শুধু_তুই #পর্বঃ২৩

#শুধু_তুই
#পর্বঃ২৩
#Rifat_Amin

তুমুল বর্ষণে ঢাকা শহর প্রায় জীর্ণ-শীর্ণ হয়ে পরে রয়েছে। এতটাই তীব্র বর্ষণ যে একমুহূর্তের জন্যও সেই বর্ষণ থামতে নারাজ৷ এখন যে বেলা দুপুর বারোটা সেটা কোনোভাবেই বোঝা যাচ্ছেনা। মনে হচ্ছে সঁন্ধ্যা মাত্র। আকাশ ঘনকালো মেঘের নিচে মন খারাপ করে তার বিভৎস রুপ ধারণ করে আছে৷ ঢাকা শহরের রাস্তাগুলো প্রশস্ত নদীর মতো পানিতে থই-থই করছে৷ মেইনরোডে গাড়ি চলার পাশাপাশি মাঝে-ফাঁকে একটা নৌকা চলতেও দেখা যাচ্ছে। সেই নৌকাটার দিকে একদৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে প্রহরভাই। প্রাইভেট হসপিটালটার তিনতলায় বেলকণিতে আমরা দুজন দাঁড়িয়ে আছি। উনার হাতে ধোঁয়া উঠা কফির মগ। দুমিনিট আগে এখানকার এক নার্স দিয়ে গেছে। আমার কাঁদতে কাঁদতে শরীরের বেহাল দশা। চোখের কোঠর ভেদ করে নোনাজল যেনো আপনাআপনি বের হতে চাচ্ছে৷ আমি গ্রিলে হেলান দিয়ে স্বল্পস্বরে বললাম,

– কফিটা তো ঠান্ডা হয়ে যাচ্ছে। খেয়ে নিন৷ (আমি)

উনি গ্রিলের থেকে চোখ সড়িয়ে আমার দিকে একবার চাইলেন৷ চোখদুটো রক্ত লালবর্ণ। উনি কফিতে একটা চুমুক দিয়ে বললেন,

– ঠান্ডা হয়ে গেছে৷ আর খাবো না। তুই ঠিক আছিস? (প্রহরভাই)

আমি সচকিত হয়ে উনার দিকে তাকালাম। রাস্তায় পরে যাবার পর জ্ঞান ফিরেছে হসপিটালে আসার পর’ই। এখন শরীরটা যদিও দূর্বল। তবে সমস্যা নেই। আমি গ্রিলের বাইরে ডানহাতটা বের করে বৃষ্টিকে ছোঁয়ার চেষ্টা করতে করতে বললাম,

-আমি ঠিক আছি৷ প্রেমের জন্য কি আরো ব্লা’ডের প্রয়োজন পড়বে? (আমি)

প্রহরভাই কফির মগটা সামনের টেবিলে রেখে বললেন,

– জানি না। ডক্টর তো কিছু’ই জানায় নি৷ শুধু বললো অবস্থা খুব একটা ভালো না৷ ওর বেঁচে থাকাটা আমার কাছে খুব জরুরী। (প্রহর)

আমার প্রহরভাইকে খুব কথা শোনাতে ইচ্ছে হলো৷ উনার সাপোর্ট পেয়ে’ই প্রেমের আজ এই অবস্থা। কি দরকার ঝামেলায় জড়ানোর। অযথা জীবনের ঝুঁ’কি। প্রেমের কি বয়স হয়েছে এতকিছু বোঝার? তবুও ওকে শাষণে রাখতে পারলো না কেউ৷ এখন প্রহরভাইয়ের’ও যে শরীরের অবস্থা! একটু আগে প্রেমকে ব্লা’ড দিলেন। আবার একা হাতে সবকিছুর দেখা শোনা করছেন! আমি উনার কঠোর দৃষ্টিতে আর কর্মে অবাক হয়ে যাই। এত শক্ত থাকেন কিভাবে? অথচ আমার কাঁদতে কাঁদতে চোখের পানি যেনো শুকিয়ে গেছে। প্রেমের বাকি বন্ধুগুলোর জ্ঞান ফিরেছে। কিন্তু প্রেম এখন মৃ’ত্যুর সাথে পাঞ্জা লড়ছে। কি দরকার এসব করার? ছেলেমানুষ, ছেলেমানুষের মতো থাকবে। অযথা বড়দের মতো মারা’মারি, কাটা’কাটিতে যাওয়া! প্রহরভাইয়ের দিকে তাকিয়ে দেখলাম একটা সাধারণ ব্লাক টিশার্ট পড়েছে। সারা শরীর অগোছালো। গোছালো মানুষটা হঠাৎ এমন অগোছালো হলে খারাপ দেখায়। ভীষণ খারাপ। প্রহরভাইয়ের ইচ্ছে ছিলো আঙ্কেল-আন্টিকে এসবে অবগত না করানোর। কিন্তু শেষ পর্যন্ত আমার জন্য করতে হয়েছে। যদিও শুধু একবার দেখা করতে এসেছিলেন তারা৷ বৃষ্টির দোহাই দিয়ে আবার ফিরে যেতে বলেছিলো প্রহরভাই। অনেক ঝামেলা, চড়াই-উতরাই পার করে এখন একটু শান্তভাবে বসে থাকার সময় পেলেন উনি। প্রেমের বাকি তিন বন্ধুকে কৌশলে ভিন্ন ভিন্ন হসপিটালে পাঠিয়ে দেয়া হয়েছে। এটা সম্ভব হয়েছে অর্জন ভাইয়া আর উনার ফ্রেন্ডগুলোর জন্য। সবার ফ্যামিলিকে জানিয়ে দেয়া হয়েছে সামান্য এক্সিডেন্ট করেছে। যাতে বিশ্বাসযোগ্য হয় তার সব ব্যবস্থা করে রেখেছে প্রহরভাই। আর প্রেমের বন্ধুদের তেমন ক্ষতি হয়নি। দেখে মনে হচ্ছে সব রাগ প্রেমের উপর’ই ঝেরেছে। একটু পর ডক্টর বের হলেন অপারেশন রুম থেকে। উনাকে দেখার সাথে সাথেই আমি ছুটে গেলাম। অথচ প্রহরভাই এখনো ঠাঁই দাঁড়িয়ে আছে সেখানে। আমি উৎকন্ঠিত হয়ে জিজ্ঞেস করলাম,

– ডক্টর, এখন কেমন আছে প্রেম? সবকিছু ঠিক আছে তো? (আমি)

ডক্টর সাথে সাথে হেসে ফেললেন। মুচকি হেসে প্রহরভাইকে ডাক দিয়ে বললেন,

-তোমার ভাইয়ের শরীরের গঠন অন্য সবার থেকে ভিন্ন। শরীরে এত যায়গায় আঘাত করার পরও ওর মস্তিষ্কে তেমন প্রভাব পরেনি৷ আমি তো খুব টেনশনে ছিলাম কি না কি হয়৷ কিন্তু ও এখন মোটামুটি সুস্থ বলা যায়। যদিও জ্ঞান না ফিরলে কিছু বলা যাচ্ছে না। তবুও ধরে নাও সব ঠিকঠাক। (ডক্টর)

প্রহরভাই নিরুত্তর চেয়ে রইলেন। এদিকে আমি আলহামদুলিল্লাহ, আলহামদুলিল্লাহ করতে’ই আছি। প্রহরভাই ক্লান্তস্বরে বললেন,

– ধন্যবাদ ভাইয়া। মহান আল্লাহকে অসংখ্য ধন্যবাদ আর আপনার জন্য’ই সব সম্ভব হয়েছে। কি ভাবে যে তোমার এই ঋণ শোধ করবো। (প্রহরভাই)

ডক্টর একগাল হেসে বললেন,

-আরে আরে এভাবে বলছো কেনো? তুমি যেমন আমার কাছে ছোটভাইয়ের মতো। প্রেমও তেমন ছোট ভাই। তবে খুব তারাতারি হসপিটালে পৌঁছানোর জন্য নিজেকে ধন্যবাদ দিতেই হচ্ছে। এই তুমুল বর্ষণেও যে আসতে পেরেছি, এটাই অনেক। আর তোমরাও ঠিক টাইমে ওকে নিয়ে এসেছো। আচ্ছা আসি হ্যাঁ। প্রেমের জ্ঞান ফিরলে তোমরা দেখা করতে পারবে। তখন আমাকেও ইনফর্ম করবে। (ডক্টর)

ডক্টর চলে যাওয়ার পর প্রহরভাই নিজের শরীরের ভার দেয়ালে ঠেলে দিয়ে বেঞ্চিতে বসে পরলেন। চোখ দুটো আপনাআপনি বন্ধ হয়ে গেলো বোধহয়। আমি সচকিত হয়ে ওনার পাশে বসে পরলাম। হাতদুটো কপালে রাখতেই উপলব্ধি করলাম উনার শরীরে ভীষণ জ্বর। শরীরে গা পুরে যাচ্ছে একদম৷ আমি উৎকুন্ঠিত হয়ে বললাম,

-আপনার তো শরীর পুরে যাচ্ছে একদম। নিজের খেয়াল তো রাখতে হবে এবার। প্লিজ আপনি এখন বাসা ফিরে যান। (আমি)

প্রহরভাই চোখ বন্ধ করে হাসতে হাসতে বললেন,

– বলতে পারিস তোর জন্যই আমার জ্বর এসেছে। তোর কেবিনটাতে আমার আর তোর থাকার ব্যবস্থা করে দিয়েছিলো ঐ ডক্টর, মানে তোদের কলেজের সাবেক বড়ভাই। কিন্তু তুই এতটাই ঘুম কাতুরে যে ছোট্ট ঐ বেডে আমার যায়গা হওয়া অসম্ভব ছিলো৷ তাই আর রাতে ঘুমাতে পারলাম না৷ একজন দায়িত্ববান হাসবেন্ড হিসেবে তোর পাশে বসে রইলাম৷ এবার তুই ভেবে দেখ, তুই কি হীরার টুকরা ছেলে পাইছিস৷ (প্রহর)

অসময়ে উনার এসব পাগলামো আমার বিষাক্ত ঠেকলো৷ আমি রাগীস্বরে বললাম,

-আপনার ফোনটা দিন আমাকে। (আমি)

উনি কপালে হাত দিয়ে চুলগুলো ঠিক করতে করতে বললো,

-ফোনটা বৃষ্টিতে ভিজে নষ্ট হয়ে গেছে। আর সিমটা অর্জন খুলে নতুন ফোনে লাগাতে গেছে। এসে যাবে। (প্রহর)

কিছুক্ষণ পর সারার আগমন ঘটলো হসপিটালে৷ বাইরে এখনো তীব্র বর্ষণ। থামা-থামির কোনো লক্ষণ নেই। আমি সারাকে দেখা মাত্র ছুটে গেলাম ওর কাছে। মেয়েটার শরীরের দিকে তাকিয়ে অবাক হয়ে গেলাম। কালকেই দেখলাম কত সুশ্রী মুখমণ্ডল। আর একদিনেই কি অবস্থ! মনে হচ্ছে রাতে একবিন্দুও ঘুমায়নি। সারা আমাকে সামনে পেয়েই জড়িয়ে ধরলো। আবারো বর্ষণ ঘটলো আমার চোখে। কিছু সময়ের জন্য চোখদুটো হাসিখুশি থাকলেও সারাকে দেখে মনটা কুঁকিয়ে উঠলো। মেয়েটা হিচকি তুলতে তুলতে কাঁদছে। জড়িয়ে ধরা অবস্থাই সে বলতে থাকলো,

-প্রেম ঠিক আছে তো ভাবি? প্লিজ খারাপ কিছু বলিও না। (সারা)

আমি ওকে ছেড়ে দিয়ে হালকা হাসার চেষ্টা করে বললাম,

– সব ঠিক আছে৷ কাঁদছো কেনো পিচ্চি মেয়ে। সব ঠিক হয়ে যাবে। (আমি)

সাথে সাথেই বজ্রপাতের আওয়াজে পুরো বিল্ডিং কেঁপে উঠলো৷ সাথে সাথেই প্রচন্ড কান্নায় আবার ভেঙে পড়লো সারা। আমি ওর পিঠে হাত বুলিয়ে বুলিয়ে শান্তনা দিতে থাকালাম। ও কান্না বন্ধ করার বৃথা চেষ্টা করে বলতো থাকলো,

– কাল রাতে আন্টির মুখ থেকে খবরটা শোনার পর আমি হতবাক হয়ে গিয়েছিলাম। কিন্তু তখন আসতে পারিনি হসপিটালে। বাবা আমায় নিতে আসছিলো, প্রচন্ড বষ্টি না’হলে আমি সত্যি আসতাম৷ (সারা)

আমি ওকে ছেড়ে দিয়ে বললাম,

– এসব বাদ দাও তো। প্রেম ঠিক আছে, এটাই আমাদের জন্য অনেক। দোয়া করিও ওর জন্য (আমি)

হঠাৎ লক্ষ্য করলাম সারার হাতে কয়েকটা টিফিন বক্স। আমি আবারে বললাম,

-এসব কি? (আমি)

সারা বললো,

– তোমাদের জন্য নিজের হাতে রেঁধে নিয়ে এসেছি। প্রেমের জন্যও এনেছি। যদিও আমার হাতের রান্না প্রেম কখন’ও খাবে না৷ (সারা)

– কেনো খাবে না? একশো বার খেতে হবে৷ ওর কথায় সব হবে নাকি? আর পিচ্চি মেয়ে, প্রেমের জন্য এত কান্না কেনো হু? আবার নিজের হাতের রান্না! (আমি)

সারা আমার কথা শোনামাত্র লজ্জায় মিইয়ে গেলো। জবাব দেয়ার চেষ্টাটুকুও করলো না। ঘড়ির কাটা দেখতে দেখতে তিনঘণ্টা পেরিয়ে গেছে। ইতোমধ্যে প্রেমের জ্ঞান ফিরেছে৷ আমি আর প্রহরভাই দুজনেই দেখা করে এসেছি। প্রেম এখন মোটামুটি সুস্থ। তবে কন্ঠের তেজ শুনলে মনে হবে এখনো সে একদম ফিট৷ শুধু সারা এখনো ভীতরে ঢুকেনি৷ আমি সারাকে বললাম,

– খাবারটা নিয়ে ভেতরে যাও সারা। দেখো খায় কি না। (আমি)

সারা মাথা নিচু করে বললো,

– যদি রাগ করে? ও আমাকে তেমন সহ্য করতে পারে না৷ (সারা)

আমি মুচকি হেসে বললাম,

– প্রেম কোনো মেয়েদেরকেই সহ্য করতে পারে না। কিন্তু তোমার সাথে একটু হলেও বন্ধুত্ব আছে মানে তোমার ভীতর এমন কিছু আছে যা প্রেমরে ভালো লাগে। (আমি)

আমার কথায় সারার চোখমুখ চকচক করে উঠলো। আবারো লজ্জামাখা হাসি দিয়ে ভেতরে চলে গেলো সারা। আমি দরজার ফাঁকে দাঁড়িয়ে ওদের কান্ড দেখার জন্য অপেক্ষা করতে লাগলাম। সারা ভেতরে প্রবেশ করতেই প্রেম যেনো একটু অবাক’ই হলো। সে হয়তো ভাবেনি সারা আসবে। যদিও মানুষের ভাবনা সবসময় সত্যি হয় না। প্রেম উঠে বসার চেষ্টা করতেই সারা কান্নাস্বরে বললো,

– আরে বসো বসো। এখন কেমন লাগছে? (সারা)

প্রেমের মাথায়, ঘাড়ে সব যায়গায় প্রায় ব্যান্ডেজ। অথচ তেজ একটুও কমে নাই। সে অবাক হয়ে বললো,

– তুমি এখানে কি করছো সারা? (প্রেম)

– এমনিতে আসলাম। কেনো আসতে পারি না? (সারা)

প্রেম মাথা নিচু করে বললো,

– এত কষ্ট করে আসতে গেছো কেনো? আমার মতো বেয়াদব ছেলেকে কেউ দেখতে আসবে এটা ভাবিনি। (প্রেম)

সারা কান্না থামানোর চেষ্টা করতে করতে বললো,

– এসব কি বলছো? একদম চুপ। তোমার জন্য নিজের হাতে রান্না করেছি। আমি জানি এখন তুমি খেতে চাইবে না। কিন্তু তোমাকে খেতেই হবে৷ ভাবির আদেশ। (সারা)

সারার কথায় প্রেম ফেললো। সহাস্যে বললো,

– তুমি খাইয়ে দিলে খেতে তো বাঁধা নেই। মায়ের পর কোনো মেয়ের হাতে খাওয়ার অভিজ্ঞতা অর্জন করে নেই তাহলে। (প্রেম)

সারা অবাক হয়ে গেলো। আজ মনে হচ্ছে ওর ঈদের দিন। সে এখন কি করবে ভেবে পাচ্ছে না৷ এতটা খুশি সে আগে কখনো হয়েছিলো বলে মনে পরে না ওর। ঠিক তখনই অর্জন ভাইয়া আর প্রহরভাইয়ের কথার আওয়াজ পাওয়া গেলো। আমি একটু সাইডে সড়ে গিয়ে ওনাদের গম্ভীর কন্ঠস্বর শোনার চেষ্টা করলাম। প্রহরভাই শক্তকন্ঠে অর্জনকে বললো,

– লাইফে কয়টা মা’র্ডার করেছিস? (প্রহরভাই)

অর্জন ভাইয়া থতমত খেয়ে বললো,

– তুই ভালো জানিস। কেনো? (অর্জন)

– নিজের পড়াশোনার চাপে আর বিয়ের চাপে এসব থেকে দূরে ছিলাম বলে সবার ডানা গজিয়েছে মনে হচ্ছে। প্রেম একটু সুস্থ হলেই আমি সাজেক যাবো সবাইকে নিয়ে। তোর কাজ হবে প্রেমের সাথে সোনিয়া অথবা নাউমির কোনো ঝামেলা বা সম্পর্ক আছে কি না বের করতে। প্রেমকে কারা এভাবে মার’লো তা খুঁজে বের কর। খুব তারাতারি। (প্রহরভাই)

প্রহরভাইয়ের কথা শোনামাত্র আমার কলিজার পানিটুকু উড়ে গেলো৷ এ কেমন খেলা শুরু হলো সবার মাঝে?

আগাম একটা করে বেশি পর্ব পড়তে চাইলে আমাকে এক্ষনি ফ্লো করুন ✊🖐️

চলবে?

( যদিও অগোছালো, অপরিপক্ক হাতের গল্প 😅। তবুও আপনাদের সাপোর্টগুলো পেলে অনেক ভালো লাগে। ভালোবাসা🤍)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here