সিনিয়র খালাতো বোন পর্ব-৯

0
1892

#সিনিয়র_খালাতো_বোন
#part_09
#writer_srabon

এইভাবে দেখতে দেখতে তিনিদিন কেটে যায়।
আজকে আমাকে এখান থেকে চলে যেতে হবে। আমি এখন মোটামুটি সুস্থ। তাই ভাবলাম কাউকে কিছু না বলেই চলে যাব।

রোজকার মতো সকালে হাসপাতালের বেডে শুয়ে ছিলাম। আনুমানিক সকাল ৮/৯ টা বাজে।
আমি একজন নার্সকে ডেকে নিজের ব্যাপারে জেনে নিলাম। মানে আজকে যদি আমি এখান থেকে চলে যাই তাহলে কি কোন সমস্যা হবে বা হাসপাতালের বিল বাকি আছে কিনা….

শুনে একটু অবাক হলাম। স্পর্শি নামের সেই অপরিচিত মেয়েটি নাকি আমার সব বিল মিটিয়ে দিয়েছে। আমি আশেপাশে দেখতে লাগলাম। কিন্তু কোথাও নিজের ব্যাগ খুজে পেলাম না। আর মোবাইলটা তো ওই দিনই হারিয়ে ফেলেছি। যাই হোক এত কিছু খুজে লাভ নেই৷

বাইরে গিয়ে কিছু একটা ব্যবস্থা করতে হবে। ঠিক তখনই সেই মেয়েটা আমার সামনে চলে এলো।

— একি..আপনি সকাল সকাল কোথায় যাচ্ছেন..?(স্পর্শি)

— জানি না…!(আমি)

মেয়েটি আমার হাত ধরে একটা চেয়ারে নিয়ে বসিয়ে বলল,,

— আপনি কি ঢাকা শহরে নতুন..??(স্পর্শি)

আমি মেয়েটার কথায় একটু অবাক হলাম। কারন আমি যে ঢাকায় নতুন এটা এই মেয়েটি বুঝল কিভাবে.??

— হুম,,,কিন্তু আপনি বুঝলেন কিভাবে..?(আমি)

— আপনাকে দেখলেই তো বোঝা যায়। এইভাবে রাস্তার মাঝখান দিয়ে কেউ দৌড়ায়..? এটা কোন পাড়ার বা মহল্লার রাস্তা না। এটা ঢাকা শহর। এখানে রাস্তায় সবসময় গাড়ি চলাচল করে। আর তাছাড়াও আপনার ফেসটা অনেক ইনোসেন্ট। (স্পর্শি)

— আসলে সেই দিন আমার মোবাইলটা…..

— হয়েছে বুঝেছি। মোবাইল কেউ ছিনতাই করেছে। আর আপনি তার পিছে পিছে ভেগেছেন।।। (মেয়েটি হাসতে হাসতে বলল)

— আপনাকে অনেক ধন্যবাদ। (আমি)

— কেন..?

— এই যে আমাকে হাসপাতালে এনে সুস্থ করে তোলার জন্য। (আমি)

— ধন্যবাদ বলার দরকার নেই। আসলে আমিও একটু অন্যমনস্ক ছিলাম। যাই হোক এইবার আপনি কোথায় যাবেন..?(স্পর্শি)

এইবার আমার মাথায় অন্য চিন্তা চলে এলো। মেয়েটিকে কি উত্তর দিব আমি.?? কোথায় যাব আমি..? এই তিন দিন তো না হয় এখানে ছিলাম। এইবার…????

আমাকে চুপ থাকতে দেখে মেয়েটি বলল..

— নিশ্চয়ই বাসা খুজতেছেন..? আর আমি জানি ব্যাচেলর ছেলেদের বাসা খুজে পাওয়াটা খুব মুশকিল। তবে আপনি চাইলে আমি আপনাকে হেল্প করতে পারি। (স্পর্শি)

— আসলে ব্যাপারটা তেমন না। আমাকে বাসা থেকে বের করে দিয়েছে আমার আব্বু। আপাতত আমার যাওয়ার কোন জায়গা নেই। কোথায় যাব কি করব কিছুই আমার জানা নেই। আপনি আমাকে এতটা হেল্প করেছেন এটাই আমার জন্য অনেক। আর কিছু করার দরকার নেই। আমি আসি..! আপনাকে সমস্যার মধ্যে ফেলানোর জন্য আমি সত্যিই দুঃখিত। (আমি)

—…… (মেয়েটা চুপ করে আছে)

— আর হ্যাঁ আমার ব্যাগটা কোথায়.?? ওই ব্যাগটাই আমার সব সম্বল। আমার সকল কাগজ পত্র ওইটার ভিতরে আছে। ব্যাগটা আমাকে দিলে আমি চলে যেতে পারি।। (আমি)

— আপনার ব্যাগ আপনি পাবেন না। এখন আসতে পারেন। (স্পর্শি)

আমি ভিষণ অবাক হলাম। আর তাড়াতাড়ি বললাম,,,

— কিন্তু কেন.?? প্লিজ আমার ব্যাগটা আমাকে ফেরত দিয়ে দিন। (আমি)

— দিতে পারি। তবে একটা শর্তে….(স্পর্শি)

— কি শর্ত..??(আমি)

— আমাকে সবটা খুলে বলতে হবে…! কি কারনে আপনাকে বাসা থেকে বের করে দিয়েছে আপনার আব্বু.? যদি সত্যি সত্যি সবটা খুলে বলেন তাহলে আপনার ব্যাগ আপনি পেয়ে যাবেন (স্পর্শি)

— আপনি শুনে কি করবেন.??(আমি)

— আমার ইচ্ছে…(স্পর্শি)

— ওকে শুনুন তাহলে…

[এরপর স্পর্শি নামের মেয়েটিকে সবটা খুলে বললাম]

— আপনি একটু ফাজিল বটে। তবে সব কিছু না জেনে শুনেই আপনাকে আপনার আব্বু বাসা থেকে বের না করলেও পারত। (স্পর্শি)

— আমার আব্বু এমনই..! সবাই বলে একদম আমার মতো। (আমি)

— হাহাহাহাহাহা,,

— এইবার প্লিজ আমার ব্যাগটা আমাকে এনে দিন। (আমি)

— আচ্ছা,,এইবার আসল কথায় আসি। তুমি এত ভিতু হয়েও কলেজের রাজনীতিতে ছিলে কিভাবে.?? কোন বোকা তোমাকে এর ভিতরে ঢুকিয়েছে..?(স্পর্শি)

মেয়েটার কথায় এইবার যতটুকু অবাক হলাম তার থেকে বেশি রাগ হলো।কারন আমি নাকি ভিতু.?

— প্রথমত আপনি আমাকে তুমি করে বলতেছেন কেন.?? আর আমি যে ভিতু সেইটা আমাপনাকে কে বলেছে..?(আমি)

— আরে বোকা,,আমি তোমার ব্যাগ চেক করেছিলাম। তুমি আর আমি সেইম ইয়ারে। তাই তুমি করে বললাম।
আর তুমি যে ভিতু সেইটা দেখেই বোঝা যায়। (স্পর্শি)

— দেখুন,,এইসব বলে আমার সময় নষ্ট করবেন না। আমাকে কাজ খোজ করতে হবে। থাকার জায়গার ব্যবস্থা করতে হবে। প্লিজ ব্যাগটা দিয়ে দিন। (আমি)

— ব্যাগটা আপাতত আমার কাছে নেই।নিচে গাড়িতে আছে। (স্পর্শি)

— আচ্ছা তাড়াতাড়ি বাইরে চলুন.!.(আমি)

আমি এইটা বলে বসা থেকে উঠে বাইরের দিকে হাটা দিলাম। তখনই স্পর্শি বলে উঠল….

— আমাদের বাসায় একটা রুম ফাঁকা আছে। যদি কেউ সেখানে ফ্রিতে থাকতে চায় তাহলে আমার কোন সমস্যা নেই। (স্পর্শি)

আমি স্পর্শির কথা শুনে দাঁড়িয়ে গেলাম। এরপর পিছনে এসেই বললাম,,

— আপনি নিশ্চয়ই মজা করতেছেন..?(আমি)

— আমাকে দেখে সেইরকম মনে হচ্ছে নাকি.??(স্পর্শি)

— কিন্তু আপনি আমাকে হেল্প করবেন কেন.??(আমি অবাক হয়ে)

— কারন,,,তোমার এই ইনোসেন্ট চেহারা..!(স্পর্শি আমার নাকে হালকা টান দিয়ে)

— ওকে বুঝলাম। কিন্তু আপনার ফ্যামিলি..? (আমি)

— আমার আম্মু অনেক ভালো, আমার সব কথা শুনে। তবে,,আব্বুকে আমি অন্যকিছু বলে বুঝিয়ে দিব। সমস্যা হবে না চলো।

আমার কাছে এখনো সব কিছু সপ্নের মতো লাগতেছিল। তাই নিজেকে একটা চিমটি কাটলাম। ব্যাথা পেয়েছি,, এটা কোন সপ্ন না।😝

— আচ্ছা,,,চলুন তাহলে..!(আমি)

— হুম…!!!

[আগের কাহিনি অনেক বড় হয়ে যাচ্ছে। তাই আর বিস্তারিত কিছু খুলে বলব না। সংক্ষেপে বলতেছি। একটু মানিয়ে নিয়েন]

এরপর স্পর্শি আমাকে তার বাসায় নিয়ে যায়। সেখানে দুই তালার একটা ছোট রুমে আমাকে থাকতে দেয়। সকলের সাথে ভাড়াটিয়া বলেই পরিচয় করিয়ে দেয়। পরে অবশ্য আংকেল আন্টি সবটা জেনে যায়।

যেহেতু আমরা একই বিভাগের ছিলাম। তাই আমাকেও স্পর্শি ওর কলেজে ভর্তি করিয়ে দেয়।
দেখতে দেখতে কিছু দিন চলে যায়। এরপর স্পর্শির সহযোগিতায় কয়েকটা টিউশনি পেয়ে যায়। ব্যাস আমার জীবন নতুন করে মোর নেয়। কারন একা মানুষ। বেশ ভালো ভাবেই চলে যেত।

আস্তে আস্তে আমার আর স্পর্শির সম্পর্ক আরো গভীর হয়ে যায়। আমরা ফ্রেন্ড থেকে বেষ্ট ফ্রেন্ড হয়ে যাই। তবে এটা শুধু বেষ্ট ফ্রেন্ডেই সীমাবদ্ধ ছিল। অন্যকিছুর কোন সুযোগও ছিল না। কারন স্পর্শির আগে থেকেই বয়ফ্রেন্ড ছিল। মানে আমার মেজ ভাইয়া।

যাই হোক এরপর দেখতে দেখতে তিনটা বছর কেটে যায়।
এবং আমার পড়াশোনা শেষ হয়ে যায়। এবং আগেই বলেছি স্পর্শির সহযোগীতায় একটা চাকরিও পেয়ে যাই। ব্যাস কিছুদিনের মধ্যে নতুন একটা ফ্লাট নিয়ে নেই।
কিন্তু এরমাঝে আমার জীবনে কোন মেয়ে আসে নাই। এটা বললে ভুল হবে।আমি কাউকে আসতে দেই নি। শিমলার জায়গা সব সময়ের জন্য ফাকা ছিল।

প্রথম দিকে বেশ কয়েকদিন মন খারাপ ছিল শিমলার কারনে। কিন্তু এর ভিতর থেকে স্পর্শি আমাকে সম্পূর্ণ ভাবে বের করে ফেলেছিল।

মাঝে মাঝে ফ্যামিলির অভাব ভিষণ ভাবে অনুভব করেছি। আসলে ফ্যামিলির অভাব ফ্যামিলির লোকজন চজাড়া অন্যকেউ পূরন করতে পারে না। যখনই মন খারাপ হতো তখন ঘুমের ঔষধ খেয়ে ঘুমিয়ে থাকতাম।। এর জন্য অবশ্য অনেক বকাও খেয়েছি স্পর্শির কাছে।।

এরপরের বাকি সব কিছু তো আপনারা জানেনই। আর এখন নিশ্চয়ই বুঝতে পেরেছেন যে আমি কেন এত স্পর্শি স্পর্শি করি..?

#বর্তমান

নিজের বিছানায় চোখ বুঝে বসে ছিলাম আর অতীতের ঘটনা গুলো মনে করতেছিলাম। ঠিক তখনই আমার রুমের ভিতরে কারো আসার শব্দ পেলাম।

আমি সামনের দিকে না তাকিয়েই চুপ করে চোখ বুঝে রইলাম।
কিছু সময় নিরবতার পরে সেই অতি পরিচিত কন্ঠটা আমার কানে এলো…

— বাবা………(আম্মু)

আমি আম্মুর গলার আওয়াজ পেয়ে সামনের দিকে তাকালাম। সামনে তাকিয়ে দেখি আম্মু আর ভাবি দাঁড়িয়ে আছে।
আমি বসা থেকে দাঁড়িয়ে গেলাম।

আম্মু আস্তে আস্তে একদ আর কাছে চলে এলো। আমি ঘোলাটে চোখে আম্মুর দিকে তাকিয়ে আছি।আম্মু এইবার তার দুই হাত দিয়ে আমাকে ধরে দেখতে লাগল। আম্মুর চোখেও পানি আর আমার চোখেও পানি।
এইবার আম্মু আমাকে জরিয়ে ধরে কান্না করে দিল।।।

বেশ কিছুক্ষণ এইভাবে থাকার পরে আমি আম্মুকে ছাড়িয়ে দিলাম।।

— বাবা,,,কেমন আছিস..? এতদিন কোথায় ছিলি.?? আমার কথা কি একবারও মনে পরে নাই তোর.? খুব অভিমান করে আছিস..??(আম্মু)

— হাহা,,সেইদিন তো চাইলে তুমি আমাকে আটকাতে পারতে। (আমি)

— শ্রাবন তুই বোঝার চেষ্টা কর। সেইদিনের পরিস্থিতি এমন ছিল না। আব্বু অনেক রেগে ছিল।আর তুই তো জানিস আমরা কেউ আব্বুর উপরে কোন কথা বলতে পারি না। (ভাবি)

— আম্মু,,,তুমি তাকে বলে দাও। আমি এখানে কারো জ্ঞান শুনতে আসি নাই। (আমি ভাবিকে উদ্দেশ্য করে বললাম)

ভাবি আমার এমন কথা শুনে মুখটা কালো করে ফেলল। আর মাথাটা নিচু করে রাখল।

— এটা কেমন কথা..? ভাবির সাথে কেউ এইভাবে কথা বলে..??(আম্মু)

— হাহাহাহা,,,,ভাবি…. এই শব্দটা আমার কাছে হাস্যকর লাগে সেইদিন থেকে৷ যেদিন আমি বাসা ছেড়ে চলে গেলাম। কিন্তু ভাবি নামের অতি পরিচিত কেউ আমাকে আটকানো প্রয়োজন মনে করল না। বিশ্বাস করো আম্মু আমি সেইদিন রাতে অনেকবার পিছনের দিকে তাকিয়েছিলাম। আর ভেবেছিলাম এই বুঝি আম্মু আসবে আমাকে আটকানো জন্য, বার বার ভেবেছি ওই বুঝি ভাবি এলো,,এই বুঝি ভাইয়া এলো৷ কিন্তু না,,সেইদিন কেউ আসে নাই। শুধু ভাইয়া এসেছিল টাকা দিয়ে হেল্প করতে। হাহাহা,,,কি মজার ব্যাপার। (আমি)

আমার এমন কথা শুনে আম্মু আর ভাবি পুরো চুপ হয়ে গেল। কারো মুখ কোন কথা নেই।
আমি চুপচাপ দাঁড়িয়ে ছিলাম।
আম্মুর দিকে তাকিয়ে দেখি আম্মু এখনো কান্না করে যাচ্ছে। তাই আমি আমার হাত দিয়ে আম্মুর চোখের পানি মুছে দিয়ে বললাম,,,

— আম্মু তুমি যদি আমার সামনে এমন করে কান্না করো তাহলে কিন্তু আমি এখনি এই বাদা ছেড়ে চলে যেতে বাধ্য হবো। (আমি)

— না,,বাবা এমন কথা বলিস না। এই দেখ আমি একটুও কান্না করতেছি না। (আম্মু)

— এইবার ঠিক আছে…!(আমি হেসে)

— শ্রাবন তুই অনেক বদলে গেছিস। আগে আমার সাথে সবসময় কথা বলতিস। কথা বলে আমাকে পাগল করে দিতিস। কিন্তু এখন…..(ভাবি)

—…… (চুপ)

— কিছু তো অন্তত বল..? চুপ করে থাকিস না প্লিজ। (ভাবি)

— আম্মু,,, তুমি নিচে যাও..! আমার একটু কাজ আছে। আমি পরে তোমার সাথে কথা বলতেছি। (আমি)

— কিন্তু….. (আম্মু)

তখনই আমার রুমে একটা………….

.
.
.
.
.
#চলবে……???

[এই পর্বে বানান ভুল হতে পারে। আজকে গল্প লিখে ২য় বার পড়ার সূযোগ পাই নি।]

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here