#গল্পের_নাম_অচেনা_শহর
#লেখনীতে_Alisha_Rahman_Fiza
পর্বঃ১১
ইলহাম হেমন্তিকে বিছানায় শুইয়ে দিয়ে বললো,
~হেমন্তি চোখ খুলো কী হয়েছে তোমার?
ইলহাম টেবিল থেকে পানি নিয়ে হেমন্তির চোখে ছিটিয়ে দিতেই হেমন্তি চোখ পিটপিট করে খুললো তার নজর পরলো ইলহামের উপর।ঠোঁটের কোণে হাসি ফুটে উঠলো ইলহামের হেমন্তি তার দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে।ইলহাম হেমন্তির ওপর ঝুঁকে বললো,
~তুমি তো আমাকে ভয় পাইয়ে দিয়েছিলে।
ইলহামের কথা শেষ হতেই হেমন্তি তাকে জড়িয়ে ধরলো ইলহাম এতে অবাক হয়ে গেলো কিন্তু নিজের পরিস্থিতি হেমন্তিকে বুঝতে না দিয়ে সেও খুব কাছে টেনে নিলো হেমন্তিকে।ইলহাম বললো,
~তুমি ঠিক আছো?
হেমন্তি কিছুই বলছেনা সে ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কাঁদছে ইলহাম বললো,
~কান্না করছো কেন?
হেমন্তি এবার মুখ খুললো সে বললো,
~আমার কিছু জানার নেই আপনার অতীত সম্পর্কে আপনি শুধু এতটুকু বলুন এখনো কী আপনার মনে অন্য কারো বসবাস?
ইলহাম দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বললো,
~তোমাকে পেয়ে যে তাকে আমি ভুলে গেছি সে এখন আমার কাছে #অচেনা_শহর।
হেমন্তি ইলহামকে ছেড়ে দিয়ে তার চোখে চোখ রেখে বললো,
~আমাকে ওয়াদা করবেন আমি যে পর্যন্ত বেঁচে আছি আপনার এই মনে শুধু আমি থাকবো।আমি আপনাকে অন্য কারো সাথে সহ্য করতে পারবো না এই দিন দেখার আগে আমি নিজেকে শেষ করে
হেমন্তির কথা শেষ হওয়ার আগেই ইলহাম নিজ ওষ্ঠ জোড়া দিয়ে হেমন্তির ওষ্ঠ জোড়ায় স্পর্শ করলো।হেমন্তি চোখ বড় করে তাকিয়ে আছে কিছুক্ষন পর ইলহাম তার ওষ্ঠ জোড়া ছেড়ে দিয়ে বললো,
~একদম এসব কথা বলবে না।
বলেই সে হেমন্তিকে আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে ধরলো হেমন্তিও তাকে পেয়ে পরম আবেশে চোখ বন্ধ করে নিলো।
হেমন্তি মনে মনে বললো,
~জানতে চাই না আপনার অতীত কারণ আপনার জীবনে অন্য কারো বসবাস ছিলো সেটা আমার কাছে কোনো দরকারি বিষয় না।এখন আপনার জীবনে শুধু আমি থাকবো অন্য কারো না আপনার এই ঠোঁটে শুধু আমার নাম থাকবে আমি আপনাকে এমন ভাবে আগলে রাখবো কোনো অতীত আপনার মনে থাকবে না।সেটাকে আপনি দুঃস্বপ্ন ভেবে ভুলে যাবেন এটা আমার ওয়াদা আপনাকে একটা সুখের রাজ্য আপনাকে নিয়ে গড়বো আমি।
ইলহাম হেমন্তিকে জড়িয়ে ধরেই ঘুমিয়ে পরেছে হেমন্তি ইলহামের কপালে একটা পরশ এঁকে দিয়ে নিজেও চোখ বন্ধ করে নিলো একটা শান্তির ঘুমের প্রয়োজন। কারণ আগামীকাল থেকে সব কিছু নতুন ভাবে শুরু করতে হবে তাহলেই ইলহাম ওই অতীতকে ভুলতে পারবে।
_____________________♥________________________
ফজরের নামায শেষ করে কিছুক্ষণ কোরআন তিলাওয়াত করে হেমন্তি রান্নাঘরে চলে গেলো নাস্তা আর ইলহামের টিফিন তৈরি করতে।হেমন্তি নাস্তা তৈরি করে টেবিলে সাজাতেই হিয়া এসে উপস্থিত হিয়াকে দেখে হেমন্তি বললো,
~আপু এখন আপনার শরীর কেমন?
হিয়া মুচকি হেসে বললো,
~ভালো আজ মা চলে আসবে ওনার সাথে দুপুরবেলা আর বিকেলে আমরা চলে যাবো।
হেমন্তি বললো,
~আরো কয়েকদিন থেকে যান আপু আমি একা হয়ে যাবো।
হিয়া বললো,
~তুমি তো জানোই কিছুদিন পর দেশ ছেড়ে চলে যাবো বাসার অনেক কাজ বাকি।
হেমন্তি বললো,
~ঠিক আছে আপু সব কাজ শেষ করে আবার চলে আসবেন।
হিয়া টেবিলের দিকে তাকিয়ে বললো,
~নাস্তা তৈরি হয়ে গেছে?
হেমন্তি বললো,
~জ্বী আপু আর ফারহানের টিফিনও রেডি করে দিয়েছি।
হিয়া বললো,
~ধন্যবাদ হেমন্তি।
হেমন্তি বললো,
~এতে ধন্যবাদের কী আছে আপু? ফারহান আমার ভাইয়ের মতো ছেলেটা অনেক ভালো।
হিয়া বললো,
~অনেক ভালো শুধু পড়ালেখার বেলায় গোল্লা যায়।
হেমন্তি হেসে ফেললো আর বললো,
~আপু আপনি ফারহানকে আর বাবাকে ডেকে তুলেন আমি ওনার অফিসের লাঞ্চ বক্সটা তৈরি করি।
হিয়া বললো,
~ঠিক আছে।
হেমন্তি ইলহামের লাঞ্চ বক্স তৈরি করে ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখলো ৮.৪৫ বাজে।হেমন্তি রুমে চলে আসলো ইলহামের সব প্রয়োজনীয় জিনিস গুছিয়ে দিয়ে ইলহামের কাছে গিয়ে তাকে ডাকতে লাগলো,
~এই যে উঠুন ৯টা বেজে যাবে অফিসের জন্য লেট হয়ে যাবেন।
ইলহাম ঘুমুঘুমু চোখে হেমন্তির দিকে তাকালো হেমন্তি বললো,
~উঠুন আপনার অফিসে না জরুরি মিটিং আছে।
ইলহাম এবার উঠে বসলো আর বললো,
~কটা বাজে?
হেমন্তি বললো,
~৮.৫৫ বাজে আপনাকে ডাকতে ১০ মিনিট লেগেছে।
হেমন্তির কথায় ইলহাম তড়িঘড়ি করে উঠে বললো,
~লেট হয়ে যাবে।
তখনই দেখলো তার সব জিনিস গুছিয়ে রাখা আছে ইলহাম বুঝলো এটা হেমন্তির কাজ।
_____________________♥________________________
সে একবার হেমন্তি দিকে তাকিয়ে দেখলো হেমন্তি নিজ ব্যাগ গুছিয়ে রাখছে হয়তো আজ ভার্সিটি যাবে।ইলহাম মুচকি হেসে ওয়াশরুমে চলে গেলো হেমন্তি বাহিরে এসে দেখলো সবাই নাস্তার টেবিলে বসে আছে।হিয়া তাদের খাবার সার্ভ করছে হেমন্তি আজাদ সাহেবের পাশে দাড়িয়ে বললো,
~বাবা,আপনি আজকে আমাকে একটু ভার্সিটি দিয়ে আসবেন আসলে আমি রাস্তাটা ঠিক চিনবোনা এ বাসা থেকে।
আজাদ সাহেব বললেন,
~ইলহামের কী অফিসে জরুরি কাজ আছে?
হেমন্তি বললো,
~জ্বী।
আজাদ সাহেব বললেন,
~কোনে সমস্যা নেই বাবা মেয়ে মিলে চলে যাবো আমারও ভালো লাগবে।
হেমন্তি হেসে উঠলো তখনই সেখানে ইলহাম এসে উপস্থিত হলো সে একটা চেয়ার টেনে বসে পরলো।হেমন্তি ইলহামের প্লেটে খাবার দিতেই ইলহাম বলে উঠলো,
~ভার্সিটি কখন যাবে?
হেমন্তি বললো,
~১ ঘন্টা পর।
ইলহাম বললো,
~আমার মিটিংও ১ ঘন্টা পিছিয়েছে তোমাকে ভার্সিটি পৌছে তারপর অফিস যাবো।
আজাদ সাহেব বললেন,
~হেমন্তি মা তো আজ আমার সাথে যাবে বলেছে।
ইলহাম বললো,
~কষ্ট করে তোমার যেতে হবে না আমি পৌছে দিচ্ছি।
আজাদ সাহেব হালকা হেসে বললেন,
~ঠিক আছে।
হেমন্তি বাকি সব কাজ শেষ করে হিয়াকে বললো,
~আপি,দুপুরের রান্না করা শেষ সব গুছিয়ে রেখেছি আর আমি ২ টোর মধ্যে এসে পরবো ভাইয়া আর আন্টি আসলে তাদের কে নিয়ে খেয়ে নিয়েন।
হিয়া বললো,
~সেটার চিন্তা তোমার করতে হবে না হেমন্তি। তুমি ঠান্ডা মাথায় ভার্সিটি যাও আমি আছি।
হেমন্তি বললো,
~বাবার জন্য কমলার জুস করে রেখেছি তাকে দিয়েন।
হিয়া বললো,
~ঠিক আছে একদম সব কাজ শেষ করেই দিয়েছো।
হেমন্তি হেসে রুমে চলে আসলো তারপর বোরখা পরে নিজ ব্যাগ নিয়ে ইলহামকে বললো,
~চলেন দেরি হয়ে যাচ্ছে।
_____________________♥________________________
কেয়ার জন্য বাসায় নতুন টিচারের ব্যবস্থা করা হয়েছে তার জন্য ম্যাডামের মাথা নষ্ট সে কোনো ভাবেই বাসায় পড়বেনা কারণ বাসায় মা থাকে যখনই পড়া পারবেনা মা ধরে ক্যালানি দিবে।পারভীন বেগম বললেন,
~কোনো বাহানা চলবেনা স্যারটা অনেক ভালো আমি শুনেছি আর তুই যদি কোনো উল্টাপাল্টা কিছু করেছিস তোর একদিন কী আমার একদিন।
কেয়া আফজাল হোসেনের কাছে গিয়ে বললো,
~মা কে একটু বোঝাও কলেজ পড়ুয়া মেয়েকে সে মারবে।
আফজাল হোসেন বললেন,
~দেখ মা ছেলেটা ভালো আমারই বন্ধুর ছেলে চাকরির জন্য আবেদন করেছে এখন খালি বসে আছে তাই সে টিউশনি করতে চায়।তোমাকে খুব যত্ন নিয়ে পড়াবে আমার কথাটা শুনো এইবারের মতো।
বাবার কথায় কেয়ার রাগ আরো বেড়ে গেলো সে রুমে গিয়ে ধুম করে দরজা বন্ধ করে বললো,
~আসুক একবার স্যার তারপর বুঝাচ্ছি মজা।
অনু ভার্সিটি পৌছে আগে ইমজাদের খবর নেওয়া শুরু করলো ইমজাদের এক ক্লাসমেট তাকে জানালো সে লাইব্রেরিতে আছে।অনু আর দেরি না করে লাইব্রেরিতে চলে যায় সেখানে গিয়ে দেখলো ইমজাদ বই নিয়ে বসে আছে আবার খাতায় লেখালেখিও করছে।অনু ধীর পায়ে এগিয়ে এসে বললো,
~ইমজাদ ভাইয়া আপনার শরীর এখন কেমন?
ইমজাদ চোখ তুলে অনুর দিকে তাকালো আর বললো,
~এখন ভালো আছি।
অনু ইমজাদের বরাবর বসে বললো,
~একটা প্রশ্ন জিজ্ঞেস করি?
ইমজাদ বইয়ের দিকে চোখ রেখে বললো,
~করো।
অনু শুকনো ঢোক গিলে বললো,
~আপনি কী হেমন্তিকে ভালোবাসেন?
অনু প্রশ্ন করে ইমজাদের দিকে তাকিয়ে দেখে সে বইয়ের দিকেই তাকিয়ে আছে অনু ভাবলো হয়তো সে ভুল ভাবছে।অনু উঠে চলে আসতে নিবে তখনই ইমজাদ বললো,
~এই প্রশ্নটার জবাব হ্যাঁ আর শোন হেমন্তি এখন অন্য জনের বউ তাকে নিয়ে এসব বলবেনা ভার্সিটিতে জানাজানি হলে খারাপ হয়ে যাবে।
অনু একবার ইমজাদের দিকে তাকিয়ে সেখান থেকে হনহন করে চলে আসলো তখনই তার দেখা হলো
চলবে
(বিদ্রঃকেমন হয়েছে জানাবেন। ভুলগুলো ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখার অনুরোধ রইলো🥰🥰।Happy Reading 🤗🤗)