টিপ_টিপ_বৃষ্টিতে পর্ব_২২

#টিপ_টিপ_বৃষ্টিতে
#পর্ব_২২
লেখিকা #Sabihatul_Sabha

ঐশী দীপ্তদের বাসা থেকে এসে দেখে শুভ এখনো যায় নি।

ঐশী ফ্রেশ হয়ে বিথীর রুমে গেলো।

বিথীঃ কখন আসলি..?
ঐশীঃ এই তো কিছু সময় আগে।
বিথীঃ শুভ ভাইয়া খাবার খায় নি।
ঐশীঃ কেনো..??
বিথীঃ বউয়ের জন্য বসে আছে।
ঐশীঃ কিন্তু আমি তো খেয়ে এসেছি।
বিথীঃ তো কি হয়েছে। আবার খাবি।
ঐশীঃ আবার!!
বিথীঃ চুপচাপ গিয়ে ভাইয়াকে নিয়ে খেতে যা। বেচারা না খেয়ে এখনো বসে আছে।
ঐশীঃ আমি বলেছি..?
বিথী ঐশীর মাথায় হাত রেখে আদুরে কন্ঠে বলে উঠলো, ‘ সোনা বোন আমার যা খেয়ে নে। ‘
ঐশীঃ আচ্ছা, তোমার চাকরি কি হয়েছে..??
বিথী ঐশীকে জড়িয়ে ধরে বললো,’ হুম। কাল থেকে জয়েন করতে বলেছে।’
ঐশীঃ ট্রিট দিবা কখন..?
বিথীঃ ফাস্ট বেতন পাওয়ার পর।
ঐশী বিথীকে শক্ত করে ধরে বললো,’ তোমার জীবনটা আবার আগের মতো হয়ে যাক। আমাদের সোনামনি টা খুব তারাতারি আমাদের কাছে চলে আসুক। ‘
বিথী পেটে হাত রেখে বারান্দা দিয়ে খোলা আকাশের দিকে তাকালো। তাঁরা ঝলমল করছে বড় একটা চাঁদ উঠেছে। আজকের আকাশটা খুব সুন্দর লাগছে।

ঐশী রুমে এসে দেখে শুভ বিছানায় হেলান দিয়ে বসে মোবাইলে কি যেনো করছে।

ঐশী শুভর কাছে গিয়ে বললো,’ কি করছেন..? ‘
শুভঃ কিছু না।
ঐশীঃ খাবার খেতে আসুন…
শুভঃ তুমি খাবে..?
ঐশীঃ হুম।
শুভঃ তাহলে চলো।

রাতে শুভ বসে বসে অপেক্ষা করছে ঐশীর জন্য।

ঐশী ছাঁদে দাঁড়িয়ে আছে। দাঁড়িয়ে থাকতে ভালো লাগছে। রাতের আকাশের দিকে তাকালে অশান্ত মনটাও শান্ত হয়ে যায়।

ওদের সম্পর্কটা আজ কে অন্য রকম হতো যদি না শুভ ওর সাথে খারাপ আচরণ প্রথমে না করতো। চাইলেই সব কিছু ভুলা যায় না। চাইলেই ক্ষমা করে দেওয়া যায় না।
ঐশী আকাশের দিকে তাকিয়ে নিজেই নিজেকে প্রশ্ন করলো,’ আচ্ছা আমার কি উনাকে ক্ষমা করে দেওয়া উচিত..? সব কি ঠিক করে নেওয়া উচিত..? উনি কি আমাকে ভালোবাসে..?
তখনি ভেতরের সত্ত্বাটি ওকে বলে উঠলো, ‘ তুই কি পাগল ঐশী শুভ তোকে কেনো ভালোবাসবে…?
~ কিন্তু উনার এমন আচরণের কারন কি তাহলে..? উনার আচরণে বলে দেয় উনি আমাকে ভালোবাসে।
আবার ভেতরের সত্ত্বাটি হাসতে হাসতে বলে উঠলো, ‘ আচ্ছা, কই তোকে কি একবারও বলেছে..?
ঐশীর মনটা সাথে সাথে খারাপ হয়ে গেলো। আসলেই তো শুভ ভাইয়া তো এখনো ওকে ভালোবাসার কথা বলেনি। তারমানে এই সব মামী মার কথায় করছেন ভাইয়া..?

উদাস মনে তাকালো দূরে চাঁদটার দিকে। এখন প্রায় নিজেকে ওই চাঁদের মতো একা মনে হয়।

ঐশীর হাতের ফোন বেজে উঠতেই নিজের ভাবনা থেকে বের হয়ে মোবাইলের দিকে তাকালো।
অচেনা নাম্বার।
ঐশী প্রথম কল রিসিভ করার আগেই কেটে গেলো। কিছু সময় পর আবার কল আসলো।

ঐশীঃ হ্যালো..
~ কেমন আছো ঐশী..?
ঐশী চমকে উঠলো এতো রাতে আদিত্যের ফোন। কন্ঠ শুনেই ঐশী বুঝতে পেরেছে এটা আদিত্যের কন্ঠ।
ঐশীঃ জ্বি ভালো।
আদিত্যঃ অন্যের ঘুম হারাম করে তুমি তো ভালো থাকবেই।
ঐশী অবাক হয়ে বললো,’ কিইই!!
আদিত্যঃ কিছু না। কি করো..?
ঐশীঃ এতো রাতে কেনো কল দিয়েছেন..?
আদিত্যঃ তোমর সাথে কথা বলতে।
আদিত্যের কথা শুনে ঐশী অবাক হলো।
ঐশীঃ আদিত্য আপনি ঠিক আছেন তো..?
আদিত্যঃ সত্যি বলবো..?
ঐশীঃ থাক বলা লাগবে না। আমি এখন রাখছি।
আদিত্য শব্দ করে হেঁসে উঠলো,’ কেনো ভয় পেয়ে গেলে নাকি..?
ঐশী শক্ত কন্ঠে বলে উঠলো,’ আমি এখন ঘুমাবো আদিত্য। আমি এখন রাখছি।
আদিত্যঃ ঐশী তুমি কি আমার সাথে একটু দেখা করবে..? প্লিজ..
ঐশীঃ আদিত্য আমি আপনার ভাইয়ার কাছ থেকে পারমিশন নিয়ে আপনাকে জানাবো।
আদিত্য কিছুটা রেগে বলে উঠলো,’ ভাই এর কাছ থেকে পারমিশন নিতে হবে বাহ্ বাহ্। তুমি কি জানো ভাই তোমাকে এখনো স্ত্রী হিসেবে মেনে নেয়নি। এখনো তোমাকে ভাই ভালোবসে না।
ঐশী স্বাভাবিক ভাবে উত্তর দিলো, ‘ তো কি হয়েছে..? ‘
আদিত্য হয়তো এমন উত্তর আশা করেনি।
আদিত্যঃ আমি তোমার সাথে দেখা করতে চাই।
ঐশীঃ আমি আপনার বড় ভাইয়ের বউ, যখন তখন কল না দিলে খুশি হবো। আর কাল আমার সময় নেই। আমি আপনার সাথে অন্য একদিন সময় করে দেখা করে নিবো। বলেই ঐশী ফোন কেটে দিলো।

পাশে কারো উপস্থিতি বুঝতে পেরে তাকালো৷
পাশে এক হাত পকেটে দিকে ওর দিকে তাকিয়ে আছে শুভ।

ঐশীঃ আপনি এখনো ঘুমাননি..?
শুভঃ ঘুম আসছে না।
ঐশীঃ কেনো..?
শুভঃ তা তো জনিনা। তবে..
ঐশীঃ তবে কি..?
শুভঃ তোমার হাতের চা খেতে ইচ্ছে করছে।
ঐশীঃ বাসায় চিনি নেই।
শুভঃ সমস্যা নেই।লবন দিয়ে নিয়ে আসো। তোমার হাতের চা’য়ে এমনিতেও চিনি লাগবে না।
ঐশী ভ্রু কুঁচকে বলে উঠলো, ‘ লবন নেই।
শুভ ঐশীর আরও কাছে গিয়ে বললো,’ ওকে লবন লাগবে না। ‘
ঐশীঃ পাতি নেই।
শুভ হতাশ কন্ঠে বললো,’ তাহলে আমার সাথে চলো..’
ঐশীঃ কোথায়..?
শুভঃ চা খেতে রাস্তায় যাবো।
ঐশীঃ আমি ঘুমাবো।
শুভঃ ঠিক আছে চলো।
ঐশী শুভর আগেই ছাঁদ থেকে নেমে গেলো৷
শুভ কিছু সময় আকাশের দিকে তাকিয়ে নিজেও ছাঁদ থেকে নেমে গেলো।

শুভ রুমে বসে দরজার দিকে তাকিয়ে আছে।
ঐশী হাতে চা নিয়ে রুমে ঢুকলো।
শুভ অবাক হওয়ার মতো মুখ করে বললো,’ কোথায় থেকে আনছো..?? বাসায় না কিছু নেই..?
ঐশীঃ খেয়ে দেখুন।
শুভ কিছু না বলে চা হাতে নিয়ে বললো,’ ধন্যবাদ বউ।’
ঐশী থমকে তাকিয়ে রইলো শুভর দিকে। শুভ যখনি বউ বলে সাথে সাথে ঐশীর হার্টবিট অস্বাভাবিক ভাবে বেরে যায়।

শুভ চা মুখে দিয়ে ঐশীর দিকে তাকিয়ে আছে। এটা চা না-কি অন্য কিছু!

ঐশী শুভর মুখের রিয়াকশন দেখে ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে বললো,’ ভালো হয়নি..?’
শুভ ঠোঁটের কোনে হাসি ঝুলিয়ে বললো,’ হুম খুব ভালো হয়েছে…
ঐশী ভাব নিয়ে বললো,’ কে বানিয়েছে দেখতে হবে।
শুভ ঐশীর কথা শুনে বললো,’ হুম অনেক ভালো হয়েছে। একবার খেলে সারাজীবন ও কেউ ভুলতে পারবে না।

ঐশী ফ্রেশ হয়ে এসে দেখে শুভ হেলান দিয়ে ঘুমিয়ে পড়েছে।
ঐশী শুভর চোখ থেকে চশমা খোলে টেবিলের পাশে রাখলো।

ঐশীর চোখ গেলো শুভর খাওয়া চা’য়ের কাপের দিকে।বেশ কিছুটা চা রয়ে গেছে। মনে পড়ে গেলো শুভর ছাঁদে ওর কাছে চা খোঁজার কথা।
নিজ মনে হেঁসে চায়ের কাপ হাতে নিয়ে চায়ের কাপে চুমুক দিতেই চোখ মার্বেলের মতো বড় বড় হয়ে গেলো।
এটা চা নাকি বিষ..?
ঐশী মাথায় হাত দিয়ে বসে পড়লো। চিনির জায়গায় ভুল করে লবন দিয়ে দিছে। এই চা শুভ কিভাবে খেয়েছে..?

ঐশী মায়াভরা দৃষ্টিতে তাকালো শুভর দিকে।
কি সুন্দর লাগছে শ্যামবর্ন পুরুষটিকে।
ঐশী নিজের হাতটা যত্নে করে শুভর গালে রাখলো। মায়াবীকন্ঠে বলে উঠলো,’ সরি….’

ঐশী গিয়ে শুয়ে পরলো সোফার মধ্যে।

সকালে যখন ঐশীর ঘুম ভাঙলো নিজেকে বিছানায় দেখে অবাক হয়ে গেলো। রাতে তো সোফায় ঘুমিয়ে ছিলো!।
নিজের দিকে তাকিয়ে দেখে সে শুভকে আষ্টেপৃষ্টে জড়িয়ে ধরে আছে।
লজ্জায় হাত পা সরিয়ে তারাহুরো করে উঠে বসলো। বড় বড় শ্বাস নিয়ে বিছানা থেকে নেমে ওয়াশরুমে চলে গেলো৷
ঐশী বিছানা থেকে চলে যেতেই চোখ খুললো শুভ। রাতে শুভই ঐশীকে নিজের সাথে নিয়ে এসে জড়িয়ে ধরে ঘুমিয়ে ছিলো। ঐশী জাগার আগেই শুভ জেগে গিয়েছে৷ এতো সময় ঐশীকে খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখছিলো শুভ। এতোটা কাছে কখনো আশা হয়নি। হলেও ভালো করে লক্ষ করা হয়নি।

বিথী রেডি হয়ে অফিসের উদ্দেশ্যে বের হতেই ঐশীও ভার্সিটিতে যাওয়ার জন্য বিথীর সাথে বের হলো।

ঐশীঃ কখন আসবে..?
বিথীঃ ঠিক জানিনা।
ঐশীঃ ২টার দিকে আমি তোমাকে ভার্সিটির ভেতর দেখতে চাই।
বিথীঃ ঐশী আমার আজ প্রথম দিন।
ঐশীঃ আমি বেশি কিছু জানিনা। যা বলেছি তাই। না হলে একদম অফিসে চলে যাবো৷
বিথীঃ এটা কেমন বাচ্চামো ঐশী।
ঐশী কিছু না বলে রিক্সায় উঠে গেলো।

সকালের পর আর লজ্জায় ঐশী শুভর সামনে যায়নি।

ভার্সিটিতে এসেই ঐশী মৌ আর দীপ্তি কে দেখতে পেলো।

ঐশীঃ বাকি গুলো কি কাজে গেছে।
মৌ কিছুটা চিন্তিত সুরে বললো,’ হুম রে কিন্তু ওদের কিছু হবে না তো..?

ঐশী মুখ কঠিন করে বললো,’ হবে ধরা পরলে ওদের ফিরে আশার কথা ভুলে যা।’

ঐশীর কথা শুনে দীপ্তি মুখটিপে হাসলো।

মৌ চিন্তিত হয়ে বার বার দীপ্ত কে কল দিচ্ছে। কিন্তু মোবাইল বার বার বন্ধ দেখাচ্ছে।

ঐশীঃ ওরা এখন আসবে না ক্লাসে চল।

ক্লাস শেষ করে বাহিরে এসে দেখে দীপ্ত, অথৈ,শান্ত ক্যান্টিনে বসে আছে।

মৌ দীপ্ত কে দেখে খুশি হয়ে দূরে দাঁড়িয়ে দীপ্তর দিকে তাকিয়ে আছে।

ঐশী গিয়ে বসলো ওদের পাশে।
ঐশীঃ কাজ হয়েছে..?
অথৈঃ হুম।
ঐশী বাঁকা হাসি দিয়ে দীপ্তি কে বললো বিথী কে কল দিতে। তারপর দাঁড়িয়ে হাঁটা ধরলো নিজের শিকারের দিকে।

চলবে…
ভুলত্রুটি মার্জনীয়।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here