়াজের কাছে!
মাহি চেয়ার থেকে উঠে দাঁড়ালো
: তোর এই কথার পর আমি আর কোন কথাই বলব না, নিঝুম তুই যথেষ্ট ম্যাচুয়র নিজের ভালো বোঝার ক্ষমতা তোর আছে ! আশাকরি তুই সঠিক সীদ্ধান্ত নিবি।
মাহি সিঁড়ি বেয়ে উপরে উঠে গেল !
নিঝুম একা বসে আছে ।
মাহি উপরে এসে রিয়ার কাছে ডাক্তারের সঙ্গে কি কথা হয়েছে বুঝিয়ে বলল।
মামা মামি রা চলে গেছে । রুবা রিয়ার সঙ্গে বসে ছিল।
: মাহি নিঝুম কোথায় গেল রে ?
: নিচে গিয়েছিল !
: মাহি তোরাও এখন বাসায় চলে যা , তোর তো কালকে হসপিটাল আছে ।
: রাতে আমি থাকি আপু !
: সাজ্জাদ থাকবে !
: গতকাল ও ছিল সাজ্জাদ ভাই আজ রেস্ট নিক।
: সারাদিন রেস্ট নিয়েছে ওর তো কাজ নেই আর সিসিইউ তে ওর ফ্রেন্ড এর বাবা আছে ঐ ফ্রেন্ড ও থাকে রাতে। দুজনে আড্ডা দেয় ! তোর তো দিনে ডিউটি আছে তুই যা !
: আপু থাকতে পারতাম কিন্তু!
: না রে রুবা একা থাকে বাসায় আমার খুব খারাপ লাগে ব্যাপার টা!
: আপু রুবাকে ও নিয়ে চলে আসতাম রাতভর আমরা দুইজন গল্প করে কাটিয়ে দিতাম। মাহি রুবার দিকে তাকিয়ে বলল!
: বিরাট বলেছিস, যা ভাগ বাসায় গিয়ে গল্প কর !
নিঝুম এসে দাঁড়ালো ওদের কাছে ।
: কোথায় ছিলি নিঝু , রিয়া বলল?
: নিচে নিয়াজের সঙ্গে কথা বলছিলাম!
মাহি নিঝুমের দিকে না তাকিয়ে মোবাইল টিপাটিপি তে নিজেকে ব্যস্ত করে রেখেছে।
: রিয়া আপু আমরা তাহলে আসি ?
: যা মাহি !
: রুবা ও হেসে বিদায় নিলো।
: নিঝুম কোন প্রয়োজনে ফোন দিস , বলে মাহি উল্টো ঘুরে রওনা হয়ে গেল।
নিঝুম ওদের চলে যাওয়াটা দেখছে । ওর কাছে মনে হচ্ছে দুজন সুখী মানুষ দুজন পরিপূর্ণ মানুষ যাচ্ছে।
মাহি আজ খুব রাগ করেছে নিঝুমের উপর। ওর মতিগতি বুঝতে পারছে না মাহি! এত দিন পরেও সে মাহির প্রতি এতটা পাগল কেন হয়ে আছে। এখন তো ও বুঝেই গেছে রুবার আর তার মাঝে আর কোন দূরত্ব নেই।
মাহি অন্য মনস্ক হয়ে ড্রাইভ করছে !
রুবা প্রশ্ন করলো,
: কোথায় যাচ্ছি আমরা ?
: হুম!
: তুমি কি কিছু নিয়ে টেনশন করছো , রুবা প্রশ্ন করলো?
: সরি টেনশন না একটু বিরক্ত লাগছে !
: ডাক্তারের সঙ্গে কথা বলে আসতে গিয়ে দেরি হয়ে গেল , তোমাকে গিফট কিনে দেয়ার কথা ছিল আমার, এখন তো দোকান বন্ধ হয়ে গেছে !
: আরে ধুর পরে দেখা যাবে !
: না রুবা আমি প্রমিজ করছিলাম তোমাকে !
: তুমি তো আমাকে বিয়ের রাতেই চুড়ি পড়িয়ে দিয়েছিলে !
: ঐ টা , ঐটা তো মা দিয়েছিল তোমাকে দেয়ার জন্য !
: হলো তো আর লাগবে কেন ?
: ঐ রাতে তোমার হাত ধরতেই তুমি যেভাবে কেঁপে উঠেছিলে রুবা আমি তো পুরোই লজ্জা পেয়ে গিয়েছিলাম কি অপরাধ করে ফেলেছি না জানি।
: আমার তোমাকে অনেক ভয় লাগছিল মাহি !
: কি বলো এসব রুবা !
: হুম , তুমি তো আগে কখনো আমার এতটা কাছেও বসে কথা বলোনি !
: আগে কি ছিলাম আর ঐ দিন সন্ধ্যায় কি হয়ে গেলাম বলো!
: সেটাই !
: মা আমাকে বলেছিল আমি নিজে তোমাকে যেন চুড়ি জোড়া পড়িয়ে দেই , সেজন্যই তোমার হাত ধরতে হয়েছিল।
: হুঁ।
খুব সুন্দর একটা সময় কাটালো রুবা মাহির সঙ্গে। রেস্টুরেন্টে ডিনার করলো । রাস্তার পাশে গাড়ি থেকে নেমে হাটলো কিছুক্ষণ দুজনে।
মোটামুটি রাত করেই বাসায় ফিরলো ওরা।
রুমে ঢুকার সঙ্গে সঙ্গে নিঝুম এর মেসেজ,
” সরি মাহি, তোকে কষ্ট দিয়ে ফেললাম আবার। আমিও না তোর আর রুবার মত সুখী হতে চাই। একটু হেল্প করতে পারবি ? আমাকে তোর মোহ থেকে বের হতে সাহায্য করবি ?”
ঘুমাতে এসে মাহি বারবার নিঝুমের কথা চিন্তা করছে । কিভাবে হেল্প করব তোকে নিঝুম?
আমি তো চাই তুই খুব সুখী হ। তোর সুখ আমার চেয়েও বেশি হোক।
রুবাকে বুকের মাঝে টেনে নেয়ার আগেই সে নিজের সঙ্গে প্রমিজ করলো এবার নিঝুম কে সত্যি সত্যি তার মোহ থেকে বের করবে ই । নিঝুমের জীবনটা সে সুন্দর করে তোলার উদ্যোগ নিবে ।
নিয়াজ এর সঙ্গে কথা বলতে হবে ! নিয়াজ অনেক ভালোবাসে নিঝুম কে । কম দিন তো হলো না নিয়াজ নিঝুম কে প্রথম প্রোপোজ করেছিল সেই মেডিকেল এর সেকেন্ড ইয়ারে। আজ পর্যন্ত ছেলে টা কোথাও ইনভলব হয়নি !
: তুমি হঠাৎ এত ডিস্টার্ব কেন , রুবা প্রশ্ন করলো?
: না ডিস্টার্ব না , কালকে মা আর বাবা আসবে তখন আমি থাকব না বাসায় সেটাই ভাবছি!
: নিজের বাসায় আসছে মা বাবা চিন্তা করো না। আর বাকিটা আমি সামলে নিব!
: হুম তুমি থাকতে আমার কিসের চিন্তা, তুমি তো আমার সাহসী মুরগির বাচ্চা !
এখন আসেন মুরগির বাচ্চা বুকে আসেন!
: তুমি যখন মুরগির বাচ্চা বলো ইটস সাউন্ড সো এডোরেবল !
: ইজেন্ট ইট ?
: ইয়া
( চলবে )