তুমিহীনা_আমি_যে_শূন্য #Nushaiba_Jannat_Arha #পর্ব ২৭ + ২৮

0
587

#তুমিহীনা_আমি_যে_শূন্য
#Nushaiba_Jannat_Arha
#পর্ব ২৭ + ২৮ [ কঠিন সত্যের মুখোমুখি ]

– জানো আরহা, আমার জীবনে আজ প্রথম এতো আনন্দ ফূর্তি, হাসি মজা করলাম। এর আগে কখনো এমন করার সুযোগ হয়নি আমার। ছোট বেলায় চাচা চাচির অনাদর অবহেলা, মায়ের শূন্যতা, বাবা থাকতেও না পাওয়া, এসব মিলিয়ের আমার জীবনটা চরম বিভীষিকাময় হয়ে গিয়েছিল। আমি মানসিক ভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে পড়েছিলাম। আত্মহত্যার পথও বেছে নিয়েছিলাম। কিন্তু পরবর্তীতে যখন বুঝতে পারলাম তখন সে চিন্তা ঝেড়ে ফেললাম মাথা থেকে। আর কোনো সঙ্গও ছিল না যাকে একটু মনের কথা খুলে বলব। একা একা থাকতে থাকতে দিনে দিনে হয়ে উঠলাম প্রচণ্ড জেদি, রাগী আর বদমেজাজি। রাগ হলে আমি আমার ভেতর থাকি না। এজন্যই তো আমি তোমার সাথে ওমন আচরণ করেছিলাম সেদিন।

আরহা আভানের পাশে বসে ওর মাথায় হাত বুলাতে বুলাতে বলল

– আচ্ছা মামনি তো আপনার খালামণি হয়, তো উনি পেলেন কিভাবে আপনাকে?

– সে অনেক কথা, এতো দিন বলতে চাইনি, তবে আজ সব বলব আমি তোমায়।

আরহা প্রশ্ন বিদ্ধ নয়নে তাকিয়ে রয় আভানের দিকে। একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে আভান বলতে শুরু করল তার অতিত।

– আমি আমার চাচা চাচির এমন খারাপ আচরণের কথা ভয়ে বাবাকে বলিনি, বললে নাকি তারা আমাকে সহ আমার বাবাকেও মেরে ফেলবেন। এমনকি আমার মা আর বোনের মৃত্যুর পেছনেও তাদের হাত ছিল, তবে এটা আমি আগে জানতাম না। কাল জেনেছি।

– কিন্তু আপনাকে বা আপনার পরিবারকে কেনই বা আপনারই চাচা চাচি মারতে চাইবে?

– আমার দাদু আমার বাবা আর চাচাকে সমান ভাগে সব সম্পত্তি দিয়ে গিয়েছিলেন তার মৃত্যুর আগে। আমার বাবা সেই সম্পদ দিয়ে অক্লান্ত পরিশ্রমের মধ্য দিয়ে তিলে তিলে গড়ে তুলেছিলেন আমাদের বিজনেসটাকে। অপর দিকে চাচা তার নিজের সেই সম্পদকে কাজে না লাগিয়ে নষ্ট করে ফেললেন। এরপর তিনি ধার দেনা করতে লাগলেন, আমার বাবা তার এ করুন অবস্থা দেখে তাকে আমাদের বাড়িতে আশ্রয় দেন। এভাবে সব ঠিকঠাকই চলছিল, কিন্তু আমার চাচি এসব মেনে নিতে পারলেন না, প্রতি মুহূর্তে আমার মাকে হিংসে করতেন। তবে তিনি ভালো মানষীর মুখোশ পড়ে থাকতেন বলে তার আসল রুপ আমরা কেউ-ই ধরতে পারিনি। তার লোভ ছিল আমার বাবার সম্পদের প্রতি। তাই তিনি পরিকল্পনা মাফিক কাজ শুরু করলেন প্রথমে আমার নিষ্পাপ বোনটা মেরে ফেলল তারপর আমার মাকে। আমার মা কিন্তু হার্ট অ্যাটাক করে মারা যাননি তাকে হত্যা করা হয়েছে। এরপর আমাকেও তিলে তিলে মারতে চেয়েছিল তবে সক্ষম হয়নি, মাঝখান থেকে প্রাণটা চলে গেল আমার বাবার। আমার বাবাকেও তারাই মেরেছেন। ব্রেক ফেল করিয়ে রোড এক্সিডেন্টের মাধ্যমে তাকে হত্যা করা হয়েছে। আর আমি বুঝতেও পারলাম কিছু। মুলত আমার বাবার সব সম্পত্তি আত্মসাৎ করার জন্যই আমাদের মারতে চেয়েছিল আমারই চাচা চাচি। আমার মা বাবা আর বোনকে মারতে সক্ষম হলেও আমায় মারতে সক্ষম হয়নি তারা।

এতোকিছু বলে থামল আভান, তার চোখ বেয়ে গড়িয়ে পড়ছে অশ্রু কণা। আরহারও চোখে পানি টলমল করছে, যেন একটু পরেই টুপ করে বৃষ্টির ফোটার মতো ঝরে পরবে। সে অশ্রু সিক্ত নয়নে আভানের দিকে তাকিয়ে বলল

– আচ্ছা আভান জানলেন কিভাবে এসব?

– আমি তো কাল অবধি জানতামই না এতোকিছু। এতোদিন জানতাম তারা খারাপ কিন্তু তাই বলে তারা এতো নিচ আর জঘন্য মন মানসিকতার মানুষ তা আগে জানতাম না। কিভাবে পারল ওরা এমন করতে, ওদের বুক কাপলো না একবারও।

এবার কিছুটা দম নিয়ে আভান আবারও বলতে শুরু করলো।

– কাল তুমি আগে আগেই ঘুমিয়ে পড়েছিলে। কিন্তু আমি না ঘুমিয়ে বেলকনিতে চলে গিয়েছিলাম। তখন রাত আনুমানিক ২ টা কি ৩ টা, আমার ফ্রেণ্ড ফারহান আমায় ফোন দিয়ে বলল সব। ও হচ্ছে আমার সেই ফ্রেণ্ড যাকে আমি আমার লাইফের সব বলেছি, ও সব জানে এবং ও আমার বিশস্ত ফ্রেণ্ড। ও আর ইমি ছাড়া আমার সম্পর্কে কেউ ভালো ভাবে জানে না কিছু। কিছুদিন যাবত আমার কেন জানি না সন্দেহ হতে থাকে ওদের কিছু আচরণে। তাই আমি আগে থেকেই ফারহানকে বলে রেখেছিলাম ওদের ব্যাপারে। কোনো ক্লু বা সন্দেহ জনক কিছু দেখলেই আমায় জানাতে।

আরহা এবার বলে উঠল

– এতোদিন তো ওনাদেরকে আপনি সন্দেহ করেননি, তবে হঠাৎ কেন ওদের প্রতি সন্দেহ হলো আপনার?

– সন্দেহ হওয়ার যথেষ্ট কারণ রয়েছে। আমি একদিন ওদের কাওকে কিছু না বলে ওদের বাড়িতে গিয়েছিলাম একটা কাজে, তো কলিংবেল বাজাতেই কাজের মেয়ে দরজা খুলে দেয়। আমার বাবার টাকা মেরে ভালোই সাজিয়েছে ওদের বাড়ি। যেন একটা রাজপ্রাসাদ। অতি আগ্রহের বশে সারা বাড়ি ঘুরে ঘুরে দেখতে লাগলাম হঠাৎই চাচা চাচির রুমের সামনে যেতেই শুনতে পেলাম তাদের মধ্যকার কিছু কথা।

চাচি চাচার উদ্দেশ্যে বলছেন

” এবার শুধু আভানকে মারার পালা। আভানের মা বাবা আর বোনকে মারতে পেরে আমাদের পথের কাটা সরাতে পেরেছি। এখন শুধু আভানের পালা, আভান মরলেই আমাদের পথের কাটা ক্লিয়ার।”

প্রতিত্তোরে তাল মিলিয়ে চাচা বললেন

” হুম আভানকে আমি দ্বিগুন কষ্ট দিয়ে মারবো। ছেলেটার কই মাছের জান, অল্প বয়সে বাবা মাকে হারালো তারপরও কি শক্ত। কিন্তু এবার তো আর তা হবে না এবার ওকে মরতেই হবে। কারণ ওর প্রাণ ভোমড়া হচ্ছে আরহা। একবার যদি আরহার থেকে আভানকে আলাদা করতে পারি তবেই আভান মন কষ্টে ধুকে ধুকে মরবে।”

” আরে মাহিরের বাবা তুমি তো একদম আমার মনের কথা বলেছো। এভাবেই আভানকে মারতে হবে। তারপর আরহা মামনিকে আমাদের বাড়ির বউ করে আনবো। আমার ছেলে মাহিরের বউ হবে ও। আগের বার তো মাহিরই ফাটল ধরিয়েছিল আভান আর আরহার মাঝে। ”

বলেই অট্টহাসিতে ফেটে পড়লেন ওনারা। সব শুনে রাগে গা হাত পা থরথর করে কাপতে লাগল আভানের। আভান আর এক মুহূর্তও দেরি না করে নিজের বাড়ি চলে এলো। ওখানে আর একটু অপেক্ষা করলে হয়তো সব কিছু তছনছ করে ফেলত ও। এই মাহিরকে সহ্য করতে পারে না আভান। ছোটবেলা থেকেই আভানের সব জিনিসে হাত দেওয়া মাহিরের স্বভাব। এখন আরহার পেছনে পড়েছে। এটা ভাবতেই মাহিরকে তুলে আছাড়া মারতে ইচ্ছে করছে আভানের। কিন্তু এখন এটা করার সময় না, ওকে ঠাণ্ডা মাথায় প্লান করতে হবে। সময় আসলে ঠিকই শোধ নিয়েই ছাড়বে। তাই আভান সেদিনের পর থেকে প্লান করতে লাগল ফারহানের সাথে মিলে।

সব শুনে এবার আরহা বলল

– তার মানে আপনার চাচাতো ভাই ঐ মাহির, ঐ ব্যাটা খাটাশ আমাদের সম্পর্কের অবনতি করেছে। আমাদের দুজনকে আলাদা করে অনেক কষ্ট দিয়েছে, ওকে ছাড়ব না আমি সামনে পেলে তো মেরেই ফেলবো ওকে।

আরহার কথাতে হাসল আভান। সিরিয়াস পর্যায়ে আভানকে হাসতে দেখে আরহা বলল

– কি হলো হাসছেন কেন আপনি?

– হাসছি কি আর সাধে? ও তো ওর যোগ্য শাস্তি পেয়েছে। এখন ওপরে রয়েছে।

– ওপরে মানে, কোথায়?

– সবটা না শুনলে তুমি কিছুই বুঝতে পারবে না আরহা। তাই পুরোটা শোনো।

– আচ্ছা বলুন তবে এবার, তারপর কি হয়েছিল?

আভান দম নিয়ে আবার বলতে শুরু করল

– তারপর ফারহান আমায় সব জানাতেই আমি হন্তদন্ত হয়ে গাড়ি নিয়ে বের হয়ে পড়ি, ওর দেওয়া ঠিকানা স্থলে। ততক্ষণে ফারহান ধরে ফেলেছে চাচা চাচি আর মাহিরকে। ওরা একটা রুমের মাঝে বন্দি। ওরা মুলত আমাকে মারার জন্যই এসেছিল। ফারহান মিথ্যে নাটক করে ওদের সাথে। ওরা ধরতেও পারেনি ফারহান আমারই লোক। তাই ওদেরকে নানাভাবে বুঝিয়ে আটক করে ফেলে, আমায় তা জানাতেই আমি ছুটে যাই ওখানে। ওখানে গিয়ে ওরা আমায় দেখতেই রহস্যময় হাসি দেয়। মাহির আমার কাধে হাত চাপড়িয়ে বলল

” ব্রো, আরহাকে আমায় দিয়ে দে রে। ওকে আমি ভালোবাসি। ওকে ছেড়ে দে তুই। প্রয়োজনে তোর যত মেয়ে লাগে তত দিব। শুধু তুই আরহাকে ভুলে যা। আমায় দিয়ে দে।”

ওর এমন নোংরা কথা শুনতেই মাথায় রক্ত চড়ে বসল আভানের। কাধ থেকে হাত ঝাড়ি দিয়ে নামিয়ে দাতে দাত চেপে বলল

– তোর সাহস হলো কি করে আমার আরহার দিকে চোখ তুলে তাকানোর। লজ্জা করে না তোর অন্যের বউয়ের দিকে হাত বাড়াতে।

” ব্রো এভাবে বলিস না। আচ্ছা ঠিক আছে, তোর আরহাকে আমি নিবো না। তোর আরহা তোরই থাকবে। তুই শুধু এক রাতের জন্য আরহাকে দে আমায়।

মাহিরের এ ধরনের কথা শুনে আরও বেশি রাগ হয়ে গেল আভানের। শক্ত করে মাহিরের শার্টের কলার চেপে ধরে বলল

– চরিত্রহীন, তোর সাহস হলো কি করে তুই আমার বউয়ের দিকে কু দৃষ্টিতে তাকাস। ওর হাত ধরে, আমাদের মাঝে ফাটল ধরিয়েও শান্তি পাসনি। এখন কু প্রস্তাব দিচ্ছিস। তাও আবার আমারই বউকে নিয়ে। আজই তোর শেষ দিন, তুই যে চোখ দিয়ে আমার আরহার দিকে কু দৃষ্টিতে তাকিয়েছিস সেই চোখ আমি উপরে ফেলব।

আভানের কথা শুনে মাহিরও রেগে গেল এবার। ঝাড়ি দিয়ে আভানের হাত ছাড়িয়ে কলার ঝারতে ঝাড়তে শয়তানি হাসি হেসে মাহির বলল

– এতোক্ষণ ভালোভাবে বলেছি, এখন যখন তোরই সামনে তোর আরহার সর্বনাশ হতে দেখবি তখন বুঝবি কেমন লাগে।

ওনেক শান্ত করার চেষ্টা করেছিল আভান নিজেকে, কিন্তু এবার আর পারল না। এবার সে এলোপাতাড়ি মারতে লাগল মাহিরকে। মাহিরের নাক মুখ দিয়ে রক্তপাত হতে লাগল। তারপরও ক্ষ্যান্ত হয়নি আভান। অনবরত ঘামতে লাগল আর শরীর থরথর করে কাপতে লাগল ওর। আভানের এমন অবস্থা দেখে দ্রুত ছাড়িয়ে নিয়ে দূরে নিয়ে দাড়ালো ফারহান। ওকে শান্ত করার চেষ্টা করতে লাগল। আভান আরেকটু সময় ঐ অবস্থায় থাকলে হয়তো অতিরিক্ত উত্তেজিত হওয়ার কারণে স্ট্রোক করতো। তাই ফারহান দ্রুত সরিয়ে নিয়ে এলো ওকে। তারপর কিছুটা হলেও শান্ত হলো আভান।

এগুলো বলতে গিয়ে রাগে আভানের মুখে রক্তিম বর্ণ ধারণ করেছে। মুখে তার রাগ স্পষ্ট। পাশে থাকা পানির জগ থেকে এক গ্লাস পানি নিয়ে ঢক ঢক করে খেয়ে ফেলল আভান। পানিটা খেয়ে দম ফেলল সে। এদিকে আভানের কথা শুনে আরহা অবাক হয়ে যায়। মানুষ কতোটা জঘন্য হলে কুরুচিপূর্ণ প্রস্তাব দিতে পারে। তবে একদিক দিয়ে সে মনে মনে একটু খুশিই হলো যে আভান মুখ বুজে সহ্য করেনি তার বউয়ের অপমান, সে প্রতিবাদ করেছে। আর এটা ভেবে সে স্বস্তি পেল যে আর যাই হোক আভান কখনোই আরহার গায়ে আঁচ লাগতে দেবেনা। কেউ কোনো কিছু করলেই ঢাল হয়ে দাড়াবে আভান।

কিছুটা থেমে আভান আবার বলতে শুরু করল

– কথা কাটাকাটির এক পর্যায়ে আমার সাথে আরও এক দফা মারামারি হয় মাহিরের সাথে। আর চাচা চাচি নিজ মুখে সব সত্য স্বীকার করে নেয় যে ওরাই আমার মা বাবা বোনকে হত্যা করেছে। আর আজ হবে নাকি আমার শেষ দিন এটাও বলেছে।
তবে আমি হেসে উড়িয়ে দেই ওদের কথা। কিন্তু ওদের একটা জিনিস আমার কাছে খটকা লাগে তা হলো মাহিরকে এতো মারার পরও না মাহিরের মধ্যে রাগ আর না চাচা চাচির মধ্যে রাগ রয়েছে। তারা হাসছেন সেই তখন থেকেই। আমার খটকা লাগতেই আমি ইশারায় ফারহানকে তা বুঝিয়ে বললাম। ফারহান দ্রুত রুমের এদিক ওদিক খুজতে লাগল কিছু আছে কিনা। খুজতেই দেখতে পেল রুমের মাঝে টাইম বোম ফিট করা। ওর পক্ষে তখন সম্ভবও ছিল না বোমটা ডিফিউজ করার। কারণ তখন আর মাত্র ১ মিনিটের চেয়েও কম সময় বাকি ছিল। ফারহান তা বুঝতে পেরে অতি সতর্কতার সহিত পাশে এসে আমার হাত চেপে ধরল।

পাশ দিয়ে মাহির হেসে বলল

– আজ আমরাও মরবো তোকেও সাথে নিয়ে মরবো আমরা।

বলেই তারা সবাই অট্টহাসিতে মেতে উঠল।আর এই সুযোগেই আর দেরি না করে আমি আর ফারহান দ্রত দৌড়ে রুমের বাইরে চলে এলাম। আর তখনই স্বশব্দে ব্লাস্ট হলো বোমটা। আমরা ছিটকে দূরে গিয়ে পড়ি। ফারহানের কিছু না হলেও আমার হাতের কিছু অংশ ছিলে যায় আর পায়ে বেশ অনেকটা জায়গা ব্যথা পাই। আর ওদের রুমটাতে দাওদাও করে আগুন জ্বলতে লাগল। ততক্ষণে সব শেষ। ওরা সবাই মারা গিয়েছে।

তারপর ফারহানই আমাকে ধরে নিয়ে বাড়িতে পৌছে দেয়। ও সত্যিই আমাকে ওনেক হেল্প করেছে।

সব শুনে আরহা কিছুক্ষণ অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে রয় আভানের দিকে। তার মানে কাল আভান এ জন্যই খোড়াচ্ছিল। অবাক হয়ে আভানকে বলে

– এতো কিছু হয়ে গেল আর আপনি আমায় কিছুই বলেন নি।

– বললে তুমি টেনশন করতে, আমি চাইনি তুমি আমার জন্য টেনশন করে অসুস্থ হয়ে পড়ো।

এবার আভান আবার বলল

– এতোক্ষণ তো আমি আমার কথা বললাম। এইবার আসি মেইন পয়েন্টে, মানে তোমার প্রশ্নের উত্তরের পালা, মামনি কিভাবে পেল আমায়?

আরহা উৎসুক দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইল আভানের দিকে। আভান দম নিয়ে বলতে শুরু করল।

– ভয়ে বাবাকে বলতে না পারলেও একদিন সাহস করে বলে দেই সব কথা যে চাচা চাচি আমায় অত্যাচার করে। এমনকি আমায় আমার বাড়ি থেকে বের করে দেওয়ারও হুমকি দেয় ওরা। বাবা আমার মুখ থেকে এসব কথা শুনে স্তব্ধ হয়ে গেলেন, নিজের ভাই এবং ভাই বউয়ের সম্পর্কে এমন কথা শুনে তিনি নিজের কানকে বিশ্বাস করতে পারলেন না। তারপরও তিনি আমায় বিশ্বাস করলেন। কারণ ছোটরা কখনো মিথ্যে বলতে পারে না এটা তিনি ভালো করেই জানতেন। তিনি আমার মাথায় হাত বুলিয়ে শান্তনা দিলেন।এরপর কিছুদিন পর বাবা দেখলেন বাসা থেকে অনেক কিছু চুরি হয়ে গেছে, টাকা পয়সাও চুরি হয়েছে। অনেক স্টেপ নেওয়ার পর প্রমাণ হলো যে ঐ টাকা চুরি করেছে চাচা চাচি। তারপর আমার বাবা ঘাড় ধাক্কা দিয়ে বের করে দেয় ওদের। আর তারপর আমার দেখাশোনার জন্য খালামণি, খালু আর ইমিকে আনা হয় আমাদের বাড়িতে। সেখান থেকেই মামনি মানুষ করে আমায়। আর ইমি তো আমার বোনের অভাব পূরণ করেছে। আমি ওনাদের ঋণ কখনোই শোধ করতে পারবো না। বাবা মারা যাওয়ার পর সবকিছু খালু দেখাশোনা করেছেন। এখন আমি আর খালু দেখি। আমার বিয়ের জন্য তিনি আমায় অফিসে যেতে দেননি। অফিসের সমস্ত চাপ নিজের কাধে নিয়েছেন তিনি। সত্যিই ওনারা আমার জীবনে না আসলে হয়তো আমি এ অবস্থাতে থাকতে পারতাম না। ওনারা আমার মা বাবার অভাব পূরণ করেছেন।

আভান সবই বলে দিল আরহাকে। নিজের জীবনের সমস্ত সত্যি বলেছে সে। এতোদিন মনের মাঝে পাথর জমেছিল আর আজ তা মনের মানুষটিকে বলতে পেরে হালকা হলো আভান। নিজেকে এখন বেশ অনেকটাই হালকা লাগছে আভানের।

আরহা এবার আভানকে বলল

– আপনার জীবনের অতিত শুনে আমার খুবই খারাপ লাগছে আভান। কি বলবো বলার কোনো ভাষা নেই আমার। অনেক কষ্ট পেতে হয়েছে আপনাকে। এরপর থেকে আমি আপনাকে আর কোনো কষ্ট পেতে দিবো না। আই প্রোমিস ইউ।

– সত্যিই?

– হুম ১০০% সত্যি। তবে একটা কথা বলুন তো, সবাই তো আপনার জীবনের সব অভাব পূরণ করেছে। তাহলে আমি আপনার কে হই এবং কোন অভাব পূরণ করতে পারি?

আরহার কথা শুনে বাকা হাসল আভান। হাসির রেখা টেনে বলল

– তুমি হলে আমার…….

#চলবে ~

আজকের পর্বটা কিন্তু অনেক বড় করে দিয়েছি। আর আজকের পর্বে সব রহস্য ক্লিয়ার করেছি। কেমন লাগল জানাবেন।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here