#প্রেমমানিশা(০৬)
‘ একি এসব কি ? এই জামা কাপড় তোরা কোথায় পেলি ? ‘
বিল্টু,ময়না ওদের গাঁয়ে নতুন জামা কাপড় দেখে অতসী যেন আকাশ থেকে পড়লো। ও কপালে হাত দিয়ে কথাটা বললো কারণ ওর জানা মতে এখানে আশেপাশে এমন কেউ নেই যারা এই বাচ্চাদের জিনিস দিয়ে সাহায্য করবে। করার হলে এতদিনের অপেক্ষা করতো না, আরও অনেক আগেই করতো।
‘ দিদিভাই আজ না অনেক ভালো দেখতে একটা ভাইয়া এসেছিল, সেই তো এসে এগুলো দিয়ে গেলো আমাদের আর তোমার জন্যও একটা চিরকুট দিয়েছিল… চিরকুটটা কার হাতে দিয়েছিলাম যেন ? ‘ উত্তরের সন্ধানে মাথায় হাত দিয়ে মনে করার চেষ্টা করলো সন্ধি।
‘ কে এসেছিল ? আর তোরাও বা যার তার হাত থেকে জিনিস কেন নিলি ? তোদের না আমি আগেই বলেছি যে তোরা কারোর কাছ থেকে কিছু নিবি না ? ‘ অতসী চোখ পাকিয়ে শাসনের সুরে বলল ।
‘ দিদিভাই আমরা প্রথমে নিতে চাইনি কিন্তু ওই ভাইয়াটাই আমাদের হাতে এগুলো ধরিয়ে দিল আর এই যে এই চিরকুট দিয়ে বললো এই চিরকুট দেখার পর তোমাদের দিদিভাই আর রাগ করবে না…… ‘ বলে বিল্টু ওর পকেট থেকে একটা কালো রঙের কাগজ বের করে সেটা অতসীর হাতে দিল ।
বিল্টুর হাত থেকে কালো রঙের কাগজটা নিয়ে তার দিকে অনিমেষ পানে চেয়ে রইলো অতসী। অতসী ভেবে পেলো না এই কালো রঙের কাগজে কি লেখা থাকতে পারে। অতসী শত ভেবেও যখন ঠাওর করতে পারলনা তখন বাধ্য হয়ে কাগজটা খুলে পড়তে শুরু করলো ।
‘ টুকরো টুকরো ভালোবাসায় শুধু তুমি কেন অধিকার দেখাবে ? এই ভালোবাসায় আমারও অধিকার আছে তাই তোমার হয়ে অন্ধকারে কিছু আলো নাহয় আমিও ছড়ালাম। দুজনে মিলে নাহয় এই বাচ্চাদের মুখে আলো ফুটাবো। তুমি সামনে থেকে আর আমি আড়াল থেকে…… ‘ কালো রঙের কাগজে এক রাশ শুভ্রতা ছড়িয়ে শুভ্র রঙে রাঙিয়ে লিখা কথাগুলো।
চিরকুটটা পড়ে হতভম্ব হয়ে গেলো অতসী। চিরকুটের আগাগোড়া কিছু না বুঝলেও এটা ঠিকই বুঝলো যে ওর উপর কেউ নজর রাখছে আর সেই মানুষটা কে সেটা খুঁজে বের করতে হবে অতসীকে। কিন্তু মানুষটাকে খুঁজে বের করবে কি করে ? অতসীর ভাবনায় ছেদ পড়ল যখন ফোন বেজে উঠলো। চিরকুটটা পকেটে রেখে ফোন ধরলো অতসী।
‘ কিরে আসবি তো নাকি আজ ? ‘ ওপাশ থেকে অবনি বলল।
‘ হ্যাঁ তুই থাক আমি আসছি । আর আমি কিন্তু এসে গল্প শুনবো…… ‘ অতসী হাসতে হাসতে বললো ।
‘ গল্প……কিসের গল্প ? ‘ অবনি অবাক হয়ে বললো ।
‘ তোকে দেখতে আসার গল্প…… কাছে আসার গল্প…… ‘ অতসী দুষ্টু হাসি হেসে বললো।
‘ তুই কি ফোন রাখবি ? এসব কি অ’শ্লী’ল কথাবার্তা বলছিস ? তোর কি মুখে কোনোই লাগাম নেই ? তুই আজকাল বড্ড অভদ্র হয়ে গেছিস অতস…… ‘ বলে কপট রাগ দেখিয়ে রাগে ফুঁসতে ফুঁসতে অবনি ফোন রাখলো অন্যদিকে হাসিতে গড়াগড়ি দিতে দিতে বাচ্চাদের বিদায় জানিয়ে অতসী ভার্সিটির উদ্দেশ্যে রওয়ানা দিলো।
–—
ভার্সিটির ক্যান্টিনের চেয়ারে বসে শান্ত ভঙ্গিতে আচার খেতে ব্যস্ত অতসী। তার এই শান্ত ভঙ্গিমা অবনিকে অতিষ্ট করে তুলছে। অবনি নীরবে ছটফট করতে করতে ক্যান্টিনের এক মাথা থেকে আরেক মাথায় পায়চারি করছে। চিন্তা আর উত্তেজনা তার আকাশ সমান।
অবনির চিন্তার বিষয় হলো কাল তাকে পাত্রপক্ষ দেখতে এসেছিল। পাত্রের নাম জহির আর সে মেরিন ইঞ্জিনিয়ার। পাত্রকে দেখে প্রথম দেখায়ই অবনি তার সুন্দর ব্যক্তিত্বের প্রেমে পড়ে গেছে। জহিরের সুন্দর, মৃদু গলায় কথা বলা, কিছু হলেই অবাক চাহনী দিয়ে তাকানো সবই তাকে জহিরের প্রতি আসক্ত করেছে।
তবে পাত্রকে এক দেখায় অবনির পছন্দ হলেও সে লোকলজ্জার ভয়ে এই কথা কাউকে বলতে পারছে না, এমনকি তার বান্ধবী অতসীকেও না। তবে ইতিমধ্যে অবনির ভাব ভঙ্গিমা দেখে অতসী ব্যাপারটা খানিকটা আন্দাজ করতে পারলেও অবনিকে প্রশ্ন করে বিব্রত করেনি পাছে বান্ধবী অসস্তির মুখে পড়ে।
অবনির জহিরকে পছন্দ হলেও জহিরেরও যে অবনিকে পছন্দ হয়েছে সেরকম কোনো ভাব কাল জহিরের আচরণে দেখেনি অবনি। উল্টো জহিরের পরিবার বলেছে পাত্রী পছন্দ হয়েছে নাকি হয়নি সেটা আজ জানাবে। এই তো এখনই জানানোর কথা,সকাল দশটায়। মা ফোন করলো বলে।
অবনি প্রকাশ করতে পারছে না কিন্তু ভয়ে তার হাত পা ঠান্ডা হয়ে যাচ্ছে। বারবার মনে হচ্ছে তার মন পছন্দের পাখি এখনই খাঁচা ছেড়ে পালালো বলে। উপায় না পেয়ে নিজেকে শান্ত করতে মতি মিয়াকে কফি আনতে বলে অতসীর মুখোমুখি বসলো।
মতি মিয়া কফি দিয়ে যেতেই অবনি কাপে চুমুক দিয়ে নিরবতা ভেঙে কিছু বলার উদ্দেশ্যে উদ্যত হতেই অবনিকে বিরক্ত করে অবনির ফোন বেজে উঠলো। হাত থেকে কফির কফি কাপটা নামিয়ে বিরক্তিকর ‘চ’ শব্দ করে ফোনটা রিসিভ করে বললো ‘ হ্যাঁ মা বলো……টেলিফোন কেন করলে ? পাত্রপক্ষের আমাকে পছন্দ হয়নি এই বলেছে তাইতো ? এটা তো অস্বাভাবিক কিছু না মা……এর আগেও অনেকবার আমার জন্য সম্বন্ধ এসেছে আর সেগুলো সবগুলোই তো কোনো না কোনো কারণে ভেঙে গেছে তাই এবারও ভাঙলে আমি অবাক হবো না। ‘
অতসী মনযোগ দিয়ে অবনির কথা শুনছে। মেয়েটার মুড সুইংস খুব বেশি হয়, মুড অনেক তাড়াতাড়ি বদলায়। জিনিসটা ভালো নয় তবে মেয়েদের তো এরকম হওয়াটাই স্বাভাবিক। এর আগেও একাধিকবার অবনির জন্য সম্বন্ধ এসেছে কিন্তু মেয়ে পছন্দ হওয়ার পর,কথা একটু আগানোর পরই অজানা কারণে পাত্রপক্ষ পিছিয়ে পড়ত। জিনিসটা অতসীর কাছে অদ্ভুত লাগলেও অতসী সেটা পাত্তা দেয়নি কারণ সে সময়গুলোতে অবনির কোনো পাত্রকেই পছন্দ হয়নি, শুধু পরিবারের পছন্দে অ্যারেঞ্জ ম্যারেজ করা এই যা।
তবে এবারের ব্যাপারটা আলাদা। অতসী তার বান্ধবীকে দেখে পরিষ্কার বুঝতে পারছে এই পাত্র পক্ষকে তার বান্ধবীর মনে ধরেছে নাহলে একটু আগে এত টেন্সড ছিল এখন আবার এত তাড়াতাড়ি মুড বদলে হতাশ হয়ে পড়ল কি করে ? এর আগে যতবার সম্বন্ধ এসেছে ততবারই অবনি বেশ রিল্যাক্স ছিল যেন বিয়েটা ওর নয় অন্য কারোর। অবনির তার মায়ের সঙ্গে কি কথা হলো সেটা জানা গেলনা তবে কিছুক্ষনের মধ্যেই অবনির চোখ বড় বড় হয়ে গেলো আর ওর হাত গলে ফোনটা ওর কোলে পড়লো। ফোন বেচারা আরেকটুর জন্য মাটিতে পড়ে আছাড় খেয়ে টুকরো টুকরো হওয়া থেকে বেঁচে গেছে।
‘ আন্টি কি বললো ? ‘ অতসীর সন্দিহান দৃষ্টি অবনির দিকে।
‘ মা বললো পাত্রপক্ষ নাকি রাজি হয়ে গেছে আর আজই বিয়ের ডেট ঠিক হয়েছে। আজই নাকি আমায় বিয়ে করে ঘরে তুলবে…… ‘ অবনির কাপা কাপা গলা অতসী স্পষ্ট টের পেলো।
‘ তো এতে এভাবে রিয়েক্ট করার কি আছে ? তোকে ওদের পছন্দ হয়েছে তাই আজই বিয়ে দিয়ে নিয়ে যেতে চাইছে । ‘ অতসী অবাক গলায় বললো কারণ কাহিনী শুনে ওর বান্ধবী যেভাবে রিয়েক্ট করলো ব্যাপারটা সেভাবে রিয়েক্ট করার মতো না।
‘ ওদের না শুধু জহিরের পছন্দ হয়েছে…… ‘
‘ মানে ? ‘ অতসী অবনির কথা শুনে অবাক চোখে তাকিয়ে বললো।
‘ জহিরের মায়ের আমাকে পছন্দ হয়নি। জহিরের বাবা কাল আসেননি। শুধু জহির,জহিরের ছোট বোন আর জহিরের মা এসেছিলো। জহিরের মা আমাকে দেখে বলেন আমার সঙ্গে উনার ছেলের বিয়ে দিবেন না কারণ আমার আগেও অনেকবার বিয়ে হতে হতে ভেঙে গেছে। জহিরের মায়ের কথা শুনে ওর বোন কিছু বলতে না পারলেও জহির স্পষ্ট কথায় জানিয়ে দিয়েছে বিয়ে করলে আমাকেই করবে নয়তো আর কাউকে নয়। ‘
‘ বাহ্ তাহলে তো ভালো কথা। মনে হচ্ছে হবু দুলেভাই তোকে বহুত পছন্দ করে ? ‘ ভ্রূ নাচিয়ে নাচিয়ে দুষ্টু হাসি হেসে বললো অতসী।
‘ ব্যাপারটা আমার কেন জানি ঠিক স্বাভাবিক মনে হচ্ছে না। অতসী তোর কাছে জিনিসটা সহজ হলেও আমার কোথাও না কোথাও খটকা ঠিকই লাগছে। ‘ অবনি মনে মনে কথাগুলা বললো ।
‘ যাক তাহলে তোর বিয়ে ঠিক হওয়ার খুশিতে আজ নাহয় আমিই তোকে ট্রিট দিবো। আজ পুরো ফ্রেন্ড সার্কেলকে আমার তরফ থেকে আড্ডা তে আড্ডা বসানোর ট্রিট। আড্ডার মেইন কিচেন খালি করে দিবো। দরকার পড়ে বাবাকে বলে আমার ক্রেডিট কার্ডে ট্রান্সফার করিয়ে নিবো । ইয়াহু……মেরে ইয়ার কি শাদি হ্যা…. ‘ বলে অতসী মিটমিটিয়ে মুখে হাত দিয়ে হেসে উঠলো।
অতসীর খুশি দেখে অবনি কিছু না বললেও ওর মনে তৈরি হওয়া সন্দেহের দানা মিটে নি। তবে বান্ধবীর খুশিতে বাঁধা দিলো না। অবনিও যোগ দিলো অতসীর খুশিতে।
—-
‘ ডক্টর ও ঠিক হয়ে যাবে তো ? ‘ চিন্তিত মুখে মেয়ের দিকে এক নজর দৃষ্টি বুলিয়ে ডক্টরের উদ্দেশ্যে বললেন মিসেস কায়নাত।
‘ ওর অবস্থার তো উত্তরোত্তর অবনতি ঘটছে। আমার মনে হচ্ছে ও কোনো মেন্টাল ট্রমার মধ্যে দিয়ে যাচ্ছে। এই কয়দিনে কি এমন কিছু ঘটেছে যাতে সানার এই অবস্থা হতে পারে ? ‘ ডক্টর সবেদার বললেন।
‘ না……এই কয়দিনে এমন কিছুই হয়নি যাতে সানাহ্ এরকম অসুস্থ হয়ে পড়বে। তবে ওর বিয়ে ঠিক হয়েছে। ‘
মিসেস কায়নাতের কথা শুনে ডক্টর কেমন যেন চমকে উঠলেন। সন্দিহান দৃষ্টিতে মিসেস কায়নাতের দিকে তাকালেন আর বললেন ‘ আপনারা কি ওর জোর করে বিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করেছেন ? ‘
‘ কি আশ্চর্য্য !! আমি আমার মেয়ের বিয়ে জোর করে কেন দিতে চাইবো ? ‘ মিসেস কায়নাত অবাক হয়ে বললেন ।
‘ তাহলে আপনি বলতে চাইছেন সানাহ্ আপনাদের ঠিক করা পাত্রের সঙ্গে বিয়েতে বসতে রাজি ? ‘ ডক্টর সবেদারের তীক্ষ্ণ দৃষ্টি মিসেস কায়নাতের দিকে।
মিসেস কায়নাত ডক্টর সবেদারের দৃষ্টি দেখে ভরকে গেলেন। পরিস্থিতির গুরুগম্ভীরতা সামলাতে মেয়ের চিন্তায় অস্থির হয়ে ঘরে হাজির হলেন মিস্টার কবির। ঘরে ঢুকেই মিস্টার কবির একবার মেয়ের দিকে চোখ বুলালেন। সানাহ্ অচেতন অবস্থায় শুয়ে আছে বিছানায়, চোঁখের নিচে তার কালি, চুলগুলো বালিশের উপর জড়ো হয়ে আছে মাথায় পানি দেওয়ার কারণে। মেয়ের এই অবস্থা তাকে ভিতর থেকে পোড়াচ্ছে।
সানাহ্কে এই অবস্থায় দেখে মিস্টার কবিরের মনে পড়লো তার ভাইয়া ভাবির কথা। সানাহ্ তাদের অনেক আদরের মেয়ে। সানাহ্কে মিস্টার কবির খুব ভালোবাসেন বলেই ছোটো সানার আবদার রাখতে বিয়ে করেছিলেন সানার খালামণি কায়নাতকে। ভাইয়া আর ভাবি মারা যাওয়ার পর কায়নাত আর কবির মিলে সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন যে সানাহ্কে নিজেদের মেয়ের মত বড় করবেন। আর আজ সেই মেয়েরই এই অবস্থা মিস্টার কবিরের পিতৃত্বকে বেশ কষ্ট দিয়েছে।
‘ ডক্টর কি হয়েছে সানার ? ‘
‘ মনে হচ্ছে সানাহ্ কোনো কারণে ডিপ্রেসড তাই আমার মনে হয় আপনাদের ওকে একটু ওয়েদার চেঞ্জের জন্য নিয়ে যাওয়া উচিত। এতে যদি একটু ইমপ্রুভমেন্ট হয় তাহলে তো ভালই নাহলে ইমিডিয়েট ট্রিটমেন্ট এর জন্য ওকে দেশের বাইরে ট্রান্সফার করতে হবে। এই রোগ আর ফেলে রাখা যাবে না। এত বছর তো চেষ্টা করলাম……মাঝখানে যা উন্নতি হয়েছিল এখন তার দ্বিগুণ অবনতি হলো। ‘
‘ তাহলে কি ওকে আমাদের বান্দরবনের বাড়িতে নিয়ে যাবো ? ‘
‘ সে আপনি ওকে যেখানে ইচ্ছা নিয়ে যান তবে পাহাড়, সমুদ্র এসবের কাছে গেলে মনটা রিফ্রেশ হবে। আর যত তাড়াতাড়ি পারুন ওর ওয়েদার চেঞ্জের ব্যবস্থা করুন। সম্ভব হলে ও সুস্থ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ওর বিয়ের আগে পর্যন্ত ওকে কোথাও একটা পাঠিয়ে দিন। এই লোকালয় থেকে যত দূরে যাবে তত স্ট্রেস কমবে। ‘
‘ তাহলে আমি ওর সুস্থ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ওকে আমাদের বান্দরবনের বাড়িতে নিয়ে যাবো। ‘ কথাটা বলেই মিস্টার কবির নিজেকে এই বুঝ দিলেন যে তার মেয়ে খুব তাড়াতাড়ি সুস্থ হয়ে যাবে।
—-
ক্লাসে প্রণয় হাজির হতেই সকলে উঠে দাড়িয়ে প্রণয়কে কুর্নিশ জানালো। প্রণয় সবাইকে বসতে বলে আড়চোখে একবার সবার পিছনের সারির শেষ মাথায় বসা অতসীর দিকে তাকালো তবে সেটা অতসীর চোখে পড়লো না। অতসীর দিক থেকে চোখ ফিরিয়ে এবার নিজের জায়গায় গিয়ে দাঁড়ালো আর স্টুডেন্টদের উদ্দেশ্যে বলতে শুরু করলো ‘ সো স্টুডেন্টস আজ থেকে আমরা নতুন টপিক পড়বো আর প্রত্যেকটা টপিকের কিছুটা অংশ পড়ার পর আমি যখন কোনো প্রব্লেম আছে কিনা জিজ্ঞেস করবো তখন তোমরা তোমাদের প্রবলেমের কথা আমায় বলে সলভ করে নিতে পারো। তবে আমার ডিসকাশনের মাঝে ইন্টারাপট করা যাবে না……আই ডোন্ট লাইক দেট। সো ইস দেট ক্লিয়ার ? ‘
প্রণয়ের কথা শুনে সকলে হ্যাঁ সূচক মাথা নাড়ল আর সেটা দেখে প্রণয় অতসীর দিকে দৃষ্টি দিল এই ভেবে যে ও যদি কিছু বলে । কিন্তু প্রণয়ের আশা ভঙ্গ করে অতসী কিছুই বললো না। অতসীকে চুপচাপ জানালা দিয়ে বাইরে তাকিয়ে থাকতে দেখে প্রণয়ের চাপা রাগ হলো যা একেবারেই তার অজান্তে তবে সেটা সে বুঝতেই পারল না। কেবল নিজের রাগ চেপে রেখে পিছনের সারিতে বসে থাকা অতসীর দিকে আঙুল দিয়ে ইশারা করে বললো ‘ এই যে মিস…. ‘
প্রণয়ের এহেন কাজে সব স্টুডেন্ট একসঙ্গে পিছন ফিরে অতসীর দিকে তাকালো আর অতসী ভরকে গেল। অতসী যত তাড়াতাড়ি সম্ভব নিজেকে সামলে উঠে দাঁড়িয়ে বললো ‘ স্যার আমাকে বলছেন ? ‘
‘ ইয়েস তোমাকেই বলছি…… কি নাম তোমার ? ‘
‘ সাইয়ারা কবির অতসী…. ‘
‘ তাহলে মিস অতসী তুমি একটু কষ্ট করে তোমার বন্ধু বান্ধবদের ছেড়ে সামনের দিকের সিটে এসে বসো কারণ এভাবে বসলে তো হয়না ম্যাডাম। পড়াশুনা বন্ধু বান্ধবদের নিয়ে হয়না। বন্ধুত্ব ক্লাসের বাইরে রেখে আসাটাই ভালো নাহলে তোমারও ক্ষতি আবার তোমার বন্ধুদেরও ক্ষতি। কী আমি কিছু ভুল বললাম ? ‘
প্রণয়ের কথায় অতসী মাথা নেড়ে না ইশারা করলো কারণ কথা তো প্রণয় কিছু ভুল বলেনি। প্রণয় অতসীর মাথা নাড়া দেখে বলল ‘ তাহলে ম্যাডাম আপনি চলে আসুন সামনে…… আর আজ থেকে আপনি এখানেই বসবেন আমার চোখের সামনে । ‘
প্রণয়ের কথা শুনে অতসী চোখ বড় বড় করে বলল ‘ কি বললেন স্যার ? ‘
‘ বুঝতে পারছেন না ? আমি বলেছি এখন থেকে আপনি আমার চোখের সামনে থাকবেন যাতে আমি আপনার অ্যাকটিভিটি নজরে রাখতে পারি। আর দাড়িয়ে থাকবেন না…… ফাস্ট ফাস্ট তাড়াতাড়ি এসো। ক্লাসের সময় আসছে না বরং যাচ্ছে……ডু ইট ফাস্ট। ‘
অতঃপর অতসী আর উপায় না পেয়ে ওর জায়গা আর ওর বন্ধু বান্ধবদের ছেড়ে মলিন চোখে সামনের দিকে গিয়ে প্রণয়ের সামনাসামনি বসলো। অতসীর ওর জায়গা বসতেই প্রণয় এবার ক্লাসে পড়ানোতে মনযোগ দিল।প্রণয় ওর টপিক ডিসকাশন শেষ করার ফাঁকে ফাঁকে টুকটাক প্রশ্ন করলো যার মোটামুটি সব উত্তরই অতসী দিল। অতসীর এরকম অ্যাক্টিভনেস দেখে প্রণয় মনে মনে খুশি হলেও প্রকাশ করলো না। টপিক ডিসকাশন শেষে শেষবারের মতই জিজ্ঞেস করে সকলের প্রবলেম সলভ করে আড়চোখে অতসীকে দেখে গটগট পায়ে বেরিয়ে গেলো প্রণয় আর সেই দিকে তাঁকিয়ে অতসী মনে মনে দুষ্টু হাসি হেসে বললো ‘ যাও যাও চান্দু যাও….এরপর তোমার সাথে কি হবে সেটা তো একমাত্র আল্লাহই জানেন। ‘
~ চলবে ইনশাআল্লাহ্….
ছবিয়াল: সুনয়না