#গল্পের_নাম_অচেনা_শহর
#লেখনীতে_Alisha_Rahman_Fiza
পর্বঃ১৬
হেমন্তি ইলহামের সাথে রাতের শহর দেখতে বেড়িয়ে পরেছে গাড়ি চলছে নিজ গতিতে।হেমন্তি জানালার বাহিরে তাকিয়ে আছে রাস্তার ল্যাম্পপোস্টের আলোতে সবই আলোকিত।ইলহাম গাড়ি চালাতে চালাতে বললো,
~হেমন্তি,আজ তোমায় আমার অনেক পছন্দরে একটা রেস্টুরেন্টে নিয়ে যাবো সেখানের খাবার অনেকই টেস্টি।
হেমন্তি বললো,
~ঠিক আছে সবাই এক সাথে আসলে অনেক মজা হতো।
ইলহাম বললো,
~তা হতো কিন্তু আমরা দুজনে আজ কিছু একান্ত সময় কাটাবো রাতের শহরটাকে অনুভব করবো হাতে হাত রেখে এই তারাময় আকাশটাকে দেখবো।
হেমন্তি মুচকি হাসলো ও ভাবলো,
~আমার মনের ইচ্ছে গুলো আপনি অজান্তেই পূরণ করে দিচ্ছেন।
কিছুক্ষণ পর গাড়ি এসে থামলো রেস্টুরেন্টের সামনে হেমন্তি আগেও এই রেস্টুরেন্টে এসেছে তার পরিবার নিয়ে আজ এসেছে স্বামীর সাথে।তাই এই পুরোনো জায়গাটাও নতুন লাগছে তার ইলহাম হেমন্তির হাত ধরে রেস্টুরেন্টে প্রবেশ করতেই একজন ওয়েটার এসেছে ইলহামকে বললো,
~আপনাদের কী আগে থেকে বুকিং আছে?
ইলহাম বললো,
~জ্বী আমি আলাদা করে একটা টেবিলের বুকিং করিয়েছিলাম আমার এবং আমার ওয়াইফের জন্য।
ওয়েটারটা বললো,
~স্যার আপনি আমার সাথে আসুন।
হেমন্তি আর ইলহাম তার পিছে হাঁটতে লাগলো রাতের জন্য এতো ভিড় নেই অনেকটাই শান্ত পরিবেশটা।ইলহাম আর হেমন্তিকে টেবিল দেখিয়ে দিয়ে সেই লোকটি চলে গেলো হেমন্তি আশেপাশে চোখ বুলাতেই অবাক হয়ে গেলো কারণ পুরো জায়গাটা অনেক সুন্দর করে সাজানো। হয়তো ইলহাম এসব especially তার জন্য করেছে ইলহাম এগিয়ে এসে চেয়ার টেনে হেমন্তিকে বসতে ইশারা করলো।হেমন্তি বসে পরলো ইলহাম ঠিক তার সামনে বসে পরলো হেমন্তির অনেক ভালো লাগছে মনে এক আলাদা ভালো লাগে কাজ করছে।ইলহাম বললো,
~তোমার সব পছন্দ হয়েছে তো?আসলে হিয়া সব কিছু arrange করেছে আমি তো কোনো দিন করেনি কিন্তু এই বার সব শিখে নিয়েছি পরেরবার সব নিজে থেকে করবো।
হেমন্তি ফিক করে হেসে বললো,
~সব কিছু অনেক সুন্দর হয়েছে আমার অনেক ভালে লাগছে।
তখনই খাবার উপস্থিত করা হলে সবকিছু হেমন্তির পছন্দের হেমন্তি আরো অবাক হয়ে বললো,
~আপনি আমার পছন্দের খাবারের কথা জানলেন কী করে?
ইলহাম প্লেটে খাবার তুলে দিতে দিতে বললো,
~কেয়াকে ধন্যবাদ সে আমাকে এ বিষয়ে সাহায্য করেছে।
হেমন্তি বললো,
~বাহ সব তো ভালোই চলছে।
ইলহাম বললো,
~এখন খেয়ে বলো কেমন হয়েছে?
হেমন্তি মুখে খাবার দিয়ে বললো,
~অনেক ভালো হয়েছে।
ইলহাম মুখে একটা বড় হাসি টেনে নিজেও খেতে শুরু করলো খাওয়া শেষ হতেই ওয়েটাররা সব গুছিয়ে নিলো এরপর একটা কেক নিয়ে আসলো।হেমন্তি বললো,
~কেক কেন?
ইলহাম বললো,
~আমাদের বিয়ের খুশীতে।
হেমন্তি বললো,
~বিয়ের খুশীতে?বিয়ে হয়ে ১০দিন কেটেও গেছে।
ইলহাম বললো,
~তাতে কী হয়েছে এখন সেলেব্রেট করবো।
হেমন্তি আর ইলহাম একসাথে কেক কাটলে ইলহাম হেমন্তিকে কেক খাইয়ে দিলো। এরপর যা হলো তা অবিশ্বাস্য ছিল কারণ ইলহাম হাতে আংটি নিয়ে হাঁটু গেড়ে বসে আছে।হেমন্তি বললো,
~আপনি এসব কী করছেন?
ইলহাম বললো,
~বিয়ের জন্য propose তো করতে পারিনি তাই ভাবলাম লং ড্রাইভে যাওয়ার জন্য propose করে ফেলি।তো মিসেস হেমন্তি আপনি কী আমার সাথে লং ড্রাইভে যাবেন?
হেমন্তি হেসে ফেললো আর হাত এগিয়ে বললো,
~অবশ্যই যাবো।
ইলহাম হেমন্তির হাত ধরে তার আঙ্গুলে আংটি পরিয়ে দিয়ে উঠে দাড়িয়ে বললো,
~চলো তাহলে যাওয়া যাক।
______________________♥_______________________
হেমন্তি আর ইলহাম গভীর রাত পর্যন্ত গাড়ি নিয়ে শুধু ঘুরেছে রাতের বেলা চা খাওয়ার যে এতো মজা তা হেমন্তি জানতোনা।বাসায় পৌছে দুজনই ক্লান্ত হয়ে যায় হেমন্তি ফ্রেশ হয়ে এসে জানালার সামনে দাড়িয়ে আছে বার বার হাতে আংটিটা সে দেখছে আর হাসছে।হঠাৎ পিছন থেকে ইলহাম তাকে জড়িয়ে ধরে বললো,
~ঘুমাবেনা?
হেমন্তি বললো,
~হুম ঘুমাবো তো।
ইলহাম হেমন্তিকে ছেড়ে দিয়ে বিছানায় এসে পরলো হেমন্তি ইলহামের পাশে শুয়ে পরলো তখনই ইলহাম তাকে আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে ধরলো।হেমন্তি ইলহামের মাথায় হাত বুলাতে বুলাতে এক পর্যায়ে ঘুমিয়ে পরলো চলে গেলো সুখের রাজ্যে।
ইমজাদের পরিবারে বিয়ের তোড়জোড় শুরু হয়ে গেছে অনুর মা এ বিয়েতে মত দিয়েছে।তাই আজ তারা অনুর বাসায় যাবে বিয়ের ডেট ফিক্সড করতে ইমজাদ এসবে বিরক্ত হচ্ছে কিন্তু মায়ের কারণে কিছু বলছেনা।ইমজাদ
বারান্দায় দাড়িয়ে আকাশের দিকে একদৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে আর মনে মনে বললো,
~হেমন্তি তো সুখে আছে তার জীবনসঙ্গীনি নিয়ে তাহলে আমি এভাবে নিজেকে কষ্ট কেন দিচ্ছি?অনু মেয়ে ভালো অনুর ভিতরে আলাদা এক মায়া আছে।অনু তো কাল কিছুই ভুল বলেনি আমি এগিয়ে যাবো জীবনে হেমন্তি সবসময় আমার জীবনের এক বিশেষ জায়গায় থাকবে থাক সেটা অসম্পূর্ণ।
এতটুকু ভেবে ইমজাদ দীর্ঘশ্বাস ফেললো তখনই তার ফোন বেজে উঠলো আননোন নাম্বার থেকে ফোন এসেছে দেখে ইমজাদ ভ্রুকুচকে ফোন রিসিভ করে কানে রাখলো।অপরপাশ থেকে অনু কড়া গলায় বললো,
~এখনো কী নিজের মতামত বদলান নি আপনি?ঠিক আছে আমি সব গুছিয়ে আপনার বাড়ি চলে আসছি আজই বিয়ে হবে।
ইমজাদ বললো,
~থামো থামো এত কথা কীভাবে বলো তুৃমি?কোথাও আসতে হবে না আমি আজ আসছি তোমার বাসায়।
অনু বললো,
~সব ঠিকঠাক আছে তো?
ইমজাদ বললো,
~সব ঠিকঠাক আছে।
অনু হালকা হেসে বললো,
~আপনার যে একট নীল রঙ্গের পাঞ্জাবি আছে না সেটা পরে আসবেন।
ইমজাদ বললো,
~কেন?
অনু বললো,
~সেই পাঞ্জাবিতে আপনাকে প্রথমবার দেখেছিলাম তাই।
ইমজাদ বললো,
~আচ্ছা চেষ্টা করবো।
অনু বললো,
~চেষ্টা মানে অবশ্যই ওটা পরে আসবেন আমি বলেছি তাই।
ইমজাদ বললো,
~আচ্ছা গুন্ডি মেয়ে তো তুমি আমায় জ্বালিয়ে খাবে।
অনু বললো,
~সে আবার বলতে।
বলেই অনু ফোন কেটে দিলো আর ইমজাদ ফোনের দিকে তাকিয়ে মুচকি হেসে রুমে চলে গেলো।
_____________________♥______________________
অনুর মা হেমন্তি আর ওর পরিবারকে ফোন করে জানিয়ে দিলো সব কথা।হেমন্তিকে বলা হলো সবাইকে নিয়ে একসাথে তাদের বাড়ি আসতে হেমন্তি হা হয়ে আছে সকালবেলা ঘুম থেকে উঠেই যে এতো বড় শক খাবে সে জানতোনা।কালকে রাতে দেরি করে ঘুমানোর ফলে হেমন্তির ঘুমও দেরি করে ভেঙেছে নাস্তা বানাচ্ছিলো তখনই ফোন এসে তাকে ঝটকা দিয়ে গেলো।ইলহাম হেমন্তিকে এভাবে বসে থাকতে দেখে বললো,
~কী হয়েছে?
হেমন্তির ধ্যান ভাঙ্গলো সে বললো,
~অনুর বিয়ে।
ইলহাম চেয়ার বসে বললো,
~এতো খুশীর সংবাদ।
হেমন্তি বললো,
~বিয়ে তা ঠিক আছে কিন্তু ইমজাদ ভাইয়ার সাথে বিয়ে।
ইলহাম বললো,
~তো কী হয়েছে?
হেমন্তি ইলহামকে সব বললো ইমজাদের ব্যাপারে ইলহাম সব শুনে হেসে বললো,
~সব হলো আল্লাহর ইচ্ছে বুঝেছো আমি অফিস থেকে তাড়াতাড়ি ফিরে আসবো তুমি রেডি হয়ে থেকো রাতেই তো যেতে হবে।
হেমন্তি বললো,
~হুম আর মাকেও জিজ্ঞেস করে নিচ্ছি।
ইলহাম বললো,
~বাবা আজও হিয়ার বাসায়ই থাকবে।
হেমন্তি বললো,
~বাবাকে ছাড়া ভালো লাগে না তাকে ফিরে আসতে বলুন।
ইলহাম বললো,
~আজ থেকে আসুক কাল চলে আসবে।
হেমন্তির মাথায় ইলহাম ভালোবাসার পরশ দিয়ে অফিসের জন্য রওনা দিলো।কেয়া পুরো আলমারি উলোটপালোট করে ফেলেছে কোন ড্রেস পরবে সে খুজেই পাচ্ছে না কেয়া জোরে পারভীন বেগমকে ডেকে উঠলো আর বললো,
~মা মা আমার কোনো ড্রেসই ভালো লাগছেনা।
পারভীন বেগম বললেন,
~তোকে মেরে আমি ভর্তা বানাবো এতো ড্রেস থাকতেও ওর ড্রেস নেই।ওই লালটা পর তুই এখন মাথা খাবি না আর।
কেয়া বললো,
~আপু থাকলে আমার সব কথা শুনে।
পারভীন বেগম বললেন,
~তাহলে আপুকে ফোন করে বল।
তখনই সেখানে তানভীর এসে উপস্থিত হলো পারভীন বেগম তানভীরকে বললো,
~আজ রাতে আমরা হেমন্তির বান্ধবী অনুর বাসায় যাবো তুমিও তৈরি থেকো।
তানভীর বললো,
~আমি গিয়ে কী করবো আন্টি আপনাদের পরিবারের মাঝে আমার কী কাজ?
পারভীন বেগম বললেন,
~তুমিও আমাদের পরিবারের সদস্য তাই তুমিও যাবে।এটা ফাইনাল কথা
তানভীর আর কিছুই বললো শুধু মাথা দুলিয়ে সম্মতি জানালো।
_____________________♥________________________
দিনটা যেনো খুব তাড়াতাড়িই চলে গেলো হেমন্তি রেডি হচ্ছে ইলহাম তার খোঁপায় বেলীফুল গুজে দিতে ব্যস্ত।হেমন্তি বললো,
~আপনার জন্য আমার চুল নষ্ট হয়ে যাবে।
ইলহাম বললো,
~নষ্ট হবে না হিয়ার চুলে অনেক গুজে দিয়েছি আগে।
বলেই সে নিজ কাজ শেষ করে বললো,
~দেখো একদম পারফেক্ট হয়েছে।
হেমন্তি বললো,
~হ্যা একদম ঠিক হয়েছে।
ইলহাম বললো,
~অনুর জন্য কী গিফট নিয়ে যাবে?
হেমন্তি বললো,
~আমি ওর জন্য একটা শাড়ি নিয়েছি বিকেল বেলা শপিংয়ে গিয়েছিলাম।
ইলহাম বললো,
~ভালো করেছো অনুর হাসবেন্ডও যদি আমার মতো হয় যে শুধু বউকে শাড়িতেই দেখবে তাহলে শাড়ি খুব দরকার হবে তার।
হেমন্তি হেসে বললো,
~হয়তো।
কিছুক্ষণ পর হেমন্তি আর ইলহাম অনুর বাসার উদ্দেশ্যে রওনা হলো।অনুদের বাসায় পৌছাতেই অনুর মায়ের সাথে দেখা হয়ে গেলো ইলহাম তার সাথে কুশলাদি করলো এরপর দুজনই অনুর কাছে চলে গেলো।অনুর রুমে প্রবেশ করতেই তারা দেখলো অনু রেডি হয়ে বসে আছে হেমন্তি অনুর কাছে যেতেই অনু হেমন্তিকে জড়িয়ে ধরলো।তা দেখে ইলহাম বললো,
~দুলাভাইকে কেউ ভুলে গেছে?
অনু বললো,
~একদম না দুলাভাই আপনি এসেছেন এতে আমি অনেক খুশী।
তখনই কেয়া প্রবেশ করলো ঘরে হেমন্তি তাকে দেখে বললো,
~মা-বাবা এসেছে?
কেয়া বললো,
~শুধু মা-বাবা না বরও চলে এসেছে।
বর চলে এসেছে শুনে অনুর একটু ভয় হলো না জানে ইমজাদ কেমন রিয়েক্ট করবে হেমন্তিকে দেখে?
চলবে
(বিদ্রঃকেমন হয়েছে জানাবেন। ভুলগুলো ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখার অনুরোধ রইলো🥰🥰।Happy Reading 🤗🤗)