লাল নীল সংসার পর্ব -১৯

#_লাল_নীল_সংসার_
#_মারিয়া_রশিদ_
#_পর্ব_১৯_

সাঝের পরীক্ষা ভালো ভাবেই শেষ হলো। পরীক্ষা ভালোই হয়েছে। সাঝের মনে হচ্ছে মেডিকেলে চান্স হয়ে যাবে,, ইনশাআল্লাহ! কিন্তু,, তার থেকেও বড় কথা,, বিকাল থেকেই সাঝ আরও বেশি আনন্দিত। কারন,, বিকালে সে ছোয়া আর শিশিরের কথা জানতে পেরেছে।

ছোয়াকে সাঝের প্রথম দিন থেকেই ভালো লাগে। অনেক পছন্দ সাঝের ছোয়াকে। তাই,, শিশির আর ছোয়ার কথা জানতেই সাঝের আনন্দের সীমা নেই।

আদনানও বেশ খুশি। ছোয়াকে দেখেনি সে। কিন্তু,, ভাইয়ের বিয়ে হবে,, সংসার হবে,, ভাই নিজের কথা যে একটু ভেবেছে এইটাই সব চেয়ে আনন্দের লাগছে আদনানের। নিজের ভালোবাসার মানুষকে হয়তো সে পাবে নাহ কিন্তু,, তার ভাইয়া যে নিজের ভালোবাসার মানুষকে পাবে এতেই সে অনেক খুশি।

…………….আজ আহিয়া রহমান আর সাঝ ছোয়ার বাসায় যাবে। এর মাঝো শিশিরের সাথে ছোয়ার কোনো প্রকার কথা হয় নি। এখন সন্ধ্যা হয়ে এসেছে। শিশির একটু আগেই অফিস থেকে বাসায় চলে এসেছে। আহিয়া রহমান আর সাঝকে ছোয়ার বাসার সামনে নামিয়ে দিয়ে বলে ওঠে,
–” মা! তোমরা যাও,, আমি একটু পাশে যাচ্ছি। হয়ে গেলে আমাকে ফোন দিও আমি নিয়ে যাবো।”

আহিয়া রহমান বলে ওঠে,
–” আচ্ছা! ঠিক আছে।”

শিশির একপলক ছোয়ার বাসার দিকে তাকিয়ে চলে যায়। আহিয়া রহমানের হাতে কেজি দুইয়েক মিষ্টির প্যাকেট আর সাঝোর হাতে ফলের প্যাকেট। সাঝ কলিং বেলে চাপ দেওয়ার কিছু সময় পর একজন ভদ্রমহিলা দরজা খুলে দেন।

একটা অচেনা ভদ্র মহিলা আর একটা মেয়েকে দেখে মিসেস. কেয়া কিছুটাহ ভ্রু কুঁচকে তাকান। আহিয়া রহমান মুচকি হাসি দিয়ে বলে ওঠে,
–” আসসালামু আলাইকুম! আপা!”

মিসেস. কেয়া ভ্রু কুঁচকে বলে ওঠে,
–” ওয়ালাইকুম আসসালাম! কিন্তু,, আপনাদের কাউকে তো চিনলাম নাহ। আপনারা কারা?”

আহিয়া রহমান হালকা হেসে বলে ওঠে,
–” আমি আহিয়া রহমান! শিশিরের মা! আপনি আশা করি শিশিরের নাম শুনেছেন। আর নাহলে….”

কথা শেষ করতে পারে নাহ আহিয়া রহমান। তার আগেই মিসেস. কেয়া আনন্দিত কন্ঠে বলে ওঠে,
–” আপনিই শিশিরের মা? আসুন আসুন, ভেতরে আসুন আপা!”

আহিয়া রহমান আর সাঝ মুচকি হেসে ভেতরে আসে। আহিয়া রহমান আর সাঝকে সোফায় বসায় মিসেস. কেয়া। সাঝের দিকে তাকিয়ে মিসেস. কেয়া বলে ওঠে,
–” এই মেয়েটাহ কে?”

আহিয়া রহমান বলে ওঠে,
–” আমার মেয়ে!”

–” ওহ! মাশাআল্লাহ! আপনার মেয়ে তো খুব সুন্দরী।”

আহিয়া রহমান মুচকি হাসে। সাঝ কিছুটাহ লজ্জা পায় মিসেস. কেয়ার কথা শুনে। আহিয়া রহমান মিসেস. কেয়ার দিকে তাকিয়ে বলে ওঠে,
–” ছোয়া কোথায়?”

মিসেস. কেয়া বলে ওঠে,
–” রুমে আছে।”

–” ওহ!”

মিসেস. কেয়া আর আহিয়া রহমান টুকটাক কিছু কথা বলতে থাকে। মিসেস. কেয়া কিছু নাস্তার ব্যবস্থাও করতে থাকেন।

……………..স্পন্দনকে পড়াচ্ছে ছোয়া। কলিং বেলের আওয়াজের পর মাকে আর আসতে নাহ দেখে কিছুটাহ চিন্তা হয় ছোয়ার। স্পন্দনকে কিছু অংক করতে দিয়ে রুম থেকে বেরিয়ে আসে। মাঝের রুমের দিকে আসতেই থমকে দাড়িয়ে পড়ে। এ কাদের দেখছ সে? শিশিরের মা আর বোন?

ছোয়া তাড়াতাড়ি নিজের রুমে চলে আসে। শিশির সব কিছু জানার পরও এমন করলো? আচ্ছা,, শিশিরের মা কি সব জানে? আর যদি নাহ জানে,, তাহলে রাজি হতে পারে,, কিন্তু ছোয়া কিছুতেই রাজি হবে নাহ। আর যদি তারা জেনে থাকে,, তাহলেও কি আসবে এই বিয়ে ঠিক করতে?

ছোয়া বুঝে উঠতে পারছে নাহ কি করবে। ফোন হাতে নেয় ছোয়া। শিশিরের নাম্বার বের করে ডায়াল করতেই এক রিং হতেই শিশির কল রিসিভ করে বলে ওঠে,
–” আসসালামু আলাইকুম!”

–” ওয়ালাইকুম আসসালাম!”

শিশির হালকা রসিকতার সুরে বলে ওঠে,
–” আজ পৃথিবী কোনদিকে ঘুরছে,, যে মিস. ছোয়া ম্যাডাম নিজে আমাকে ফোন দিয়েছে।”

ছোয়া রাগী কন্ঠে বলে ওঠে,
–” রসিকতা বন্ধ করুন। আপনি কি জানেন আপনার মা আর বোন আমাদের বাড়িতে এসেছে?”

–” জানবো নাহ কেন? আর তাছাড়া আমি নিজেই তো আমার মা আর বোন কে তোমার বাসার সামনে নামিয়ে দিয়ে এসেছি। কথা বার্তা শেষ হলে আবার গিয়ে নিয়ে আসবো।”

ছোয়া রাগী ভাবে বলে ওঠে,
–” মানে? কেন এসেছেন ওনারা?”

–” তুমি বুঝতে পারছো নাহ কেন গিয়েছে? বলেছিলাম নাহ,,, জাস্ট ওয়েট এন্ড ওয়াচ,, তোমাকে মিস. ছোয়া এহমাদ থেকে মিসেস. ছোয়া শিশির রহমান বানাতে আসছি।”

–” আপনাকে বলেছি তো আমি,, যে আমি আপনাকে বিয়ে করবো নাহ।”

–” কিন্তু,, আমি করবো। দরকার হলে,, জোর করে বিয়ে করবো।”

ছোয়া কিছুটাহ শান্ত কন্ঠে বলে ওঠে,
–” আপনার বাড়ির সবাই আমার অতীতটা জানে?”

–” যাদের জানানো দরকার,, তারা জানে,, মানে আমার মা- বাবা জানে। বাকি দুইজন ছোট,, তাই তাদের জানাতে চাই নাহ। আর জানলেও সমস্যা নেই।”

ছোয়া চাপা কন্ঠে বলে ওঠে,
–” কিন্তু,, আমার সমস্যা আছে। আমি বিয়ে করতে চাই নাহ।”

–” কিন্তু,, আমি বিয়ে করতে চাই,, পারলে আটকিয়ে দেখাও।”

–” ধুর!”

বিরক্ত হয়ে ফোন কেটে দেয় ছোয়া। শিশিরের মা তার অতীত জানার পরও কিভাবে রাজি হতে পারে? ছোয়ার প্রচন্ড কান্না পাচ্ছে। ভয় লাগছে। যদি শিশিরের কোনো ক্ষতি হয়ে যায়? নাহ! কি ভাবছে সে এইসব। শিশিরের কিছু হবে নাহ। কিচ্ছু নাহ।

……………..আহিয়া রহমান চা খেতে খেতে বলে ওঠে,
–” আপা! আপনার কাছে একটা প্রস্তাব রাখতে চাই।”

মিসেস. কেয়া বলে ওঠে,
–” জি! বলুন।”

আহিয়া রহমান কিছুটা সময় নিয়ে বলে ওঠে,
–” আমি ছোয়াকে নিজের বাড়ির বড় বউ করে নিয়ে যেতে চাই।”

মিসেস. কেয়া ছলছল চোখ নিয়ে আহিয়া রহমানের দিকে তাকায়। আহিয়া রহমান হয়তো সবটা জানে নাহ,, তাই এমন প্রস্তাব রাখছে। যখন সব টাহ জানবে,, তখন হয়তো আর এমন প্রস্তাব রাখবেন নাহ। নিজের মেয়েটার জীবন কেমন যেন ছন্নছাড়া হয়ে আছে। মিসেস. কেয়া কে চুপ করে থাকতে দেখে আহিয়া রহমান বলে ওঠে,
–” কি হলো আপা? কিছু বলছেন নাহ যে?”

মিসেস. কেয়া বিষন্ন কন্ঠে বলে ওঠে,
–” আপনি হয়তো,, ছোয়ার ব্যাপারে সব টাহ জানেন নাহ। তাই এমন প্রস্তাব রাখছেন।”

আহিয়া রহমান হালকা হেসে বলে ওঠে,
–” আমি সবই জানি। আর সত্যি কথা বলতে,, প্রথমে আমিও দ্বিমত পোষন করেছিলাম। কিন্তু,, শিশিরের বাপ আর শিশির আমার ভুল গুলো ভেঙে দিয়েছে। কুসংস্কার থেকে নিজেকে বেরিয়ে আসতে বলেছে। আমিও নিজের ভুল বুঝতে পেরেছি। আমি মন থেকেই চাই,, ছোয়া আমার শিশিরের বউ হোক।”

মিসেস. কেয়ার চোখ দিয়ে পানি গড়িয়ে পড়ে। নিজের মেয়ের জীবনে আলোর ছটা দেখতে পাচ্ছেন তিনি। এর থেকে আনন্দ আর কি হতে পারে?

………………..ছোয়া দরজার এই পাশে দাড়িয়ে সব কথা শুনছে। চোখ দিয়ে অজস্র পানি গড়িয়ে পড়ছে তার। ছোয়া জানে,, শিশিরের মতোই তার পরিবারের প্রতিটি সদস্য অনেক ভালো। কিন্তু,, এতো ভালো মানুষগুলোর সাথে কোনো খারাপ হোক এইটা ছোয়া কখনো স্বপ্নেও চায় নাহ।

কিন্তু,, এরা যে বুঝতে চাচ্ছে নাহ। ছোয়ার খুব ভয় লাগছে। যদি শিশির বা এই পরিবারের কিছু হয়,, তাহলে ছোয়া কখনোই নিজেকে ক্ষমা করতে পারবে নাহ। ছোয়া নিজের রুমে এসে জানালার পাশে দাড়িয়ে আকাশের দিকে তাকায়।

এমম সময় মিসেস. কেয়া ছোয়ার রুমে এসে দেখে, ছোয়া জানালার পাশে দাড়িয়ে বাইরের দিকে তাকিয়ে আছে। ছোয়া হয়তো বুঝে গেছে,, শিশিরের পরিবারের আসার কারন। একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলোন মিসেস. কেয়া। তারপর ছোয়ার দিকে এগিয়ে এসে বলে ওঠে,
–” ছোয়া!”

মায়ের ডাকে পিছন ফিরে মায়ের দিকে তাকায় ছোয়া। মেয়ের মুখের দিকে তাকাতেই বুক টাহ ধুক করে উঠে মিসেস. কেয়ার! ছোয়া কাঁদতে কাঁদতে চোখ ফুলিয়ে ফেলেছে,, মুখও লাল হয়ে আছে। মিসেস. কেয়া এগিয়ে আসতেই ছোয়া মাকে জড়িয়ে ধরে কান্না করে দেয়। মিসেস. কেয়া মেয়েকে আগলে নেন। ছোয়া কান্না করতে করতে বলে ওঠে,
–” ওনারা কেন এলো আম্মা? শিশির কেন আমার কথা গুলো বুঝতে চাইছে নাহ? এই ভালো মানুষগুলোর সাথে কোনো খারাপ হলে,, আমি সহ্য করতে পারবো নাহ আম্মা!”

মিসেস. কেয়া ছোয়াকে নিজের থেকে ছাড়িয়ে নিয়ে ছোয়ার চোখ মুছিয়ে দেয়। তারপর বলে ওঠে,
–” শিশিরের মা,, সব জানে ছোয়া! আর সব কিছু জেনেই,, তাদের বাড়ির বউ বানাতে চাই। ওরা এখন তোকে দেখতে চাইছে। চল!”

–” কিন্তু,, আম্মা!”

–” কোনো কিন্তু নাহ। যাহ,, চোখে মুখে একটু পানি দিয়ে আয়। কি হলো? যা।”

মায়ের কথা অমান্য করতে পারে নাহ ছোয়া। চোখে মুখে পানি দিয়ে মুখ মুছে নেয়। তারপর মায়ের সাথে তাদের কাছে চলে যায়।


স্নেহা নিজের রুমে বসে বসে ফোন চালাচ্ছে। এমন সময় মিসেস. আখি স্নেহার রুমে আসে। স্নেহা একপলক মায়ের দিকে তাকিয়ে আবার ফোন চালানোতে মনোযোগ দেয়। মিসেস. আখি স্নেহার সামনে বসে বলে ওঠে,
–” স্নেহা!”

–” হুম!”

–” ইয়াশ নাকি কয়েকদিন পর কানাডয় চলে যাবে?”

–” হুম!”

মিসেস. আখি কিছু সময় চুপ করে থেকে বলে ওঠে,
–” ইয়াশকে তোর কেমন লাগে?”

স্নেহা মায়ের দিকে তাকিয়ে বলে ওঠে,
–” কেমন লাগে মানে?”

–” মানে,, আমাদের সবার ইচ্ছে তুই ইয়াশকে বিয়ে কর।”

মিসেস. আখির কথায় চমকে উঠে স্নেহা। কি বলছে তার মা এইসব? স্নেহা কম্পিত কণ্ঠে বলে ওঠে,
–” মামনি! কি বলছো এইসব? আমার তো এখনও স্টাডিই শেষ হয় নি। এখন বিয়ে কিভাবে সম্ভব?”

–” কেন সম্ভব নাহ? বিয়ের পর কানাডায় গিয়ে স্টাডি করবি। দেখ, অনার্স ফাইনাল ইয়ারে উঠে গেছিস,, বিয়ের বয়স তো হয়েছে,, নাকি? এখন বিয়ে করে নেওয়া উচিত। আর কানাডায় গিয়ে স্টাডি করলে,, তোর তো আরও ভালোই হবে।”

স্নেহা চুপচাপ মায়ের কথা শুনছে। মিসেস. আখি আবার বলে ওঠে,
–” দেখ,, মা! বিয়ে তো একদিন করতেই হবে। আর মেয়ে মানুষ হয়ে যখন জন্ম নিয়েছিস,, স্বামীর ঘরে যেতেই হবে। তোকে তো আর আমার কোলে বেধে রাখতে পারবো নাহ। একটা মেয়ে,, অনার্স ফাইনাল ইয়ার মানে,, সে বিয়ের উপযুক্ত। আর,, ইয়াশের মতো সুদর্শন,, এডুকেটেড,, স্টাবিলিশড,, ওদের ফ্যামিলির মতো কালচারাল ফ্যামিলি তুই কোথায় পাবি,, বল?”

স্নেহা চুপ করে আছে। কি বলবে কিছুই বুঝতে পারছে নাহ। শুধু আদনানের মুখ টাহ ভেসে উঠছে। কেন উঠছে সে নিজেও জানে নাহ। কিন্তু,, শুধু আদনানের মুখটাই যে ভেসে উঠছে। নিজের অনুভূতির সাথে সব সময় লড়াই করে এসেছে স্নেহা,, আজ যেন সেই অনুভুতি সব থেকে বেশি যন্ত্রণা দিচ্ছে। মিসেস. আখি বলে ওঠে,
–” তোর ভাইয়ু,, বাপি সবারই ইয়াশকে খুব পছন্দ। ইয়াশের বাবা মা বাংলাদেশে আসছে। আর ইয়াশও তোকে বিয়ে করতে রাজি।”

স্নেহা অবাক হয়ে বলে ওঠে,
–” তোমরা তো সব সিদ্ধান্ত নিয়েই নিয়েছো মামনি! তাহলে,, আমাকে কেন আবার বলতে এলে? একবারে নাহ হয় বিয়ের আসরেই তুলতে আমাকে।”

–” রাগ করছিস কেন সোনা? আমরা তো যা করছি,, তোর ভালোর জন্যই। রাগ করিস নাহ।”

এমন সময় সাইফের গলার আওয়াজ ভেসে আসে। সাইফ মিসেস. আখিকে ডাকছে। মিসেস. আখি স্নেহার দিকে তাকিয়ে বলে ওঠে,
–” তোর ভাইয়ু ডাকছে। আমও একটু দেখে আসি।”

মিসেস. আখি চলে গেলেন। স্নেহার যেন দুনিয়া অন্ধকার হয়ে যাচ্ছে। নিজের অনুভুতি গুলো যেন আজ বড্ড বেশি নাড়া দিচ্ছে। আদনানের প্রতি অনুভূতির কথা কখনো প্রকাশ করতে পারবে নাহ স্নেহা। কেননা,, আদনান বেকার,, একজন ছাত্র সে,, আর তার ফ্যামিলি কখনোই আদনান কে মেনে নিবে নাহ। এইটা স্নেহার অজানা নাহ।

তাহলে কি সারাজীবন স্নেহাকে নিজের অনুভূতি এইভাবে লুকিয়ে অন্য একজনের বউ হয়ে থাকতে হবে? ইয়াশের বার্থডে পার্টির দিন,, আদনানের দেওয়া ছোট্ট পরশ এখনও স্নেহাকে এক শান্তি দেয়। সেখানে অন্য একজনের হাজারও পরশ তাকে গ্রহন করতে হবে,, সইতে পারবে তো স্নেহা?

এইদিকে……
আদনান স্নেহাকে ফোন দিয়ে দেখে ফোন বন্ধ আসছে। আদনানের বিরক্ত লাগছে। হঠাৎ স্নেহার ফোন বন্ধ কেন? বুঝে উঠতে পারছে নাহ স্নেহার ফোন বন্ধ থাকার কারন। চার্জ শেষ নাকি? ধুর! মেজাজ খারাপ হচ্ছে আদনানের।

আদনান ফোন টাহ পাশে রেখে বারান্দায় চলে আসে। বারান্দার গিরিল ধরে আকাশের দিকে তাকায়। আকাশের দিকে তাকিয়ে দেখে আজ চাঁদ উঠে নাই,, কিন্তু তারায় ভরে আছে সম্পুর্ন আকাশ। ভালোই লাগছে আকাশটাহ।

আদনান বুঝতে পারছে আজকাল স্নেহার প্রতি সে একটু বেশিই বিচলিত থাকে। সব সময় স্নেহার চিন্তা মাথায় জেঁকে থাকে। আদনান জানে,, সে তার বার্বিডল কে পাবে নাহ,, তাও আজকাল ভয় পাচ্ছে সে। স্নেহাকে হারানোর ভয় পাচ্ছে। সে কি সত্যিই হারিয়ে ফেলবে?

হ্যা! ফেলবেই তো। কি যোগ্যতা আছে তার,, যে বার্বিডল কে পাওয়ার আশা করে? নিজের কাছেই নিজেকে বিরক্ত লেগে উঠে আদনানের।


শিশিরের বেশ হালকা লাগছে আজ। ছোয়ার মা রাজি আছে। এখন ছোয়া একটু সময় চেয়ে নিয়েছে,, নিজের সিদ্ধান্ত জানানোর জন্য। এইটাই এখন একটু চিন্তার শিশিরের কাছে। শিশির জানে,, ছোয়া তাকে ভালোবাসে,, কিন্তু ছোয়ার অতীত ছোয়াকে সব সময় তাড়া করে বেড়ায়। শিশির ফোন টাহ হাতে নিয়ে কল লগে যায়।

এইদিকে………..
ছোয়া নিজের রুমে বসে আছে। কি হচ্ছে এইসব ভাবছে। শিশিরের কোনো ক্ষতি হলে যে সে নিজেকে সামলাতে পারবে নাহ। যে করেই হোক এই বিয়ে বন্ধ করতে হবে তার। এমন সময় ছোয়ার ফোন বেজে উঠতেই ছোয়া ফোন হাতে নিয়ে দেখে শিশির ফোন দিয়েছে।

কিছুটা চমকে উঠে স্নেহা। শিশির কেন ফোন দিলো তাকে? তাও নিজেকে স্বাভাবিক করে কল রিসিভ করে কানে ধরতেই ওপাশ থেকে প্রিয় মানুষটির কন্ঠ ভেসে আসে। ছোয়া সব কিছু উপেক্ষা করতে পারলেও,, শিশিরের কন্ঠ কখনোই উপেক্ষা করতে পারে নাহ। শিশির বলে ওঠে,
–” আসসালামু আলাইকুম!”

ছোয়া শান্ত ভাবে বলে ওঠে,
–” ওয়ালাইকুম আসসালাম!”

–” কেমন আছো?”

–” আলহামদুলিল্লাহ! শারীরিক ভাবে সুস্থ আছি। আর এই বিয়ের কথা বন্ধ হয়ে গেলে,, মানসিক ভাবেও সুস্থ থাকবো।”

শিশির কিছুটা মন খারাপ নিয়ে বলে ওঠে,
–” এমন করছো কেন ছোয়া? কি করেছি আমি? আমি জানি ছোয়া,, তুমি আমাকে ভালোবাসো। কিন্তু,, কিছু কুসংস্কারের জন্য,, আমার থেকে সরিয়ে নিচ্ছো নিজেকে।”

ছোয়া চুপ করে আছে। শিশির আবার বলে ওঠে,
–” ছোয়া! তোমাকে আমায় ভালোবাসতে হবে নাহ। শুধু আমাকে একটু ভালোবাসতে দাও প্লিজ! ছোয়া এই বিয়েটা ভেঙো নাহ। তুমি নাহ বললে, তোমার মা হয়তো রাজি হবেন নাহ,, আমারও কিছু করার ক্ষমতা থাকবে নাহ। প্লিজ! ছোয়া! বিয়ে টাহ ভেঙো নাহ। আমার স্বপ্ন গুলোকে এভাবে শেষ করে দিও নাহ।”

ছোয়ার চোখ দিয়ে কয়েক ফোঁটা পানি গড়িয়ে পড়ে। ছোয়া কোনোরকম ভাবে নিজেকে সামলিয়ে বলে ওঠে,
–” আমি রাখছি! আল্লাহ হাফিজ!”

শিশিরকে আর কিছু বলার সুযোগ নাহ দিয়ে ফোন কেটে দেয়। শিশির ফোন সামনে এনে দেখে ছোয়া কল কেটে দিছে। শিশির একটা দীর্ঘশ্বাস নিয়ে ফোন টাহ বিছানার উপর রেখে রুমের লাইট অফ করে দিয়ে শুয়ে পড়ে।

#_চলবে…………🌹

{{ ভুল,, ত্রুটি সবাই ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন বলে আশা করি!! 😇 }}

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here