অচেনা শহর পর্বঃ১০

0
2266

#গল্পের_নাম_অচেনা_শহর
#লেখনীতে_Alisha_Rahman_Fiza
পর্বঃ১০
পরেরদিন বিকেলবেলা হেমন্তি আর ইলহাম বাসার উদ্দেশ্যে রওনা দিবে তাই দুজনই সবার থেকে বিদায় নিয়ে নিলো।কেয়া হেমন্তিকে জড়িয়ে ধরে বললো,
~তোমাকে অনেক মিস করবো আপু।
হেমন্তি বললো,
~আমিও তোকে অনেক মিস করবো আর শোন পড়াশোনাটা ঠিক মতো করিস।
কেয়া বললো,
~ঠিক আছে করবো।
অনুও এসেছে হেমন্তিকে বিদায় দিতে সে ভাবছে ইমজাদের কথা কী হেমন্তিকে বলবো?তখনই হেমন্তি বললো,
~অনু,আগামীকাল আমি ভার্সিটি যাবো।
অনু হাসার চেষ্টা করে বললো,
~তাহলে তো দেখা হচ্ছে।
ইলহামও সবার থেকে বিদায় নিয়ে হেমন্তিকে সঙ্গে নিয়ে বাসার বাহিরে এসে পরলো গাড়িতে উঠে বসলো তারা।ইলহাম ড্রাইভ করা শুরু করলো হেমন্তি জানালার বাহিরে হাত বের করে কেয়া আর অনুকে বিদায় জানালো।এক পর্যায় গাড়ি তাদের থেকে দূরে চলে আসলো হেমন্তি গাড়ির সীটে ঠিকভাবে বসে পরলো সামনে তাকিয়ে রইলো।ইলহাম গলা পরিষ্কার করে বললো,
~মন খারাপ?
হেমন্তি একটু চমকে উঠে বললো,
~নাহ এক পরিবার ছেড়ে অন্য পরিবারে যাচ্ছি এতে মন খারাপের কিছু নেই।
ইলহাম মুচকি হেসে বললো,
~হেমন্তি,তুমি খুব সহজেই মানুষকে আপন করে নেও তাই সবাই তোমাকে অনেক পছন্দ করে।
হেমন্তি বললো,
~হয়তো আমি খুব কম মানুষের সংস্পর্শে এসেছি ছোট থেকেই কিন্তু যত মানুষকে এ পর্যন্ত জেনেছি সবাই আমার বিশ্বাসটাকে অটুট রেখেছে কেউই বিশ্বাস ভাঙ্গেনি।
“বিশ্বাসের” কথাটা শুনে ইলহাম এক পর্যায়ে থমকে গেলো সে মনে মনে বললো,
~তাহলে তো হেমন্তি আমাকেও অনেক বিশ্বাস করে কিন্তু এখনো তার থেকে আমার সত্যটা লুকিয়াতি।নাহ আমি হেমন্তিকে সব কিছু বলে দিবো নতুন জীবনের শুরুটা সত্য দিয়েই করা উচিত।
ইলহাম আর কিছুই বললো না চুপচাপ গাড়ি চালাতে লাগলো হেমন্তিও বাহিরের দৃশ্য দেখতে লাগলো।
ইমজাদ হেমন্তির বাসার সামনে সেই কখন থেকে দাড়িয়েই আছে একটু আগে সে দেখেছে হেমন্তি আর তার স্বামীকে হেমন্তির মুখের হাসিটা দেখে তার অনেক ভালো লেগেছে।কিন্তু তার পাশে অন্য জনকে দেখে ইমজাদের বুকে চিন চিন ব্যাথা করছিলো।ইমজাদ চোখের পানি গুলো মুছে হাঁটতে শুরু করলো সে ভেবে নিয়েছে হেমন্তির সামনে সে কখনো যাবেনা এখন সে একজনের স্ত্রী। তাকে জ্বালানো এখন ঠিক হবে না কিন্তু হেমন্তির যদি কোনোদিন তার প্রয়োজন হয় অবশ্যই সে হেমন্তির সাথে দাড়াবে।এসব ভাবতে ভাবতে ইমজাদ নিজ বাসায় চলে আসলো আর সোজা নিজ রুমে চলে গেলো আজ সে একাই সারাদিন কাটাবে।

______________________♥_______________________

হেমন্তি বাসায় পৌছে সবার সাথে দেখা করে নিজ রুম ভালো মতো গুছিয়ে নিয়ে রান্নাঘরে গিয়ে দেখলো হিয়া দাড়িয়ে আছে।দেখেই মনে হচ্ছে হিয়ার শরীরটা ভালো না হেমন্তি এগিয়ে গিয়ে হিয়ার হাতে হাত রাখতেই বুঝতে পারলো হিয়ার জ্বর এসেছে।হেমন্তি অস্থির হয়ে বললো,
~আপু আপনার তো অনেক জ্বর আপনি রুমে যান এসব আমি করে নিবো।
হিয়া মলিন হেসে বললো,
~কিছুই হয়নি আমি রাতের রান্নাটা শেষ করে রুমে গিয়ে রেস্ট করে নিবো।
হেমন্তি এবার একটু জোর খাটিয়ে বললো,
~আপু,আমার কথা না শুনলে আমি ওনাকে ডাক দিবো তারপর যা হবে তা হবে।
হিয়া বললো,
~কাউকে ডাকতে হবে না আমি যাচ্ছি মুরগী বের করে রেখেছি মোরগ পোলাও রান্না করতে যাচ্ছিলাম ফারহান আর ইলহামের অনেক পছন্দ।
হেমন্তি বললো,
~আমি করে ফেলবো আপু আপনি চিন্তা মুক্ত থাকেন।
হিয়া বললো,
~ঠিক আছে।
বলেই সে রান্নাঘর থেকে বের হয়ে সোজা নিজ রুমে চলে গেলো হেমন্তি শাড়ির আঁচল কোমড়ে গুজে কাজে মনোযোগ দিলো।ইলহাম ঘরে এসেই দেখে পুরো ঘর গুছানো কোথাও হেমন্তিকে না দেখে সে ভাবলো হেমন্তি হিয়া কাছে।তাই কার্বাড থেকে কাপড় নিয়ে ওয়াশরুমে চলে গেলো ফ্রেশ হয়ে এসে টাওয়ালটা বিছানায় রেখে রুমের বাহিরে চলে আসলো।তখনই রান্নাঘর থেকে পোলাও এর ঘ্রাণ আসছে ইলহাম ভাবলো হয়তো হিয়া রান্না করছে সে রান্নাঘরের দিকে এগিয়ে যেতেই দেখতে পেলো হেমন্তি টমেটো কাটতে ব্যস্ত।ইলহাম এগিয়ে গিয়ে হেমন্তিকে বললো,
~তুমি রান্না করছো?
ইলহামের কন্ঠ শুনে হেমন্তি বললো,
~হিয়া আপুর শরীরটা ভালো না তাই আমি রান্না করে ফেলেছি।
ইলহাম বললো,
~কী হয়েছে হিয়ার?
হেমন্তি বললো,
~জ্বর এসেছে।
ইলহাম বললো,
~আমি ওকে দেখে আসছি।
হেমন্তি বললো,
~আমি খাবারটা টেবিলে সাজিয়ে নেই আপনি গিয়ে আপুকে ডেকে নিয়ে আসুন।
ইলহাম বললো,
~ঠিক আছে।
হেমন্তি টেবিলে খাবার দিতেই ইলহাম গিয়ে হিয়া সহ সবাইকে ডেকে নিয়ে আসলো।হেমন্তিকে দেখে হিয়া বললো,
~তোমাকে অনেক কষ্ট করতে হলো।
হেমন্তি বললো,
~নিজ বাসায় কাজ করতে আবার কীসের কষ্ট।
আজাদ সাহেব বললেন,
~আজ কী আমার হেমন্তি মা রান্না করেছে?
হেমন্তি প্লেটে খাবার দিতে দিতে বললো,
~জ্বী বাবা।
আজাদ সাহেব বললেন,
~বাহ তাহলে তো আজকের খাবারটা বেশ হবে।
ফারহান বললো,
~ফারুক ভাই আর মা মিস করলো তারা যদি গ্রামে না যেতো তাহলে আজকের খাবারটা খেতে পারতো।
সবাই খাবার খেতেই বলে উঠলো,
~অনেক মজা হয়েছে।
শুধু ইলহামই কিছু বললো না মাথা নিচু করে খেতে লাগলো।খাওয়ার পর হেমন্তি সব গুছিয়ে নিলো একবার হিয়াকে দেখে এসে রুমে চলে গেলো রুমে প্রবেশ করতেই দেখতে পেলো

_____________________♥________________________

ইলহাম রুমে নেই পরক্ষণেই সে দেখলো বারান্দা দরজা খোলা হালকা বাতাসে তা নড়ছে।হেমন্তি ওয়াশরুমে চলে গেলো মুখ-হাত ধুয়ে সে বের হয়ে আসলো।আয়নার সামনে দাড়িয়ে চুলগুলো বেনী পাকিয়ে সে বারান্দায় চলে গেলো সেখানে গিয়ে দেখলো ইলহাম দাড়িয়ে আছে আকাশের দিকে তাকিয়ে আছে।হেমন্তি ধীর পায়ে তার দিকে এগিয়ে এসো বললো,
~রাত অনেক হয়েছে ঘুমাবেন না?
হেমন্তির কথায় ইলহাম তার পাশে তাকালো অন্ধকারে হেমন্তির চেহারা স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছে না।ইলহাম বললো,
~তোমাকে কিছু বলার আছে হেমন্তি।
হেমন্তি বললো,
~কী বলুন?
ইলহাম বললো,
~একটা কথা তো নিশ্চয়ই শুনেছো সত্য সবসময় তেঁতো হয়।
হেমন্তি ভ্রুকুচকে বললো,
~কোন সত্যের কথা বলছেন?
ইলহাম দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে হেমন্তির দিকে ফিরে তাকালো হেমন্তির চোখেচোখ রেখে বললো,
~আমার জীবনে একটা কালো অধ্যায় আছে যা তোমার জানতে হবে।
হেমন্তু শুকনে ঢোক গিলে কাঁপা কাঁপা গলায় বললো,
~আমার ভালো লাগছে না কথা বলতে ঘুমাতে চাই।
ইলহাম বললো,
~তুমি কী ভয় পাচ্ছো হেমন্তি?
হেমন্তি ঘন ঘন নিশ্বাস নিয়ে বললো,
~আমি এখন কথা বলতে চাচ্ছিনা পরে এ বিষয়ে কথা বলবো।
ইলহাম হেমন্তি দু বাহু ধরে বললো,
~তোমাকে শুনতে হবে হেমন্তি আমার জীবনে যেটা ঘটেছে তা জানতে হবে তোমার বিশ্বাস ভাঙ্গতে চাইনা।
হেমন্তির চোখের কোণ বেয়ে পানি গড়িয়ে পরলো আর বললো,
~আমি কী আপনার জীবনের প্রথম নারী নাকি আমার আগেও কেউ ছিলো?
ইলহাম হেমন্তির চোখের পানি মুছে দিয়ে হেমন্তির দিকে পিঠ ফিরিয়ে বললো,
~ছিলো একজন হেমন্তি যে আমার মনে আনাচে কানাচে বসবাস করতো।
ইলহামের কথা শেষ হতেই পিছন থেকে ধপ করে আওয়াজ আসে ইলহাম পিছন ফিরে দেখলো হেমন্তি ফ্লোরে পরে আছে।ইলহাম স্তব্ধ হয়ে গেলো হেমন্তির এ অবস্থা দেখে চোখ দুটো বন্ধ করে আছে হেমন্তি।
ইলহাম হেমন্তির কাছে গিয়ে তাকে কোলে নিয়ে বিছানায় নিয়ে শুইয়ে দিলো আর বললো,

চলবে

(বিদ্রঃকেমন হয়েছে জানাবেন। ভুলগুলো ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখার অনুরোধ রইলো🥰🥰।Happy Reading 🤗🤗)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here