তুমিহীনা_আমি_যে_শূন্য #Nushaiba_Jannat_Arha #পর্ব ১২ + ১৩ [ রহস্য উদঘাটন পর্ব ]

0
275

#তুমিহীনা_আমি_যে_শূন্য
#Nushaiba_Jannat_Arha
#পর্ব ১২ + ১৩ [ রহস্য উদঘাটন পর্ব ]

পিটপিট করে চোখ মেলে তাকালো আরিশা। চারিদিকে আবছা অন্ধকার। তখন ঐ লোক গুলো আরিশাকে ঘুমের ইনজেকশন পুশ করায় ঘুমিয়ে পড়েছিল সে। মৃদু আলোতে স্পষ্ট বুঝতে পারল রুমে কেউ নেই এখন। কারও কথাও শোনা যাচ্ছে না। কোনো সাড়া শব্দও নেই। চারপাশ শুনশান। যেন বড় কোনো ঝড়ের পূর্ব লক্ষ্মণ। আরিশা এবার হাতে পায়ের রশ্মি খুলার আপ্রাণ চেষ্টা করল কিন্তু বরাবরের মতো সে ব্যর্থ। কি করবে সে ভেবে পাচ্ছে না সে।

রুমের চারিদিকে চোখ বুলাতে বুলাতে হঠাৎই একটা জায়গায় চোখ আটকে গেল আরিশার। পাশেই পড়ে রয়েছে একটা ছুড়ি। দূর থেকেই চকচক করছিল। অনেক কষ্টে গড়াতে গড়াতে ছুড়িটার কাছে পৌছালো কিন্তু ছুড়ি দিয়ে কিভাবে হাত পায়ের বাঁধন খুলবে তা ভেবে পাচ্ছে না সে?

হঠাৎই মাথায় বুদ্ধি এলো। পেছন ঘুরে হাতের পাতাতে ছুড়িটা নিয়ে ছুড়ি দিয়ে বাধন খোলার চেষ্টা করল। ছুড়িটা বেশ ধারালো থাকায় তা সহজেই কিছু সময়ের ব্যবধানে কেটে গেল তবে অন্ধকারে রশ্মিটা কাটার সময় অসাবধানতা বশত হাতের কিছুটা অংশ কেটে যায় আরিশার। সেদিকে তেমন একটা পাত্তা দিল না সে। এখন তার পালানোর সময়। হাতের বাধন খোলার পর এবার কষ্ট হলেও উঠে বসে ছুড়িটার সাহায্যে পায়ের বাধন খুলে ফেলল সে। এবার সম্পূর্ণ মুক্ত আরিশা।

তবে বিপত্তি ঘটলো বের হবার সময়, বাহির থেকে দরজা এতো শক্ত করে লাগানো যে খোলা সম্ভব হচ্ছে না আরিশার পক্ষে। অনেক ধাক্কাধাক্কি করল কিন্তু কিছুতেই কিছু হলো না। এমনিতেই দুদিন ধরে না খাওয়ায় শরীরটা বেশ দূর্বল তার উপর দরজায় এতো বল প্রয়োগের জন্য আরও বেশি দূর্বল হয়ে পড়ল সে। এবার না পেরে মাটিতেই শুয়ে পড়ল সে। হাত পায়ের বাধন খুলতে তো সক্ষম হলো কিন্তু এখান থেকে বের হবে কিভাবে সেটাই ভেবে পাচ্ছে না সে।

হঠাৎই মনে পড়ল তার জামার পকেটে ফোন রয়েছে। দ্রুত হাত দিয়ে দেখল সত্যি সত্যিই ফোন রয়েছে। ফোন বন্ধ হয়ে থাকার কারণে ফোনে কল আসলেও কেউ টের পাইনি যে আরিশার কাছে ফোন রয়েছে। বন্ধ ফোন দ্রুত অন করলো সে। অন করেই কাউকে ফোন দিল তাকে উদ্ধারের জন্য।

——————-

চার রাস্তার মোড়ে দাঁড়িয়ে আছে আরহা এই এক ঘণ্টা যাবৎ। এতোক্ষণ ধরে আভানের জন্য অপেক্ষা করেই যাচ্ছে কিন্তু ওর আসার কোনো নামই নেই। আরহা একবার এদিক সেদিক তাকাচ্ছে তো আরেকবার তার হাত ঘড়ির দিকে তাকাচ্ছে। ভীষণ রাগ হচ্ছে আভানের উপর। একেই তো আরিশার টেনশনে মরে যাচ্ছে তার উপর আবার এভাবে রোদের মধ্যে দাঁড় করিয়ে রেখেছে আভান। আর মনে মনে বলল

– আজ আসুক উনি, উনার একদিন কি আমার একদিন।

কিছুক্ষণ আগে……

তখন আননোন নম্বর দিয়ে আভানই ফোন করেছিল আরহাকে। নানা কাজের ব্যস্তার কারণে আরহা বারবার ফোন দেওয়া সত্ত্বেও ফোন রিসিভ করতে পারেনি সে। প্রথমে আরহা রাগ করলেও আভান বুঝিয়ে বলার পর বুঝলো। আভানের কথামতো আরহা এটা শিওর হতে পারলো যে আরিশা সত্যিই কিডন্যাপ হয়েছে আর এর পিছনে নিশ্চয়ই আরিশার কোনো খুব কাছের কেউ বা পুরনো কোনো শত্রুর হাত আছে। আরহা এসব ভাবছিল এরই মধ্যে গাড়ি নিয়ে হাজির হলো আভান। গাড়ির হর্নের আওয়াজে ধ্যান ভাঙল আরহার।

আভানকে দেখেও না দেখার ভান করে মুখ ফিরিয়ে নিল অন্য দিকে। গাড়ি থেকে নেমেই আরহার অবস্থা দেখে বুঝতে পারল সে।

– আমার উপর রাগ করে আছো বুঝি? একটা গুরুত্বপূর্ণ কাজে লেট হয়ে গিয়েছে। আ’ম সরি।

– কিসের সরি হা। রোদের মধ্যে এক ঘণ্টা দাঁড়িয়ে থাকুন তো কেমন লাগে?

– বললাম তো সরি। এখন রাগ করার সময় নয় আরহা। আমাদের যে করেই হোক আরিশাকে খুঁজে বের করতেই হবে। কিন্তু কিভাবে খুঁজব ওকে? সেটাই তো ভেবে পাচ্ছি না। কোনো ক্লু পেলেও তো হতো।

– সেটাই তো, আমার মাথাতেও যে কিছু আসছে না। কোথায় রয়েছে আরিশা তাও তো জানিনা আমরা।

এরই মধ্যে ফোন এলো আরহার ফোনে। ফোনটা বের করেই অবাক হয়ে তাকিয়ে রইল তার ফোনের স্ক্রিনের দিকে। আভানের দিকে তাকাতেই আভান চিন্তিত কণ্ঠে বলল

– কি হয়েছে আরহা ফোন ধরছো না কেন? কে ফোন করেছে?

– আরিশা ফোন করেছে।

– কিহ্? দেরি না করে দ্রুত ফোনটা রিসিভ করো। আর হ্যাঁ ফোনটা লাউড স্পিকারে দেও।

আভানের কথামতো আরহা ফোনটা রিসিভ করল এবং লাউড স্পিকারে দিল।

– হ্যালো আরিশা, কি খবর? কেমন আছিস? কোথায় হারিয়ে গিয়েছিস তুই? জানিস কতো খুঁজেছি তোকে আমি, কিন্তু কোথাও পাই নি। বলার সময় আরহার চোখ দিয়ে অশ্রু গড়িয়ে পড়ল।

– এখন এতো কথা বলার সময় নেই রে আরহা। তুই আমাকে বাঁচা এখান থেকে।

– এখন কোথায় আছো তুমি, আরিশা?

পাশ দিয়ে আভান বলে উঠল। আভানের কথা শুনে আরিশা কিছুটা অবাক হলো। এখানে আবার আভান কোথ থেকে এলো? তারপরও এসব ভাবা বাদ দিয়ে আভানের কথার উত্তর দিল আরিশা।

– আমি ঠিক কোথায় এটা আমি নিজেও বলতে পারছি না, ভাইয়া। আমি এই দুদিন ধরে একটা অন্ধকার রুমের মাঝেই পড়ে আছি।

– আচ্ছা, আরিশা একটা কাজ করো। তুমি তোমার ফোনের লোকেশন অন করে রাখো। তাহলে আমরা তোমার লোকেশন ট্রাক করে সহজেই তোমায় খুঁজে বের করতে পারবো।

– হ্যাঁ ভাইয়া, আপনি ঠিকই বলেছেন। আমি এক্ষুনি আমার ফোনের লোকেশন অন করছি।

কারো পায়ের আওয়াজ শুনতে পেয়ে আরিশা চমকে উঠল। উত্তেজিত হয়ে বলল

– কেউ মনে হয় আসছে, আমি ফোন রাখছি। আমার কাছে যে ফোন আছে এটা কেউ জানেনা, জানলে আজই আমার শেষ দিন হবে।

– দাঁড়াও আরিশা। এ ভুল করতে যেও না। তুমি ফোন রাখবে না। তুমি তোমার ফোন লাউড স্পিকারে দিয়ে রাখো, যাতে ওখানে কি হচ্ছে কি না হচ্ছে আমরা তা শুনতে পারি। আর হ্যাঁ তোমার ফোন লুকিয়ে রাখো যাতে কেউ দেখতে না পারে।

– আচ্ছা ভাইয়া।

আভানের কথামতো তা-ই করল আরিশা। লুকিয়ে রাখল নিজের ফোন।

এদিকে আভান আরহাকে নিয়ে দ্রুত নিজের গাড়িতে উঠল। কানে ইয়ারপড লাগিয়ে তাতে কানেক্টেড করে নিল আরিশার ফোন। আভান আরিশার লোকেশন ট্রাক করে ঐ অনুযায়ী যেতে থাকল। আরিশা যেখানে অবস্থানরত সেটা এই শহর থেকে অনেকদূরে শেষ মাথায় অবস্থিত। যেখানে যেতে আধঘন্টা মতো সময় তো লাগবেই। তার বেশিও লাগতে পারে। তাই আভান অনেক দ্রুত সেই লোকেশন অনুযায়ী গাড়ি চালাচ্ছে যাতে করে ১০-১৫ মিনিটের মধ্যে উক্ত স্থানে পৌঁছাতে পারে আরিশাকে উদ্ধার করার জন্য।

আভানকে এতো দ্রুত গাড়ি চালাতে দেখে আরহা ভীত-সন্ত্রস্ত কণ্ঠে বলল

– আভান গাড়িটা একটু আস্তে চালান, আমার খুব ভয় লাগছে।

– এখন আস্তে চালানোর সময় না আরহা। আমাদেরকে যত দ্রুত সম্ভব ওখানে পৌঁছাতে হবে তা না হলে আরিশা বিপদে পড়ে যাবে। একটু বোঝার চেষ্টা করো প্লিজ।

– আচ্ছা।

পথিমধ্যে আভান আরহা কেউই কারও সাথে আর কথা বলল না। আরহা চোখ বন্ধ করে ছিটে হেলান দিয়ে গাড়িটা শক্ত করে ধরে বসে আছে। আরহার এমন অবস্থা দেখে মুচকি হাসল আভান।
.
.
.
.
এদিকে আরিশা চুপটি করে হাটু গেড়ে বসে আছে। সে যা সন্দেহ করেছে তা-ই হলো খট করে ঘরের দরজা খুলে কেউ একজন ঘরে প্রবেশ করলো। যে ঘরে প্রবেশ করেছে সে আর কেউই না সে ঐ লোকটা যে আরিশাকে কিডন্যাপ করেছে। ঘরে ঢুকতেই আরিশাকে হাত পা খোলা অবস্থায় চুপচাপ বসে থাকতে দেখে অবাক হয়ে গেল সে। পাশেই পড়ে রয়েছে ছেড়া রশ্মি যেটা বাধা ছিল আরিশার হাত পা আর পাশেই পড়ে রয়েছে একটা ধারালো ছুরি যেটা দিয়ে আরিশা হাত পায়ের বাধন ছুটিয়ে ছিল।ছুরিতে কিছুটা রক্ত লাগানো। আরিশা ঐ সময় হাত পায়ের বাধন খোলার পর ছুড়িটা সরাতে ভুলেই গিয়েছিল। এইসব দেখে রাগে কটমট করে তাকাল ঐ লোকটা আরিশার দিকে। আরিশা লোকটার এমন চাহনিতে ভয় পেয়ে গেল।

আরিশার দিকে আগাতে আগাতে লোকটি বলল

– বাহ্ তোর মাথায় তো অনেক বুদ্ধি। তোকে যতই দেখছি তোর সাহস আর বুদ্ধি দেখে অবাক না হয়ে আর পারছি না। কিন্তু দেখ এতো কষ্ট করে হাত পায়ের রশ্মি খুললি ঠিকই কিন্তু কি লাভ হলো সে-ই তো ধরা পড়ে গেলি আমার কাছে। বলে অট্ট হাসিতে মেতে উঠল লোকটি। অনেকক্ষণ পর হাসি থামিয়ে বলল

– কি লাভ হলো? তখন যতটা না শাস্তি পেতি তার থেকেও এখন হাজার গুনে শাস্তি পাবি। এখন শুধু দেখ আমি কি অবস্থা করি তোর? আর কি কি করি তোর সাথে? আমায় তুই চিনিস না? বলেই আরও একদফা অট্টহাসিতে মেতে উঠল সে।

আরিশা লোকটির কথা শুনে ভয়ে শিউরে উঠল। অপরপাশ থেকে সবই শুনতে পেল আভান। এবার গাড়ির স্পিড আরও বাড়িয়ে দিল আগের তুলনায়। দ্রুত গতিতে চলতে শুরু করল গাড়িটা।

এসব বলেই লোকটা বিশ্রী ভাবে হাসতে হাসতে এগিয়ে আসতে লাগল আরিশার দিকে। আরিশা ভয়ে তরতর করে ঘাম তে লাগল।

লোকটি এসেই আরিশার গায়ের থেকে টান দিয়ে ওরনা সরিয়ে মাটিতে ছুড়ে ফেলল। এখন লোলুপ দৃষ্টিতে চেয়ে আছে আরিশার দিকে। যখন লোকটি আরও এগিয়ে আসতে শুরু করল তখনই আরিশা জোড়ে চিৎকার করে উঠল।

আরিশার চিৎকার শুনে অপরপাশে শুনতে থাকা আভান ঘাবড়ে গেল। ইতোমধ্যে আভানের গাড়ি এসে থামল গন্তব্য স্থলে। আভান গাড়ি থেকে নামার পর যেই আরহা নামতে যাবে তখনই থামিয়ে দিয়ে বলল

– কোথায় যাচ্ছো তুমি?

– কেন আরিশাকে আনতে।

– যেয়ো না ওখানে, তোমার যাওয়াটা ঠিক হবে না।

– আমার বান্ধবী বিপদে পড়েছে আর আমি যাব না। কি বলছেন আপনি?

– দেখো আরহা একটু বোঝার চেষ্টা করো প্লিজ। আমি তোমায় নিয়ে কোনো রিস্ক নিতে চাই না। কেনো বুঝো না তুমি?

– কিন্তু….

– হুস কোনো কিন্তু নয়। একদম চুপটি করে লক্ষী মেয়ের মতো গাড়িতে বসে থাকবা। আমি এক্ষুনি যেয়ে আরিশাকে নিয়ে আসছি।

– আমার যে ভীষণ ভয় করছে আভান। আপনি আমায় একা একা ফেলে চলে যাবেন।( কাদো কাদো ফেস করে বলল আরহা)

– ভয় পেও না, আমি তো আছি। আমি থাকতে তোমার কিচ্ছু হবে না আরহা। এই তো যাবো আর আসবো আমি। আমি তোমার সেফটির কথা ভেবেই এখানে রেখে যাচ্ছি তোমায়। ওখানে গেলে বিপদও হতে পারে। এমনিতেও ওখানে কি না কি অবস্থা, তা আমি নিজেও জানি না। কিভাবে তোমায় নিয়ে যাই বলো। এখানে তুমি নিরাপদে থাকবে বলেই তোমায় রেখে যাচ্ছি আমি। সো নো ভয় নো টেনশন। আমি এক্ষুনি আসছি আরিশাকে নিয়ে।

আভানের কথা শুনে আশস্ত হলো আরহা। অবশেষে বুঝতে পারল আরহা। তাই বলল

– সাবধানে যাবেন কিন্তু। আর তাড়াতাড়ি আসবেন।

দেরি হয়ে যাচ্ছে বলে আর কথা বাড়াল না আভান। যাওয়ার আগে আরহার দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসি উপহার দিল। বিনিময়ে আরহাও মুচকি হাসি উপকার দিল আভানকে।

যাওয়ার আগে গাড়িটা লক করে দিয়ে গেল যাতে আরহা বাহিরে যেতে না পারে আর বাহির থেকেও যেন কেউ এসে আরহার কোনো ক্ষতি না করতে পারে।

এবার ভেতরের দিকে অগ্রসর হতে লাগল আভান। তবে ভেতরে প্রবেশের আগে মুখে মাস্ক পড়ে নিল সে, যাতে করে ওর মুখ স্পষ্ট বোঝা না যায়।

ভেতরে প্রবেশের সময় ৫-৬ বাধা দিল আভানকে। আরিশা যেখানে আছে সেখানে পৌঁছাতে হলে আগে এদেরকে সরাতে হবে তারপর যেতে হবে। আভানও সেভাবেই প্রস্তুতি নিল। আরও ভেতরে ঢুকতে গেলেই তাদের মধ্যে ১ জন আভানের গায়ে হাত দিল। সাথে সাথেই আভানের মাথায় রক্ত চড়ে বসল। পাশে থাকা লোহার রড নিয়ে এলোপাতাড়ি পিটাতে শুরু করে দিল সে। এরকম অনেকক্ষণ ধরে মারার পর সবাই আধমরা অবস্থায় অজ্ঞান হয়ে মাটিতে লুটিয়ে পড়ল।

ওদেরকে ডিঙিয়ে আরিশা যে রুমে সেইদিকে চলে গেল। দরজাটা ভেজানোই ছিল হালকা ধাক্কা দিতেই খুলে গেল দরজাটা। ভেতরে গিয়েই দেখতে পেল আরিশার ওরনা মাটিতে পড়ে আছে। আরিশার জামা প্রায় ছিড়েই গেছে এখন লোকটি প্রায় আরিশার বেশ অনেকটা কাছাকাছি। লোকটির সাথে আরিশা ধস্তাধস্তি করছে। শেষবারের মতো লোকটির কাছ থেকে ছাড়া পাওয়ার মতো আপ্রাণ চেষ্টা করল কিন্তু কিছুতেই কিছু হলো। এবার আশা ছেড়েই দিল সে। আজ সে সর্ব হারা হবে। সব শেষ তার মানে।

এমনিই ভীষণ রেগে আছে আভান তার উপর আবার দরজা খুলে ভিতরে ঢুকে এমন অবস্থা দেখে প্রচণ্ড রাগ হলো। রাগে তার ফর্সা মুখ রক্তিম বর্ণ ধারণ করল। চোখ দুটো লাল হয়ে গেল যেন এখনই চোখ দিয়ে রক্ত গড়িয়ে পড়বে। শক্ত করে হাত মুষ্টিবদ্ধ করে নিল সে।

লোকটির কাছে এগিয়ে গিয়েই পেছন থেকে তুলেই নাক বরাবর দুটো ঘুষি দিল। ফলে লোকটির নাক বেয়ে ঝরঝর করে রক্ত বের হলো। লোকটিকে বিনা কারণে মারার কারণে সে-ও আভানকে মারার জন্য হাত উঠালেই তা খপ করে ধরে পেছন দিকে নিয়ে মুচরিয়ে ধরল লোকটির হাত। এইবার লোকটির গালে এলোপাতাড়ি চড়াতে লাগল আভান। আবার লোকটি আভানকে মারার জন্য উদ্যত হলেও আভানের হাতে থাকা লোহার রড দিয়ে এতো জোরে লোকটির পায়ে বাড়ি দিল যে লোক মুহূর্তের মাঝে মাটিতে লুটিয়ে পড়ল। ব্যথায় কাতরাচ্ছে লোকটি।

আরিশা এসব দেখে ভয়ে চোখ বন্ধ করে নিলো। মাটি থেকে ওরনাটা উঠিয়ে অন্য দিকে ফিরে ওড়নাটা এক হাত দিয়ে বাড়িয়ে দিল আরিশার দিকে আভান। আরিশা দ্রুত ওড়নাটা নিয়ে ওর সারা শরীর পেচিয়ে নিল।

এরই মধ্যে পুলিশ ফোর্স নিয়ে হাজির হলো।পুলিশ এসেই সেই চার পাচ জনকে সহ ঐ লোকটাকেও এরেস্ট করল। আভান আগেই জানিয়ে রেখেছিল পুলিশ এবং আরিশার লোকেশন আগে থেকেই জানিয়ে রেখেছিল তাই সহজেই পুলিশ এসে হাজির হলো। যাওয়ার আগে সেই লোকটি আভানের উদ্দেশ্য করে বলল

– আমার কাজে বাধা দেওয়ার জন্য তোকে শাস্তি পেতেই হবে। দেখি তুই কয় দিন শান্তিতে থাকিস। আমায় তুই চিনিস না। তোর শেষ আমি দেখেই ছাড়বো। আর আরিশা তোকেও আমি দেখে নিবো।

– যা যা পারিস করে নে গিয়ে, এখন জেলের ভাত খা। (আভান উত্তর দিল)

পুলিশ অফিসার আভানের পরিচিত হওয়ায়, তাকে অনেক রিকোয়েস্ট করে লোকটির ফাসির ব্যবস্থা করল। যাওয়ার আগে পুলিশ অফিসার বলে গেল

– তোমার অনেক সাহস এবং বুদ্ধি, আভান।আজ তুমি একটা বুদ্ধিমত্তার পরিচয় দিলে।সময়মতো না আসলে হয়তো মেয়েটার অনেক বড় ক্ষতি হয়ে যেত। আজ আসি। ভালো থেকো।

– ওকে স্যার। দোয়া করবেন।

– হ্যাঁ অবশ্যই।

বিনিময়ে আভান শুধু হাসল।

আরিশাকে নিয়ে গাড়ির কাছে চলে গেল আভান। গাড়িতে আরহা চিন্তিত অবস্থায় বসে আছে। আভান আসাতে সাথে আরিশাকে দেখে চিন্তার রেশ কাটল আরহার। এবার একটু স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলল আরহা। আভান গাড়ির দরজা খুলতেই বেরিয়ে এসে আরিশাকে জড়িয়ে ধরে কান্না করে দিল আরহা। আভানের উদ্দেশ্য আরহা বলল

– আজ আপনি না থাকলে হয়তো আরিশাকে পেতাম না।

– হ্যাঁ ভাইয়া আজ আপনি ছিলেন বলেই আমি আজ বেঁচে আছি। আপনি সময় মতো না আসলে হয়তো আমি এখানে এই ভাবে থাকতে পারতাম না। কি বলে যে আমি আপনাকে কৃতজ্ঞতা জানাবো, ভেবে পাচ্ছি না। ( পাশ দিয়ে বলে উঠল আরিশা)

– এখানে আমার তেমন কোনো অবদান নেই। তুমি যদি ফোন না দিয়ে লোকেশন অন না করতে আমরা তাহলে আজ তোমায় খুজেও পেতাম না।

– তারপরও আপনার অবদান অনস্বীকার্য।

– কিন্তু ঐ লোকটা তোমায় কেন কিডন্যাপ করল আরিশা? তোমার সাথে কি লোকটার কোনো শত্রুতা ছিল?

– না তবে আমায় সে প্রেমের প্রস্তাব দিয়েছিল, আমি রাজি না হওয়াতে সে আমার সাথে বাজে আচরণ করছিল তাই আমি তাকে চড় মেরেছিলাম। আর এই কারণেই হয়তো প্রতিশোধ নেওয়ার জন্য এমন করেছে।

– এই জন্য এমন করবে, ছিহ্ ( আরহা বলল)

– এরা অনেক বাজে মেন্টালিটির মানুষ ছাড়া আর কিছুই না (আভান বলল)

আর কোনো কথা না বাড়িয়ে গাড়িতে উঠল আভান। এবার আরহা আর আভানের পাশে না বসে আরিশার পাশে ব্যাক সিটে বসল। এতে আভান অভিমানে দৃষ্টিতে তাকাল আরহার দিকে। কিন্তু মুখ দিয়ে কিছু বলল না। বারবার লুকিং গ্লাসের মধ্যে দিয়ে তাকাচ্ছে তার প্রেয়সীর দিকে……

#চলবে ~

আজ অনেক বড় করে দিয়েছি গল্পটা। কেমন লাগল সবাই জানাতে ভুলবেন না। আগের পর্বে সবাই আভানকে দোষারোপ করেছিলেন। কিন্তু আভানের এখানে কোনো দোষ নেই।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here