এক_রক্তিম_শ্রাবণে❤️পর্ব-৬
#লেখিকা_মালিহা_খান❤️
ছোট ছোট মরিচবাতি দিয়ে সাজানো বিশাল কমিউনিটি সেন্টার।চোখ ধাঁধানো সৌন্দর্য্য।
গাড়ি থামে সেন্টারের সামনে।তখনো তিহানের বাহুতে তোহার মাথা ঠেকানো।চোখজোড়া বন্ধ।
তিহান বেশ বুঝতে পারছে তন্দ্রাঘোরে আছে মেয়েটা।
হাল্কা করে সেই হাতটা নাড়িয়ে সে বলে,
—“গাড়ি ঘুরাই তাহলে?বাসায় যেয়ে ঘুমা।বিয়েতে আর যাওয়া লাগবেনা।”
তিহানের কথাগুলো কানে যেতেই ধরফরিয়ে সরে যায় তোহা।সে তো ঘুমায়নি।কেবল চোখ বন্ধ করে ছিলো।কিন্তু তিহানের বাহুতে মাথা রাখলো কখন?মনে পরছে না।
সে সরতেই বেরিয়ে গেলো তিহান।অত:পর তাকেও বের করে ধীরপায়ে সামনে এগিয়ে গেলো।
_____________
সেন্টারে এদিক ওদিক ছুটে বেরাচ্ছে তোহা।আশেপাশের সবাই ই বর পক্ষের।তাদের বাসার কেউ নেই কেনো?
উপায় না পেয়ে সিঁড়ি বেয়ে একেবারে নিচে নেমে যায় তোহা।
বাবুর্চিরা যেখানে রান্না করছে সেখানেই তিহানকে দেখতে পায় সে।একটু পরেই খাবার সার্ভ করা হবে।মেহমানদারিতে যেন কোনোরকম কমতি না হয় তার জন্যই সেখানে দাড়িয়ে তদারকি করছে সে।
দ্রুতপায়ে হেঁটে যেয়ে পেছন থেকে তিহানের হাতের তালু আঁকড়ে ধরে তোহা।হাতে টান পরতেই তিহান ফিরে তাকায়।তোহাকে দেখে তেজী কন্ঠে বলে,
—“সমস্যা কি?টানাটানি করছিস কেনো?”
তোহা একটু এগিয়ে তিহানের গা ঘেঁষে দাড়ায়।চোখেমুখে ঘোর অসস্তি।এত অচেনা মানুষের ভিড়ে প্রচন্ড অসস্তি হচ্ছে তার।উপরন্তু বাসার কাউকে আশেপাশে পাচ্ছেনা।
তোহার আড়ষ্ট চেহারা দেখে এবার নিজেই তাকে একটু কাছে টেনে নেয় তিহান।আঙ্গুলের ভাঁজে আঙ্গুল গলিয়ে শক্ত করে তার হাতটা ধরে রাখে।বলে,
—“তুই একা কেন?স্বর্ণারা কোথায়?”
—“আমাদের বাসার কাউকে খুঁজে পাচ্ছিনা।”
ভ্রু কুঁচকায় তিহান।সন্দিহান কন্ঠে বলে,
—“খুঁজে পাচ্ছিসনা মানে?নাকি তুই ই হারিয়ে গেছিস?”
উওরে তোহা বোকা হেসে বলে,
—“ওই আরকি।সেন্টারটা অনেক বড়তো।তালগোল পাচ্ছিনা।”
মুখ ফুলিয়ে শ্বাস ছাড়ে তিহান।বাবুর্চিদের কিছু নির্দেশনা দিয়ে সেখান থেকে একটু সরে দাঁড়ায়।চুলার আগুনের উত্তাপে জায়গাটা গরম হয়ে গেছে।দাড়ানো যাচ্ছেনা।নিজের হাতের মাঝে আবদ্ধ তোহার ঘেমে যাওয়া হাতটা ঠি কই অনুভব করতে পারছে সে।
একপলক তাকিয়ে তোহার কপালের বেঁকে যাওয়া টি কলিটা সোজা করে দিয়ে পকেট থেকে নিজের ফোনটা বের করে তিহান।স্বর্ণার নাম্বারে ডায়াল করে রিসিভ হতেই ঝাড়ি দিয়ে বলে,
—“কই তুই?তিহুকে একা ছেড়েছিস কেনো?”
ওপাশ থেকে স্বর্ণার মিনমিনে কন্ঠ শোনা যায়,
—“ও তো আমার সাথেই ছিলো ভাইয়া।কখন যেনো…”
—“এখন কোথায় তুই?”
—“দোতালায়…স্টেজের পাশে।”
“আচ্ছা,ওখানেই থাক।আমি দিয়ে যাচ্ছি তিহুকে।”বলে ফোনটা খট করে কেটে দেয় তিহান।স্বর্ণার কাছে তোহাকে দিয়ে নিজের ফোনটা তোহার হাতে ধরিয়ে দিয়ে বলে,”রাখ তোর কাছে।মার ফোনটা আমার কাছে আছে।কোনো দরকার হলে ওই নাম্বারে কল দিবি।”
তোহা মাথা কাত করে সম্মতি দিতেই আবারো ব্যস্ত পায়ে নিচে নেমে যায় তিহান।সে পথে মুগ্ধ নয়নে কিছুক্ষণ চেয়ে দৃষ্টি নামিয়ে ফেলে তোহা।
______________
একটু আগেই নিশাকে গাড়িতে উঠিয়ে দেয়া হয়েছে।বরযাত্রী চলে গিয়েছে।
কেঁদেকেটে ভাসিয়ে ফেলেছে তোহা।এখনো আফিয়ার বুকে মাথা রেখে অনবরত কেঁদে চলেছে সে।চোখের সাজ নষ্ট হয়ে একাকার অবস্থা।বাকিরাও কাঁদছে।স্বর্ণালি আর ওদের ছোটখালা তোহার মাকে সামলাচ্ছে।
সব কাজ শেষ করে তিহান সেদিকে এগিয়ে এলো।আফিয়াকে উদ্দেশ্য করে চাপা স্বরে বললো,
—“মা,তুমি খালামনির কাছে যাও।আমি বরং তিহুকে বাসায় নিয়ে যাই।এত কাঁদলে অসুস্থ হয়ে যাবে।”
আফিয়া তোহার মাথায় হাত বুলিয়ে উঠে দাড়ায়।বলে,
—“তুই তিহানের সাথে বাসায় যা মা।যেয়ে রেস্ট নে।আমরা একটু পরেই ফিরছি।”
সিক্ত চোখে তাকায় তোহা।নাক টেনে বলে,
—“আমিও তোমাদের সাথেই যাবো।”
আফিয়া কিছু বলার আগেই তিহান তোহাকে টেনে নিজের পাশে দাড় করিয়ে বললো,
—“তুমি যাও মা।আমি নিয়ে যাচ্ছি ওকে।”
॥
॥
গাঢ় অন্ধকারে ঢাকা রাত।আকাশে চাঁদ নেই।অন্ধকারও অন্ধকারকে গ্রাস করছে।মাঝে মধ্য রাস্তার সোডিয়াম লাইটের আলোয় অন্ধকারটা মিইয়ে গেলেও গাড়ি এগিয়ে যেতেই তা আবারো আগের রুপের ফিরে আসছে।ছিমছাম পরিবেশ।শো শো করে শাব্দিক বেগে গাড়ি চলছে।জানালা দিয়ে মাথা বের করে রেখেছে তোহা।তার খোলা চুলগুলো এলোমেলোভাবে তিহানের মুখের উপর আছড়ে পরছে।তিহান একবারো সরায়নি চুলগুলো।
সে অবস্থাতেই ড্রাইভ করছে।
খানিকবাদে মাথা ভিতরে ঢুকায় তোহা।কান্না থেমেছে অনেকক্ষণ আগেই।গাড়ি ডানদিকে মোড় ঘুরে।এই রাস্তাটা হাল্কা আলোকিত।আশেপাশের বেশিরভাগ দোকানে খোলা।তাই অতটা অন্ধকার নেই।
হঠাৎই তোহার চোখ যায় গাড়ির সামনে জায়গাটায়।কিছু একটা ভেবে সে বলে,
—“কানের দুল দুটো কই?”
—“ফেলে দিয়েছি।”তিহানের শান্ত শীতল কন্ঠ।
—“কিহ্?কেনো?”
—“ওটাতো আর পরবিনা।আর পরতে চেলেও আমি পরতে দিবোনা।..রেখে কি লাভ?”
—“তাই বলে ফেলে দিবেন?”
তিহান এবার চিরচেনা গম্ভীর কন্ঠে বলে,
—“দিবো এক চড়।একদম বেশি কথা বলবিনা।”
ব্যাস!চুপ করে যায় তোহা।তিহানের প্রতি রাগ ঝাড়তে থাকে তার কোলের উপর রাখা তিহানের ব্লেজারটার উপর।
দুহাতে দুমড়েমুচরে আয়রন করা ব্লেজারটার যাচ্ছেতাই অবস্থা করে ফেলে সে।
_______________
বাড়ি ফিরে তাকে রুমে দিয়ে নিজেদের ফ্ল্যাটে চলে গিয়েছে তিহান।ক্লান্ত ভঙ্গিতে বিছানায় বেশ কিছুক্ষণ পরে থেকে তারপর উঠে দাড়ায় তোহা।লেহেঙ্গা বদলে শাওয়ার নিয়ে হাল্কা কাপড়ের থ্রিপিস পরে বের হয়।ভেজা চুলগুলো ঝেড়ে তোয়ালে মেলে দেয়ার জন্য বারান্দায় যেতেই লক্ষ্য করে পাশের বারান্দায় তিহান দাড়িয়ে রয়েছে।তার ঘরের লাইট জ্বালানো বিধায় সবকিছুই স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে।তিহানের কানে ফোন।উল্টোদিকে ফিরে ব্যস্ত ভঙ্গিতে কথা বলছে সে।তবে কিছুই স্পষ্ট শোনা যাচ্ছেনা।কেন জানি মনটা আবারো খারাপ হয়ে গেলো তোহার।তোয়ালেটা মেলে দিয়ে রুমে এসে বারান্দার দরজাটা সজোরে আটকে দিলো সে।
হঠাৎ শব্দে ঘাড় বাকিয়ে তাকায় তিহান।বিষয়টা বোধগম্য হতেই হাল্কা হেসে উঠে সে।
______________
ঘরে এসে লেহেঙ্গাটা ঢোকানোর জন্য কাবার্ডের বড় অংশটা খোলে তোহা।তখনই তার চোখ আটকে যায় একপাশে রাখা বেশ বড়সড় একটা সাদা রংয়ের কাগজে মোড়ানো প্যাকেটের উপর।একপাশে গাদাগাদি করে লেহেঙ্গাটা ঢুকিয়ে সন্দিহান দৃষ্টিতে তাকিয়ে প্যাকেটটা বের করে সে।আয়েশি ভঙ্গিতে বিছানার ওপর বসে
মোড়ক খুলতেই একের পর এক বেরিয়ে আসে প্রায় ছাব্বিশ ডজন চুড়ি।
সেদিন যে সে চুড়ির দোকানে বিরবির করে বলেছিলো”সবইতো ভালোলাগছে।”।গুণে গুণে সেই সবগুলো চুড়িই এখানে আছে।
বিস্মিত নয়নে বিছানায় ছড়িয়ে ছিটিয়ে রাখা চুড়িগুলোতে আরো একবার চোখ বুলাতেই এতক্ষনের ভারি বিষাদ হৃদপিন্ডটা অগাধ খুশিতে লাফিয়ে উঠে।মুখ প্রসস্ত হাসিতে চেহারা উজ্জ্বল হয়ে উঠে।হুট করেই তার মন ভালো হয়ে যায়।একেবারে হুট করেই…..
~চলবে~
[কোনোক্রমেই কার্টেসী ছাড়া কপি করবেন না]
[পর্বটা লিখে নিজেই শান্তি পাই নাই।কেউ কেউ গল্পটা চুরি করছে।নিজের নামে চালাচ্ছে।বিষয়টা নিজে খুবই ডিস্টার্ব বোধ করছি আমি।গল্প লিখার আগ্রহটাই পাচ্ছিনা।যাইহোক,পর্ব ছোট হওয়ার জন্য দু:খিত।কালকে বড় করে দিব।]