শুধু_তুই #পর্বঃ২৬ অন্তিম

#শুধু_তুই
#পর্বঃ২৬ (অন্তিম)
#Rifat_Amin

“তুমি আর তো কারো নও শুধু আমার
যত দূরে সরে যাও রবে আমার
স্তব্ধ সময়টাকে ধরে রেখে,
স্মৃতির পাতায় শুধু তুমি আমার

কেন আজ এত একা আমি?
আলো হয়ে দূরে তুমি
আলো আলো আমি কখনো খুঁজে পাবনা

চাঁদের আলো তুমি কখনো আমার হবে না
রোমন্থন করি ফেলে আশা
দৃশ্যপট স্বপ্নে আঁকা

লুকিয়ে তুমি কোন সুদুরে
হয়তো ভবিষ্যতের আড়ালে

ঘাসের চাদরে শুয়ে একা
আকাশের পানে চেয়ে জেগে থাকা
তবে আজ এত একা কেন

আলো হয়ে দূরে তুমি
আলো আলো আমি কখনো খুঁজে পাবনা
চাঁদের আলো তুমি কখনো আমার হবে না….”

‘ বাহ প্রহর, তুমি তো ফাটাই দিছো একেবারে। আমি ভাবতাম শুধু প্রেমই গান গায়। আর তুমি নিরামিষ ধরনের মানুষ!’

ঐশীর হাত থেকে নিজের হাতটা সড়িয়ে প্রসংশায় পঞ্চমুখ হলো পুলকভাই। এদিকে উনার কন্ঠে গান শুনে আমি একদম ফিদা৷ এতোদিন আমিও জানতাম প্রহরভাই গান জানে না বা পারে না। কিন্তু এই ধারণাটাও আজ ভুল প্রমানিত হলো! বেঁচে থাকলে আর কত কি যে দেখতে হবে? প্রহরভাইয়ের হাতে রাখা ব্লাক গিটারটার দিকে একদৃষ্টিতে তাকিয়ে এই ভাবনায় যখন মত্ত আমি, তখন ঠাস করে মাথায় একটা গাট্টা মারলেন প্রহরভাই। উনার আকষ্মিক আঘাতে চমকে উঠলাম । হালকা ব্যাথা পেয়ে মাথায় হাত লাগাতেই বললাম,

‘ আশ্চর্য! মারলেন কেনো প্রহরভাই? ‘ (আমি)

উনি ইনোসেন্ট লুক নিয়ে বললেন,

‘ এইযে ভাইয়া বললি তাই। ‘ (প্রহর)

‘তাই বলে মাথায় মারবেন? ব্যাথা লেগেছে তো। ‘(আমি)

এদিকে আমাদের কথোপকথনে ঘুম ভেঙে গেলো ঐশীর। এতক্ষণ সে পুলকভাইয়ার কাঁধে ঘুমিয়ে পরেছিলো। ঘুম থেকে উঠে এমন অবস্থায় নিজেকে আবিষ্কার করে লজ্জায় মিইয়ে গেলো ঐশী। পুলক ভাই হালকা কেশে বললো,

‘ আহ! প্রহর। বাচ্চা মেয়েটাকে এভাবে মারো কেনো? এটা কিন্তু খুব খারাপ। ‘ (পুলক)

পুলকভাইয়ার কথায় উনি যেনো আকাশ থেকে পড়লেন। হাতের গিটারটা গাড়ির সিটের পিছনে রেখে বললেন৷

‘কাকে বাচ্চা বলছো তুৃমি ভাইয়া? তুমি যাকে বাচ্চা ভাবছো সে মহা শয়তানের রাজা, থুক্কু রাণী ‘ (প্রহর)

কথাটা শোনামাত্র পুলকভাই হো-হা করে হেসে উঠলো। আমি পরলাম মহা ফ্যাসাদে, পুলক ভাইয়া আমাকে বাচ্চা বলেছে এটা বড়ই লজ্জাজনক। অবশ্যই বিরোধীতা করা উচিত, কিন্তু বিরোধীতা করলেই তো আবার প্রহরভাই খ্যাপাবে। দুজনই একদম বদের হাড্ডি। এদিকে ঐশীর সদ্য চোখে লেগে আসা ঘুম ভেঙে যাওয়ায় যথেষ্ট বিরক্ত সে। সে পুলকভাইয়ার থেকে একটা স্পেস নিয়ে বসে ক্লান্ত কন্ঠে বললো,

‘আওয়াজ একটা কম করে করো তো। আমার মাথা ব্যাথা করছে ‘

সাথে সাথে পুরো গাড়িটা নিঝুম হয়ে গেলো৷ একটু পর প্রহরভাই পকেট থেকে ফোন বের করতে করতে পুলক ভাইয়াকে বললেন,

‘ তোমাদের বিয়েটা কবে ঠিক হলো ভাইয়া? (প্রহর)

‘পহেলা জুলাই৷ সো লেট! তাইনা? ‘ (পুলক)

প্রহরভাই চোখটিপে বললো,

‘ তার আগেই করতে চাইলে আমায় জানাইয়ো। হি-হি-হি’ (প্রহর)

এখন সন্ধ্যা ছ’টা। পুরো আকাশজুড়ে লালাভ আভা বিরাজ করছে। সুর্য অস্ত যাওয়ার পূর্বক্ষণ। আমরা রয়েছি সাজেকের পথে। হঠাৎ করে ড্রাইভার একটু চা খেতে যাওয়ায় ট্রিপে ছোট একটা ব্রেক নেয়া হয়েছে। এই সুযোগে আমরাও নাস্তা করে নিয়েছি। তিনটা গাড়ির সবার সামনের গাড়িটা আমাদের , তার পেছনের গাড়িতে প্রেম, প্রেয়সী, আর সারা। তার পেছনের গাড়িতে অর্জনভাইয়া আর তাঁর কিছু ফ্রেন্ড রয়েছে। যদিও তিনটা গাড়ি নেয়ার একদম ইচ্ছে ছিলো না। কিন্তু প্রহরভাইয়ের সিদ্ধান্ত’ই চুড়ান্ত হওয়ায় আর কেউ কোনো কথা বলেনি।

৩ ঘন্টা আগে,

একটু আগে পরিত্যক্ত তেলের কারখানাটায় সামান্য গোলাগুলি হয়েছে। সেখানে প্রহরের টিমের লোক ছিলো মাত্র ৫ জন। আর প্রহরের ফ্রেন্ড মাহিমের কাছে ছিলো অগণিত কালো মুখোশধারী লোক। কিন্তু হঠাৎ করেই মাহিমের নির্দেশে পুরো গোলাগু’লি অফ হয়ে যায়। যদিও প্রহরের পাঁচজন ফ্রেন্ড’ই যথেষ্ট এক্টিভ। এখন প্রহর আর অর্জনের সামনে দাঁড়িয়ে আছে তিনজন মানব। তারা হলো সোনিয়া, নাউমি, মাহিম। সোনিয়া ও নাউমি মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে আছে। একটা ছোট্ট টেবিলের সামনে সবাই বসে আছে। মাথার উপর নিয়ন বাতি দপদপ করে জ্বলছে। আবার টেবিলে কফির ব্যবস্থাও করা আছে। প্রহরের মনে পরে আজ থেকে সাত বছর আগে খুব ভালো বন্ধু ছিলো মাহিম। প্রহর, মাহিম দু’জনই ছিলো অত্যন্ত জেদী আর ব্রিলিয়ান্ট। স্যারদের কাছে চোখের মণি। মাহিম উচ্চবিত্ত পরিবারের সন্তান হলেও প্রহর ওর কাছাকাছি থাকার যথেষ্ট চেষ্টা করেছে। তখন তারা ছিলো সদ্য কলেজে। স্কুল, কলেজ জীবনের জ্বালাময়ী বাধ্যবাধকতা পেরিয়ে এসে যখন তারা ভার্সিটিতে উঠলো। তখন তারা মুক্ত বিহঙ্গের মতো যেনো নীল আকাশে উড়াল দিলো। খাঁচাহীন পাখির মতো নিজেদের স্বাধীন ভাবতে শুরু করলো । পড়াশোনার পাশাপাশি ফ্রেন্ডদের সাথে আড্ডা, মা’রা’মারি আর নানা ধরনের ভালো কাজ, খারাপ কাজের সাথে যুক্ত হয়ে গেলো তারা। কিন্তু প্রহর ওকে সঙ্গ দিলেও খারাপ কাজগুলো থেকে নিজেকে এবং মাহিমকে সড়িয়ে রাখার চেষ্টা করতো। কিন্তু উচ্চবিত্ত পরিবারের মাহিম এটা কখনই মানতে পারতো না। সবসময় নিজের খেয়াল-খুশি মতো চালাতো। ওর কাছে ওর জেদ ছিলো সব থেকে দামি। বাবার অঢেল সম্পত্তি থাকায় এমন কোনো স্বপ্ন বা ইচ্ছে ছিলো না, যেটা সে সেই বয়সে পূরণ করেনি। এভাবে সবকিছু ঠিক-বেঠিকভাবে চলতে থাকলেও বিপত্তি ঘটলো তার কিছুদিন পর। যখন রশ্নি ক্লাস সেভেনে উঠলো। তখন প্রহর তার বাইকে করে প্রতিদিন রশ্নিকে স্কুলে দিয়ে যেতো। আবার নিয়েও আসতো। রশ্নির লাইফে ওর বাবা মায়ের থেকেও হয়তো স্কুল জীবনে সব থেকে বেশী দায়িত্ব পালন করেছে প্রহর। রশ্নির বাবা তার কলেজের বিভিন্ন কাজে ব্যস্ত থাকায় ঠিকমতো সময় দিতে পারতো না দুই মেয়েকে৷ আবার রশ্নির মা তখন পুত্র সন্তানের আশায় তৃতীয় সন্তানের মা হতে চলেছে। এমন একটা কঠিন মহুর্তে সদ্য যৌবনে ঢলে পড়া দুই জমজ বোন রশ্নি-ঐশী’কে যে কিভাবে সামলেছে প্রহর। সেটা সে ভালো করেই জানে। সারাদিন বুয়েটের প্রিপারেশন, বন্ধুদের সাথে তাল মিলিয়ে চলা, আবার বাসায় এসে সময় দেয়া। রশ্নির মা, রশ্নি-ঐশীকে দেখেশুনে রাখা। সবটাই একা হাতে সামলেছে প্রহর। তাই হয়তো প্রহর নামক মানুষকে রশ্নির মা এখন চোখবন্ধ করে বিশ্বাস করে। সেই বিশ্বাসটুকু আজও অমর হয়ে আছে। মৃ’ত্যুর পূর্ব মহুর্ত পর্যন্ত টিকে থাকুক সেটাই প্রহর চায়।
সেই সময়টাতে রশ্নির কাছে সবথেকে ভ’য়ংকর সাবজেক্ট ছিলো প্রহর নামক মানুষটাকে টলারেট করা। সে এত এত প্রহরকে ভয় পেতো যা বলার মতো না। তখন থেকেই ছেলেদের ডিস্টার্বের হাত থেকে ওদের দুইবোনকে রক্ষা করাই হলো প্রহরের ব্রত। যদিও সবাই যখন শুনতো এই দুজন প্রহরের বোন। তখনই আর কেউ এদের আশেপাশে ঘুরতো না। দিনশেষে দুজনের পড়াশোনার দেখাশোনাটাও প্রহর সামলেছে৷ প্রহরের কাছে জীবনের সব থেকে কঠিন মহুর্ত ছিলো সেটাই। পরিবারের বড় ছেলে হিসেবে সেই দায়িত্বটুকু প্রহরের মা সবসময় তাকে শিখিয়েছে৷ শুধুমাত্র বান্ধবীর মেয়ে বলে নয়। সব মেয়েদের সাথে ঠিক কেমন ব্যবহার করতে হবে সেটাও শিখিয়েছে তার মা। যদিও পিচ্চি রশ্নির প্রেমে পরে যাবার পর থেকে আর অন্য মেয়েদের দিকে তাকানোর প্রয়োজন পরেনি তাঁর। যখন নিয়মিত বাইকে করে দুজনকে স্কুলে পৌঁছে দিয়েছিল প্রহর। তখন বিষয়টা মাহিমের নজরে পরে যায়। সে যথারীতি প্রহরকে নানাভাবে বুঝাতে চেষ্টা করে রশ্নিকে সে ভালোবাসে। মাহিমের তাঁকে চাই। কিন্তু প্রহর, মাহিমের এরকম কথাবার্তায় ছিলো চরম লেভেলের অতিষ্ট। সে মাহিমকে বারবার বুঝাতে চেষ্টা করে ওরা এখনো ছোট। আর ওর ছোট বোন। কিন্তু মাহিমের এককথা ‘তার রশ্নিকে চাই’। এই বিষয়গুলো যখন আস্তে আস্তে বড় আকার ধারণ করে তখন দুজনার মধ্যে এক ধরনের মনমালিন্য। আস্তে আস্তে মারামারি পর্যায়ে বিষয়টা চলে যায়। আর পরিশেষে দুজনার মধ্যে এক মারাত্মক মারামারি বেঁধে যায়। সেখানে মাহিন সব থেকে বেশী মার খেয়েছে৷ হয়েছে পুরো ভার্সিটিতে চরম অপমানিত। তখন মাহিমের বাবার টাকার বলে প্রহরকে সেই ভার্সিটি থেকে বের করে দেয়া হয়। এরকম একটা বড় ধাক্কা সামলে প্রহর একবছর গ্যাপ দিয়ে বুয়েটে পড়ার প্রিপারেশন নেয়। ভার্সিটি থেকে বের হওয়ার পর চরম হতাশায় প্রহর আত্ন’হ’ত্যারও সিদ্ধান্ত নিয়েছিলো। কিন্তু তার বাবা-মা, রশ্নির কথা ভেবে আর এগোতে পারেনি। সেই ঘটনার পর সেনিয়াকে লেলিয়ে দিয়ে অস্ট্রেলিয়া চলে যায় মাহিম। তখন প্রহরের সামনে আরেক বাঁধার সম্মুখীন হয় সোনিয়া নামক বি’ষ। কিন্তু কোনো বাঁধাই প্রহরকে আটকাতে পারেনি, দমিয়ে রাখতে পারেনি। তাই আজ হয়তো সফলতার কাতারে উঠেছে প্রহর। যে সফলতা রশ্নিকে তার অর্ধাঙ্গিনী হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছে।

‘শুনলাম সাজেক যাচ্ছিস? ‘ (মাহিম)

মাহিমের কথায় ভাবনার রাজ্য থেকে বেড়িয়ে আসে প্রহর। মাথাটা তুলে স্বল্পস্বরে বলে,

‘হু। তুই জানলি কেমনে? ‘ (প্রহর)

মাহিম হালকা হেসে বললো,

‘ তুই এত ভালো থাকিস কিভাবে বলতো? শুনলাম রশ্নিকেও নাকি বিয়ে করেছিস। সব স্বপ্নই তো পূরণ করেছিস। অথচ আমার একটা স্বপ্নও পূরণ হলো না। তার দায়ভার কিন্তু তোর হা-হা-হা’ (মাহিম)

প্রহর সন্দিহান দৃষ্টিতে মাহিমের দিকে তাকালো। মাহিম আবারো বললো,

‘ এখন তুই আমাকে মে’রে এখান থেকে চলে যাবি। চারটায় তো তোর রওনা টাইম, তাইনা? ‘ (মাহিম)

‘আমি তোকে চিনি মাহিম। তুই এমন কখনই ছিলি না। আমি তোকে আগেও বুঝিয়েছি। শুধু জেদ আর টাকার শক্তি তোকে পাগল বানিয়ে দিয়েছে। তুই এসব বাদ দে। তুই ভুলে যা আমাদের মাঝে যা যা হয়েছিল। আগের মতো বন্ধুর হাতটা বারা ‘ (প্রহর)

মাহিম হো-হা করে হেসে উঠলো। সে হাসতে হাসতেই বললো,

‘ আমি না’হয় পরেই মরবো তোর হাতে। এখন চলে যা। অযথা তোকে আটকালাম। সময় নষ্ট করলাম। আমি কখনই তোর সাথে জিততে পারবো না। ‘ (মাহিম)

প্রহর, অর্জন উঠে দাঁড়ালো। প্রহর মুচকি হেসে বললো,

‘ প্রহর মানুষ চিনতে ভুল না করলে তুই আবার আমার বন্ধু হবি। একসময় আমার পক্ষে তোর যেমনটা সাপোর্ট ছিলো। সামনে হয়তো তার দ্বিগুণ থাকবে। ‘ (প্রহর)

‘সম্ভব?’ (মাহিম)

‘সম্ভব ব্রো। ‘ (প্রহর)

মাহিম উঠে তাঁর হাতটা আগে বাড়িয়ে দিলো। প্রহর দেখে সাথে সাথেই হাতে হাত মিলালো। অট্টোহাসি দিয়ে বললো,

‘ বিশ বছর আগে তুই হাত না বাড়ালে হয়তো আজ আমি তোর কখনই বন্ধু হতাম না। হি-হি-হি ‘ (প্রহর)

মাহিম হাসলো৷ সাথে সাথে হাসলো পরিত্যক্ত তেলের কারখানা। কিন্তু সোনিয়া হাসলো না। প্রহরকে পাওয়ার জন্য তার এতো পাগলামো গুলো বোধহয় এখান থেকেই শেষ।
মাহিম সন্দিহান দৃষ্টিতে তাকিয়ে বললো,

‘তুই না এসব গান থেকে দূরে থাকতি। শুধু বলতি বড়লোকদের কাছে সবসময় শর্ট’গান থাকে। তুই বড়লোক ছিলি না তাই তোর কাছে না’হয় ছিলো না। কিন্তু এখন কি তুই বড়লোক? ‘ (মাহিম)

প্রহর মুচকি হেসে বললো,

‘ রশ্নিকে পেয়ে একটু একটু বড়লোক হতে শুরু করেছি। ‘ (প্রহর)

মাহিম হাসলো৷ সাথে ছাড়লো একটা বড় দীর্ঘশ্বাস।

—-

গাড়িতে প্রেম নিশ্চিন্তে ঘুমিয়ে আছে৷ পায়ের সমস্যার কারণে ওর গাড়িতে বেশী কাউকে উঠানো হয়নি। এদিকে প্রেয়সীও প্রেমের বুকে ঘুমিয়ে আছে। শুধু ঘুমায়নি সারা। সে এক দৃষ্টিতে অস্তমান সূর্যের দিকে তাকিয়ে আছে। হঠাৎ প্রেম ঘুম থেকে উঠে স্বল্পস্বরে বললো,

‘ নাস্তা হয়েছে সবার? ‘ (প্রেম)

সারা সুর্য থেকে চোখ সড়িয়ে বললো,

‘হ্যাঁ। তুমি ঘুমিয়েছিলে তাই তোমারটা এখানে আনিয়েছি। খেয়ে নাও ‘ (সারা)

সাথে সাথে একটু নড়ে উঠলো প্রেয়সী। প্রেম ওর মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে দিতে বললো,

‘ পরে খেয়ে নিবো। ‘ (প্রেম)

সারা মাথা নিচু করে বসে বললো,

‘ একটা কথা ছিলো প্রেম। বলতে ইচ্ছে করছে কিন্তু বলতে পারছি না। ‘ (সারা)

প্রেম মুচকি হেসে চোখ বন্ধ করলো। আরাম করে সিটে শুয়ে বললো,

‘ তুমি যা বলতে চাও তা আমি বুঝতে পারছি সারা। কিন্তু সেটা কখনো সম্ভব নয়। আমি তোমার অনুভূতিকে যথেষ্ট সম্মান করি। শ্রদ্ধা করি৷ কিন্তু তোমার আমার মাঝে কখনো কোনো সম্পর্ক তৈরী হওয়া সম্ভব নয়৷ কেননা তোমার মধ্যে শুধু আবেগ কাজ করছে। বিবেকের যায়গাটুকু ব্লক হয়ে আছে। শুধু আবেগ দিয়ে কখনো জীবন চলতে পারে না সারা। তুমি আমার ভবঘুরে মন, ছন্নছাড়া স্বভাব, নায়কের মতো মারামারি করার স্বভাব দেখে প্রেমে পড়েছো। কিন্তু এটা কখনো সম্ভব নয়। আমার মধ্যে কখনো অনুভূতি কাজ করে না। নিজের জন্যও না। এমনকি আমার পরিবারের জন্যও না। আমি কেনো বেঁচে আছি আমি নিজেও জানি না। আমাকে যেভাবে আমার ভাইয়া তৈরী করেছে। আমি হয়েছি সেই ঠিক সেরকম। আর আমি বাস্তবতায় বিশ্বাসী। আমাদের বয়স কম। আমি সম্পর্ক তৈরী করলেও সেটা তোমার ভাই কখনো মেনে নিবে না৷ বুঝতে পারছো? আমার ভাই যদি এখুনি তোমাকে মে’রে ফেলতে বলে তাহলে তোমাকে মে’রে ফেলতে আমার সামান্য হাতটুকুও কাঁপবে না।’ (প্রেম)

সারা কাঁদছে। ঘোলা চোখদুটো মুছে বাইরের দিকে তাকালো। ইতোমধ্যে গাড়িটা ছেড়ে দিয়েছে। বাইরে নেমে এসেছে এক আকাশ অন্ধকার। তাঁর থেকেও গভীর অন্ধকার বোধহয় সারার মনে। সারা হিঁচকি তুলতে তুলতে ক্লান্ত কন্ঠে বললো,

‘আমি তো আগেই খু’ন হয়েছি প্রেম। বাকি আছে কি? ‘ (সারা)

ওদের কথোপকথনে প্রেয়সী ঘুম থেকে উঠে বললো,

‘ কাকে মে’রে ফেলবা দাভাই ‘ (প্রেয়সী)

প্রেম মুচকি হেসে বললো,

‘ চকলেট যে আবিষ্কার করেছে তাকে। ‘(প্রেম)

——

রাত ১০ টা ৪৮। একটু আগেই রিসোর্টে উঠলাম সবাই। ভাগ্যিস আগে থেকে বুকিং করা ছিলো। না’হলে যে কি হতো! সবার খাওয়া দাওয়া শেষ করে যখন রুমের ভীতর প্রবেশ করলাম তখন অবাক না হয়ে পারলাম না৷ ১৫ মিনিট আগেও দেখলাম রুমটা সাধারণ ভাবে গোছানো। অথচ এইটুকু সময়ের মধ্যে পুরো রুমটা এত সাজালো কে? মনে হচ্ছে যেনো বাসরঘর সাজানো হয়েছে। একটু পর প্রহরভাই যখন রুমে প্রবেশ করলো তখন কঠোর দৃষ্টিতে উনার দিকে তাকিয়ে বললাম,

‘এটা কি করলেন? সবকিছুর একটা সীমা থাকা দরকার৷ বাসররাত কি প্রতিদিন হয় নাকি? আর আমি সিদ্ধান্ত নিয়ে নিয়েছি আজ আপনি মেঝেতে থাকবেন আমি বিছানায় ‘ (আমি)

প্রহরভাই ডন্ট কেয়ার মুড নিয়ে বললো,

‘ আমি কি জানি? রিসোর্ট মালিক হয়তো বুঝে গেছে আমরা সদ্য বিয়ে করেছি। তাই আমাদের সারপ্রাইজের ব্যাবস্থা করেছে। এবার সেদিন রাতের মতো ঢং করলে কিন্তু সোজা জানালা থেকে পাহাড়ে ঢিল মারবে তোকে। সো লক্ষী মেয়ের মতো থাক। ‘ (প্রহর)

‘আপনি খুবই খারাপ প্রহরভাই ‘ (আমি)

প্রহরভাই কাঁদো কাঁদো কন্ঠে বললো,

‘ ক্ষেমা দে মা৷ তুই আমাকে আর ভাই ডাকিস না প্লিজ। নাহলে তোর বাচ্চা আমাকে মামা বলে ডাকতে বাধ্য হবে। ‘ (প্রহর)

ওনার কথায় ভ্যাবলার মতো তাকিয়ে রইলাম। মাথামুণ্ডু কিছুই মুঝলাম না। উনিও আর কথা না বলে ফ্রেস হতে গেলেন। যখন ফ্রেশ হয়ে আসলেন, তখন আমার চোখ কপালে। উনি কি ঘুমাতে এলেন নাকি বিয়ে করতে? সারা শরীর বিয়ের পোষাকে আচ্ছন্ন। আমি সন্দিহান দৃষ্টিতে তাকিয়ে বললাম,

‘ মনে রং লেগেছে নাকি? কয়টা বিয়ে করতে চান? ‘ (আমি)

‘ আরে জীবনে দ্বিতীয়বারের মতো বাসর করতে চলেছি। একটা ফিলিংস রাখা লাগবেনা? তাই বিয়ের সাজ নিলাম। চাইলে তুইও নিতে পারিস। চাইলে মানে কি? পড়তেই হবে শাড়ি৷ ‘ (প্রহর)

আমি বিরক্ত হয়ে কোনোমতে শাড়িটা পড়ে নিলাম। এই প্রথম রোমান্টিক কাপলদের মতো আমার শাড়ির কুচি ধরেছেন উনি। এদিকে লজ্জায় পারি ম’রে যাই আমি। অথচ উনি এমন ভাবে বিহেব করছেন যেনো নিত্যদিন এসব করেই উনি অভ্যস্ত। একটু পর উনি নিজে গিয়ে দক্ষিণের জানালাটা খুলে দিলেন। সাথে সাথে একমুঠো ঠান্ডা বাতাস আমাদের দুজনকে শীতল করে দিলো। আমি জানালার সামনে গিয়ে দাঁড়িয়ে বাইরের দৃশ্যটা উপভোগ করার চেষ্টা করলাম। অন্ধকারে তেমন কিছু দেখা যায় না। তবে চারদিকে সাড়ি সাড়ি আলো। মাঝখানে হয়তো গভীর নিকষ অন্ধকার। পিছনে ফিরে দেখি উনি গায়েব। এটা কথা? কোথায় হারিয়ে যান বারবার? আমি ওখানেই দাঁড়িয়ে রইছি এমন সময় আমার কাঁধে উনার থুতনি রাখলেন। সাথে সাথেই কেঁপে উঠলাম আমি৷ একটু ভয়ও পেয়েছি। উনি আমার হাতে একটা গোল্ড রিং পড়িয়ে দিয়ে বললেন,

‘ বাসর রাতে বউকে গিফ্ট দিতেই হয়? তাই দিলাম। সেদিনও দিয়েছি কিছু একটা। তুই কিছু দিবি না আমায়? ‘ (প্রহর)

আমি উনার স্পর্শে বারবার কেঁপে উঠছি। চোখ বন্ধ করে বললাম,

‘ আমাকেই নিয়ে নাও ‘ (আমি)

প্রহরভাই অস্থির দৃষ্টিতে তাকালেন৷ তুমি বলে সন্মোধন করায় বিষ্ময়ে চোখদুটো বেড়িয়ে আসার জোগাড়৷ নিজেকে খানিকটা স্বাভাবিক করে বললেন,

‘ #শুধু_তুই আমার। তুই ছিলি, আছিস, থাকবি। আমার তো ভীষণ প্রেম পাচ্ছে রে রশ্নি। আচ্ছা শোন, তুই যখন ক্লাস ৫ এ ছিলি। তখন আমি তোকে বলেছিলাম বিয়ে করবো তোকে। মনে আছে? তখন তুই যে কি কান্না করছিলি রে। একদম ছিঁচকাদুনে। শেষ পর্যন্ত তো হয়েই গেলো বিয়েটা। আর কাঁদবি না? ‘ (প্রহর)

‘ আমি মোটেও কাঁদিনি। আপনি খুবই খারাপ প্রহরভাই ‘ (আমি)

প্রহরভাই হতাশ হলেন। বিছানায় নিজের শরীরটা ধপাস করে ফালায় দিয়ে বললেন,

‘ দয়া করে এই ডায়লগ আর ভাই ডাকা বন্ধ কর। হার্টের সমস্যা বাড়বে নাহলে ‘ (প্রহর)

‘ আচ্ছা আর ডাকবো না। ঘুমাবেন না? ‘ (আমি)

উনি বিরক্ত হয়ে বললেন,

‘ এই জন্যেই বাচ্চা মেয়েকে বিয়ে করে জ্বালা। এখন হারে হারে টের পাচ্ছি। দেখি কোনদিন তোকে বাদ দিয়ে নাউমি অথবা সোনিয়াকেই বিয়ে করবো৷ ‘

ওনাকে জ্বালিয়ে বেশ মজা পাচ্ছিলাম। কিন্তু এই কথা শোনার সাথে সাথেই সোজা বিছানায় গিয়ে ওনার উনার শরীরের উপর ধপাস করে শুয়ে পান্জাবীর কলার চেপে ধরলাম। আমার আকস্মিক আক্রমণে উনি স্তব্ধ হয়ে গেলো। বড় বড় চোখ করে আমার দিকে তাকিয়ে রইলো। আমি অগ্নি দৃষ্টিতে তাকিয়ে বললাম,

‘ তুমি আমার। ছিলে, আছো, থাকবে। বলো তোমার জীবনে একমাত্র নারী রশ্নি ‘ (আমি)

‘ না। বলবো না। ‘ (প্রহর)

‘ তোমার মুখে শুধু রশ্নি নাম উচ্চারিত হবে। আর কোনো মেয়ের নাম নয়। কে তোমার বউ? ‘

প্রহরভাই হাসলেন। ওনার পান্জাবীর কলার থেকে আমার হাতটা ছাড়ায় নিয়ে বললেন,

‘ #শুধু_তুই। তোর মুখে তুমিটা মানায়। তুমিময় হয়ে যাও না পিচ্চি ‘

আমি কথা বললাম না। কথা বলার মতো না পরিস্থিতি এখন মোটেও নয়।

সমাপ্ত,

(আপনাদের থেকে বিদায় নিচ্ছি আপাতত। গল্পটা খারাপ হলেও বলবেন ভালো হইছে, অসাম হইছে । ওখে?। যাই হোক, একদিন ধরে পাশে থাকার জন্য ধন্যবাদ। ভালোবাসা । বেঁচে থাকলে সিজন টু আনবো )

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here