গোধূলী_বেলার_স্মৃতি (Unexpected Story) পর্ব- ২৮

0
3366

গোধূলী_বেলার_স্মৃতি (Unexpected Story)
পর্ব- ২৮
#Jannatul_ferdosi_rimi (লেখিকা)
–“রাফসিন শেখ রুদ্রিক শেষে কিনা বাড়ির সামান্য ড্রাইভারের মেয়েকে ভালোবাসে?যার জন্যে বড়লোকের মেয়েদের কোনো অভাব নেই। ছিহ রুদ্রিক তোমার রুচি এতোটা নিচে নেমে গেলো কীভাবে? “,
_____
খানিক্টা কটাক্ষ করে রুদ্রিককে বললো ইশানি।
রুদ্রিক দ্বিগুন চিৎকার করে বলল,

—“পিপি তুমি যা ইচ্ছে বলো,কিন্তু আমার কাজলকে নিয়ে মোটেও অপমানজনক কথা তুমি বলবে নাহ।
এইসব আমি এলাও করবো নাহ। এতোদিন যা বলার বলেছে, কিন্তু এখন থেকে আমার কাজলকে নিয়ে এইসব অপমনাজনক কথা আমি এলাও করবো নাহ।”

রুদ্রিকের ব্যবহারে অবাকের চরম সীমানায় পৌছে গেলেন ইশানি শেখ।

_______
এদিকে,

তনয় ভাই বেড়িয়ে যেতে-ই’ মা আমার দিকে এগিয়ে এসে বললেন,

—-“তনয়ের সাথে তো আজকে তোর দেখা করার কথা ছিলো,কিন্তু তনয়ের সাথে তো ছুটকি ফিরে এলো। তুই কোথায় ছিলি কাজল? ”

মায়ের প্রশ্নে আমি এখন কি উত্তর দিবো বুঝতে পারছি নাহ। তখনি ছুটকি এসে বলল,

—“মা আপু তো তনয় ভাইয়ার সাথে-ই’ ছিলো। কিন্তু আপুর নাকি কিসব নোটস জোগাড় করার জন্যে লাইব্রেরিতে যেতে হবে তাই আপু চলে গিয়েছিলো। তাইনা আপু?”

ছুটকির কথায় আমি সায় দিলাম। কেননা মাকে আপতত ম্যানেজ করার জন্যে মিথ্যে কথা বলার প্রয়োজন ছিলো।

ছুটকি আবারো বলে উঠে,
–“তারমধ্যে তনয় ভাই যে রাস্তা দিয়ে ফিরছিলো তখন আমিও বাড়ি ফিরছিলাম সেই রাস্তা দিয়ে, তাই তনয় ভাই আমাকে বাড়িতে ড্রপ করে দিয়েছিলো।”

মা হাঁসিমুখে বলল,

–“ওহ এই ব্যাপার? আচ্ছা আমি বরং যাই রান্নাটা শেষ করে আসি।”

মা চলে যেতে-ই’ ছুটকি তড়িঘড়ি এসে আমার হাত ধরে আমার ঘরে নিয়ে চলে আসে।

আমি বুঝতে পারছি ছুটকি আমাকে কিছু বলতে চায়। তাই আমি বলে উঠলাম,

—“কি বলতে চাস বল? ”

ছুটকি বলল,

—“জানালার পাশে দাঁড়িয়ে তনয় ভাইয়ের সাথে আমিও সব দেখে ফেলেছি। আজকে সারাদিন তুই রুদ্রিক ভাইয়ার সাথে ছিলি। তোদের এতোটা কাছে দেখে মনে হচ্ছে তোদের মধ্যে কিছু তো একটা আছে। ”

—–“আমরা একে-অপরকে ভালোবাসি। ”

ছুটকি আমার কথা শুনে চমকে উঠলো। সে হয়তো আমার সোজাসোজি কথাটি মেনে নিতে পারেনি।

—-“আপাই ভাবতে পারছিস বাবা জানলে কী হবে? রুদ্রিক ভাইয়ারা আমাদের মালিক। তাছাড়া এই সম্পর্ক কেউ মেনে নেবে নাহ। ”

ছুটকির কথা শুনে আমি মুঁচকি হেঁসে বললাম,

—“শোন ছুটকি! মানুষের মাঝে ভালোবাসা স্ট্যাটাস দেখে হয়না। ভালোবাসার মতো পবিত্র অনুভুতি যেকোনো মুহূর্তে যে কারোর মধ্যে চলে আসতে পারে।
বাকি রইলো বাবার জানার কথা? আমি নিজে-ই’ কালকে তনয় ভাইয়কে সবকিছু জানিয়ে দিবো। তারপর সবকিছু বাবাকে জানিয়ে দিবো। ”

ছুটকি ভিতু কন্ঠে বলল,

—“তুই বাবাকেও সব বলে দিবি? ভয় নেই তোর আপাই? ”

ছুটকির প্রশ্নে আমি উত্তর দিয়ে বললাম,

—“অবশ্যই জানাবো। ভালোবাসা তো কোনো ভূল নয়। ভূল সবসময় লুকিয়ে করা হয়,কিন্তু ভালোবাসাতে কোনোপ্রকার ভুল নেই। তাহলে আমার প্রকাশ করতে কিসের ভয়? ”

ছুটকি আমার কথা শুনে কিছুটা খুশি হয়ে-ই’ বলল,

—“একদম ঠিক বলেছিস আপাই। চালিয়ে যা আমি তোর এবং রুদ্রিক ভাইয়ার সাথে আছি। ”

ছুটকির কথা শুনে আমি হাঁসলাম।

________

ইশানি শেখ কিছুটা ব্যাথিত গলায় বললেন,

—“রুদ্রিক আমার মুখের উপর একটা কথাও তুমি কখনো বলোনি। কিন্তু আজ ওই মেয়েটার জন্যে তুমি আমার উপর চিৎকার চেচামেচি করছো? সত্যি আমি ভাবতে পারছি নাহ। আমি কি তোমার এতোটা-ই’ পর হয়ে গেলাম। ”

রুদ্রিক কিছুক্ষন কর্কষ গলায় বলল,

—-,”পিপি আমি একজন এডাল্ট। সুতরাং আমাকে না জানিয়ে এইরকম একটা সিদ্বান্ত নেওয়া তোমার ঠিক হয়নি।”

ইশানি শেখ আবারো বললেন,

—“তোমার ফুপিয়াম্মু মারা যাওয়ার পরে আমি তোমাকে সবসময় আগলে রেখেছিলাম।নিজের সন্তানের মতো। তাই ভেবেছিলাম তোমার জীবনের সবথেকে বড় সিদ্বান্ত নেওয়ার অধিকার টুকুও আমার আছে। আমি সত্যি দুঃখিত। আমি ভাবেনি তুমি এতোটা রিয়েক্ট করবে রুদ্রিক। ”

রুদ্রিক এগিয়ে এসে, ইশানির হাত ধরে সোফায় গিয়ে বসিয়ে দেয়। তারপর নিজের পিপির কোলে মাথা রেখে বলে,

—“পিপি আমার কথা শুনে তুমি হার্ট হয়ে থাকলে সরি। ফুপিয়াম্মু মারা যাওয়ার পরে, আমার জীবনের সবকিছুর সিদ্বান্ত নেওয়ার অধিকার আমি তোমাকে দিয়েছি,কিন্তু এই বিয়ের ব্যাপারটায়ে আমি তোমাকে সাপোর্ট করতে পারবো নাহ। ট্রাই টু আন্ডারস্ট্যান্ড পিপি আমি কাজলকে ভালোবাসি। কাজলের সাথে-ই’ আমি খুব ভালো থাকবো। কাজল খুব ভালো। কাজল আমাকে খুব ভালোভাবে বুঝতে পারে।”

কথাটি বলে-ই’ রুদ্রিক উঠে দাঁড়ায়।
ইশানি শেখ বলে উঠলেন,

—“এতোটা ভালোবেসে ফেললে কী করে? ”

রুদ্রিক মুগ্ধ গলায় বলল,

—“আমার জীবনে সকল শূন্যতা এক নিমিষে দূর করতে পারে আমার ‘শুভ্ররাঙাপরী ‘। কাজল নিঁখুতভাবে আমার প্রতিটা কষ্টগুলো ফুটিয়ে তুলতে পারে। যা সবাই পারেনা। তাই আমিও আমার কাজলকে নিজের অজান্তে নিজের বেখেয়ালে ভালোবেসে ফেলেছি। ”

ইশানি কথাগুলো শুনে বুঝে গিয়েছেন। এখন ওই মেয়ের বিরুদ্ধে রুদ্রিককে কিছু বললে হিতে বিপরীত হবে। রুদ্রিক রাগের মাথায় এমন কিছু করে বসবে, যার কারনে ইকবাল শিকদার হাতছাড়া হয়ে যাবে। যা এই মুহুর্তে কিছুতে-ই’ চাইছে নাহ।
(লেখিকা-জান্নাতুল ফেরদৌসি রিমি)
ইকবাল শেখ-ই’ পারেন তাদের কম্পানিকে আবারো লাভের মুখ দেখাতে। এমন কিছু করতে হবে, যেনো এক ঢিলে দুই পাখি মরে যায়।

কথাটি ভেবে ইশানি শেখ রুদ্রিকের কাঁধে হাত রেখে বলে,

—“আমি বরাবরের মতো এইবারও তোমাকে সাপোর্ট করবো রুদ্রিক। আমি তোমাকে প্রতিবারের মতো এইবারও সাপোর্ট করবো এন্ড নীচে গিয়ে ইকবাল শিকদারকেও মানা করে দিবো। ”

নিজের পিপির কথা শুনে রুদ্রিক কিছুটা উৎফুল্ল হয়ে বলে,

—-“সত্যি?”

ইশানি পিপি মাথা নাড়ায়।

ইশানি রুদ্রিকের দিকে টাওয়াল এগিয়ে দিয়ে বলে,

—“আমার বাচ্ছাটা এইবার তুমি ফ্রেশ হয়ে নাও। আমি নীচে যাচ্ছি।”

রুদ্রিক মাথা নাড়িয়ে বলে,

—“ঠিক আছে,আমি যাচ্ছি। ”

কথাটি বলে ইশানি শেখ নীচে চলে যায়। রুদ্রিক প্রশান্তির হাঁসি দিয়ে ওয়াশরুমে চলে যায়।

ইশানি শেখ নীচে নেমে আসে। সকলে ইশানি শেখের
দিকে তাঁকিয়ে আছেন রুদ্রিকের উত্তরের আশায়।

ইশানি শেখ এগিয়ে এসে বললেন,

—“রুদ্রিক বিয়েতে রাজি।”

আফজাল শেখ ও জেসমিন শেখ চমকে উঠেন।

জেসমিন শেখ বললেন,

—“রুদ্রিক বিয়েতে রাজি হয়ে গেলো? ”

—-“অবশ্যই হয়েছে। রুদ্রিক আমার মুখের উপরে কখনো কথা বলেনা। ”

ইশানির কথা শুনে ইকবাল শিকদার খুশি হয়ে বলে,

—“আমার মেয়েটারও কোনো আপত্তি নেই। তাহলে ওদের দুজনের আলাদা কথা বলার ব্যবস্হা করলে কেমন হবে? ”

মিশু লজ্জায় মাথা নিচু করে ফেলে।

ইশানি শেখ কিছুটা ঘাবড়ে গিয়ে বললেন,

—“যখন দুজনের-ই’ বিয়েতে অমত নেই। তাহলে আপতত কথা বলা কী দরকার? আমি বলি কী আমরা বরং ওদের এন্গেজমেন্টের দিনটা ঠিক করি। তারপর এন্গেজমেন্টের পরে না হয় ওরা নিজেদের মতো আলাদা ভাবে কথা বলবে। ”

আফজাল শেখ সম্মতি দিয়ে বললেন,

—“হ্যা তা করা-ই’ যায়। তাহলে আমরা এখন আসি। ”

আফজা শেখ বললেন,

—“চলুন আমি না হয় এগিয়ে দিয়ে আসি। ”

ইশানি শেখ হাঁসিমুখে বললেন,

—“মিশু মা ভালো থেকো। ”

মিশু মাথা নাড়ায়।

_______________

ভার্সিটির করিডোরে দাঁড়িয়ে কিছু নিয়ে চিন্তা করে যাচ্ছি আমি। তখনি ছোট সাহেব আমাকে পিছন থেকে জড়িয়ে ধরে।

—“কি করছেন কি সবাই দেখবে তো? ”

ছোট সাহেব আমার হাতে চুমু খেয়ে বললেন,

—-“কেউ আসবে নাহ বুঝেছিস। এতো বকবক করছিস কেন? দেখছিস নাহ রোমান্স করছি। ”

আমি উনাকে নিজের থেকে ছাড়িয়ে বললাম,

—-“সত্যি আপনিও নাহ। বড্ড দুষ্টু। আমি আছি আমার চিন্তায়। ”

—“কিসের চিন্তা তোর? ”

উনার প্রশ্নে আমি বলে উঠলাম,

—“আজকে তনয় ভাইয়ার সাথে দেখা করতে যেতে হবে। ”

আমার কথায় উনি কিছুটা কড়া গলায় বললেন,

—“তুই একদম ওই লোকটার সাথে দেখা করবি নাহ হুহ। ”

আমি হেঁসে উনার শার্টের কলার ঠিক করতে করতে বললাম,

—“ডোন্ট বি জেলাস ওকে? আমার জাস্ট কিছু কথা ক্লিয়ার করার আছে। আশা করি আপনি বুঝবেন। ”

ছোট সাহেব ঘুমড়ো মুখ নিয়ে মাথা নাড়ায়। আমি হেঁসে দিলাম।

রেস্টুরেন্টের একটি টেবিলে বসে আছে তনয়। তখনি সেখানে কাজল চলে আসে। কাজলকে দেখে তনয় হাল্কা হেঁসে বলে উঠে,
—“কাজল বসো। তোমার জন্য-ই’ অপেক্ষা করছিলাম। ”
তনয় ভাইয়ের কথা শুনে আমি একটা চেয়ার টেনে বসি। তনয় ভাইয়া বললেন,
—“চা নাকি কফি? ”

—-“যেকোনো একটা হলেও চলবে। ”

আমার কথা শুনে তনয় ভাই ওয়েটারকে ডেকে দুকাপ কফি ওর্ডার করে দিলেন।
—-“আমি তোমাকে কিছু প্রশ্ন করবো কাজল। আশা করি সঠিক উত্তর পাবো। ”

—“ছোট সাহেবের সাথে আমার কিরকম সম্পর্ক এইসব কিছু নিয়ে-ই’ তো প্রশ্ন করবেন তাইনা? ”

আমার প্রশ্নে তনয় ভাই এইবার কিছুটা অস্বস্হি নিয়ে-ই’ বলল,

—“তুমি কী মিঃ রুদ্রিক শেখকে সত্যি ভালোবাসো?
সত্যি করে বলো। ”

—“হ্যা আমি ছোটসাহেবকে ভালোবাসি। ”

আমার উত্তরে তনয় ভাই কিছুটা ব্যাথিত গলায় বলল,
—“যদি তুমি রুদ্রিককে ভালোবেসে থাকো তাহলে আমার প্রতি তোমার কিসের এমন ভালোবাসা ছিলো? যা এতো সহজে মুছে গেলো।
আসলে আমার মনের সাথে আমি ঠিক পেরে উঠছি নাহ। তাই তোমাকে এইরকম একটা প্রশ্ন করে বসলাম। ”

আমি হেঁসে বললাম,

—“আপনি আমার প্রথম ভালোবাসা তনয় ভাই।
আপনার প্রতি আমার মনে যে সুপ্ত একটা অনুভুতি তা কেউ মুছে দিতে পারবে নাহ। প্রথম ভালোবাসার অনুভুতি আপনার মাধ্যমে আমি পেয়েছি। ”

আমি কিছুক্ষন থেমে আবারো বলে উঠলাম,
“দুই বছর অনেকটা সময়। এই দুই বছরে আমরা অনেককিছু নতুনভাবে শিখলাম। আপনি ভালোবাসায় ঠকে শিখেছেন এবং আমি নতুন করে
ভালোবেসে শিখেছি। ছোটসাহেব অন্যরকম করে হলেও আমাকে ভালোবাসার নতুন রুপ শিখেয়েছে। ভালোবাসার রুপ বদলায় তনয় ভাই।”

তনয় ভাইয়া কিছু বলবে তখনি ওয়েটার কফি নিয়ে আসে।

আমি কফির কাপে চুমুক দিলাম। তনয় ভাইয়া আমার দিকে তাঁকিয়ে অসহায় কন্ঠে বললেন,

—-“তুমি তো আমাকে ভালোবাসতে কাজল। আমি তো ফিরে এসেছি। তাহলে আমাকে মেনে নিতে এতো কেনো দ্বিদা তোমার? রুদ্রিকের মধ্যে এমন কী আছে? ”

আমি মুচঁকি হেঁসে বললাম,

—“ওইযে বললাম ভালোবাসার রুপ বদলায়।
ছোটসাহেব মানুষটা-ই’ অন্যরকম। তাছাড়া আপনি যদি তানিয়া আপুর কাছে না ঠকতেন। তাহলে কখনো-ই’ ফিরে আসতেন নাহ। ঠকেছিলেন বলে-ই কাজলরেখার কথা আপনার মনে পড়েছিলো তনয় ভাই। নাহলে আপনার কিন্তু এই কাজলরেখার কথা মনে পড়তোও নাহ। “,

আমার কথা শুনে তনয় ভাই দমে যায়।

—-” আশা করি আপনি আপনার সব প্রশ্নের উত্তর পেয়ে গেছেন। ”

কথাটি বলে আমি বেড়িয়ে এলাম।

চোখ বন্ধ করলে শুধু ‘ছোট সাহেবের ‘মুখখানা ভেসে উঠে। আমার মনের আকাশে ‘ছোট সাহেবের ‘ ভালোবাসার রং ধরা দিয়েছে।

বাকীটা আগামী পর্বে…

চলবে কী?

(সবাই কমেন্ত করে দিয়েন ওকে 🥴)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here