#ভালোবাসি_আমি_যে_তোমায়
#Sohani_Simu
পর্ব: ১০
খুব সকালে ঘুম ভেঙ্গে গেল।ফোনের স্ক্রিনে তাকিয়ে দেখি ৫:২৫ বাজে।ইচ্ছের দিকে তাকিয়ে দেখি মরার মতো ঘুমোচ্ছে।বেড থেকে উঠে রুমের লাইট অন করলাম, জোড়ে শব্দ করে ওয়াশরুমের দরজা খুললাম যেন ইচ্ছের ঘুম ভেঙ্গে যায়। কিন্তু আমার এমনটা ধারণা করাই ঠিক হয়নি কারন ও তো কুম্ভকর্ণের নানি,যাই হয়ে যাক না কেন ও উঠবেনা। ফ্রেশ হয়ে এসে ফজরের নামাজ পড়ে নিলাম।মনটা অনেক ফ্রেশ লাগছে।রুমের লাইট অফ করে বেলকুনিতে আসলাম।সূর্য-রোদ না থাকলেও সকালের কোমল আলোতে চারপাশটা খুব স্নিগ্ধ দেখাচ্ছে।অ্যালোভেরার পাতার কাটায় ফোঁটা ফোঁটা শিশির জমে আছে, ইচ্ছে করছে ছুইয়ে দিই।একটু এগিয়ে গিয়ে ডান হাতের তর্জনী আঙ্গুল দিয়ে একফোঁটা শিশির ধরলাম।তারপর মুচকি হেসে বললাম,
“শৈবাল দীঘিরে বলে উচ্চ করে শির,
লিখে রেখ এক ফোঁটা দিলেম শিশির।”
“কিরে তোর কাছ থেকে শিশির নিলাম বলে আমাকে আবার খোঁটা দিবিনা তো?”….(অ্যালোভেরা গাছের দিকে তাকিয়ে)
সঙ্গে সঙ্গে গাছ থেকে ২ ফোঁটা শিশির আপনা আপনি ঝরে পড়লো।আমি ধরে নিলাম অ্যালোভেরার গাছ আমাকে বললো,” তুই চাইলে আরও নিতে পারিস আমি এই শিশির গুলোর ভার আর নিতে পারছিনা,উফ্ কি ভারী।”
আমি মুচকি হেসে একটা টিনের কৌটো থেকে এক মুঠো চাল-ডাল নিয়ে বেলকুনির গ্রীলে ঝুলানো ছোট পটে রাখলাম।ছোটবেলা থেকেই পাখিদের অসম্ভব ভালোবাসি।এক কথায় আমি একজন পাখি প্রেমি মানুষ। কিন্তু আমার কোন পোষা পাখি নেই তাই হয়তো কেউ বুঝতে পারেনা পাখিদের প্রতি আমার ভালোবাসা কতটা গভীর।না বুঝলে নাই কিন্তু ভালোবাসা প্রদর্শন করতে গিয়ে আমি কারও স্বাধীনতা হরণ করতে চাইনা তাই কোনো পোষা পাখি রাখিনি। বেলকুনির গ্রীলে ছোট ছোট ২টো পট ঝুলিয়ে রেখেছি, একটাতে চাল-ডাল আর একটাতে পানি দিয়ে রাখি,মাঝে মাঝে পাখিরা এসে সেগুলো খায়। তাতেই আমার আনন্দ।
একটা বেতের চেয়ারে বসে সামনের দিকে তাকালাম।সামনে ভিসি আঙ্কেলের বাসার বেলকুনি।বেলকুনির দেয়ালে অনেক কিছু লিখা আছে,কিছু ড্রইং ও আছে।এখান থেকে কিছু স্পষ্ট কিছু অস্পষ্ট দেখা যাচ্ছে।এখান থেকে একটা লিখায় আমাকে নাড়া দিচ্ছে,ফ্লোর থেকে ৩-৪ হাত উপরে বড় বড় করে খড়িমাটি দিয়ে এবড়ো থেবড়ো করে লিখা আছে “চাঁদ ভাইয়া” তার নিচে একই ভাবে লিখা আছে “আমি”। ব্যাপারটা দেখতে বা শুনতে বেশ অদ্ভূত লাগছে।হয়তো চাঁদ ভাইয়াই লিখেছেন,”আমি চাঁদ ভাইয়া”।হা হা হা…..এই চাঁদ ভাইয়াকে দেখতে খুব ইচ্ছা করছে!!
হটাৎ পেছন থেকে কেউ ঘাড়ে হাত দিল।চমকে পেছনে তাকিয়ে দেখি, ইচ্ছে ঘুম ঘুম চোখে আমার দিকে তাকিয়ে আছে।
আমি: কিরে এত সকালে উঠলি?
ইচ্ছে: হুম, ৯টায় ক্লাস আছে।(বসতে বসতে)
আমি:৯টায় ক্লাস থাকলে তুই ৮টায় উঠিস এখন ৬:৩০ বাজে।
ইচ্ছে: ভুলে গেলি? আজ একটা স্পেশাল দিন, একটু সাজুগুজু করে ভার্সিটি যাব।
আমি: তুই আমাকে ভুলতে দিলি কোথায়?
ইচ্ছে: হি হি…. আই লাবু।
আমি: লাবু টু।
বলেই দুজন হেসে দিলাম।
ভার্সিটির মাঠে আমি আর ইচ্ছে পাশাপাশি হাঁটছি।ইচ্ছে গল্প করছে আর আমি ফোনের স্ক্রিনে তাকিয়ে আছি।ঢাকার বন্ধুরা ইচ্ছের ফোনে বসন্ত বরণ উৎসবের পিক পাঠিয়েছে সেগুলোই দেখছি।হাঠাৎ কারও সাথে ধাক্কা লেগে ফোনটা হাত থেকে পড়ে গেল।একবার ফোনের দিকে তাকিয়ে লোকটার দিকে তাকালাম।
একটা লম্বা ছেলে,উজ্জ্বল শ্যাম বর্ণের,চাকমাদের মতো চোখ কিন্তু নাকটা বোচা নয় খারা,ব্ল্যাক জিন্স,ব্রাউন জ্যাকেট পড়ে, কানে ফোন ধরে রেখে আমার দিকে হা করে তাকিয়ে আছেন।
আমি: এটা কি করলেন,ধুর ফোনটায় ফেটে গেল।( ফোনের দিকে তাকিয়ে)
ছেলেটা বললেন,” সরি সরি”।
আমি: দেখে হাটবেন.. তো।( ভ্রু কুচকে)
আমার কথা শুনে ছেলেটা বললেন,” ক্যাম্পাসে নতুন মনে হচ্ছে?”
ইচ্ছে: জ্বী।
ছেলেটা বললেন,” হুহ্,এজন্য মুখ দিয়ে এত কথা বের হচ্ছে।”
বলেই উনি চলে গেলেন।আমি আর ইচ্ছে একে অপরের দিকে তাকিয়ে আছি।এটা আবার কে?ফোনটা হাতে নিয়ে দেখি লম্বা লম্বি ভাবে মাঝ বরাবর ডিসপ্লে ফেটে গিয়েছে। ওয়ালপেপারে আমার আর ইচ্ছের গলা জরিয়ে ধরে থাকা পিক সেট করা আছে ডিসপ্লে ফেটে যাওয়াই দেখে মনে হচ্ছে আমরা দুজন আলাদা হয়ে গেয়েছি।ইচ্ছে ঢাকাইয়া গালাগালি শুরু করে দিয়েছে।এক মুহূর্তেই ছেলেটাকে শাকচুন্নির জামাই বানিয়ে দিল।
সকাল থেকে মনটা ভালই ছিল হঠাৎ মন খারাপ লাগছে।নির্ভীক ভাইয়াকে মিস করছি।উনার সাথে সময় কাটাতে দারুণ লাগে।উনার সাথে দেখা হলেই একটা গান শুনতে চাইবো।উফ্ আগে যদি জানতাম উনি RUET-এ পড়েন তাহলে ইন্জিনিয়ারং এর জন্য প্রিপারেশন নিতাম।স্বপ্নের RU কে কেমন বিষাক্ত লাগছে।আরও একটা ক্লাস আছে তাও ক্লাস না করেই রিক্সা নিয়ে বাসায় গেলাম।
বিকেলে ছাদে বসে আছি।ভাবছি সারাটা দিন চলে গেল নির্ভীক ভাইয়া না দেখা দিলেন না ফোন দিলেন।অন্য দিন তো কারনে অকারনে দিনের মধ্যে কতবার ফোন দেন।আজ উনাকে মিস করছি অথচ একবারও ফোন দিলেন না,উনার হলোটা কি?…তারপর আনমনেই ভাবলাম আমার আবার কি হলো,নির্ভীক ভাইয়াকে এত মিস করছি কেন?ইচ্ছেকে জিজ্ঞেস করলাম,
আমি: প্রান্ত ভাইয়া ফোন দিয়েছিল?
ইচ্ছে: না, কাল রাতে লাস্ট কথা হয়েছে।(মন খারাপ করে)
আমি: আজ হয়তো উনারা গার্লফ্রেন্ড নিয়ে ব্যস্ত আছেন তাই আমাদের মতো বন্ধুদের ভুলে গিয়েছেন।
আমার কথা শুনে ইচ্ছের মুখটা মলিন হয়ে গেল।আমিও মন খারাপ করে ফোন নিয়ে ব্যস্ত হয়ে গেলাম।ফেসবুকে নিউজ ফিডে ঘুরছি হঠাৎ দেখলাম নির্ভীক ভাইয়ার পোষ্ট।উনি ফেসবুকে আমার ফ্রেন্ড আছেন।উনি সকাল ১১টায় একটা ভিডিও পোষ্ট করেছেন।
ক্যাপশনে লিখেছেন, “#ভালোবাসি আমি যে তোমায়।”
ভিডিও ওপেন করতেই দেখি নির্ভীক ভাইয়া মাঠের মধ্যে একটা চেয়ারে গিটার হাতে বসে আছেন।উনাকে ঘিরে গোল হয়ে ঘাসের উপর অনেক ছেলে-মেয়ে বসে আছে।উনি ব্ল্যাক টি শার্ট, ব্ল্যাক জিন্স পড়ে আছেন।সিল্কি চুলগুলো কপালে এসে পড়ে আছে।ডান হাতে গিটারের তার ছুয়ে দেখছেন,হাতে ব্ল্যাক ওয়াচ।হঠাৎ উনি ক্যামেরার দিকে তাকিয়ে বললেন,
নির্ভীক: প্রান্ত, ক্যামেরা অন্য কাউকে দে,তুই আমার পাশে বস ইয়ার।
উনার কথা শুনে প্রান্ত ভাইয়া বললেন,
প্রান্ত: ঐ সিয়াম ধরতো।
তারপর প্রান্ত ভাইয়া এসে নির্ভীক ভাইয়ার পাশে বসলেন।প্রান্ত ভাইয়াও ফুলব্ল্যাক পড়ে আছেন।আমি ভিডিও পজ করে ইচ্ছেকে ডাকলাম।তারপর দুজন একসাথে দেখতে লাগলাম।
নির্ভীক ভাইয়া বলতে লাগলেন,
” হেই গাইস,আজকের এই ভালোবাসার দিনে সবাইকে অনেক ভালোবাসা……হ্যাপি ভ্যালেন্টাইনস ডে”
উনার কথা শুনে সবাই একসাথে চিৎকার করে বললেন,
“হ্যাপি ভ্যালেন্টাইনস ডে”
নির্ভীক ভাইয়া মুচকি হেসে গিটার বাজানো শুরু করলেন।কিছুক্ষণ পর চোখ বন্ধ করে গাইতে শুরু করলেন,,,,,,,,,
এক মুঠো সুখ বেলাশেষে…
তোমায় নিয়ে কতখানি…
অনুভূতি সব নিরুদ্দেশে…
তুমিও ভাবছ আমায় জানি…
কথা ব্যাকুলতার পিছু টান…
ফেলে আমি তবু হয়নি তো ম্লান
ভালোবাসি আমি শুধু তোমাকে……….
তুমি এমন ঘোর, কাটেনা প্রহর
নিয়ম মানে না হৃদয়….
তুমি আমার ভোর,ঘুম ভাঙ্গানোর
তুমিময় পুরোসময়……..২
অতটা ভাবনা আমায়
রেখেছে বিভোর করে…
যতটা ভাবলে তোমায় শিহরণ
এ মনের ভেতরে……..২
কথা ব্যাকুলতার পিছু টান..
ফেলে আসি তবু হয়নি তো ম্লান..
ভালোবাসি আমি শুধু তোমাকে…………..
তুমি এমন ঘোর, কাটেনা প্রহর
নিয়ম মানে না হৃদয়….
তুমি আমার ভোর,ঘুম ভাঙ্গানোর
তুমিময় পুরো সময়……..২
কিছুটা প্রেমবিলাসী
অভিমানী অবাদ্ধ মনটাকে….
যত চাই বেধে রাখতে…
হঠাৎ নিখোঁজ হয় এক ফাঁকে…………২
কথা ব্যাকুলতার পিছুটান…
ফেলে আসি তবু হয়নি তো ম্লান…..
ভালোবাসি আমি শুধু তোমাকে…………
তুমি এমন ঘোর, কাটেনা প্রহর
নিয়ম মানে না হৃদয়….
তুমি আমার ভোর,ঘুম ভাঙ্গানোর
তুমি ময় পুরোসময়………….২
……………………………
পুরো গান উনি চোখ বন্ধ করে গাইলেন।গান শেষে সবাই হৈ-চৈ শুরু করে দিল।ভিডিও শেষ হলো।
উনার গান শুনে আমার মনটা আরও বেশি খারাপ হয়ে গেল।কোথাও খুব কষ্ট হচ্ছে।চিৎকার করে কাঁদতে ইচ্ছে করছে।চোখ থেকে দুফোটা পানি পড়লো,ইচ্ছে দেখার আগেই মুছে ফেললাম।তারপর একরাশ অভিমান নিয়ে ভাবতে থাকলাম,উনি এতটা ইমোশন নিয়ে কার জন্য গাইলেন?যার জন্যই গাক আমার এত খারাপ লাগছে কেন?নিজেকে শান্ত করার জন্য ভাবলাম,আমার খারাপ লাগতেই পারে কিন্তু উনি এত ইমোশনাল হয়ে কেন গাইবেন?ইশ, গানটা যদি আমার জন্য গাইতেন! ধুর, কি ভাবছি এসব…।আমার ভাবনার মাঝেই ইচ্ছে বললো,
ইচ্ছে: নির্ভীক ভাইয়া ইন্জিনিয়ার না হয়ে রকস্টার হলেই ভালো করতেন।উনার যা গানের গলা….জাস্ট অওসাম।
আমি: উনি যেমনটা আছেন তেমনটাই পারফেক্ট।(আনমনে)
ইচ্ছে: ও পারপেক্ট?…..আচ্ছা…(পিন্চ করে)
আমি: আব, হুম তাছাড়া আরকি?…তুই তো বলিস উনার মতো কেউ দুটো নেই।
ইচ্ছে: হা হা হা। তবে যাই বলিস তোর সাথে নির্ভীক ভাইয়াকে মানাবে ভাল, তুই ও ভাল গাইতে পারিস।ভাইয়ার সাথে দেখা হলে তোর গানের ব্যাপারটা নিয়ে ডিসকাস করবো।
আমি: এই একদম বলবিনা।(রেগে)
ইচ্ছে: কেন বলবো না?…প্রতিভা লুকিয়ে রাখতে নেই।
আমি: সবার সামনে গাইতে আামার লজ্জা করে আর তাছাড়াও নির্ভীক ভাইয়ার মতো আমার গানের গলা অত ভাল না যে সবাইকে বলে বেড়াতে হবে আমি গান যানি।
ইচ্ছে: আরে তোকে তো আমি কণ্ঠ শিল্পি হতে বলিনি।মাঝে মাঝে আমাদেরকে গান শোনাবি তাহলেই হবে।দোয়া দিলাম যা, তুই আর নির্ভীক ভাইয়া সেরা জুটি হবি।(মাথায় হাত দিয়ে)
আমি:হুহ্, যত্তসব আজাইরা দোয়া।(ইচ্ছের হাত মাথা থেকে সরিয়ে)
সন্ধ্যা হয়ে এসেছে দেখে ছাদ থেকে নিচে নেমে এলাম
অন্যদিকে,
সন্ধ্যার পর ব্রিজের উপর বসে আছে নির্ভীক আর প্রান্ত।
প্রান্ত : ইয়ার দিনটা শেষ হয়ে গেল।
নির্ভীক: হ্যাঁ, তো?
প্রান্ত: এখনও সময় আছে,ওকে তোর মনের কথা জানিয়ে দে।আফটার অল আজকে একটা স্পেশাল দিন।
নির্ভীক: আরে ভাই জানাবো তো।এত তাড়া কিসের।ওর সাথে আমার প্রত্যেকটা দিনই স্পেশাল।
প্রান্ত : না জানালে বুঝবে কি করে তুই ওকে ভালোবাসিস?
নির্ভীক: ভালোবাসার কথা বললেই তো আর ভালোবাসা হয়ে যায় না।সময় হলে ওকে জানিয়ে দিব।
প্রান্ত: দেখিস বেশি দেরি করে ফেলিসনা।ওর লাইফে অন্য কেউ এন্ট্রি নিলেও নিতে পারে।
নির্ভীক: আমি ওকে অন্য কারও হতে দিব না।ওর মনে ভালোবাসা নামক কোন অনুভূতি থাকলে সেটা শুধু আমার জন্য থাকবে।
প্রান্ত: যদি এমন টা না হয়? ও যদি অন্য কাউকে ভালোবাসে?
নির্ভীক: আমি ওকে আমাকে ভালোবাসার সুযোগ দিচ্ছি।এর মধ্যে আমাকে ভালোবাসলে ঠিক আছে না হলে……..ইউ নো না,হু আম আই?(বাঁকা হেসে)
প্রান্ত: হুম বুঝেছি।(ব্রাশ মার্কা হাসি দিয়ে)
চলবে?????????????
(বেশি করে কমেন্ট করুন। আপনাদের গঠনমুলক কমেন্টের উপর নির্ভর করবে পরবর্তী পর্ব আসবে কি,,,,,,না।)