গোধূলীর_রঙিন_ছোঁয়া পর্ব_৪০

গোধূলীর_রঙিন_ছোঁয়া পর্ব_৪০
#লেখায়_ফারহানা_ছবি

.
.
🦋
প্রাণো দ্রুত উঠে দাড়িয়ে ফোন বের করে দেখে কমিশনার সত্যি ছবি সহ ডিটেইলস পাঠিয়েছে৷ প্রাণো ছবিটার উপর ক্লিক করে দেখতেই প্রাণোর পায়ের নিচের মাটি যেন নরে গেল৷ প্রাণো ধপ করে টুলে বসে পরে ৷ RV প্রাণোর এমন অবস্থা দেখে প্রাণোর হাত থেকে ফোন টা নিয়ে নেয় ছবিটা দেখার জন্য , RV ছবি টা দেখে প্রচন্ড রকমের অবাক হয়ে প্রাণো দিকে তাকিয়ে বলে ওঠে , ” প্রা,,প্রাণো এতো তোমার বাবা! জুনাইদ কবির ৷ ”

প্রাণো যেন এক প্রকার শক্টড এর ভিতর আছে৷ তার বাবা যে জীবন মাহমুদ এর মতো জঘন্য লোকের সাথে পার্টনারশিপে থাকতে পারে এটা সত্যি প্রাণো কখনো ভাবতে পারেনি৷

প্রাণোর অবস্থা দেখে RV আর কণা দুজনে প্রাণোর হাত শক্ত করে ধরে বলে, ” প্রাণো তুমি যা সির্ধান্ত নিবে তাই হবে৷ “(কণা)

” হ্যাঁ প্রাণো তুমি যদি চাও তোমার বাবাকে শাস্তি না দিতে তাহলেও আমরা তোমার সাথে আছি৷ তোমার বাবার নাম লিস্ট থেকে সরিয়ে দিবো? তাহলে আর কোন….” RV বাকিটা শেষ করার আগে প্রাণো কঠিন গলায় বলে উঠলো , ” জুনাইদ কবির তার প্রাপ্য শাস্তি পাবে RV . আমার আদালতে প্রত্যেকে সমান সে হোক আমার বাবা তবুও সে একজন অপরাধী ৷ তার অপরাধের লিস্ট ও ছোট নয় জীবন মাহমুদ এর আড়ালে থেকে নোংরা কাজ গুলো চালিয়ে গেছে আর আমি! আমি সব জেনে ছেড়ে দিবো RV! যদি তাই হবে তাহলে তো জীবন মাহমুদ কে ছেড়ে দিতে পারতাম কারণ ওই লোকটা আমার স্বামীর জন্মদাতা পিতা ৷ আমি যখন তাকে ছেড়ে দেয় নি তখন জুনাইদ কবির কে ছেড়ে দেওয়ার কোন প্রশ্নই আসছে না৷ ”

প্রাণো RV কণার হাত ছাড়িয়ে উঠে দাড়িয়ে বলে , ” জুনাইদ কবির কে আগামি দুঘন্টার ভিতর আমি আমার টর্চার সেলে দেখতে চাই RV.”

” দু’ঘন্টার ভিতর জুনাইদ কবির টর্চার সেলে পেয়ে যাবে ৷”

প্রাণো আর কিছু না বলে কেভিন থেকে বেড়িয়ে যায়৷

___________

এদিকে সিমি স্মরণকে আশিক খানের কাছে নিয়ে গিয়ে সবটা বলে ৷ আশিক খান স্মরণকে নিজের ছেলে বলে মেনে নেয় কারণ স্মরণকে তার স্ত্রী জন্ম দিয়েছে হোক না পিতা অন্য কেউ তবুও স্মরণের শরীরে যে রুমির রক্ত বইছে৷

কিছুটা মুহূর্ত সিমি স্মরণ আর আশিক খান খুব আনন্দে কাটিয়ে হসপিটালে যাওয়ার জন্য বের হতে নিলে সেখানে শান এসে উপস্তিত হয়৷ শান কে দেখে সিমি স্মরণ দুজনে চমকে ওঠে…

” শান তুমি এখানে?”

” কেন তোমার বাড়িতে আসা কি আমার বারণ সিমি?”

সিমি কিছু বলতে যাবে তখনি স্মরণ বলে ওঠে , ” আরে দুলাভাই বারণ হতে যাবে কেন? এটা তো আপনারও বাড়ি৷ বাই দ্য ওয়ে কেমন আছেন দুলাভাই? ”

স্মরণের মুখে দুলাভাই ডাক শুনে হচকিয়ে স্মরণের মুখের দিকে তাকিয়ে থেকে শান বলে, ” মিস্টার স্মরণ আপনি আমাকে দুলাভাই কেন বলছেন?”

” কি বলেন দুলাভাই , বোনের স্বামী ভাইয়ের দুলাভাই হবে তাই না? আর সিমি আপু যেহেতু আমার বড় বোন সেহেতু আপনার আমার ওয়ান এন্ড ওয়ানলি দুলাভাই ৷ আর আমি আপনার একমাত্র সালা ৷”

শান যেহেতু আগে থেকে সবটা জানতো তাই এবার আর অবাক হলো না বরং হাসি মুখে স্মরণের সাথে কথা বললো তবে সিমি পুরো সময়টা মুখ ভার করে ছিলো৷ বিষয়ট স্মরণের চোখে পড়তে বলে, ” আপু আজ তোকে আমার সাথে যেতে হবে না আমি একাই চলে যেতে পারবো তার চেয়ে বরং তুই দুলাভাইয়ের সাথে চলে যা ”

” কিন্তু তু..” বাকিটা বলার আগে শান সিমিকে কোলে তুলে নিয়ে স্মরণের উদ্দেশ্য বলে থ্যান্কিউ সালাবাবু ৷ আমি তোমার ঘাড় তেরা জিদ্দি বোনটাকে নিয়ে যাচ্ছি ৷ ভিষণ রেগে আছে আমার উপর সেদিন কার ঘটনাটা নিয়ে, তাই আজ আর আড্ডা দিতে পারলাম না অন্য কোন দিন না হয় সালা দুলাভাই আড্ডা দেওয়া যাবে৷”

” একদম তবে দেখেন আমার বোনটার চোখ দিয়ে যেন এক ফোঁটা পানি বের না হয় ৷”

” সে দায়িত্ব আজ থেকে আমার সালা বাবু ৷ তোমার বোন আর আমার জিদ্দি বউটার চোখ থেকে কখনো এক ফোঁটা পানি বের হতে দিবো না৷ আজ তাহলে আসি৷ ভালো থেকো৷”

শান সিমিকে কোলে নিয়ে বেড়িয়ে গেল৷ এদিকে স্মরণ হেসে দিয়ে নিজের গাড়ি নিয়ে বেড়িয়ে পড়ে৷ স্মরণ প্রাণোকে হসপিটালে না পেয়ে RV কাছে প্রাণোর কথা জানতে চাইলে RV জানায় প্রাণো অনেকক্ষণ আগে হসপিটাল থেকে বেড়িয়ে গেছে৷

স্মরণ প্রাণোকে একের পর এক কল করে কিন্তু প্রাণো কোন রেসপন্স করে না৷ প্রাণোর এভাবে কল রিসিভ না করায় স্মরণ ভিষণ ভয় পেয়ে যায়৷ কারণ প্রাণোর যে কাজ করে তাতে করে প্রাণোর যে শত্রুর কোন অভাব নেই সেটা স্মরণ খুব ভালো করে জানে৷ স্মরণ প্রাণোর ফোন নম্বর লোকেশন ট্রাক করে জানতে পারে প্রাণো বাড়িতে , স্মরণ বাড়ি ফিরে এসে দেখে পুরো বাড়ি ফাঁকা, স্মরণ দৌড়ে নিজেদের রুমে গিয়ে দেখে প্রাণো বেডের এক কোনে হাটু গেরে বসে কাঁদছে ৷ স্মরণ প্রাণোর কাছে গিয়ে প্রাণোর কাঁধে হাত রাখতে প্রাণো মাথা তুলে তাকিয়ে স্মরণ কে দেখে স্মরণের বুকে ঝাঁপিয়ে পড়ে কাঁদতে লাগলো৷ স্মরণ এখনো বুঝতে পারছে না প্রাণোর মতো এতো শক্ত মেয়ে এমন ভাবে পাগলের মতো কেন কাঁদছে! স্মরণ কিছু একটা ভেবে প্রাণোকে কাঁদতে আর বাধা দেয় না৷ প্রাণো ঘন্টাখানিক কেঁদে স্মরণের বুক থেকে মাথা তুলে তাকায় স্মরণ এর দিকে , স্মরণ প্রাণোর মাথায় হাত বুলিয়ে প্রাণোকে কোলে তুলে বেডে বসিয়ে জড়িয়ে ধরে বলে, ” কি হয়েছে আমার প্রাণপাখির? এভাবে বাচ্চাদের মতো কেন কাঁদছে?”

” স্ম,, স্মরণ আমার জীবনের ব থেকে ইম্পটেন্ট সৎ মানুষ যার আদর্শে বড় হয়েছি আমরা , আর আজ এতো বছর পর জানতে পারলাম সে মানুষটা আসলে সৎ না অসৎ ৷ ভালো মানুষির মুখোশ পড়ে এতো বছর আমাদের ঠকিয়ে গেছে স্মরণ৷”

” তুমি কার কথা বলছো প্রাণ?”

” জুনাইদ কবির ”

” জুনাইদ কবির! মানে তোমার বাবা?”

” নাহ তিনি আমার বাবা কখণো হতে পারে না স্মরণ৷ এই লোকটা আমাদের ঠকিয়েছে স্মরণ৷ জীবন মাহমুদ এর অন্ধকার জগতের পার্টনার এই জুনাইদ কবির ৷ অন্ধকার জগতে সবাই এদের এই জুটিকে JM বলে চিনে স্মরণ৷ তোমার বাবার প্রত্যেকটা অনৈতিক কাজের সাথে এই লোকটা জরিত৷ ”

” এখন কি করবে প্রাণ?”

” যেটা তোমার বাবার সাথে করেছি ঠিক সেটাই করবো জুনাইদ কবির এর সাথে , কারণ আমার আদালতে সব ক্রিমিনাল এক , ক্রিমিনালরা কখনো কারো আপন হয়না স্মরণ ৷”

” তুমি পারবে নিজের হাতে নিজের বাবাকে শাস্তি দিতে?”

কথা শুনে প্রাণো অন্যদিকে মুখ ঘুড়িয়ে বলে, ” না পারবো না ৷ তবে ভেবো না সে কোন কম শাস্তি পাবে! জীবন মাহমুদকে ঠিক যেভাবে কষ্ট দিয়ে শাস্তি দিয়েছি ঠিক সেভাবে একই শাস্তি জুনাইদ কবির পাবে এন্ড আই মিন ইট৷”

স্মরণের মনে জীবন মাহমুদ এর জন্য যতোটুকু ভালোবাসা বরাদ্দ ছিলো তা সবটাই খুন হয়ে গেছে যখন জীবন মাহমুদ এর নোংরা মুখোশ টার সম্পর্কে জানতে পেরেছে৷ কিন্তু প্রাণোর মনে তার বাবার জন্য সন্মান ভালোবাসা সবটাই ভরপুর ছিলো কিন্তু হঠাৎ এই ধাক্কাটা প্রাণোর মেনে নিতে কষ্ট হচ্ছে এটা স্মরণ বুঝতে পারছে৷ তাই প্রাণোকে একটু নরমাল করার জন্য স্মরণ বলে,” প্রাণ তুমি এখনো বাইরের পোশাকে কেন ? শাওয়ার নেও নি? প্লিজ শাওয়ার না নিলে দ্রুত শাওয়ার নিয়ে এসো তারপর আমি নিবো ৷ গরমে ঘামে ভিজে একদম নাজেহাল অবস্থা হয়ে গেছে দেখেছো?”

প্রাণো স্মরণের মুখের দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে চোখের পানি মুছে বেড থেকে নেমে কাপবোর্ড থেকে ড্রেস নিয়ে সোজা ওয়াশরুমে ঢুকে গেল৷ প্রাণোর শাওয়ার নেওয়ার ফাঁকে স্মরণ কিচেনে গিয়ে দুজনের জন্য একপ্লেটে খাবার নিয়ে আসে রুমে৷ ততোক্ষণে প্রাণো শাওয়ার নিয়ে বেড়িয়ে আসে ৷

” স্মরণ তুমি শাওয়ার নিয়ে এসো ততোক্ষণে আমি নিচে ডাইনিংয়ে খাবার সার্ব করছি৷”

প্রাণোর কথা শুনে স্মরণ প্রাণোর দু’গালে হাত রেখে বলে, ” তার কোন প্রয়োজন নেই প্রাণপাখি ৷ আমি অলরেডি খাবার রুমে নিয়ে এসেছি ৷ আমাকে যাস্ট দশমিনিট দেও আমি এখুনি শাওয়ার নিয়ে আসছি৷”

স্মরণ প্রাণোর নাকে নাক ঘষে প্রাণোর হাত থেকে তোয়ালে নিয়ে ওয়াশরুমে ঢুকে যায়৷ প্রাণো টি-টেবিল এর উপর প্লেটে খাবার দেখে মলিন হাসে৷

প্রাণোর হঠাৎ মাথায় আসে বাড়িতে ঢুকে কাউকে দেখতে পাইনি তারমানে বাড়ির লোকজন সবাই কোথায় গেলো? ভাবতে ভাবতেই প্রাণোর প্রিয়ার নম্বরে কল দিতে দপবার রিং বাজতে ওপাশ থেকে প্রিয়া কল রিসিভ করে কাঁপা কাঁপা গলায় প্রাণোকে বলে উঠলো , ” আ,, আপু তুই কোথায়?”

” বাড়িতে কিন্তু বাড়ির বাকিরা কোথায়? আর তুই কোথায়?”

” আ,, আপু আমরা সবাই সিটি হসপিটালে আমাদের শশুর স্যরি সাজিত এর বাবাকে পাওয়া গেছে ওনাকে সিটি হসপিটালে ভর্তি করা হয়েছে জানিস আপু ওনার অবস্থা খুব ক্রিটিকাল মামুনি মিহু সাজিত খুব কাঁদছে ৷ ” চাপা গলায় বললো প্রিয়া….

” ওখানে আর কে কে আছে প্রিয়া?”

” সবাই রে আপু আব্বু আম্মু দাভাই মিহু সাজিত সাগর নিলয় আকাশ ভাইয়ারা সাথে তোর বান্ধবীরাও আছে৷ ”

” আমার বা স্মরণের কথা কেউ জিজ্ঞাসা করেছে?”

” হ্যাঁ, আব্বু অনেকবার তোর আর দুলাভাইয়ের কথা জানতে চেয়েছে আমি বলেছি তোরা শশুর না মানে সাজিতের বাবা কে খুজতে গেছিস৷”

” ঠিক আছে ৷ শোন কেউ আমাদের কথা জানতে চাইলে বলবি আমরা জীবন মাহমুদ কে খুজছি ৷ যদি ওনার খবর জানাতে ফোন করতে চায় তো করবি ওকে”

” ঠিক আছে ৷ কিন্তু আপু এদিকে তো বিশাল ঝামেলা হয়ে গেছে৷ জার্নালিস্টরা নিউজ পেয়ে হসপিটালে ঝামেলা করছে ৷”

” পুলিশকে বল আর শোন জীবন মাহমুদ এর খবর আমাকে আপডেট করবি ঘন্টায় ঘন্টায়৷”

” ওকে আপু আমি রাখছি তাহলে?”

” হুম , নিজের খেয়াল রাখিস প্রিয়ু ”

প্রাণো কল কেটে টিভি অন করে ৷ প্রতেকটা নিউজ চ্যালেনে জীবন মাহমুদ এর নিখোজ হয়ে যাওয়া সাথে মারাত্মক জখম অর্ধউলঙ্গ অবস্থায় ডাসবিনে খুজে পাওয়া নিজে ভিষণ জল ঘোলা হচ্ছে৷ জীবন মাহমুদ এর হাতে বুকে যে ‘আমি ধর্ষক’ লেখা এটা বার বার রিপোটাররা হাই লাইট করে দেখাচ্ছে৷ কেউ কেউ ধারনা করছে জীবন মাহমুদ কোন গোপন শত্রু এই কাজ করেছে ৷ আবার কেউ কেউ ধরনা করছে জীবন মাহমুদ নিশ্চয়ই কাউকে ধষর্ণ করেছে নাহলে এভাবে কেন জীবন মাহমুদ কে টর্চার করে হাতে বুকে লিখে দিবে ‘আমি ধর্ষক’ ৷ জীবন মাহমুদ যে এখন হসপিটালে আই সি ইউতে ভর্তি এবং তার বর্তমান অবস্থা দেখে ডক্টর কিছু বলতে পারছে না বাঁবে কিনা? আর যদি বেঁচে ও যায় তাহলে কোন দিন নিজের পায়ে হাটতে পারবে না আর না কথা বলতে পারবে৷

প্রাণো নিউজ দেখে টিভি অফ করে দিয়ে বেডে বসে তখনি প্রাণোর ফোনটা বেজে ওঠে , প্রাণো ফোনটা হাতে নিয়ে দেখে RV কল করেছে৷ প্রাণো কল রিসিভ করে কানে ধরতে ওপাশ থেকে RV শান্ত গলায় বলে ওঠে,” প্রাণো তোমার কথা মতো জুনাইদ কবির কে টর্চার সেলে রাখা হয়েছে৷ আর একটা সমস্যা হয়েছে প্রাণো ”

” কি সমস্যা?”

” জুনাইদ কবির কে হসপিটালের বাইরে থেকে তুলে আনার সময় সাদমান আমাকে দেখে ফেলেছে৷ ”

প্রাণো RV কথা শুনে কিছু বলতে যাবে তখনি ছো মেরে প্রাণোর ফোনটা কেউ কেড়ে নিয়ে স্বজোরে প্রাণোর গালে থাপ্পড় মারে ……
.
.
.
#চলবে………..

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here