নেশাক্ত প্রণয়োণী পর্ব_১৬

0
1100

#নেশাক্ত_প্রণয়োণী
#লেখিকা_তামান্না(আল রাইয়ান)
#পর্ব_১৬

পুলিশ ডিপার্টমেন্টের স্তদ্ধতা দেখে আতঁকে উঠে ফাহাদ। তাকে এগোতে দেখে এক কলিগ কান্নারত কণ্ঠে বলে, ‘আওয়ার ইনসার্চম্যান ইজ নো মোর’।
কথাটি শুনে ফাহাদের সুপ্ত ধ্যান মুছে যায়।
ইনসার্চম্যানের ঘাড় থেকে র’ক্ত ঝরে পুরু রুম র’ক্তা’ক্ত হয়ে আছে। ফ্লোরের সবটুকু অংশ র’ক্তে মাখামাখি। ফাহাদ কাঁপান্বিত গলায় তার কলিগকে জিজ্ঞেস করে।

‘এ এসব কে কেমনে হলো!’

‘আল্লাহ জানেন কেমনে হলো! তিনি নাকি কোন এক কাজের জন্য হলরুমের রাস্তার দিকে আসছিল। ইনসার্চ রুমের দরজা পেড়ানোর আগে পিছলা স্থানে পা লেগে পড়ে যায়। তাও আবার পিছলা স্থানে ঐ কংক্রিট রাখা ছিল। ঘাড়ের সঙ্গে লেগে বেশ বাজে আঘাত লাগে ফলে মৃ’ত্যু হয়। এমনটাই জানানো হয়েছে।’

কথাগুলো শুনে চোখ বুজে দীর্ঘ কষ্টের শ্বাস নেয় ফাহাদ। মৃত্যু’দে’হের পোস্টমোটার্ম রিপোর্ট টেস্ট করে কাল পাঠানো হবে বলে জানিয়েছে ডক্টর। আপাতদৃষ্টিতে দেহটির দাফনের ব্যবস্থা করে সবাই মিলে। ফাহাদ প্রতিটা ক্ষেত্রে সংযুক্ত ছিল। দাফনকার্য শেষ হতেই সিসি টিভি ফুটেজ রুমে গেল। এ মুহুর্তে সিসিটিভি ফুটেজের ওয়াচম্যান নেই। তিনিও জানাযার মধ্যে সামিল আছে। এ সুযোগের সদব্যবহার করার জন্য উতলা হয়ে চলে এলো ফাহাদ। সিসিটিভিতে গতকালের ঘটে যাওয়া ভিডিও রিভিউ দেয়।। স্ক্রিনে জাফর সাহেবের প্রথম দিকের ফোনে মেসেজ আসার কথাগুলো ও দৃশ্য দেখে ভিডিও সামনে টানল। জাফর সাহেব বেরিয়ে তার পরিচিত মানুষের সঙ্গে বসে কথা বলে। কিন্তু ভেবেছিল পরের ভিডিও ক্লিপে কোনো ক্লু পাবে। তাও পেল না। কেননা পরের ভিডিওতে রুমে কাউকে দেখা যাচ্ছে না। শুধু ইনসার্চম্যান চেয়ারে বসে আছে তা দেখাল। পরক্ষণে ভিডিও সামনে টেনে নিলে মৃ’ত্যু দৃশ্যটি দেখায়। হতাশ হলো তার মন।
তাদের ডিপার্টমেন্টের সম্মানিত এসি জাফর সাহেব। তিনি কখনোই খু’ন করে পারে না।
ফাহাদের ভাবনামতে, ‘হয়ত আসলেই এক্সি’ডে’ন্ট।’
সিসিটিভি ফুটেজ রুমের বাহিরে এসে ফোন বের করে পুনরায় তার কলিগ ইনসার্চম্যানের মেসেজটা পড়ে। হতাশার গ্লানি ছেড়ে আরভীককে কল দেয়।
কয়েকবার রিং এ আরভীককে না পেয়ে আশঙ্কা হলো তার। কোনো বিপদ হলো কি তাদের!
দ্রুত ডিপার্টমেন্ট অফিস থেকে বেরিয়ে গাড়িতে বসে ছুটে গেল। পুরুনো বিল্ডিংয়ের সামনে কোনো মানুষের ছিটেফোঁটা না দেখে তার বুকের ধুকপুক ক্রমশ বেড়ে যায়। কোনো ভুল করল না তো তাদের একা ছেড়ে গিয়ে!
সিড়ি বেয়ে প্রত্যেকটা ফ্লোর চেক দেয়। না সাড়া নেই কারো! পা মন্থরগতিতে পিছিয়ে গেল। আকস্মিক কারো ‘উম উম’ শব্দের গোঙানি শুনতে পেল সে। তৎক্ষণাৎ শব্দের গোঙানি অনুসরণ করে সেদিক গেল। ভাঙ্গা টিনের বক্সের ভেতর থেকে শব্দগুলো ভেসে আসছে। কণ্ঠের নিম্নস্বর শুনে অনুমান করে নিশ্চিত মেয়ে হবে!
লেখিকা_তামান্না(আল রাইয়ান)
বক্স খুলে চমকে গেল। ভেতরে অন্য কেউ নয় বরং তার প্রেয়সী সাইবা। সাইবাকে র’ক্তা’ক্ত দশায় দেখে তার গালে হাত রাখে। কাতর গলায় বলে,

‘সা সাইবা চোখ খোল প্লিজ। তুমি কি ঠিক আছো!’

গোঙানি বেড়ে চলেছে সাইবার। নিভু চাহনী নিয়ে ফাহাদকে দেখে যেন শেষ ইচ্ছে ফিরে পেল। তার কথার জবাব না দিয়ে তার হাতটা সাইবা নিজের পেটের উপর রাখে। কেঁপে উঠে দুজনের শরীর। কিন্তু উদ্বিগ্ন হয়ে গেল ফাহাদের হৃদয়। সে তার হাতে নরম তরল অনুভব করছে। হাতের দিকে চোখ দিয়ে বিচলিত চোখে সাইবার দিকে তাকায়। তার পেট থেকে র’ক্ত গড়িয়ে কামিজ ভিজে জুবুথুবু হচ্ছে। ফাহাদ তার র’ক্তে মাখা হাত সাইবার গালে রেখে বলে,

‘এ এ রাণী আমাকে ছেড়ে যাবি না প্লিজ। তোর কিছু হতে দেব না। ওয়েট..।’

কোলে নিতে গেলে বাঁধা দিল সাইবা। কাঁপা গলায় নিভু শ্বাস নিয়ে বলে,

‘বে বে শি স সময় নে নেই। তু তুমি আ আমার এ এক ইচ্ছে পূ পূরণ করে দাও প্লিজ।’

কথাটি যেন তীরের মত বিঁধল ফাহাদের বুকে। তার দুগাল আদলে নিয়ে বলে,

‘এক কেন হাজারো ইচ্ছে পূরণ করতে রাজি আমি।’

‘সত্যি বিয়ে করবে আমাকে!’

গর্দভ বনে গেল ফাহাদ। এতক্ষণ যে মেয়েটি কাতরাছিল এখন সে মেয়েটিই চঞ্চলভাবে কথা বলে উঠল। খটকা লাগে বিষয়টি তার কাছে। সাইবা খুশির চটে ফাহাদের গালে গভীর চুমু একেঁ দেয়। থতমত খেয়ে যায় সে। সাইবা লাজুক হেসে মুখ ঢেকে ফেলে। ফাহাদ মেয়েটির আচরণে ঘোরে চলে গিয়েছে। আরভীক,সায়াজ মিটমিটিয়ে হাসি দিচ্ছে। আরভীক ফাহাদের ধ্যানমগ্নতা দেখে শয়তানি হেসে তার হাতের মধ্যে কালি মেখে সিল বসিয়ে দিল বিয়ের কাগজপত্রে। সাইবা লাফাচ্ছে তার স্বপ্নপুরুষ এবার সত্যিতে তার জীবনসঙ্গী! সায়াজ বোনের লাফানি দেখে ধীরস্থির গলায় বলে,

‘বোন আস্তে লাফা; না হলে বিল্ডিং ভেঙ্গে ম’র’ব।’

ভাইয়ের কথা শুনে ধুপধাপ চট’কানি দিল তার পিঠে। বোনকে রাগানোর শা’স্তি এ আরকি! আরভীক কাগজটি সাইবার কাছে দিয়ে ফাহাদের ব্যাকসাইডের দিকে তাকিয়ে বলে,

‘ডুড এন্ড সিস প্লিজ ক্লোজ ইউর আইস!’

‘কেনো!’

সায়াজের কথায় প্রত্যত্তর করে না আরভীক। শুধু দুষ্টুর মনভাবে চোখ টিপ দেয়। এ চোখ টিপের রহস্য উদঘাটন করার সাধ্য বেচারা সায়াজের নেই। ফলে সে চোখ বন্ধ করে সাইবার চোখও শক্ত করে বন্ধ করে ফেলে। সাইবা নিজের হাত দিয়ে চোখ বন্ধ করলেও হাতের ফাঁকা অংশ দিয়ে দেখে চলছিল। সায়াজ ধরতেই অন্ধকার অন্ধকার দেখল! ঠাসঠুস মেঝের উপর লা’থি দিয়ে মুখ ফুলালো। আরভীক ফাহাদের পিছে গিয়ে দাঁড়ায়। জুতোজোড়া খুলে ঠোঁট চেপে ফুটবল মা’রা’র মত পজিশন করে দাঁড়ায়। বন্ধুর বলের মত বসার ধরণ দেখে তার মাথায় বাচ্চামি মনভাব জেগে উঠে। বিধেয় দিগিদ্বিক না ভেবে ‘ইয়া আল্লাহ মেরে দিলাম’ বলে লা’থ দিল বন্ধুর কোমরের নিচে। ফাহাদ কানে তার বন্ধুর বলা কথা শুনে বোঝার পূর্বেই। হঠাৎ কটিদেশে ব্যথা পেয়ে ধপাস করে উল্টো হয়ে গেল। বেচারা ‘আহ আহ’ করে কটিদেশ ঘষতে থেকে উঠার চেষ্টা করে। আরভীক মৃদু হেসে তার হাত ধরে দাঁড় করায়। ফাহাদ ক্ষোভমিশ্রিত গলায় শুধায়।

‘ওই হা’লার বদ’মা’ইশ পা’ছায় লা’থি দিলি কেন!’

‘তুই বসছিলিই এমন।’

কথার ইতি টেনে সে নিজেই ফাহাদের পুরু কাপড়ের ময়লা ঝেড়ে দিয়ে কাঁধ ধরে বলে,

‘ডুড’স এন্ড লাভলী সিস লিসেন টু মি! ফাহাদ আকবার ও সাইবা ইসলাম আজ থেকে স্বামী-স্ত্রী।’

বেক্কলের মত চেহারা করে ফেলে ফাহাদ। কবে বিয়ে হলো তার! ভাবতেই প্রশ্নাত্মক চোখে বন্ধুর দিকে তাকায়। সে চাহনী বুঝে কাগজটি দেখায়। সাইবা লাজুকে যেন মরেই যাবে! মুখ ঢাকতে ঢাকতে তাকেও বন্ধুদের সামনে লজ্জায় ফেলছে। দাঁতে দাঁত চেপে আরভীককে শুধায়!

‘ওয়াট’স ডুড এমন টা কেন করলি! আমি কি বলছিলাম এডারে বিয়ে করব।’

‘না বললে খোকা তুমি যে সুজির অভাবে ক্ষুধার্ত হয়ে মরতে। তখন এসবের দ্বারভার কে নিতো শুনি।’

বিড়ালের মত সূচাঁলো হলো ফাহাদের চালচলন! কথার বিপরীত প্রতিক্রিয়া কি হবে তার ব্রেনে আসছে না। ঠোঁট কামড়ে বন্ধুদের দিকে তাকিয়ে বলে,

‘আগে বল ঘটনা কি হলো!’

আরভীক অলসতার মুখ করে হামি দেয়। সায়াজকে ইশারায় সংক্ষিপ্ত করে বলতে বলে। সে ফাহাদের দিকে তাকিয়ে বলে,

‘হেডমাস্টারের মেয়ে অন্যকেউ না এই সাইবা ইসলাম। তার গুন্ডা প্রেমিক যে বিয়ে করতে চাইছিল আমরা আসা অব্দি ছিল না। কাজি আনতে গেছিল আর কনের জন্য যাবতীয় জিনিসপত্র। বিয়ে নাকি আজই করবে বলে ঠিক করছিল! আরভীকের এসবে ইন্টারেস্ট ছিল না। তাই সে বসে বসে ঘুম মারল। আমি আর তোর পাঠানো কনস্টেবল মিলে যাবেরকে ধরে সাইবাকে উদ্ধার করি। এরপর গিয়ে আরভীকের ঘুম ভাঙ্গে। ঝিমানো শেষে চলে যেতে নিলে সাইবা অনুরোধ করে তোর আর তার বিয়েটা করিয়ে দিতে। আরভীক ভাই তো দুপায়ে খাড়া ছিল! নাটকটা এ কারণে রচিত। বুঝছেন মশাই!’

ফাহাদ উদ্দীপ্ত মেজাজে দাঁত কেলিয়ে চওড়া হাসি দিল। তার প্রেয়সী চিরজীবনের জন্য তার বন্দিনী হয়ে গেল।! উফ ভাবতেই খুশিতে ফেটে যাচ্ছে তার মন। সাইবা তার খুশির চেহারা দেখে মনে মনে শয়তানি ফন্দি আঁটকে রেখেছে। আরভীক বুঝতে পেরে সাইবার কানে ফিসফিসিয়ে বলে,

‘শাস্তি ততটুকু দিবে যতটুকু প্রাপ্তি। সীমা ছাড়িয়ে গেলে হারিয়ে বসবে।’

ত্রপাট কেঁপে উঠে সাইবার হৃদপিন্ড। না সে ওতটাও কষ্ট দিবে না তার প্রিয়তমকে। মাথা নেড়ে আরভীক এর বাণীতে সায় দেয়। তারা বেড়িয়ে বাসার দিকে রওনা দিল। যেহেতু আরভীক তার ওয়াদার প্রণয়ে সর্বদা তৎপর। অতঃপর হেডমাস্টারের বাসায় সদ্য বিবাহিত জামাইবাবা ও মেয়েকে রেখে সায়াজ ও সে চলে যায়। তাদের গন্তব্য কার্রস পেট্রোলিয়াম অফিসের কন্ডাক্টরের সঙ্গে সাক্ষাৎ করা।

২৯.
রাজিব আনজুমার থেকে বিভিন্ন প্রডাক্টের রেট অনুযায়ী হার মোতাবেক হাতিয়ে নেয়। ফলে তার কাছে প্রডাক্টস নিতান্ত কমে যায়। সেল করার জন্য আনজুমার হাত শূন্য হলো। লাভের কথায় এলে শ্রেয়া জাফরের এসিস্ট্যান্ট রাজিব মিছামিছি মন নিয়ে শুধায়।

‘ম্যাম এখনো আসেনি। তিনি আসলে প্রডাক্টসের রেট শোধ করে দেবে। এগুলো গাড়িতে তুলতে হবে। তাই আমি যায়।’

তড়িঘড়ি কেটে পড়ে রাজিব। আনজুমার মনে ভোর থেকে কু’ডাকছে। ক্ষিপ্রবেগে রাতের সিদ্ধান্তে অটুট থেকে দিনে এর পূর্ণতা মিটিয়ে দিল। তবে এখন যেন তার রুহ কাঁপছে। টাকা শোধ করার কথা বলে রাজিব যে গেল প্রায় ত্রিশ-চল্লিশ মিনিট হয়ে গেছে। বুকের ধুকপুকানি ক্রমাগত বাড়ছে। সিদ্ধান্ত কি তবে ভুল প্রমাণিত হতে চলেছে !
কপালে ঘামের ছড়াছড়ি। রিসেপশনের দুপাশে পায়চারী করছে এবং আড়চোখে বাহিরে দৃষ্টিপাত রাখছে। ফোন বের করে রাজিবের নাম্বারে কল দেয়। এ কি কল বন্ধ বলছে কেনো!
সে ভুল সিদ্ধান্ত নিয়ে ছিল রাতে। ক্রোধের বশীভূতী হয়ে ভুয়া,বানোয়াট ব্যক্তিকে সব প্রডাক্টস দিয়ে ভয়ে অস্থির হচ্ছে। এখন তবে প্রডাক্টসের শোধ না পেলে কোম্পানি লস খেয়ে যাবে! এতে না জানে আরভীক কেমনে ভড়কে উঠে তার উপর। আনজুমার ভেবেই আতঙ্কে নুয়ে নুয়ে মরছে। সেল রিসেপশন আজকের জন্য বন্ধ করে দেয়। বাসায় চলে এলো। বারংবার ফোন দিচ্ছে রাজিবের দেওয়া নাম্বারে। চোখ বেয়ে ভুলের অশ্রুসিক্ত হচ্ছে তার। আত্মসম্মানের লোভ জাগলেও আরভীক এর নিষেধাজ্ঞায় ত্রুটি ছিল না। তা এখন বুঝতে পারছে। ভাগ্যের জোড়ে চাকরী পেল! সেই চাকরী হাতছাড়া হবে। অন্তর বেয়ে শীতল স্রোত বইছে তার। বিপদের মুখোমুখি হতে সময় বেশিক্ষণ নেই। দুদিন যাবত অফিসে আরভীক ছিল না। বাহিরের কাজে ব্যস্ত ছিল। তবে অঞ্জয় খেয়াল রেখেছে। ভুল হলে ধরিয়ে দিয়েছে। একদম বোনের মত আগলে রেখেছে। গতকাল তার উচিৎ ছিল ভাইয়ের সঙ্গে একবার পরামর্শ করা। না, সে তার জেদে এঁটে ছিল!
মনের তীব্র আশঙ্কায় ফোন বেজে উঠে তার। ফোনের দিকে তাকিয়ে ঠোঁট কেঁপে উঠে আনজুমার। স্ক্রিনে জ্বলজ্বল করছে ‘আরভীক’ লিখা নামটি। ঢোক গিলে ফোন কানে ধরে।
অফিসের মধ্যে চেয়ারে কপালের উপর হাত রেখে বসে আছে। সন্ধিবিচ্ছেদের সংখ্যা রেখা মিলাচ্ছে যেন। শান্ত,নির্মল গলায় জিজ্ঞেস করে।

‘কোথায় তুমি!’

‘বা বাসায়।’

‘তোঁতলে কথা বলছো কেন!’

‘ক কই এ এমনি গ গলা শু শুকিয়ে আছে।’

‘পানি খাও।’

‘জ্বি!’

‘বলছি পানি খেতে!’

আরভীক এর কণ্ঠ ঝাঁঝালো শুনাচ্ছে। ধুড়ুধুড়ু বুকের যন্ত্রণা বাড়ছে আনজুমার। ঢোক গিলে পানিভর্তি গ্লাস মুখে পুরে নেই। দম আঁটকে এক শ্বাসে পানি খেয়ে নেয়। জোরালো শ্বাস বেরুচ্ছে তার ফুসফুসের থেকে। যেন রক্তপ্রবাহের মাত্রা ছাড়িয়ে গেছে। কানে ফোন ধরে বলে,

‘খে খেয়েছি।’

‘আমার নিষেধ শুনোনি কেনো!’

নিশ্চুপ রইল আনজুমা। আরভীক সাড়া না পেয়ে চেঁচিয়ে একই কথা আবার জিজ্ঞেস করে। আনজুমার কান্না পাচ্ছে। ঝড়ের মুখোমুখি হয়েছে তাই বলে মোকাবেলা করার শক্তি নেই তার এমনটা নয়। মানুষটা প্রায় সময় রসিকতার আচরণ করেছে তার সঙ্গে। ফলে সুপ্ত এক আনন্দ পেতো তার মন। রসিক মানুষটি যদি হিংস্রের রুপ নেয় তবে ভয়, শ্রদ্ধাবোধ কমে আসে। তবু কোথাও যেন সে অনুভব করে এই ব্যক্তির প্রতি হওয়া তার মনের গহীনে আনচান করা বেহাল দশা। আশফি অবুঝ চাহনী নিয়ে দেখছে। সে তার ফোন নিয়ে রুমের ভেতর যায়। ‘আরভীক আব্বু’ লিখা মেসেজে ভয়েস রের্কড পাঠায়।

‘আব্বু আম্মু আত বেতি কাঁদছে।’

রেকর্ড পাঠিয়ে রুম থেকে বেরিয়ে দেখে তার আম্মু মেঝেতে বসে কাঁদছে। দুহাত মুখে চুপে আর্তনাদ করছে। দুরন্ত মনে ছোট পায়ে হেঁটে পায়ের কোল ঘেঁষে বসে বলে,

‘মাম্মা কাঁদে না। প্লিজ!’

ছেলেকে বুকে পেয়ে বিতৃষ্ণা মিটে গেল। ছেলে আছে তার আর কিছুই চাই না! একজীবনে স্বামীকে হারিয়ে যে নিসঙ্গতায় ভোগছে। তার জায়গায় উপরন্তু অন্যকারো অবস্থান নেই। আশফির গাল ধরে বলে,

‘আজ আমরা নতুন বাসায় যাব কেমন!’

মায়ের কথা শুনে আশফি বুঝেনি কিছু। শুধু মাথা নেড়ে সায় দিয়েছে। আনজুমা চোখ মুছে ছেলেকে সোফায় বসিয়ে দিল। রুমে গিয়ে আলমারি খুলে জমানো টাকার ব্যাংক দেখে। প্রায় একলাখ টাকা জমেছে। এ টাকা দিয়ে নতুন চাকরী ও বাসা এবং সরঞ্জাম অনায়াসে পেয়ে যাবে। সব গুছাতে আরম্ভ করে। এতটা অপমান সহনশীল নয়। সে বুঝেছে ভুল হয়েছে তার। তার মানে এই নয় আরভীক যা বলবে তাই হবে। ভুলের প্রায়শ্চিত্ত ধীরসুস্থে বুঝিয়েও বলা যেতো। না তখন কলে কিভাবে রুড বিহেভ করে গেল সে। আল্লাহ চাইলে সে পুনঃচাকরীর সন্ধান পেয়ে যাবে।

কলের মধ্যে….

আরভীক চেঁচিয়ে বলে,

‘তোমাকে বারণ করার সত্ত্বেও কেনো দিয়েছো শ্রেয়াকে প্রডাক্টস! আর ইউ ফরগেট! ইউ আর এমপ্লয়। আমি তোমাকে বসিয়ে কোম্পানির লস খাওয়াতে রাখিনী। যোগ্যতা আছে দেখে রেখে ছিলাম। এখন তো মনে হচ্ছে তুমি একটা নির্বোধ,মূর্খ মেয়ে। না শব্দটার অর্থ বুঝো না! তখন রেগে বলেছি কি সেটা তোমার ইগো হার্ট করেছে। অথচ আমি এতবছর কোম্পানি চালিয়ে আসছি। তোমার সঙ্গে মিষ্টি মিষ্টি কথা বলেছি কি! তার মানে এই না যে তুমি আমার কোম্পানি খেয়ে দেবে। এর ফল জানো কি হবে! যার কাছে তুমি এত এত মাল বিক্রি করেছো। সেগুলো দিয়ে তোমার নামে দুনার্ম রটাবে। তোমার নামে পুলিশের কাছে কমপ্লেইন দেবে।’

আনজুমা মুহুর্তেই ফুঁপিয়ে কেঁদে দিল। এতটাও অবুঝের মত কাজ করেছে যে বলার মুখ নেই তার। তার কান্না শুনে আরভীক এর হৃদয় পুড়ে ছারখাড়। মেয়েটার কান্না অসহনীয়। দৃঢ় শ্বাস নিয়ে তর্জনী আঙুল দিয়ে কপাল চুলকাতে থেকে বলে,

‘প্রডাক্টস কত দিয়েছো!’

‘আশি পার্সেন্ট!’

মনে মনে আরভীক ‘ড্যাম! মিস আবান এটা তুমি কি করেছো উফ!’ মনের মধ্যে বুদ্ধি বুনতে লাগে। মুখে আনজুমাকে রুক্ষ গলায় শুধায়।

‘পরের বার থেকে মনে রেখো তুমি এমপ্লয় আমার কথার উপর চলবে। একটুও এপার ওপার করলে সোজা রেজিগনেশন লেটার ধরিয়ে দেব।’

‘আমি আপনার কথায় হার্ট হয়ে এমনটা করেছি।’

চমকে গেল আরভীক। মনের কোথাও আনজুমার বলা কথাটি তীব্রতর হাতুড়ি পিটাচ্ছে। যেন এ কথাটার দ্বারা সে তার আপন কেউ বোঝায়। মুচকি হেসে প্রশ্ন করে।

‘কেনো আমি এমন কে যার কথায় তুমি হার্ট হয়েছো!’

প্রশ্নটি দ্বিধাবিভাজনে ফেলে দেয় আনজুমাকে। মনস্থীর হয়ে গেল প্রশ্নটির মধ্যে। স্বামী ছাড়া হলেও এ ব্যক্তির মধ্যে স্বামীর অস্তিত্ব অনুভব করে। অথচ চেহারা,চালচলনে পরিপূর্ণ অমিল। অস্তিত্ব থাকলেও বিরহের চোট বড্ড পুড়ায়, না থাকলেও পুড়ায়। আমতা আমতা করে বলে,

‘আইম লিভিং।’

বলেই কল কেটে দিল আনজুমা।

৩০.
‘বুঝলি অঞ্জয় এবার তো বিয়ের শেনাই বাজাইতে হবে।’

অঞ্জয় ভ্রু কুঁচকে তার বসের দিকে তাকায়। কার বিয়ের শেনাই বাজানোর কথা বলছে বস! তার মাথাটা কখন না জানে ব্লাস্ট হয়। ধাঁধার মত তার বস যেকোনো কথা বলে অনড় হয়ে গেলে, সেও শুনার অতীব আকাঙ্ক্ষায় বসে থাকে। অথচ প্রত্যত্তর পায় না। বরং জবাবের বদলে সরাসরি এর দৃশ্য দেখে ফেলে।
আরভীক দাঁড়িয়ে সিটের থেকে তার কোট পরে আয়নার সামনে স্টাইল করতে থাকে। চুলগুলো একসাইডে করে স্পাইকিং করে। মনে মনে ছুঁচোমি বুদ্ধি এঁটে বাঁকা হেসে আওড়ায়।

‘ড্যাড তোমার চুজ করা মেয়ে গেল মাইঙ্কার চিপায় আর আমি গেলাম বউবাচ্চা আনতে।’

চলবে….

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here