তুমিহীনা_আমি_যে_শূন্য #Nushaiba_Jannat_Arha #পর্ব ১৭

0
570

#তুমিহীনা_আমি_যে_শূন্য
#Nushaiba_Jannat_Arha
#পর্ব ১৭

সকাল ৯:৩০ মিনিট,

আস্তে আস্তে পিটপিট করে চোখ মেলে তাকাল আরহা। গায়ে এখনো অনেক ব্যথা।হাতে ছোপ ছোপ রক্ত জমাট। গালটা এখনো লাল হয়ে আছে। চোখ নাক মুখ শুকিয়ে গেছে। উঠে বসার শক্তি টুকুও নেই তার। তবুও উঠে বসার ব্যর্থ চেষ্টা করল কিন্তু ব্যথা থাকার কারণে চেষ্টা করেও পারল না। তখনই কেবিনে প্রবেশ করল আভান। আরহার জ্ঞান ফিরতে দেখে আর উঠে বসার চেষ্টা করতে দেখে দ্রুত কাছে চলে গেল আরহার। বিচলিত কণ্ঠে আরহার উদ্দেশ্যে আভান বলল

– আরহা তুমি ঠিক আছো তো? এখন কেমন লাগছে তোমার?

আভানের কথা শুনে যখনই আরহা উত্তর দিতে যাবে তখনই মনে পড়ে গেল কালকে আরহার কোনো দোষ না থাকা সত্ত্বেও বিনা দোষে তার সাথে আভানের রুড বিহেভ তার চেয়েও বড় কথা, যে আভান আরহার হাত পর্যন্তও ছুয়ে দেখে নি সে তার গায়ে কালকে হাত তুলল, মারতেও দুবার বাধল না আভানের। কালকের ঘটনা মনে পড়তেই রাগে আর ঘৃণায় মুখ ফিরিয়ে নিল সে। প্রচণ্ড রাগ আর ঘৃণা হচ্ছে তার আভানের প্রতি। একরাশ ঘৃণা আর রাগ নিয়ে তাকাল আরহা আভানের দিকে।

আরহাকে কোনো কথা বলতে না দেখে আভান বলল

– কি হলো আরহা, কথা বলছো না কেন তুমি?

– যাবেন আপনি এখান থেকে। আপনি আমার চোখের সামনে থেকে দূর হয়ে যান। সামনে আসবেন না আমার কোনো দিনও।

– আরহা তুমি এমন কেন করছো?

– এমন করবো না তো কি করবো। কালকে মনে ছিল না, আমি বারবার বলেছি আমার কোনো দোষ নেই এখানে। আপনি আমার কথা শোনার চেষ্টা করেন নি। না শুনেই নিজের মতো ভেবে আমার দোষ না থাকা সত্ত্বেও আমার গায়ে হাত তুলতেও আপনি দুবার ভাবলেন না। এই নাকি আপনি আমায় ভালোবাসেন। বাহ্। বলেই তাচ্ছিল্যের হাসি হাসল আরহা।

আরহার বলা প্রতিটা কথা বুকে তীরের মতো বিধল আভানের।

– আ’ম সরি, আরহা। আসলে…

– চুপ একদম চুপ। তখন তো আমায় কথা বলার সুযোগ দেননি। এখন আপনি কেন বলছেন। এখন আমি বলব আপনি শুনবেন।

– আচ্ছা বলো, আমি সব শুনব আজ। সব শুনতে রাজি আমি।

– আমার ফোনটা দিন।

– তোমার ফোন বাসায় ফেলে এসেছি, আনতে মনে নেই।

– তাহলে আপনার ফোন দিয়ে আমার মা বাবাকে ফোন দিন।

আরহার কথা শুনে থমকে গেল আভান। অস্থিরতা সুরে বলল সে

– এখন দিবো ফোন?

– হ্যাঁ এখনই দিবেন ফোন। যা বলছি তাই করুন।

কাপা কাপা হাতে আভানের ফোনটা বাড়িয়ে দিল আভান। কষ্ট হওয়া সত্ত্বেও হাত বাড়িয়ে নিল ফোনটা। আরহার মাকে ফোন দেওয়ার সময় কিছু একটা ভেবে তখনই ফোনটা না দিয়ে আভানের উদ্দেশ্যে আরহা বলল

– কি হলো দাঁড়িয়ে আছেন কেন আপনি, এখান থেকে চলে যান। শুধু এখান থেকে নয়, আমার জীবন থেকে চলে যান আপনি। আপনাকে আমার সহ্য হচ্ছে না। চলে যান আপনি, চলে যান বলছি।

আরহার এমন কথা শুনে কিছুক্ষণ করুণ দৃষ্টিতে চেয়ে রইল আরহার দিকে। যেন কিছু বোঝাতে চায় আরহাকে সে। কিন্তু আরহা যে এখন কিছুই বুঝতে চাইবে না। তাই সে আর কথা না বাড়িয়ে চলে গেল। যাওয়ার আগে অগোচরেই দু ফোটা অশ্রু গড়িয়ে পড়ল দু চোখ বেয়ে। তবে সে আরহার চোখে পড়ল না। আভান চলে যেতেই স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলল আরহা।

কিন্তু আরহা তার মাকে ফোন দিল না, সরাসরি আরিশাকে ফোন দিল। আরিশাকে সব বলে দিবে আরহা। এই মুহূর্তে তার মাকে কিছুই জানাতে চায় না সে। কারণ তার মা এ ব্যপারে কিছুই জানে না।

আর কিছু না ভেবেই আরিশাকে ফোন দিল আরহা। হঠাৎ এ সময় আননোন নম্বর থেকে ফোন আসায় কিছুটা বিরক্তই হলো আরিশা। তাই ফোনটা রিসিভ করে বিরক্তির সুরে বলল

– হ্যালো কে বলছেন?

– হ্যালো আরিশা, আ আমি আরহা বলছি।

– তুই? কোথায় তুই? জানিস আঙ্কেল, আন্টি কতো টেনশন করেছে তোকে না পেয়ে। আমাকে ফোন দিয়ে বলেছে, কিন্তু আমি তোর ব্যপারে তাদের কিছুই বলতে পারিনি, কারন তুই ঠিক কোথায় তাতো আমি জানি না। তোরে ফোনে অনেক বার ফোন দিয়েছে কিন্তু তুই রিসিভ করিস নি। আমিও অনেক বার ফোন দিয়েছি।

আরিশার কথা শুনে হঠাৎই কান্না করে উঠল আরহা। আরহার এমন আচরণে বিচলিত হয়ে পড়ল আরিশা। তাই বিচলিত কণ্ঠে বলল

– কি হয়েছে, কাঁদছিস কেন? কিছু কি হয়েছে রে?

– আমি হসপিটালে, তুই চলে আয় তাড়াতাড়ি, আমায় এসে নিয়ে যা এখান থেকে।

– তুই হসপিটালে মানে? কি হয়েছে তোর? তুই না কাল সকালে সেজেগুজে আভান ভাইয়ার জন্য গিয়েছিলি তাহলে কি এমন হলো যে এখন হসপিটালে? তোর বা আভান ভাইয়ার কিছু হয়নি তো?

যখনই আরহা আরিশাকে কিছু বলতে যাবে তখনই হঠাৎ হন্তদন্ত হয়ে চলে এলো আভান। বাইরে বেরিয়ে যাওয়ার পর হঠাৎই কিছু একটা ভেবে পুনরায় কেবিনের ভেতর দ্রুত প্রবেশ করল আভান আর এসেই উত্তেজিত কণ্ঠে আরহার উদ্দেশ্যে বলল

– কার সাথে কথা বলছো তুমি? আমার ফোন আমাকে দাও।

হঠাৎ আভানের কণ্ঠস্বর পেয়ে চমকে উঠল আরহা। আরহা কিছু বলার বা বুঝে উঠার আগেই হাত থেকে ফোনটা কেড়ে নিল আভান। হাত থেকে ফোনটা নিয়ে কেটে দিল আভান। আরহার সাথে কথা বলতে বলতে হঠাৎ ফোনটা কেটে যাওয়ায় অবাক হয়ে গেল আরিশা। আর এক মুহূর্তও অপেক্ষা না করে দ্রুত আরহার দেওয়া লোকেশন অনুযায়ী রওয়ানা দিল আরিশা।

রাগান্বিত কণ্ঠে আভান আরহার উদ্দেশ্যে বলল

– আমি ভেবেছিলাম তুমি তোমার মায়ের সাথে কথা বলছো। কিন্তু না আমি ভুল, তুমি আরিশাকে ফোন দিয়ে আমার নামে সব বলে দিয়েছো।

– বললে কি করবেন আপনি? ভুল আপনি করেছেন তা কেন মানুষ জানবে না?

আভানের ভীষণ রাগ হলো তবে সেটা প্রকাশ করল না সে। নিজেকে শান্ত করে নিয়ে বলল

– একটা কথা ভালো করে মনে রাখো, আমার ব্যপারে যেন কেউ কিচ্ছু না জানতে পারে, তোমার মা বাবা তো না-ই, আরিশাও যেন জানতে না পারে।

– বলবো সবাইকে বলবো, আপনার কি তাতে? আপনি দোষ করবেন আর আমি কাওকে কিছু বলব না, আপনি আমায় চেনেন না।

– আমি তোমায় ভালো মতোই চিনি, আরুপাখি। কিন্তু সমস্যা হলো তুমি আমায় চেনো না। আর হ্যাঁ, তুমি কি ভেবেছো তুমি সব বলে দিবে আর আমি তোমায় ছেড়ে দিবো। নো, নেভার। তুমি যদি আমার নামে কাওকে কিছু বলো তাহলে আমি কি করবো তুমি জানো?

– কি করবেন কি আপনি?

– তোমার আপনজনদের আমি মেরে ফেলবো। তুমি কি চাও তোমারই সামনে তোমার আপনজনদের মরা মুখ দেখতে?

বলেই রহস্যময় এক হাসি দিল আভান।

আভানের এরূপ কথা শুনে ভয় পেয়ে গেল আরহা। আরহার এমন ভয়ার্ত চেহারা দেখে বাঁকা হাসল আভান। হাসতে হাসতেই বলল

– কি ভয় পেয়ে গেলে নাকি আমার কথা শুনে?

– ন না, এমন করবেন না প্লিজ আভান।

– তাহলে যা বললাম, আমার সম্পর্কে একটা তথ্যও যেন কেউ জানতে না পারে। আর আমি কাল তোমাকে মেরেছে, এর জন্য সরি, কিন্তু কেউ যেন এ ব্যপারে জানতে না পারে। জানলে কি হবে তা জানোই তো।

– না না এমন কিছু করতে হবে না, আমি কাউকে কিচ্ছু বলব না।

– এই তো গুড গার্ল। এখন রেস্ট নাও। বেশি চাপ নিও না। সুস্থ হয়ে গেলেই তোমায় বাড়ি পাঠিয়ে দিব। আর বাকিটা না হয় আমিই ভেবে নিব। তোমার এতো ভাবতে হবে না।

আভানের কথার প্রতিত্তোরে কোনো কিছু বলল না আরহা। আভানের দিকে ঘৃণার দিকে তাকিয়ে রাগে ঘৃণায় মুখ ফিরিয়ে নিল সে। আভান আরহার দিকে একবার তাকিয়ে দীর্ঘ শ্বাস ফেলে সেখান থেকে প্রস্থান করল। আভানের উপর আরহা যতটা না রেগে ছিল তার চেয়ে দ্বিগুণ রেগে গেল আরহা সেই সাথে প্রচণ্ড ঘৃণা হলো আভানের প্রতি। হঠাৎই আরহার কেবিনে প্রবেশ করল একটি অল্প বয়সী মেয়ে। এসেই আরহার উদ্দেশ্য বলল

– আসবো আরহাপু?

হাস্যজল একটি অল্প বয়সী অপরিচিত মেয়েকে আরহার কেবিনের দরজার সামনে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে বেশ অবাক হলো আরহা। কিছুটা অপ্রস্তুত কণ্ঠে মেয়েটির উদ্দেশ্য আরহা বলল

– আসো তবে কে তুমি…….

#চলবে ~

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here