#ভালোবাসি_আমি_যে_তোমায়
#Sohani_Simu
পর্ব: ৮
হাত দুটো মনে হয় ঝলসে গেল।আমি ব্যাথায় কান্না করে দিয়েছি। ইচ্ছে আমার হাত পাশে থাকা পানির জগে ডুবিয়ে দিয়েছে।এমন সময় আমার ফোন বেজে উঠলো।ইচ্ছে আমার ব্যাগ থেকে ফোন বের করে দেখে নির্ভীক ভাইয়া।আমি তো ভুলেই গিয়েছিলাম,ক্লাস শেষে ভাইয়া ফোন দিতে বলেছিলেন আর টোয়ার সাথে কথা বলতে না করেছিলেন।ইচ্ছে কল রিসিভ করলো,
নির্ভীক: হোয়ার আর ইউ, অন্ত?এখনও ক্লাস শেষ হয়নি?
ইচ্ছে: ভাইয়া আমি ইচ্ছে আমরা ক্যান্টিনে আছি টোয়া আপু অন্তর হাতে গরম কফি ঢেলেছে।(একদমে)
নির্ভীক: হোয়াট??আমি আসছি।
বলেই কল কাটলেন।এইদিকে,
ইচ্ছে:এই মেয়েতো আচ্ছা পাগল।এমনটা কেউ করে?(অনেক রেগে)
আমি: আহ্ ব্যাথা করছে,জ্বলছে।(কান্না করতে করতে)
ইচ্ছে: ইশ কি অবস্থা হয়েছে (কাঁদো মুখে)।চল ডক্টরের কাছে।
আমি জগ থেকে হাত তুলে দেখি লাল হয়ে গিয়েছে আর ফুলেও উঠেছে।হঠাৎ ঝরের গতিতে দৌঁড়ে কেউ আমার সামনে এসে দাঁড়ালো।চোখ তুলে তাকিয়ে দেখি নির্ভীক ভাইয়া।উনাকে দেখে মনে হচ্ছে উনি খুব ভয় পেয়েছেন।আমার হাত দুটি টেনে নিয়ে দেখলেন তারপর পাশে থাকা চেয়ারে জোরে একটা লাথি দিলেন।চেয়ার কিছুদূর যেয়ে ছিটকে পড়ে গেল। আমি চোখমুখ খিচে বন্ধ করে দিয়েছি।উনি দুহাত আমার গালে রেখে বললেন,
নির্ভীক: খুব ব্যাথা করছে?প্লিজ ডোন্ট ক্রাই,সব ঠিক হয়ে যাবে।
আমি কি কাঁদবো উনিই তো কেঁদে ভাসিয়ে দিচ্ছেন।উনার চোখ থেকে টপ টপ করে পানি পরছে।আজব ছেলে কাঁদার কি আছে?
আমি: ভাইয়া আমার কিছু হয়নি,একটু ব্যাথা করছে আপনি চিন্তা করবেন না।
উনি আমার কোন কথা শুনলেন না।আমাকে চেয়ারে বসিয়ে দিলেন।উনি কাউকে ফোন দিয়ে মেডিসিন আনতে বললেন।তারপর ক্যান্টিনের মামাকে বললেন,
নির্ভীক: হেই মামা,আমার এক মগ ফুটন্ত গরম পানি চাই,রাইট নাউ।(রেগে)
মামা: দিতাছি।
ইচ্ছে: ভাইয়া গরম পানি কি করবেন?
উনি ইচ্ছের কথার কোন জবাব দিলেন না।চেয়ার টেনে আমার পাশে বসলেন তারপর টেবিলের উপর একহাত রেখে হাত মুঠো করে অনবরত ধীরে ধীরে টেবিলে বারি দিতে থাকলেন।তারপর কাউকে ফোন দিলেন,
নির্ভীক: টোয়া, ক্যান্টিনে আয়।
টোয়া:…………..
নির্ভীক: তুই এক্ষণি ক্যান্টিনে আসবি।(অনেক রেগে)
টোয়া:……………..
নির্ভীক: আই সেইড, এক্ষণি।(রেগে)
ফোন রেখে আমার দিকে তাকালেন।উনার চোখ লাল হয়ে আছে।আমি একটু হাসি মুখ করে উনাকে বললাম,
আমি: ভাইয়া আমি ঠিক আছি,বাসায় যাব।
উনি কিছু বললেন না।
ইচ্ছে: হুম বাসায় চল হাতে মলম লাগিয়ে দিব।
নির্ভীক: চুপ করে এখানে বসে থাকো।
কিছুক্ষন পরই টোয়া আপু আসলেন।উনাকে দেখেই বোঝা যাচ্ছে খুব ভয়ে আছেন।উনি ধীরে ধীরে হাঁটতে হাঁটতে নির্ভীক ভাইয়ার সামনে এসে দাঁড়ালেন।তারপর বললেন,
টোয়া: ভাইয়া আই আম সরি।আমি বুঝতে পারিনি এমন হবে।(ভয়ে উনার কথা আটকে যাচ্ছে)
আমি আর ইচ্ছে একে অপরের দিকে তাকাচ্ছি যার মানে হল টোয়া আপু নির্ভীক ভাইয়াকে ভাইয়া বলছেন কেন?..নির্ভীক বলেই তো ডাকতেন।
নির্ভীক: হেই মামা,পানি রেডি?
মামা: হ
তারপর একটা ছোট ছেলে একমগ ধোঁয়া উঠা পানি এনে নির্ভীক ভাইয়াকে দিলেন।
নির্ভীক: মগে হাত ডোবা।(টোয়া আপুর দিকে তাকিয়ে)
উনার কথা শুনে আমি বসা থেকে দাঁড়িয়ে গেলাম।কিছু বলার জন্য মুখ খুলেছি কিন্তু উনি কিছু বলতে দিলেননা,
নির্ভীক: ডোন্ট সে আ ওয়ার্ড (আমার দিকে তাকিয়ে)।
আমি: আমার কথা…
নির্ভীক: আই সেইড ডোন্ট।(ধমক দিয়ে)
উনার ধমক খেয়ে আমি কেঁপে উঠি।
নির্ভীক: নে হাত ডোবা,ফাস্ট আমার কাছে বেশি টাইম নেই।(টোয়া আপুর দিকে তাকিয়ে)
টোয়া: ভাইয়া……এ্যা….এ্যা….(কান্না করে দিয়েছেন)
নির্ভীক: এখন কাঁদছিস কেন? আগে মনে ছিল না তোর? তোর সাহস কি করে হয় আমার জিনিসে হাত দেওয়ার?কাজটা করার আগে তোর আমার কথা একবারও মনে পড়লো না?তুই কি করে পারলি?হাউ?..নো নো তোকে শাস্তি পেতেই হবে।(রেগে)
টোয়া: আমি আর কখনও এমনটা করবো না…এ্যা…এ্যা(আরও জোরে কান্না করতে করতে)
নির্ভীক ভাইয়াকে দেখলাম উনি রেগে আগুন হয়ে আছেন।মগ নিয়ে টোয়া আপুর দিকে এগুচ্ছেন।কিন্তু আমি উনার হাত থেকে মগটা কেড়ে নিলাম।মগ নিতে গিয়ে গরন পানি আবার আমার হাতে ছিটকে পড়লো।আমি ধীরে আহ্ করলাম।নির্ভীক ভাইয়া এইবার নিজের চুল টেনে ধরলেন।উনাকে দেখেই টোয়া আপু দৌঁড়।নির্ভীক ভাইয়া কিছুদূর পর্যন্ত টোয়া আপুর পেছন পেছন দৌঁড়ে গেলেন কিন্তু আপুকে ধরতে না পেরে আবার ফিরে আসলেন।এসে আমার পাশে থাকা চেয়ার তুলে টেবিলে আঁছাড় দিলেন কয়েকবার। অবশেষে উনি চেয়ারটা ভেঙ্গে শান্ত হলেন।
একটা ছেলে এসে উনার হাতে একটা প্যাকেট ধরিয়ে দিলেন।উনি একটানে প্যাকেট ছিড়ে ট্যাবলেট আর মলম বের করে আমাকে ট্যাবলেট খাইয়ে দিয়ে হাতে মলম লাগিয়ে দিচ্ছেন।আমি আর ইচ্ছে নির্বাক হয়ে বসে আছি।
এই কয়দিনে উনাকে খুব শান্ত শিষ্ট আর ভদ্র ছেলে বলেই মনে হয়েছে।কিন্তু আজ উনার একি রুপ দেখলাম।উনি এত রাগী কি করে হতে পারেন।উনার রাগ দেখে আমি এই ফেব্রুয়ারি মাসেও ঘামছি।
রাগ জিনিসটা আমার একটুও ভাল লাগেনা, খুব ভয় করে। রাগের মধ্যে কেমন অশান্ত আর হিংস্র ভাব ফুটে উঠে।আমি আবার খুবই শান্তিপ্রিয় মানুষ।তাই এসবের আশেপাশেও আমি থাকিনা।আমার উপর কেউ রেগে গেলে আমি শেষ।
রাতে,,,,
শুয়ে আছি আর ভাবছি।বাসায় আসার সময় উনি একটা কথাও বললেন না,উনাকে দেখে মনে হচ্ছিলো উনি কোন কাজের চাপের মধ্যে আছেন।ফোনে কথা হল তারপর উনাকে ঠিকটাক লাগছে। টোয়া আপুর জন্য টেনশন হচ্ছে।এই টোয়া আপুর ব্যাপারে খোঁজ নিতে হবে।নির্ভীক ভাইয়ার সাথে উনার কি সম্পর্ক? আর আমি কষ্ট পেয়েছি দেখে ভাইয়া এমন কেন করলেন?উনি কাঁদছিলেন কেন?আমার এসব ভাবনার মাঝেই নির্ভীক ভাইয়ার কল আসলো,
নির্ভীক: এখন কেমন লাগছে?ব্যাথা কমেছে?
আমি: ৩০মিনিট আগেই শুনলেন। ৩০ মিনিটে ব্যাথা কমে?(অনেকটা বিরক্ত হয়ে)
নির্ভীক: আচ্ছ ঘুমাও।আর মলম লাগিয়ে নাউ আরেকবার।
আমি: হুম একটু আগেই লাগিয়েছি।
নির্ভীক: ওকে(কিছুক্ষণ চুপ থেকে)।
আমি:আচ্ছা ভাইয়া…
নির্ভীক: কিছু বলবে?
আমি: আসলে ভাইয়া,আমি কষ্ট পেয়েছি দেখে আপনি আমার জন্য কষ্ট পাচ্ছিলেন…
নির্ভীক: কেন? তাইতো?(আমাকে পুরো কথা বলতে না দিয়ে)
আমি: হুম।
নির্ভীক: কারন তুমি হলে আমার সবচেয়ে ছোট্ট, মিষ্টি বন্ধু।আমার ছোট্ট বন্ধু কষ্ট পাবে আর আমি তার কষ্ট দেখে চুপ থাকবো?
উনার উত্তরে আমি মনে মনে লজ্জিত। কারন আমি ভেবেছিলাম ব্যাপারটা হয়তো প্রেম ভালোবাসা টাইপ কিছু হবে কিন্তু উনি আমাকে বন্ধু ভেবেছেন।যাক উনার কথা শুনে আমার খুব ভাল লেগেছে।
নির্ভীক: কি হল চুপ আছো কেন?
আমি: হুম,উই আর ফ্রেন্ডস।
নির্ভীক: ইয়াহ।ফ্রেন্ডস বাট মোর দ্যান ফ্রেন্ডস।ওকে ঘুমিয়ে পর।গুড নাইট।
আমি : গুড নাইট।
ফোন রেখে ইচ্ছেকে ডাকছি এই বেটি অনেকক্ষন ধরে বেলকুনিতে কারও সাথে ফোনে কথা বলছে।কি এমন সিক্রেট কথা যে বেলকুনিতে যেয়ে বলতে হবে… আমাদের মধ্যে তো কোন প্রাইভেসি নেই।আমার ভাবনার মাঝেই ইচ্ছে আসলো । দুজন এক সাথে ঘুমিয়ে পরলাম।
অন্যদিকে,
প্রান্ত : তুই কিরে? এত কিছু হয়ে গেল আর আমাকে জানালি না?..আমাকে কিনা ইচ্ছের থেকে সব জানতে হলো…..(অভিমানি স্বরে)
নির্ভীক: তোকে জানালে তুই আমাকে আটকে দিতি তাই জানাইনি (ডোন্ট কেয়ার ভাব নিয়ে)।
প্রান্ত: তবে কাজটা তুই ভুল করিসনি…টোয়া দিন দিন বেয়াদব হয়ে যাচ্ছে।বাবাই (নির্ভীকের বাবা) আমাকে ফোন দিয়ে বললো তুই যেন টোয়াকে সরি বলিস।
নির্ভীক: নেভার।ভুল করেছে শাস্তি পেয়েছে আরও ভুল করবে আরও শাস্তি পাবে।আর আমি বাবা- চাচ্চু কে ক্লিয়ারলি জানিয়ে দিয়েছি টোয়া যেন আমার থেকে দূরে থাকে।আই জাস্ট হেট হার।
প্রান্ত : কিন্তু ও তো তোকে লাভ করে।
নির্ভীক: তুই এই কথা বলছিস?…তুই তো জানিস সব।ওর মত মেয়ে ভালোবাসার মানে বুঝেনা।সাচ আ ক্যারেক্টারলেস গার্ল।আমি ওর ভালোবাসা না আমি ওর জেদ।বন্ধুদের সাথে বাজি ধরেছিল আমার সাথে প্রেম করা নিয়ে।আমি ওর প্রোপোজাল এক্সেপট্ করিনি তাই আমার প্রতি ওর এত ইন্ট্রেস্ট।যদি ওকে এক্সেপ্ট করতাম তো এতো দিনে আমাকে ছেড়ে অন্য কাউকে ধরতো।তবে তুই চিন্তা করিসনা ওর নেক্সট টার্গেট তুই হবি।(হেসে হেসে)
প্রান্ত: ঠিক বলেছিস ভাই।ও আমার গালে একদিন কিস করেছিল, ছোট বোন ভেবে ছেড়ে দিয়েছি।উফ্ জাস্ট ইমপসিবল গার্ল।
নির্ভীক: আমার আর অন্তর মধ্যে আসলে আই উইল কিল হার(দাঁতে দাঁত চেপে)
প্রান্ত : আসবেনা আসবেনা…আমরা তার আগেই ওকে শ্বশুর বাড়িতে পাঠিয়ে দেব।(হেসে হেসে)
নির্ভীক: ধুর বাদ দে চল ঘুমাবো।
.
ভার্সিটিতে ঢুকছি, গোল্ডেন জুবলি টাওয়ারের পাশ দিয়ে গাড়ি করে যাচ্ছি। টাওয়ারের নিচে দেখি টোয়া আপু আর উনার গ্যাং বসে আছেন।টোয়া আপুর হাতে সাদা ব্যান্ডেজ।বুঝতে আর বাকি রইলোনা, নির্ভীক ভাইয়া উনার অসমাপ্ত কাজটা সমাপ্ত করে ফেলেছেন।একটা দম ছেড়ে অন্যদিকে তাকালাম।আমাদের বিল্ডিং এ নামিয়ে দিয়ে ফুপ্পা চলে গেলেন।
…বাসায় ঢুকছি আর ভিসি আঙ্কেলের বাসার দিকে দেখছি।উনারা তো বাসায় কেউ থাকেননা,,,তবেকি উনারা ফিরে আসলেন??
চলবে?