মিষ্টিমধুর_প্রতিশোধ #সারপ্রাইজ_পর্ব

#মিষ্টিমধুর_প্রতিশোধ
#সারপ্রাইজ_পর্ব
#দিশা_মনি

লন্ডনের রাজপথে হেঁটে চলেছে দুজন মানব-মানবী৷ তাদের কোলে মাস ছয়েকের একটি ছোট বাচ্চা। বাচ্চাটা খুব শান্তিতে ঘুমাচ্ছে।

ফাহিম ইভানার উদ্দ্যেশ্যে বলল,
‘ফারিয়া আজ এত শান্ত কেন?’

‘তোমার মেয়ে তো এমনি এমনি শান্ত হয়নি। ওকে পেট ভড়ে খাইয়েছি। তাই তো এখন এভাবে শান্তিতে ঘুমাচ্ছে।’

‘ওহ বুঝলাম।’

এরমধ্যে বছরের প্রথম তুষারপাত শুরু হলো। দুজনে দ্রুত তাদের বাসায় ঢুকল। ফাহিম ইভানাকে বলল,
‘আগের দিনগুলো কত ভালো ছিল না? আমরা কি সুন্দর তুষারপাত উপভোগ করতাম।’

‘হুম, কিন্তু এখন তো আমাদের সাথে আমাদের মেয়ে আছে। এখন ওকে নিয়ে কিভাবে তুষারপাত দেখি বলো?’

ফাহিম স্মিত হাসলো। ইভানা জিজ্ঞেস করল,
‘আচ্ছা তুমি নাকি নতুন একটি প্রজেক্টে কাজ করছ?’

‘হুম। বুয়েট থেকে রোবটিক্স নিয়ে পড়েছি বলে কথা, আমার আর,প্রজেক্টের অভাব হয় নাকি? নতুন একটি রোবট তৈরির কাজ পেয়েছি।’

‘আবার কি জার্মানিতে চলে যাবে?’

‘যেতে তো হবেই।’

ফাহিমের কথা শুনে ইভানার মন খারাপ হয়ে গেল। ফাহিম সেটা লক্ষ্য করে বলল,
‘তুমি কি মন খারাপ করেছ? একদম মন খারাপ করো না। প্রজেক্টটা বেশি দিনের নয়।’

‘না, সেইজন্য না। আসলে আমি ভাবছিলাম দুই বছর থেকে দেশে ফেরা হয়না। তোমার ব্যস্ততা, আবার মাঝখান থেকে ফারিয়ার জন্ম হওয়া। এসবের জন্য আর যাওয়াই হলো না। কাল আম্মুর সাথে কথা বললাম। উনি খুব কান্নাকাটি করছিলেন। স্বাভাবিকই তো। নিজের নাতনিকে একবারও দেখেন নি। চলো না আমরা দেশে ফিরে যাই। কয়েকটা দিন থেকে আসি।’

‘আচ্ছা, আমি চেষ্টা করে দেখছি।’

ইভানার মুখে হাসি ফুটে ওঠে। দীর্ঘ ছয় বছর যাবৎ ফাহিমের সাথে লন্ডনেই অবস্থান করছে সে। ফাহিম স্কলারশিপ পেয়ে লন্ডনে নিজের পড়াশোনা শেষ করে এখানেই একটি কোম্পানিতে জব পায়। ইভানা লন্ডনের একটি স্বনামধন্য বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পড়াশোনা করেছে ইকোনমিক নিয়ে। বর্তমানে সে একটি স্কুলে টিচারের জব করছে। মাঝখানে মাতৃত্বকালীন ছুটিতে ছিল। তবে এখন আবার জয়েন করতে হয়েছে।

লন্ডনে আসার পর এখানেই সেটেল্ড হয়েছে তারা। তাই দেশে আর তেমন ফেরা হয়না।

ইভানা কিছুক্ষণ ভেবে বলে,
‘শুনলাম তাসকিন নাকি অনেক বড় হয়েছে। এখন স্কুলে পড়ছে। পড়াশোনাতেও নাকি অনেক ভালো।’

‘বাহ, তাহলে তো ভালোই হয়েছে। তাসকিনের যখন ২ বছর বয়স তখন শেষ সামনাসামনি দেখেছিলাম। কি নাদুসনুদুস চেহারা। এখন তো ভিডিওকলে দেখি চেহারা ভেঙে গেছে।’

‘হুম। আপাই বলছিল তাসকিনকে নিয়ে তার অনেক জ্বা’লা। যদিও আমার তা মনে হয়না। আপাই তো সারাদিন হসপিটালেই পড়ে থাকে। আম্মুই তো তাসকিনকে সামলায়।’

‘হুম।’

ইভানা একটু ভেবে আবার বলে,
‘এবার দেশে গেলে কিছুদিন থেকে আসব।’

‘সেটা নাহয় থাকব কিন্তু আমাদের মেয়ের কি ঐ দেশের আবহাওয়া সহ্য হবে?’

‘আমিও সেটাই ভাবছিলাম। তবে এত চিন্তা করো না। জন্ম যতোই ইংল্যান্ডে হোক। ওর রক্ত তো বাংলাদেশেরই। তাই মনে হয়না কোন অসুবিধা হবে।’

★★★
দেশের মাটিতে পা রাখল ইভানা ও ফাহিম। এতদিন পর দেশে ফিরে অনেক ভালো লাগছে তাদের। দেশে আসতেই ফারিয়া কেঁদে উঠল। এতক্ষণ শান্তিতেই ঘুমাচ্ছিল সে। ইভানা সেটা দেখে বলে,
‘এই দেখ ফারিয়া। তুমি তোমার আসল জন্মভূমিতে ফিরে এসেছ। চোখ মেলে দেখ তোমার জন্মভূমিকে।’

কিছু সময় পর ফাহিম ও ইভানা স্বীয় কন্যাকে নিয়ে উপস্থিত হয় তাদের বাড়িতে। তাদেরকে ফিরতে দেখে আহ্লাদে আটখানা হয়ে যান ফারজানা বেগম। ফারিয়াকে কোলে নিয়ে বলে,
‘এইটা বুঝি আমার নাতনি। চোখমুখ একদম আমার ফাহিমের মতোই হইছে। জানো ইভানা আমার ফাহিমও ছোটবেলায় এমনই দেখতে আছিল।’

ফাহিম ফারজানা বেগমকে জিজ্ঞেস করে,
‘কেমন আছ তুমি?’

‘কেমন আর থাকব বল? তোরা তো লন্ডনে সেটেল্ড হইছিস। এখন তাসকিনরে নিয়াই আমার সময় যায়।’

এমন সময় তোহা, ফারহান ওরাও চলে আসল। তোহা তো ইভানাকে দেখেই তাকে জড়িয়ে ধরে বলল,
‘কতদিন পর আসলি বোন। বিদেশে গিয়ে তো আমাদের ভুলেই গেছিস। তুই তো মা হওয়ার পর আগের থেকেও সুন্দরী হয়েছিস। আর এদিকে আমায় দেখ। তাসকিন হওয়ার পর আরো মোটা হয়ে গেছি।’

ফারহান বলে ওঠে,
‘ঠিকই আছে। আগে তো পাটকাঠির মতো ছিলা। এখন একটু চেহারা ভালো হয়েছে।’

এভাবেই আনন্দে মেতে ওঠে সবাই।

★★★
দেশে এসে কয়েকদিন খুব ভালো করে ঘোরাফেরা করল সবাই। অবশেষে ফিরে যাওয়ার সময় সময়ও হয়ে এলো।

ফাহিম ও ইভানা ফিরে যাওয়ার সময় ফারজানা বেগম অনেক কান্নাকাটি করলেন। কিন্তু ফাহিম ও ইভানাকে ফিরতেই হলো।

লন্ডনে নেমে ইভানা বলল,
‘এখন এটাই যেন আমার চেনা শহর হয়ে উঠেছে। একসময় ফেল করার জন্য যখন নিজের ভবিষ্যত নিয়ে কোন আশাই ছিল না আমার, আজ সেই আমি ব্রিটেনের মতো দেশে নিজের এত সুন্দর একটা ক্যারিয়ার গড়ে তুলতে পেরেছি। নিজের স্বামী সন্তানকে নিয়ে সুখে আসি। এই সুখে যেন কখনো কারো নজর না লাগে।’

(সমাপ্ত)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here