#গল্পের_নাম_মনের_আড়ালে পর্বঃ৪
#লেখনীতে_Alisha_Rahman_Fiza
মিস্টার রক্তিমের প্রশ্নে আমি চোখ তুলে তার দিকে তাকালাম তার শার্টের বোতাম খোলা দেখে মুখ দিয়ে নিজের অজান্তে বের হয়ে আসলো,
~অসভ্য।
এতটুকু বলে আমি জিহ্বায় কামড় দিয়ে মুখ অন্যদিকে করে নিলাম।মিস্টার রক্তিম আমার কথা শুনে বললেন,
~অধরা,আমি অসভ্য কীভাবে হলাম?আমি তো আর আপনার সাথে কোনো অসভ্যতা করেনি আমার শার্টের বোতাম খোলা এতেই আমি অসভ্য।
বলেই সে মেকি হাসলেন আমি তার কথা অগ্রাহ্য করে বললাম,
~মিস্টার রক্তিম,আমি রুপসার দায়িত্ব নেওয়ার জন্য প্রস্তুত।
মিস্টার রক্তিম বললেন,
~Ok.তাহলে আপনার কাজ শুরু করুন আর টাকার চিন্তা আপনার করতে হবে না প্রতিমাসে একটা নির্দিষ্ট amount আপনার একাউন্টে চলে যাবে।
টাকার কথা শুনে আমার রাগ লাগলো এই মানুষটা টাকা ছাড়া কী কিছুই চিনে না?একজন মানুষের অনুভূতি আর তার ভালোবাসার কী কোনো মূল্য আছে।এতটা নিচু মনমানসিকতা এই মানুষটার হলো কী করে?
আমি নিজেকে সামলে তাকে বললাম,
~দেখুন আমার যখন টাকার প্রয়োজন পরবে তখন আপনার থেকে নিয়ে নিবো এখন এই বিষয়ে কোনো কথা বলতে চাই না। রুপসার রুমে যাচ্ছি ওর স্কুলের টাইম হয়ে যাচ্ছে।
আমি গটগট করে সেখানে থেকে চলে আসলাম এই ব্যাটার মাথার তাড়ছিড়া কথা বাড়ালেই কথা বাড়বে।
রক্তিম অধরার যাওয়ার দিকে একধ্যানে তাকিয়ে আছে মেয়েটা আসলেই রুপসাকে অনেক ভালোবাসে নাহলে এতো ভালো একটা ডিল শুনেও রিফিউজ করে দিলে রক্তিম শার্টের বাটন লাগাতে লাগাতে বাসার ভিতরে চলে আসলো।
আমি রুপসার রুমে গিয়ে দেখি সে একগালে হাত দিয়ে চুপটি মেরে ঘুমিয়ে আছে একদম পুতুলের মতো।আমি ধীরপায়ে রুপসার মাথার কাছে বসে ওর মাথায় হাত বুলাতে বুলাতে বললাম,
~রুপসা,সকাল হয়ে গেছে সোনা তাড়াতাড়ি উঠে পরো
রুপসার কোনো হেলদোল নেই আমি আরেকবার ওকে ডাক দিলাম এবার সে নড়েচড়ে উঠলো।চোখ পিটপিট করে খুলে আমাকে দেখে একলাফে উঠে বসলো তারপর বললো,
~ম্যাম তুমি এখানে?
আমি হেসে রুপসাকে বললাম,
~হুম আমি এখানে তুমিই তো আমাকে আসতে বলেছিলে।
রুপসাকে আমাকে জড়িয়ে ধরে বললো,
~Thank you তুমি আমার জন্য এখানে এসেছো।
আমি ওর মাথায় হাত বুলিয়ে ওকে তুলে নিলাম তারপর ওয়াশরুমে নিয়ে গিয়ে বললাম,
~তাড়াতাড়ি ফ্রেশ হয়ে নেও আমি তোমার স্কুল ড্রেস রেডি করছি।
রুপসা বললো,
~ওকে।
আমি রুপসার স্কুল ড্রেস বের করে সেটা সুন্দর ভাবে ইস্ত্রি করে রেখেদিলাম একটুপর রুপসা বের হলে ওকে সুন্দর করে রেডি করে দিলাম।তারপর ব্যাগ থেকে গোলাপটা বের করে ওর হাতে দিয়ে বললাম,
~আমার গোলাপটা তোমাকে দিলাম কারণ রুপসাকে আমি অনেক ভালোবাসি।
রুপসা আমার হাত থেকে গোলাপটা নিয়ে আমাকে জড়িয়ে ধরে বললো,
~আমিও তোমাকে অনেক ভালোবাসি।
___________
রুপসাকে নিয়ে নিচে এসে দেখি সার্ভেন্টরা আমার আনা নাস্তা সার্ভ করেছে।আমি রুপসাকে চেয়ারে বসিয়ে ওকে নাস্তা খাওয়ানে শুরু করলাম তখনই আমার চোখ গেলো সিড়ির দিকে মিস্টার রক্তিম শার্টের হাতা ঠিক করতে করতে নিচে নামছেন।তাকে দেখেও আমি না দেখার ভান করলাম সে এসে রুপসার গালে চুমো খেয়ে বললেন,
~Good morning baby.
রুপসা বললো,
~Good morning papa.
মিস্টার রক্তিমের চেয়ার টেনে বসে পরলেন আমার দিকে একবার তাকিয়ে প্লেট সামনে নিলেন তারপর একএক করে সব খাবার প্লেটে তুলে খাওয়া শুরু করলেন।আমি রুপসাকে খাওয়ানো শেষ করে ওকে পানি খাইয়ে বললাম,
~তুমি একটু বসো আমি ফোন করে আসছি আর জোনাকি আন্টিকে(রুপসাদের বাসায় কাজ করে)বলো তোমার টিফিনটা দিয়ে দিতে আমি রেডি করে রেখেছি।
বলেই আমি রুপসার রুমে এসে ব্যাগ থেকে মোবাইল বের করে মাকে ফোন দিয়ে কিছুক্ষন কথা বলে নিলাম।একটুপর আমি, রুপসা আর মিস্টার রক্তিম স্কুলের উদ্দেশ্যে রওনা হলাম।আমি আর রুপসা গাড়ির পিছন সীটে বসে খুনশুটি করেই চলছি মিস্টার রক্তিম ড্রাইভ করছে আর একটু পর পর লুকিং গ্লাস দিয়ে দেখছে।
রুপসার সাথে কথা বলতে বলতে আমরা স্কুল পৌছে গেলাম আমাকে প্রিন্সিপালের সাথে কথা বলতে হবে এখন থেকে আমি ১২টা পর্যন্ত ক্লাস করাবো এক্সট্রা ক্লাস নিবো না।রুপসাকে নিয়ে ভিতরে ডুকতে যাবে তখনই মিস্টার রক্তিম আমাকে পিছন থেকে ডাক দিলেন,
~অধরা।
আমি তার ডাক শুনে রুপসাকে বললাম,
~তুমি ভিতরে যাও।
রুপসা ভিতরে চলে গেলো।আমি মিস্টার রক্তিমের কাছে গিয়ে বললাম,
~কিছু বলবেন?
মিস্টার রক্তিম বললেন,
~আপনার যদি কোনো হেল্পের প্রয়োজন স্কুলের ব্যাপারে আমাকে জানাতে পারেন?
আমি বললাম,
~তার দরকার নেই আমার কাজ ৯থেকে১২টা পর্যন্ত করে নিবো কোনো এক্সট্রা ক্লাস নিবো না।
মিস্টার রক্তিম তার সানগ্লাস পরতে পরতে বললেন,
~আপনার যেভাবে সুবিধা হয় সেভাবেই কাজ করেন।
আমি শুধু হুম বলপ সেখানে থেকে চলে আসলাম স্কুলের ভিতরে গিয়ে সোজা চলে গেলাম প্রিন্সিপাল রুমে সেখানে গিয়ে স্যারকে সব কথা বললে স্যার বললেন,
~ঠিক আছে অধরা কিন্তু এক্সট্রা ক্লাসে যে তুমি এক্সট্রা টাকাটা পেতে তা আর দেওয়া হবে না।
আমি বললাম,
~ঠিক আছে স্যার। No problem.
প্রিন্সিপালের সাথে কথা বলে এক এক করে সব ক্লাস শেষ করলাম। টিফিনের ফাকে আর ক্লাসেই রুপসার সাথে দেখা হয়েছে আমার।আমি আর রুপসা স্কুল শেষ করে বাসায় আসছি তখনই রুপসা জেদ ধরে বসলো যে সে ফুচকা খাবে।আমি তাকে শত বুঝানোর চেষ্টা করলাম কিন্তু সে বুঝতে চাইলো না।আমিও আর না পেরে ওকে নিয়ে গাড়ি থেকে বের হয়ে ফুচকা খেয়ে নিলাম।তারপর বাসায় চলে আসলাম রুপসা আমাকে বললো,
~ম্যাম ফুচকার কথা পাপা যেন না জানপ নাহলে মাথা আর শরীরে থাকবেনা।
আমি একথা শুনে সাহস নিয়ে বললাম,
~মিস্টার রক্তিমকে আমি ভয় পাইনা হুহ সে বাঘ না ভাল্লুক যে তাকে ভয় পেতে হবে।তোমার পাপা আমাকে ভয় পায় গিয়ে জিজ্ঞেস করো
এতটুকু বলতেই পিছন থেকে কেউ বলে উঠলো,
~তাই নাকি অধরা।রক্তিম রায়জাদা তোমাকে এতো ভয় পায় তাতো জানতাম না।
___________
আমি রুপসার একবার তাকিয়ে দেখি ও মুখ টিপে হাসছে।আমি ওর দিকে তাকিয়ে চোখ গরম করে তাকালাম এটা দেখে রুপসা জোরেই হেসে উঠলো।আমি নিজেকে সামলে পিছন ফিরে তাকালাম আর দেখলাম মিস্টার রক্তিম বুকে হাত গুজে দেওয়ালের সাথে হেলান দিয়ে দাড়িয়ে আছে তার মুখে এক শান্তি শান্তি ভাব লাগছে এতোটা relax তাকে আমি দেখিনি এর আগে।আমার দিকে তাকিয়ে সে বললেন,
~অধরা,বলেন না আমি আপনাকে কতোটা ভয় পাই?
তার কথা শুনে আমি শুকনো ঢোক গিলে বললাম,
~আপনি মনে হয় ভুল শুনেছেন কানের মেশিন কিনতে পারেন আমার একটা পরিচিত দোকানদার আছে সে আপনাকে ডিসকাউন্ট দিবে।আমি আপনাকে নিয়ে যাবো নে।
অধরার কথা শুনে রক্তিম হা এই মেয়ে বলে কী আমি কী বুড়ো নাকি যে কানে কম শুনবো না।হ্যাঁ বয়সটা একটু বেড়েছে কিন্তু রক্তিম রায়জাদার charm এখন পর্যন্ত আছে।এই মেয়েকে তো আজ ছাড়ছিনা রক্তিম বললো,
~আপনি কী indirectly আমাকে বুড়ো বলছেন?
আমি আমতা আমতা করে বললাম,
~নাহ তো অনেক সময় কম বয়সেও এই প্রবলেম হয়।
মিস্টার রক্তিম বললেন,
~আপনারও এই কম বয়সে একটা রোগ হয়ে গেছে।
তার কথা শুনে আমি ভ্রুকুচকে বললাম,
~কোন রোগ?
মিস্টার রক্তিম বললেন,
~এই যে আপনি একলাইন বেশি বুঝেন।
আমি তার দিকে কটমট দৃষ্টিতে তাকিয়ে বললাম,
~আর আপনি অতিরিক্ত কথা বলেন।
মিস্টার রক্তিম কিছু বলতে যাবেন তার আগে রুপসা বলে উঠলো,
~পাপা,দাদা এসেছে তার গাড়ি আমাদের বাসায় ডুকেছে।
এতটুকু বলে রুপসা দৌড় লাগালো।আমি ওর যাওয়ার দিকে তাকিয়ে রইলাম মিস্টার রক্তিম আমাকে বললেন,
~মামা এসেছে আপনি নিচে আসুন
বলেই সে চলে গেলো আমিও নিচে যাওয়ার জন্য পা বাড়ালাম।নিচে নেমে দেখি রুপসা তার দাদার কোলে বসে আছে মিস্টার রক্তিম তার পাশে বসে কথা বলছে।আমাকে দেখে রুপসা দৌড়ে এসে আমার হাত ধরে মিস্টার রক্তিমের মামার কাছে নিয়ে গেলো।আমাকে দেখিয়ে দেখিয়ে বললো,
~দাদা,এই দেখো আমার ম্যাম আমার সাথেই থাকবে।
আমার দিকে একবার তাকিয়ে রুপসার দাদা বললেন,
~আমার ইমতিয়াজ আহমেদ। তুমি আমাকে মামা বলেই ডাকতে পারো।
আমি মুচকি হেসে বললাম,
~কেমন আছেন মামা?
মামা বললেন,
~ভালো।রুপসা তোমার কথা অনেক বলেছে আমি খুশি হয়েছি তুমি এখানে আছো বলে।
আমি কিছু না বলে মুচকি হাসলাম মিস্টার রক্তিম মামাকে বললেন,
~মামা,আপনি ফ্রেশ হয়ে কিছু খেয়ে নিন আমি খাবার টেবিলে দিতে বলছি।
আমি বললাম,
~আমি আসছি।
বলেই রান্নাঘরে চলে আসলাম সব খাবার গুলো ডাইনিংয়ে সুন্দর করে সাজিয়ে রুপসার রুমে চলে আসলাম।রুপসা তার হোম ওয়ার্ক করতে ব্যস্ত আমি তার পাশে বসে তার সাহায্য করতে লাগলাম
_________
রাত ৮টা এখন আমার বাসায় যেতে হবে বাবা নিতে আসবে আমাকে। আমি রুপসাকে বললাম,
~রুপসা,আমি কাল সকালে আসবো তুমি কিন্তু good girl হয়ে থাকবে।
রুপসা বললো,
~ওকে ম্যাম।
তখনিই মোবাইল রিংটন বেজে উঠলো আমি মোবাইল চেক করে দেখি বাবা ফোন করেছে হয়তো এসে পরেছে।আমি রুপসাকে বিদায় জানিয়ে সিড়ি বেয়ে নিচে নেমে দেখি বাবা আর মিস্টার রক্তিম কথা বলছে।আমাকে দেখে বাবা বললো,
~রক্তিম বাবার সাথে কথা বলে খুবই ভালো লাগলো।
মিস্টার রক্তিম আমার দিকে তাকিয়ে বাঁকা হাসলেন আমি ভেংচি কেটে বললাম,
~বাবা,চলো মা ওয়েট করছে।
বাবা বললো,
~হ্যাঁ চল আর রক্তিম তুমি কিন্তু রুপসাকে নিয়ে আমাদের বাসায় যাবে।
মিস্টার রক্তিম বললেন,
~অবশ্যই আপনি বলেছেন আর আমি যাবো না এমন কি হয়?একদিন অবশ্যই যাবো আপনারাও কিন্তু আসবেন।
বলেই আমার দিকে তাকালেন আমি মুখ অন্যদিকে করে ফেললাম।বাবা আর আমি বাসার জন্য রওনা দিলাম রাস্তায় বাবা বললো,
~আইসক্রিম খাবি?নিয়ে নেই
আমি মুচকি হেসে মাথা নাড়ালাম বাবা এখনও আমাকে সেই ছোট মেয়েটি মনে করেন। আর আমিও বাবার সামনে ছোট অধরা হয়ে যাই আসলে বাবাদের কাছে মেয়েরা কখনো বড় হয় না আর বাবা কখনো তার রাজকুমারীর হাত ছাড়ে না যেমনটি আমার বাবা আমার হাত ছাড়েনি এতকিছুর পরও।তবুও বাবাকে কোনোদিন বলতে পারিনি যে,
~বাবা তোমাকে ভালোবাসি।❤️❤️
চলবে
(বিদ্রঃকেমন হয়েছে জানাবেন।ভুলগুলো ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখার অনুরোধ রইলো🥰🥰।Happy Reading 🤗🤗)