তুমিহীনা_আমি_যে_শূন্য #Nushaiba_Jannat_Arha #পর্ব ১৪

0
666

#তুমিহীনা_আমি_যে_শূন্য
#Nushaiba_Jannat_Arha
#পর্ব ১৪

বারান্দায় বসে রাতের আকাশ দেখছে আরহা একরাশ মন খারাপ নিয়ে। রাতের আকাশে অজস্র তারার মেলা। আরহাকে এমন মন খারাপ করে বসে থাকতে দেখে এক কাপ কফি হাতে নিয়ে চেয়ার টেনে আরিশা বসল আরহার পাশে। কফিতে চুমুক দিতে দিতেই আরিশা বলল

– কি রে মন খারাপ নাকি তোর? সুন্দর মুখটাকে এমন বাংলার পাঁচের মতো করে রেখেছিস কেন?

আরিশার কথা শুনে ধ্যান ভাঙল আরহার। আরিশার দিকে একবার তাকিয়ে পুনরায় আকাশের দিকে তাকিয়ে একটা দীর্ঘ শ্বাস ছেড়ে বলল

– নাহ্ কিছু হয়নি আমার।

– কিছু তো একটা হয়েছেই, কি হয়েছে বলে ফেল তাড়াতাড়ি ।

– আমি কি কোনো ভুল করেছি?

– কই না তো।

– তাহলে আমার সাথে গাড়িতে আসার সময় সারা রাস্তা কেন কথা বলল না আভান?

কিছু একটা ভেবে আরিশা বলল

– ওহ বুঝছি। তুই গাড়িতে আভান ভাইয়ার পাশে না বসে আমার পাশে বসার কারণেই হয়তো ভাইয়া তোর উপর অভিমান করেছে। এখানেও মান অভিমানের কাহিনী। আরও কত কি যে দেখতে হবে এ জীবনে। হাহ্ আজ এমন কেউ নেই বলে।

– তাই বলে আমার সাথে কথা বলবে না। বিদায় জানানোর সময় কথা তো বললোই না ফিরেও তাকাল না আমার দিকে একবারের জন্যও।

– বোকা মেয়ে, কে বলেছে তোর দিকে তাকায় নি। আমি খেয়াল করেছি, ভাইয়া লুকিং গ্লাস দিয়ে বারবার তোর দিকেই তাকাচ্ছিল। তুই খেয়াল না করলেও আমি খেয়াল করেছি।

– তুই আমার মন ভালো করার জন্য এসব বলছিস, তাই না?

– এই আমি কফি ছুয়ে বলছি। আমি যা বলছি সবই সত্যি।

– এতো অভিমান আমার উপরে। কাল আমি তার অভিমান ভাঙাবো।

– কি করবি রে?

– প্ল্যান আছে আমার কাছে।

– কি প্ল্যান?

– তাহলে শোন?

আরহার বলা প্ল্যান শুনে জোরে হেসে উঠল আরিশা। হাসতে হাসতে তার পেট ব্যথা হয়ে গেল ওর। হাসি কোনো ভাবে থামাতেই পারছে না সে। অনেক কষ্টে হাসি থামিয়ে বলল

– ভালোই প্ল্যান করেছিস। কিন্তু দেখিস আবার এই প্ল্যান ভাইয়ার উপর প্রয়োগ করতে যেয়ে ভাইয়ার কাছে উদুম কেলানি না খাস। বলেই হাসতে হাসতে ধপ করে চেয়ার থেকে ঠাস করে পড়ে গেল আরিশা। আরিশাকে পড়ে যেতে দেখে আরহা টিটকিরি করে বলল

– বেশ হয়েছে, পড়ে গিয়েছিস, এবার দেখ কেমন লাগে।

বলেই গাল ফুলিয়ে নিজের রুমে চলে গেল আরহা ঘুমানোর জন্য। আর এদিকে আরিশা অনেক কষ্টে উঠে মনে মনে বলল

– হায় রে, এদের নিয়ে আর পারি না। সব দোষ আভান ভাইয়া আর শাঁকচুন্নি আরহার। ওদের জন্যই পড়ে গেলাম আমি। ওমা কোমড়ে কি ব্যথা গো।

কোনো মতে উঠে আরহার পাশে গিয়ে শুয়ে পড়ল। সেই যে আভানের গাড়িতে করে আরহার বাসায় আরিশা এসেছিল এখনও যাই নি, রাত হয়ে যাওয়ায় আর বাড়ি গেল না আরিশা। আরহা আরিশার মাকে ফোন করে বলে দিয়েছে। আরিশার বাসা আরহার বাসা থেকে তিন চার বাড়ি পরেই। এসব ভাবতে ভাবতেই চোখের পাতায় ঘুম এসে ভর করল। পাশ ফিয়ে দেখল আরহা গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন। আরিশাও আর কিছু না ভেবে অন্য পাশ ফিরে ঘুমানোর জন্য প্রস্তুতি নিল।

——————–

সকাল সকাল ঘুম থেকে উঠেই ফ্রেশ হয়ে নিয়ে দ্রুত নাস্তা সেরে রেডি হচ্ছে আরহা। এমন সময় ঘুম ভাঙল আরিশার। আরহাকে রেডি হতে দেখে আর ঘড়ির দিকে তাকিয়ে তড়িঘড়ি করে উঠল আরিশা। ব্যস্ত কণ্ঠে বলল

– কি রে আরহা রেডি হয়ে একা একাই কলেজ যাবি নাকি? আমায় ডাকিস নি কেন?

– দুদিন ধরে তোর উপর দিয়ে যে ঝড় বয়ে গেছে, আমি চাই নি তোকে ডাকতে। তুই রেস্ট নে। আজ কলেজ যেতে হবে না তোকে। কাল যাস।

– আমি ঠিক আছি, আমি এক্ষুনি রেডি হয়ে আসছি, তুই একটু ওয়েট কর আমার জন্য।

– আচ্ছা তাড়াতাড়ি কর, আজ তাড়াতাড়ি যাব কলেজে।

– আচ্ছা। ওয়েট।

দ্রুত রেডি হয়ে দুজন মিলে বেড়িয়ে পড়ল কলেজের উদ্দেশ্যে।
.
.
.
কলেজে গিয়েই খুঁজতে লাগল আভানকে, কিন্তু কোথাও খুঁজে পাচ্ছে না বলে মন খারাপ হয়ে গেলো আরহার। হঠাৎই চোখ পড়ল কলেজের পিছনের লেকের পাড়ের দিকে। সেখানে গিয়েই দেখল আনমনে চুপচাপ করে বসে আছে আভান, লেকের পাড়ে। আভানকে এখানে দেখতে পেয়ে স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলল আরহা। কাছে গিয়েই বলল

– আপনাকে আমি সেই কখন থেকে খুঁজেই চলেছি কিন্তু কোথাও আপনার দেখা পাইনা।

আরহার কথার উত্তরে কোনো কথা বলল না আভান। শুধু আরহার দিকে একবার তাকিয়ে চোখ সরিয়ে নিল। এবার আরহা গিয়ে আভানের একদম পাশে বসল। এতে আভান দূরে সরে যেতে নিলেই আরহা বলে উঠল

– আমার উপর এখনও রাগ করে আছেন আপনি? গাড়িতে আপনার পাশের সিটে বসিনি বলে রাগ করে থাকবেন আমার উপর? এতো রাগ আপনার?

– আমি কারও উপর রাগ করিনা।

– তাহলে কথা বলছিলেন না কেন আমার সাথে?

– এমনিই ইচ্ছে হয়েছে তাই।

– সরি। এবার তো আমার সাথে কথা বলুন প্লিজ।

– কিছু বলবা?

– হ্যাঁ তো আপনার সাথে আমার অনেক কথা বলার আছে।

– কি বলবা তাড়াতাড়ি বলো, আজ আমার একটু তাড়া আছে।

– কিসের এতো তাড়া?

– সেটা নাহয় পড়েই বললাম। এখন তুমি কি বলবা সেটা বলো।

– আচ্ছা। আপনার সাথে এতোদিন ধরে কথা বলি কিন্তু আপনার বা আপনার পরিবার সম্পর্কে কিছুই জানিনা আমি। যদি কিছু মনে না করেন আমি কি জানতে পারি? মানে আমায় কি বলা যাবে?

আরহার কথা শুনে কিছুক্ষণ চুপ করে ছিল আভান। পরে কিছু একটা ভেবে বলল

– আমার সম্পর্কে কিছু না জানলেও একটু হলেও তো জানো আর পরিবার বলতে,,,

খানিকক্ষণ চুপ থেকে একটা দীর্ঘ শ্বাস ফেলে বলতে শুরু করল

– আমি আমার মা বাবার একমাত্র ছেলে। আমার যখন তিন বছর বয়স তখন আমার ছোট একটা বোন আসতে চলেছিল এ পৃথিবীতে। কিন্তু আফসোস, ও পৃথিবীর আলোও দেখতে পেল না। হঠাৎই একদিন মা ফ্লোরে স্লিপ করে ভুট করে পড়ে পেটে অনেক ব্যথা পেয়েছিলেন, ব্যথার চিৎকারে সবাই ছুটে এলো। তারপর হসপিটালে নিয়ে যাওয়া হয় মাকে। কিন্তু আমার বোনকে বাচানো গেল না, আর সেই শোকেই আমার মা সাথে সাথেই হার্টঅ্যাটাক করে মারা গেলেন। সেই থেকেই আমি একা হয়ে গেলাম সম্পূর্ণ একা। বাবা অফিসে চলে যেতেন। তার সাথে আমার আর রাতে দেখা হতো। আমি একাই থাকতাম ঘরে কেউ ছিল না আমায় সঙ্গ দেওয়ার মতো। সার্ভেন্টরা এসে টুকটাক কথা বলতো আমার সাথে যাতে আমি একাকিত্ব বোধ না করি। মাঝেমধ্যে চাচ্চু চাচি আসতো আমার দেখভালের জন্য। এভাবেই আমি বড়ো হতে থাকলাম। তারপর একদিন বাবাও মারা গেলেন। এরপর থেকে আমি আরও একা হয়ে গেলাম। এইতো গতবছর মারা গেছেন তিনি। এখন আমি তার অফিস সামলাই। সপ্তাহে তিন – চার দিন নিজ বাসা ফেলে এসে আমার চাচ্চু থাকেন আমার সাথে মাঝেমধ্যে চাচি এসেও দেখা করে যায় আমার সাথে।

এতটুকু বলে থামল আভান। চোখ বন্ধ করে লম্বা একটা শ্বাস নিল সে। অগোচরেই চোখ দিয়ে গড়িয়ে পড়ল দুফোটা জল। দ্রুততার সাথে তা হাত দিয়ে মুছে ফেলল সে। সব শুনে আরহারও চোখে পানি টলমল করছে যেন এক্ষুনি টুপ করে জল গড়িয়ে পড়বে। তার মানে এতো কষ্ট নিজের মধ্যে চেপে রেখেছিল এতোদিন ধরে আভান। এইজন্যই এতো চুপচাপ থাকে সবসময় আভান। এসব ভাবছিল তখনই আভান……

#চলবে ~

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here