অজানা পর্ব-৪৪

0
855

#অজানা
#লেখনীতে_তাশরিফা_খান
পর্ব–৪৪

💝

আরিবা ভয়ে চোখ বন্ধ করে দাড়িয়ে আছে। তখন কেউ একজন ওকে জড়িয়ে ধরে পাশে লাফ দেয়। পাশে দুজনেই পড়ে গেছে। আরিবা পায়ে হালকা ব্যাথাও পেয়েছে। ঘটনা এত তাড়াতাড়ি হয়েছে যে, আরিবা কিছুই বুঝে উঠতে পারলো না। কে ওকে বাঁচিয়েছে সেটা দেখতে চোখ খুলতেই দেখলো কালো পোশাক পড়া একটি লোক। কালো মুখোশে মুখ পুরো ঢাকা। শুধু চোখ দুটি দেখা যায়। আরিবা চিনতে না পেরে জিজ্ঞাসা করলো।

“আপনি কে?”

লোকটি কিছুই বললো না তাড়াহুড়ো করে চলে গেলো। আরিবা গাড়ির দিকে তাকালো গাড়িটিও দ্রুত চলে গেলো। কেউ যে ইচ্ছা করে ওকে গাড়ি চাপা দিয়ে মারতে চাইছে এটা আরিবা ভালো করেই বুঝেছে। বাড়িতে ঢুকতেই সবাই আরিবার কাছে দৌঁড়ে এলো। ওর হাত পায়ে ছিঁলে গেছে সেটা দেখে সবাই অবাক। মিসেস আঞ্জুমান মেয়ের দিকে তাকিয়ে বললো।

“কিরে এমন অবস্থা কেনো তোর? কি হয়েছে?”

আরিবা কিছুই বলেনি চুপ করে আছে। ওর মা ধমক দিতেই মিসেস তারিন এসে ওকে সোফায় বসাতে বসাতে বললো।

“কি হয়েছে রিবা? এমন অবস্থা কেনো তোর?”

আরিবা অসহায় দৃষ্টিতে ওর কাকিমনির দিকে তাকিয়ে বললো।

“পিচ রাস্তায় পড়ে গেছি তাই!”

মিসেস আঞ্জুমান মেয়ের দিকে তাকিয়ে রাগি গলায় বললো।

“সারাদিন লাফালাফি না করলে হয় না? দাড়া তোর বাবাকে বলছি। আরশ কেও বলবো!”

“আরে আন্জু! থাম তো! দেখতে পাচ্ছিস মেয়েটা ব্যাথা পেয়েছে তার উপর আবার রাগারাগি করছিস্। যা তো এখান থেকে!”

মিসেস তারিনের কথা শুনে মিসেস আঞ্জুমান চলে গেলো। মিসেস তারিন আরিবাকে ওর রুমে নিয়ে শোয়ায়ে দিয়ে আরশকে কল করলো। আরশকে ফোন করতেই ও পাগলের মতো তাড়াতাড়ি চলে এসেছে। রুমে ঢুকেই আরিবাকে ধমক দিয়ে বললো।

“থাপ্পড় দিয়ে তোর সব দাঁত ফেলে দিতে ইচ্ছা করছে বেয়াদ্দব! ঠিকঠাক মতো চলতে পারিস না? নাকি শয়তানে নাড়েচাড়ে?”

আরিবা কিছুই বললো না। ডোন্ট কেয়ার ভাব নিয়ে চুপ চাপ শুয়ে রইলো। ও জানে আরশের এইসব বানী ওর শুনতে হবে। আরশ ওর পাশে বসে ছিঁলে যাওয়া স্হান পরিস্কার করতে করতে বললো।

“তুইকি ছোটো এখনও? ভালো খারাপ বুঝোছ না? ফারদার আমার কথা না শুনলে ঠ্যাং ভেঙে ঘরে বসিয়ে রাখবো।”

“আরশ থাম তো! আন্জুও এতক্ষণ রাগারাগি করেছে। দেখতে পাচ্ছিস না মেয়েটা ব্যাথা পেয়েছে? ”

মিসেস তারিনের কথায় আরশের হেলদোল হলো না। মায়ের দিকে তাকিয়ে রেগে বললো।

“কাকি মনি ঠিকই করে। তুমি এত লাই দিওনা। পরে ঝামেলায় পড়বে বলে দিলাম! এমনিতেই সবার আদরে বাদর হয়ে গেছে।”

আরশের কথা শুনে আরিবা মুখ বাকিয়ে বললো।

“হ্যাঁ হ্যাঁ আমি তো আদর পেয়ে বাদর হয়েছি। তোমার লেনা দেনা কে আদর দিয়ো না। তাহলে তো সে বাদর হবে না! তোমার মতো ভালো শান্ত সভ্য হবে।”

“তোকে এত কথা বলতে হবে না। আমার লাইফ আমার ডিসিশন বুঝলি?”

আরিবা কিছু বলতে যাবে তার আগেই মি. জাকির হাফাতে হাফাতে রুমে ঢুকতে ঢুকতে বললো।

“আমার মামনি কোথায়? কি হয়েছে! মামনি কেমন আছে?”

মি. জাকির কে কল করে জানাতেই মেয়েকে দেখতে মিটিং রেখেই চলে আসছে। মেয়ের পাশে বসে মেয়ের মাথায় হাত বুলিয়ে বললেন।

“এখন কেমন লাগছে মামনি?”

“ভালো লাগছে আব্বু। এত চিন্তা করো না। তোমরা যাও আমার ঘুম আসছে।”

“খেয়ে ঘুমাও মামনি!”

মি. জাকিরের কথা শুনে আরিবা বললো।

“আমি বাইরে খেয়ে এসেছি আব্বু!”

“আচ্ছা তাহলে বিশ্রাম করো!”

সবাই ওকে রেখে চলে গেলো। আরিবা আগের কথা শুয়ে শুয়ে ভাবতে লাগলো। ভাবতে ভাবতে এক সময় আরিবা ঘুমিয়ে পড়লো।

———————–

সন্ধ্যা বেলা। পড়ার টেবিলে বই সামনে নিয়ে স্থির হয়ে বসে আছে আরিবা। বই খোলা ঠিকই কিন্তু ও পড়ছে না। গালে হাত দিয়ে ভাবছে। কিছুর হিসাবেই মিলাতে পারছে না ও। আজ কে ওকে মারতে চাইলো? আর কে ওকে বাঁচালো? ওর জানা মতে ওর কোনো শত্রু নাই যে ওকে মারতে চাইবে। নাকি বিজনেস জনিত শত্রুতা? কেউ ওর বাবার উপর প্রতিশোধ নিতে ওকে মারতে চাইছে? সবাই জানে ওর বাবার কলিজা ও। হয়তো সেটাই হবে। তাহলে বাঁচালো কে? ওই অজানা ব্যক্তি কে? বাঁচাতে আসছে তাহলে মুখ ঢেকে আসবে কেনো? চোখ দুটো খুব চেনা চেনা লাগছিলো ওর। সে কি ওর পরিচিত কেউ? এমন হাজার ভাবনা ভাবছে আরিবা। পড়ায় একটুও মন বসাতে পারছে না। টেবিল ছেড়ে উঠে দাড়ালো। শাল টা গায়ে জড়িয়ে ছাদের উদ্দেশ্যে পা বাড়ালো।

রেলিং ধরে আকাশের দিকে তাকিয়ে আছে আরিবা। আকাশে হাজার তারার মেলা। জোৎন্স্যায় ভরপুর পুরো পৃথিবী। আল্লাহর সৃষ্টির সৌন্দর্য সত্যি বর্ণনাতীত। আরিবা চোখ বন্ধ করে দীর্ঘ শ্বাস ছাড়লো। নিচের দিকে তাকিয়ে ভাবলো এই জায়গা থেকেই নেত্রা পড়ে গিয়েছিলো। এত উচু রেলিং ডিঙিয়ে কি করে নেত্রা পরলো সেটাই বুঝে পায়না আরিবা। কেউ ওকে ইচ্ছে করে ফেলে দিয়েছে সেটা ও ভালো করেই বুঝতে পারছে। কিন্তু ওইদিন বাড়িতে অনেক গেস্ট ছিলো তার মধ্যে কে শত্রু সেটা বোঝার উপায় নেই।
আরিবা ভাবুক হয়ে পাশে চেয়ারে বসলো। ফ্লোরের দিকে তাকিয়ে ভাবলো ওই গুপ্ত রুমটা কোথায় উধাও হয়ে গেলো? ও নিজে দেখেছে ওই মহিলাকে। ওই মহিলাটাই বা কে? ওকে কি বলতে চাইছিলো? ওদের বাড়ির সবাইকে খুনিয়েই বা বলছিলো কেনো? হাজার প্রশ্ন ঘুরছে আরিবার মাথায়। সব প্রশ্নের উওর ওর অজানা। দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে ভাবলো কে দিবে ওকে এই প্রশ্নের উত্তর? ওকি পাবে এসব প্রশ্নের উওর? আরিবা আর ভাবতে পারছে না মাথা চেঁপে ধরে বসে রইলো।

“কিরে এই শীতের ভিতরে ছাদে কি করোছ?

আরশের কথা শুনে আরিবা মাথা উচু করলো। জোরে শ্বাস ছেড়ে বললো।

“কিছুনা এমনি!”

“পড়া লেখা নাই আপনার? সব বই মুখস্থ নাকি আপনি ব্যারেস্টারী পাস করে ফেলছেন? কোনটা?”

আরশের পিনিক মারা কথা শুনে আরিবা হতাশ হলো। ও ঝগড়া করার মুডে নাই তাই আস্তে করে বললো।

“পড়ায় মন বসছিলো না। তাই ছাদে আসছি মন ভালো করতে। এখান থেকে গিয়ে পড়বো ভাইয়া।”

“মন কি করে বসবে? মন অন্য কাউকে দিয়ে আসছোছ।”

আরশের কথা শুনে আরিবার মেজাজ খারাপ হয়ে গেলো। এমনিতেই মাথায় হাজার চিন্তা তার উপর আবার ওর ফালতু কথা। আরশের দিকে তাকিয়ে রেগে বললো।

“সবাইকে নিজের মতো ভাবো তুমি?”

“আমার মতো ভাববো কেনো? সবাই কি আমার মতো? আমি আমার মতো! আমি দেখতে স্মার্ট। জানোছ কত মেয়ে আমায় দেখে বেহুঁশ হয়ে পরে? ”

“এহ আসছে। যেই না চেহারা নাম রাখছে পেয়ারা। হুহ!”

কথাটা বলে আরিবা মুখ বাকালো। আরশ ওর দিকে তাকিয়ে ডোন্ট কেয়ার ভাব নিয়ে বললো।

“আমার নাম পেয়ারা না বুঝলি? আমার নাম টাও ভুলে গেছোছ? আমার নাম তানজীম হাসান আরশ চৌধুরী। এই তুই পাগল টাগল হয়ে গেলি নাতো? কই দেখি দেখি?”

কথাটা বলে আরশ আরিবার দিকে আগাতে গেলে আরিবা পিছাতে পিছাতে বললো।

“আমি মোটেও পাগল না। পাগল হলে তুমি। নাহলে এত সুন্দর সুন্দর মেয়ে রেখে লেনা দেনার পিছে ঘুরে! তুমি শুধু পাগল না মি. খবিশ ও!”

“কি বললি দাড়া!”

আরশ আরিবাকে ধরতে গেলে আরিবা দিলো দৌড়। ওকে আর কে পায়। আরশ ওর যাওয়ার দিকে তাকিয়ে শব্দ করে হেসে ফেললো। আকাশের দিকে তাকিয়ে বললো।

“যতই পালাও আর যত দূরেই যাও,
তুমি তো শুধুই আমার মাঝে থাকবে।
পারবে না কেউ কেড়ে নিতে তোমায়,
তুমি যে শুধুই আমার।”

কথাটা বলেই আরশ ঠোঁট বাঁকিয়ে মুচকি হাসলো।

—————————-

অন্ধকার রুমে বসে আছে তিন জন লোক। একটি লোক এসে বললো।

“সরি বস! মেয়েটিকে মারতে পারলাম না! কেউ একজন এসে বাঁচিয়ে নিলো।”

তাদের মধ্যে সবচেয়ে ছোটো ১ম লোকটি রেগে এগিয়ে এসে লোকটির গালে কষে থাপ্পড় মারলো। কলার ধরে রেগে বললো।

“তোকে পাঁচ লাখ টাকা দেওয়া হয়েছে ওই মেয়েটিকে মারার জন্য। সামান্য কাজটা পারলি না, তো আর কি পারবি? ওই লোকটি কে ছিলো বল!”

“স্যার মুখে কালো মুখোশ ছিলো।”

১ম লোকটি রেগে ওকে আবার ঘুষি মারলো।

ওদের মধ্যে ২য় লোকটি উঠে বললো।

“আরে কি করছো? ছাড়ো! ওকে দিয়ে আমাদের আরও কাজ আছে। কাল ও কাজটা শেষ করবে!”

৩য় লোকটি উঠে বললো।

“কে বাঁচাতে পারে ওকে? লোকটি সঠিক সময়ে কি করে ওখানো পৌঁছালো। কি করে জানলো আমরা ওকে মারতে যাচ্ছি? আমরা তিনজন ছাড়া কেউ তো জানতো না এই প্লান। তাহলে আমাদের মধ্যে কেউ?”

একথা বলে প্রথম লোকের দিকে তাকালো। ১ম লোকটি ক্ষেপে উঠে বললো।

“আমরা তো ওকে মারতে চাই তো বাঁচাবো কেনো? এতই যখন সন্দেহ তো দেখো কাল আমি নিজে হাতে ওকে খুন করবো।”

কথাটা বলেই প্রথম লোকটি চলে গেলো।

“আরে রেগে যেওনা, দাড়াও!”

২য় লোকটি কথাটা বলতে বলতে ওর পিছে পিছে গেলো। ৩য় লোকটি শয়তানি হাসি দিয়ে মনে মনে বললো।

“তোমাদের দুজন কে আমি এক সাথে ক্ষতম করবো। এক ঢিলে দু পাখি মারবো আমি।”

কথাটা বলেই লোকটি উচ্চ স্বরে হেসে উঠলো।

💖

ইনশাআল্লাহ চলবে…

(রি চেইক করিনি ভুলত্রুটি মাফ করবেন প্লিজ। লাইক কমেন্ট করেন না কেনো আপনারা? গল্প ভালো লাগছেনা? তাহলে দেওয়া বন্ধ করে দিবো?)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here