আমার তুমি আছো (১)
শাহীন শাহ
Part—4
আমার মুখের ওপর পরা চুল গুলো কানের পাশে গুজে দিয়ে আয়নার সামনে নিয়ে গিয়ে দাঁড় করালো। ঝাপসা চোখে দেখতে পেলাম চুলটা আমার ছোট হয়ে কাঁধের কাছে এসে ঠেকেছে। আরো বেশী কান্নায় ভেঙ্গে পড়লাম। পিয়াস ভাইয়া আমার চিবুকটা উঁচু করে ধরলো।
— আলো ইউ আর লুকিং গর্জিয়াস! লুক লাইক এ্যঞ্জেল! বেবি ডোন্ট ক্রাই!
এবার আমাকে তার দিকে ঘুরিয়ে নিলো। বৃদ্ধাঙ্গুল দিয়ে দু চোখের পানি মুছে দিয়ে জড়িয়ে ধরলো। আমি এবার ফুঁপাতে শুরু করলাম।
— শোন কারুর অধিকার নেই তোকে দেখার। ওই ছেলেটা তোর চুল স্পর্শ করেছে তাই না রে? অধিকার নেই তবুও অধিকার দেখিয়েছে। তোর সব কিছু স্পর্শ করার অধিকার আমার, ইউ নো দ্যাট! সো স্টপ ক্রাইং।
আমাকে ধাক্কা দিয়ে ফ্লোরে ফেলে চলে যায়। আমি বসে পড়ি চিৎকার করে কাঁদি। দু হাতে আমার কেটে দেওয়া চুল গুলো তুলে নি। কাটা চুলগুলো দেখে কান্নাটা আরো বেশী বেড়ে যায়। এই কি সেই পিয়াস ভাইয়া! যার কাছে নিজের চুল কাটার অনুমতি নিতে হতো!
🍂🍂🍂
আকাশটা মেঘলা একটু পর বোধহয় বৃষ্টি নামবে! একছুটে ছাদে চলে আসি। ঠান্ডা বাতাস বইছে, মনে হচ্ছে বৃষ্টির সাথে ঝড় হবে! ভালোই হলো আমি তাহলে আজকে ভিজবো। আনন্দে দু হাত মেলে দিয়ে আকাশের দিকে চেয়ে ঘুরতে লাগলাম।
হঠাৎ দেখলাম পাশের বাড়ির একটা ছেলে আমাকে দেখছে , একটু থেমে গেলাম। তারপর আবার ঘুরতে লাগলাম এবার চুলগুলো একটু বেশি প্রসারিত করলাম। ছেলেটা এখনো আমাকে দেখেই যাচ্ছে।দেখলে দেখুক আমার কি! আমি তো আর ক্ষয়ে যাচ্ছি না। অনেকক্ষণ ঘোরার পর এবার আমি ছেলেটার দিকে মুখ করে ছাদের রেলিং ধরে দাঁড়ালাম। শুধু ছেলেটা আমাকে কেনো দেখবে আমিও দেখবো।
হঠাৎ দেখলাম ছেলেটা চলে গেলো, তাহলে আমি এভাবে দেখাতে হয়তো চলে গেলো! যাক তাহলে আমাকে ভয় পেয়েছে, মুচকি হাসলাম। হঠাৎ আমার চুলে টান পড়লো। কি হলো কি সে আটকালো! ঘুরতেই দেখি পিয়াস ভাইয়া আমার দিকে তাকিয়ে আছে চোখ দুটো লাল হয়ে আছে। আমি হাতটা ছাড়িয়ে দিয়ে চুলটাকে হাত খোঁপা করে ফেলি। একটু হাসার চেষ্টা করি।
— আরে পিয়াস ভাইয়া! তুমি এখানে কি করো? বুঝেছি তুমিও আমার মতো বাতাস খেতে আসছো! 😋
আমার এমন কথায় পিয়াস ভাইয়া বোধহয় আরো বেশী রেগে গেলো।
— এক থাপ্পড় মারবো। 😠
— আমি কি করলাম 😯
পিয়াস ভাইয়া আমার চুলটা খুলে দিয়ে আমার পেছন দিকে থেকে আমার চুলে নাক ডুবালো।
— তোর চুলের গন্ধটা বেশ 😘
— ওহহ আমি কাল হেয়ার স্পা করেছি ☺
পিয়াস ভাইয়া আমাকে ছেড়ে দিয়ে আমার হাতটা চেপে ধরলো।
— আউচ,, পিয়াস ভাইয়া ব্যাথা পাচ্ছি তো।
— ওই ছেলেটা তোকে দেখছিলো কেন?
— আমি কি জানি! ভালো লাগছিলো তাই দেখছিলো 😁
— থাপড়ে তোমার গাল লাল করে দেবো ফাজিল মেয়ে কোথাকার 😤
এইকথা বলেই পিয়াস ভাইয়া পুনরায় আমার চুলে নাক ডুবালো।
— আমি চাই না তোকে কেউ দেখুক। তোকে দেখার অধিকার শুধু আমার বুঝেছিস। তুই কেনো বুঝিস না আলো আমি তোকে,, তোকে আমি,,,।
পিয়াস ভাইয়া আমাকে ছেড়ে দিয়ে চলে যেতে গেলে আমি হাতটা ধরে নি।
— আমাকে কি বলো?
— কিছু না। এ্যই শোন তোর চুলটা খুব সুন্দর। চুল খুলে কখনো বাইরে, ছাদে কোথাও যাবি না। আর কি যেনো বলছিলি হেয়ার স্পা! পার্লারে যাবি না একদম। তুই চুলে যা কিছু মাখবি আমায় বলবি আমি তোকে এনে দেবো।
পিয়াস ভাইয়া একদমে কথা গুলো বলে থামলো। আমার তো সব মাথার ওপর দিয়ে গেলো। তবুও আনমনে বলে ফেললাম।
— কিন্তু পিয়াস ভাইয়া আমার তো ইচ্ছা ছিল চুল টাকে কেটে একটা স্টাইলিশ লুক দেওয়ার 😌
আমার কথা শুনে পিয়াস ভাইয়া একপ্রকার ঝাঁঝিয়ে উঠলেন।
— আলো আমার কথার অবাধ্য হবি না বলে দিলাম। আমি যা বলছি তাই করবি। তুই এই চুল গুটিয়ে রাখবি কাটবি না বুঝলি। তোর লম্বা চুল আমার দারুণ লাগে। তুই তো আমার কেশবতী কন্যা রে।
পিয়াস ভাইয়ার কথা শুনে আমি হাসলাম ঠিকি কিন্তু বুকের ভিতর টা কেমন করে উঠলো।
🍂🍂🍂🍂🍂
না নাহ,,, না,, এ আমার পিয়াস ভাইয়া হতে পারে না। আমার পিয়াস ভাইয়া এ কাজ করতে পারে না। আমার চুল গুলো কেটে দিয়েছে পিয়াস ভাইয়া, আমার চুল গুলো,,,! কোলের ওপর সমস্ত কাটা চুলের টুকরো গুলো তুলে নিলাম। বিছানার সাথে মাথাটা হেলান দিয়ে রাখলাম। চোখ ঝাঁপিয়ে শুধু পানি গড়িয়ে পড়ছে। কেনো জানি এখনো আমি বিশ্বাস করতে পারছি না। আমার লম্বা চুল টা এতো ছোট হয়ে গেছে! সারা শরীর যেনো অবশ হয়ে আসছে। হঠাৎ দরজা বন্ধ করার আওয়াজ শুনে তাকালাম। পিয়াস ভাইয়াকে দেখে আমার ঘৃণা লাগছে। মানুষটাকে আর দেখতে ইচ্ছা করছে না।
— তুই এখানে বসে আছিস যে?
আমি পিয়াস ভাইয়াকে আপাদমস্তক দেখে মুখটা অন্যদিকে করে নি।
— কথা কানে যাচ্ছে না তোর?
আমি নিরব থাকি কিছু বলি না। বেশকিছুক্ষণ পিয়াস ভাইয়া আমাকে দেখতে থাকে। আমার হাতটাকে শক্ত করে ধরে টেনে তুলে।
— কানে কি তুলো গুজে রেখেছিস না কি? আমি তোকে কিছু জিজ্ঞাসা করছি আলো। একঘন্টা হতে চললো তুই এখনো ঠায় বসে আছিস?
আমার হাতটা ছেড়ে দিলে আমি একটু টলে যাই। কাঁদিও না ফুঁপাইও না শুধু চোখের কোণ বেয়ে পানি গড়িয়ে আসে। পিয়াস ভাইয়ার দিকে তাকাই না দৃষ্টি অন্যদিকে স্থির রাখি। আমার হাত দুটো ধরে ঝাঁকাতে লাগলো।
— ওই নাটক করছিস! নাটক! আরে তুই কথা বলছিস না কেন?
পিয়াস ভাইয়া চিৎকার করে কথাগুলো বলে আমার গাল দুটো চেপে ধরে।
— কষ্ট হচ্ছে না রে তোর? খুব কষ্ট হচ্ছে বুঝি! কোথায় কষ্ট হচ্ছে তোর! আমাকে বল বল না আমাকে? তোর কষ্ট আমি দূর করে দিব।
পিয়াস ভাইয়া কথাগুলো বলছে আর আমার শরীরে এমন ভাবে হাত দিচ্ছে যে আমি এবার আর স্থির হয়ে থাকতে পারলাম না। পিয়াস ভাইয়াকে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দিলাম।
— কেন এমন করলে? কেন? আমার চুল কেটে দিয়ে কি লাভ হলো তোমার? বলো, বলো না কেন এমন করলে?
চিৎকার করে কথাগুলো বলে কাঁদতে কাঁদতে ফ্লোরে বসে পড়লাম। পিয়াস ভাইয়া আমার চুলটা শক্ত করে ধরলো।
—মেরে ফেলো, আরে মেরে ফেলো না আমায়, নাও দুহাতে গলা টিপে শেষ করে দাও আমায়।
পিয়াস ভাইয়ার হাত দুটো ধরে নিজের গলাটা চেপে ধরলাম। চিৎকার করতে করতে কাশি শুরু হয়ে গেলো আমার। পিয়াস ভাইয়া আমাকে ধাক্কা মারতেই আমি একটু ছিটকে সরে গেলাম।
— এই কি করেছি আমি তোর হুম কি করেছি? সামান্য চুল কেটেছি।
— এটা তোমার কাছে সামান্য কিছু হতে পারে কিন্তু এটা আমার মতো মেয়েদের কাছে অসামান্য জিনিস। পৃথিবীর প্রত্যেকটা নারীর চুলটাই তার অলঙ্কার। নারী জাতির কেশেতেই বেশ। আজকে তুমি আমার চুল কেটে আমার সম্মানে আঘাত করেছো প্রতিটা নারী জাতিকে অপমান করেছো। তোমার মা,,,,।
আর বলতে পারলাম না গালে সজোরে থাপ্পড় পড়ে গেলো। আমাকে চুলের মুঠি ধরে তুললো পিয়াস ভাইয়া। এক হাতে চুলের মুঠি আর এক হাতে গাল চেপে ধরলো। আমার মাথাটা ঝিমঝিম করছে শরীর টা দূর্বল লাগছে।
— আরে তুই এতো কথা কেন বলছিস? আরে আমি তো তোর চুলটাই কেটেছি। আজ কেটেছি কাল বড়ো হয়ে যাবে। কিন্তু আমার বুকের ভিতর এর যন্ত্রণাটা হ্যা বল! আরে বল না আমার সাথে যা কিছু করেছিস আমার বিশ্বাস ভেঙ্গেছিস। এতো সহজে কি করে ছাড়ি তোকে? সব হিসাব বরাবর করবো চিন্তা করিস না বুঝেছিস।
আমাকে ছেড়ে দিয়ে দরজা খুলে দেয়।
— ওই অনেক হয়েছে এবার আমাকে শান্তিতে একটু ঘুমাতে দে। নে চল বেড়িয়ে যা আমার রুম থেকে , চল বেরো।
আমি চোখের পানি মুছে নিয়ে বেরোতে যাচ্ছি।
— ওই দাঁড়া আমার রুমটা পরিস্কার করে দিয়ে তো যা। এইসব আবর্জনা গুলো উঠিয়ে নিয়ে যা।
আমি হাঁটু মুড়ে বসে ফোঁপাতে ফোঁপাতে শাড়ির আঁচলের মধ্যে চুলের টুকরো গুলো তুলে নিয়ে বেড়িয়ে আসি।
নিজের রুমে এসে দরজা বন্ধ করে বিছানার মাঝখানে বসি। চুলের টুকরো গুলো হাত বুলিয়ে দেখতে থাকি। খুব কষ্ট হচ্ছে এই সময় আমার আম্মুকে কাছে পেতে ইচ্ছে করছে । ও আম্মু তুমি আমার চুলে আর তেল মাখাতে পারবে না। দেখো না দেখো! আচ্ছা আমার আম্মুর মতো তোরাও কি আমাকে ছেড়ে গেলি। বেশ তোদের প্রতি আর মায়া দেখাবো না যা চলে যা তোরা সবাই চলে যা। কাউকে চাই না আমি কাউকে না।আমি বিছানা থেকে নেমে পড়লাম। রাগে দুঃখে চুলের টুকরো গুলো কে জানলা দিয়ে ফেলে দিলাম। সকাল হলে ঝাঁট দিয়ে চলে যাবে আবর্জনার স্তূপে। গ্ৰিল ধরে দাঁড়িয়ে দেখছি ল্যাম্পপোস্টের আলো পড়া ফাঁকা রাস্তাটা।
অনুভব করছি আমার ঠোঁট টা যেনো কেউ কেটে দিচ্ছে। যন্ত্রণায় ছটফট করছি, চোখের কোণ বেয়ে পানি গড়িয়ে পড়ছে। আমি একটুও নড়তে পারছি না। চোখ খুলে চমকে যাই আমি। পিয়াস ভাইয়া আমার ওপর নিজের শরীরের ভার ছেড়ে দিয়েছে। আমার ঠোঁট দুটো নিজের ঠোঁটে নিয়ে রেখেছে। যন্ত্রণায় আমি ছটপট করছি । কারণ পিয়াস ভাইয়া আমার ঠোঁট টা কামড়ে ধরেছে। অনেকক্ষণ পর আমি মুক্তি পেলাম। আমার ঠোঁট ছেড়ে দিলেও আমার ওপর থেকে সরলো না। গলায় একের পর এক গভীর চুমু দিচ্ছে। আমার সারা শরীরে শিহরণ বয়ে গেলো। আমি আমার হাতের মুঠোয় পিয়াস ভাইয়ার মাথার চুল ধরে নিলাম। পিয়াস ভাইয়া জোরে কামড় বসালো আমি আর পারলাম না চিৎকার করে উঠলাম। কিন্তু পিয়াস ভাইয়া আমাকে ছাড়লোনা গলায় তিন চারটে কামড় দিয়ে আমাকে ছেড়ে উঠে বসলো।
— কি করছিলে পাগল হয়ে গেছ নাকি!
আমি কথাটা বলে ঠোঁটে হাত দিয়ে দেখি রক্ত। পিয়াস ভাইয়া আমার মুখের কাছে মুখ নিয়ে আসলো। হিসহিসে গলায় বলে উঠলো।
— কাউকে জানাবি না যেনো তোর চুল আমি কেটেছি। মেরে ফেলবো তোকে আমি।
পিয়াস ভাইয়া কথাগুলো বলে চলে যায়। আমি বিছানার চাদর খামচে ধরি। মাথায় ঢুকছে না কিছু পিয়াস ভাইয়ার মাথায় কি চলছে! এতো ভয়ঙ্কর হয়ে গেল কেন পিয়াস ভাইয়া!
.
.
.
.
#চলবে……
(ভুল ত্রুটি ক্ষমা করবেন)