অচেনা শহর পর্বঃ১৫

0
2298

#গল্পের_নাম_অচেনা_শহর
#লেখনীতে_Alisha_Rahman_Fiza
পর্বঃ১৫
অনু ভার্সিটি এসে কোনোদিক না তাকিয়ে সোজা ক্লাসরুমে চলে গেলো চুপচাপ নিজের সীটে বসে পরে আর খাতা বের করে চোখ বুলাতে থাকে।তার আজ অনেক অস্তিত্ব হচ্ছে সে বার বার ভাবছে যদি তার দেখা ইমজাদের সাথে হয়ে যায় তাহলে কতোটা লজ্জায় পড়তে হবে শুধু সেই জানে।অনুর এখন নিজেকে অসহায় মনে হচ্ছে আগে তো ইমজাদের সাথে তাও দেখা করতে পারতো এখন তো তাও হবে না সব দোষ তার আগে যদি একবার ছবিটা দেখতো।অনু নিজ ব্যাগ থেকে ফোন বের করে হেমন্তিকে একটা ফোন করলো রিং হতেই হেমন্তি ফোন রিসিভ করলো আর বললো,
~অনু আমি এখনই তোকে ফোন করতাম আসলে আজ আমি আসতে পারবো না বাসায় মেহমান তাই।
অনু একটু রেগে গিয়ে বললো,
~তুই আগে বলবিনা আমি ভার্সিটি পৌছে গেছি এখন একা একা কী করবো?
হেমন্তি বললো,
~রাগ করিস না তুই আজ একাই ক্লাসটা করে নে।
অনু দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বললো,
~ঠিক আছে আমি ফোন রাখছি।
বলেই সে ফোন রেখে দিলো আর ভাবতে লাগলো এখন সে কীভাবে একা থাকবে হেমন্তি থাকলে ওর পিছনে লুকিয়েও ইমজাদের থেকে বাঁচা যেতো।অনু একটা সিদ্ধান্ত নিলো সে মনে মনে বললো,
~আজ আর ক্লাস করবো না সোজা বাসায় চলে যাই এখনো ইমজাদের ভাইয়ার ভার্সিটি আসতে অনেক দেরি।
অনু আর কিছু না ভেবে ব্যাগটা কাধে নিয়ে ক্লাসরুম থেকে বের হয়ে সিড়ি বেয়ে নামতে লাগলো।তখনই তাকে পিছন থেকে কেউ ডেকে উঠলো অনু ঘাড় ঘুরিয়ে দেখলো ইমজাদের ফ্রেন্ড রাসেল।অনু ভ্রুকুচকে বললো,
~কী হয়েছে ভাইয়া?
রাসেল বললো,
~তোমায় ইমজাদ ডেকেছে ভার্সিটির শেষ মাথায় যে গাছটা আছে সেখানে চলে যাও।
অনু শুকনো ঢোক গিলে বললো,
~আমায় কেন ডেকেছে?
রাসেল বিরক্তি নিয়ে বললো,
~তা বলতে পারবো না আমার ক্লাস আছে তুমি চলে যাও।
বলেই রাসেল তাকে পাশ কেটে চলে গেলো অনুর অনেক ভয় করছে হয়তো ইমজাদ তাকে অপমান করবে বা ভুল বুঝবে।অনুর এখন মাথা কাজ করছে না কী থেকে কী করবে কিছুই বুঝতে পারছে না।অনু শেষমেষ ভার্সিটির শেষ মাথায় সেই গাছের সামনে চলে আসলে আর দেখলো ইমজাদ দাড়িয়ে আছে গাছের সাথে হেলান।অনু ধীর পায়ে সেখানে চলে গেলো ইমজাদ থেকে বেশ দুরত্ব বজায় রেখে সে দাড়িয়ে পরলো আর বললো,
~আমাকে ডেকেছেন আপনি?
ইমজাদ অনুর কন্ঠ শুনে তার দিকে ফিরে তাকালো মাথা থেকে পা পর্যন্ত অনুকে দেখে বললো,
~অনু,আমি জানতাম না পাত্রী তুমি বের হবে না হলে কোনোদিন তোমার বাসায় যেতাম না।
অনু ইমজাদের দিকে তাকিয়ে বললো,
~কেন আমি কী মেয়ে হিসেবে খারাপ যে আমাকে দেখতে যেতে পারেন না?
অনুর প্রশ্নে ভ্যাবাচেকা খেয়ে গেলো ইমজাদ সে আমতা আমতা করে বললো,
~তেমন কিছুই না আসলে তুমি যদি আমায় ভুল বুঝো তাই বললাম আর কি?তুমি তো আমার ব্যাপারে সব জানো আমার বাসা থেকে অনেক প্রেসার দিচ্ছে তোমাকে বিয়ে করার জন্য। তুমি যদি না করে দেও তাহলে জিনিসটা আর বড় হবে না তুমি বুঝতে পেরেছো অনু?
অনুর রাগ উঠতে শুরু করলো ইমজাদের কথা শুনে নিজেকে কন্ট্রোল করতে না পেরে এমন একটা ঘটনা ঘটালো সে যা কেউ ভাবতে পারেনি।অনু ইমজাদের কলার ধরে বললো,
~আমি কী পুতুল যে আমার সব অনুভূতি নিয়ে খেলবেন?আমি এই বিয়ের জন্য না করবোনা আর শুনুন আপনার সাথে হেমন্তির কোনে সম্পর্ক ছিল না যা ছিল শুধু ভালো লাগা তাও আপনার তরফ থেকে হেমন্তি তো কতো সুখে আছে।আপনাকেও সুখে থাকতে হবে তাও আমার সাথে বুঝতে পেরেছেন ইমজাদ।
অনুর এহেন কান্ডে ইমজাদ অবাক হয়ে তার দিকে তাকিয়ে আছে অনু তার কলার ছেড়ে দিয়ে সেখান থেকে চলে গেলো।ইমজাদ এখনো হাবার মতো অনুর যাওয়ার দিকে তাকিয়ে রইলো তার মাথা কাজ করা বন্ধ হয়ে গেছে।

______________________♥_______________________

আরাফাত আর এশা পরীকে নিয়ে রওনা হলো নিজেদের বাসায় হেমন্তি পরীর গালে চুমো খেয়ে বললো,
~আমার মামুনিটা যাতে আবার আমার কাছে চলে আসে।
পরী খিলখিল করে হেসে উঠলো এশা হেমন্তিকে বললো,
~তুমি আমাদের বাসায় অবশ্যই যাবে।
হেমন্তি বললো,
~ইনশআল্লাহ ভাবি যাবো।
আরাফাত ইলহামকে বললো,
~আজ তো অফিসে দুপুরের পর যেতে হবে?
ইলহাম বললো,
~মিটিং এর জন্যই যেতে হবে আর বস বলেছে মিটিংয়ের সব কিছু বাসায় বসে তৈরি করে নিতে।
আরাফাত বললো,
~তাহলে আমি বাসায় পৌছে সব কাজ দেখে নিচ্ছি।
ইলহাম বললো,
~ok.
তারপর তারা বাসা থেকে বের হয়ে গেলো হেমন্তি তাদের বিদায় নিয়ে রুমে গিয়ে সব কিছু গুছিয়ে নিলো।তারপর রান্নাঘরে চলে গেলো তখনই ইলহাম সেখানে উপস্থিত হয়ে বললো,
~হেমন্তি একটু রুমে আসো তো।
হেমন্তি হাতের কাজ রেখে সোজা রুমে চলে গেলো ইলহাম শুয়ে আছে হেমন্তি বললো,
~ডেকেছেন?
ইলহাম বললো,
~প্রচুর মাথাব্যথা করছে একটু মাথায় হাত বুলিয়ে দিবে?
এমন আবদার হেমন্তি চাইলেও অগ্রাহ্য করতে পারবেনা সে ধীর পায়ে ইলহামের মাথা কাছে বসে পরলো।ইলহাম হেমন্তির কোলে মাথা রেখে দিলে হেমন্তি এতে নড়েচড়ে উঠলো কাঁপা কাঁপা হাতে ইলহামের চুলে হাত ডুবালো ইলহাম আরো আবেশে হেমন্তির কোলে মাথা রাখলো।ইলহাম বললো,
~হেমন্তি,তোমার পাহাড় পছন্দ নাকি সমুদ্র?
হেমন্তি অবাক হয়ে বললো,
~কেন?
ইলহাম চোখ খুলে হেমন্তির দিকে তাকিয়ে বললো,
~প্রশ্নের জবাব দিতে হয় নাকি আবার প্রশ্ন করতে হয়?
হেমন্তি বললো,
~সমুদ্র বেশি পছন্দ।
ইলহাম বললো,
~তাহলে কী পাহাড়ও পছন্দ?
হেমন্তি বললো,
~হ্যা কিন্তু সমুদ্র বেশি ভালো লাগে যখন সমুদ্রের পানি আমার শরীরকে ছুয়ে যায় তখন অনেক ভালো লাগে।
ইলহাম মুচকি হেসে বললো,
~তাহলে এবার পুরো পরিবার যদি সমুদ্র বিলাস করতে যাই তাহলে কী ক্ষতি হবে?
হেমন্তি বললো,
~একদমই না অনেক ভালো হয়।
ইলহাম বললো,
~তাহলে হিয়াকে জানাতে হবে তাদের যাওয়ার আগে আমাদের একটা ট্রিপও হয়ে যাবে।
হেমন্তি মাথা দুলালো ইলহাম হেমন্তির কোল থেকে উঠে হেমন্তির মুখ দুহাতে নিয়ে কপালে ওষ্ঠজোড়া ছুইয়ে দিয়ে বললো,
~তোমার কী কোনো লাল শাড়ি আছে?
হেমন্তি মাথা নিচু করে বললো,
~আছে আপু দিয়েছে।
ইলহাম বললো,
~আমার জন্য আজকে পরবে সেই শাড়িটা তোমাকে নিয়ে রাতের শহর দেখতে বের হবো বাবা আজ হিয়ার বাসায় গিয়ে থাকবে।
হেমন্তি হেসে বললো,
~ঠিক আছে।
ইলহাম বললো,
~তাহলে অফিস থেকে ফিরে এসে যাতে তোমায় রেডি দেখি।

____________________♥________________________

হিয়া আর ফারুকের পাসপোর্ট চলে এসেছে আর মাত্র ১ মাস তারপর তারা চলে যাবে নিজ মাতৃভূমি ছেড়ে।হিয়া ফারুকের কাঁধে মাথা রেখে বললো,
~আমরা আমেরিকা যখন যাচ্ছি তখন সেখানে গিয়ে একটা ভালো ডাক্তার দেখাই বাচ্চার জন্য।
ফারুক হিয়ার কথা শুনে বললো,
~কী বলছো এসব বিয়ের মাত্র ২ বছর হয়েছে আল্লাহর যখন ইচ্ছে তখনই দিবে।
হিয়া ফারুকের দিকে তাকিয়ে বললো,
~আমার মনটা আজকাল বড্ড আনচান করে আমাদের পরে যাদের বিয়ে হয়েছে তাদের বাবু হয়ে গেছে কিন্তু আমাদের কেন বাবু হচ্ছে না।
ফারুক হিয়ার মাথাটা নিজ বুকে চেপে ধরে বললো,
~দিবে তো আল্লাহ শুধু সঠিক সময়ের অপেক্ষা।
হিয়া বললো,
~আমার প্রথম বাচ্চাটা থাকলে এখন আধো আধো বুলিতে কথা বলতো তাই না?
ফারুক হিয়া মুখ চেপে ধরে বললো,
~তুমি আবার পুরোনো কথা তুলছো আমি না বলেছি এ কথা কোনোদিন তুলবেনা আর আমাদের আবার বেবী হবে।তুমি চিন্তা করো না আল্লাহ আমাদের পরীক্ষা নিচ্ছে শুধু সফল হতে পারলে আমরা অনেক কিছু পাবো।
হিয়া চোখের পানি মুছে বললো,
~আমার মন যে মানে না।
ফারুক হিয়ার কপালে ঠোঁট ছুইয়ে বললো,
~সব ঠিক হয়ে যাবে।
হিয়া ফারুকের বুকে মাথা রাখলো এই মানুষটির কাছে থাকলে সব দুঃখ তুচ্ছ মনে হয়ে।আজাদ সাহেব আর রেহেনা বেগম জম্পেস আড্ডা দিচ্ছে বিকেল বেলাই আজাদ সাহেব চলে এসেছেন আজকের রাতটা মেয়ের বাসায় থাকবেন।ফারহান তাদের সাথে বসে গেমস খেলছে হিয়া টেবিলে খাবার সাজাতেই ফারুকও এসে হাজির হলো হিয়া বললো,
~ফারহান মোবাইল রেখে খেতে আয় মা আসুন খাবার খেয়ে নিন রাত ৯টা বাজে আপনাদের ওষুধ নিতে হবে।
রেহেনা বেগম,আজাদ সাহেব আর ফারহান টেবিলে বসে পরলে হিয়া ফারহানের মোবাইল নিয়ে বললো,
~কালকে সকালে মোবাইল পাবি রাত জাগার কারণে চোখের নিচে কালি পরে গেছে।
ফারুক বললো,
~ফারহান সামনে এসএসসি দিতে চলেছো এসব এখন বন্ধ করো।
ফারহান বললো,
~আর দেখবো না রাত জেগে ফোন।
হিয়া ফারহানের কানের কাছে মুখ এনে বললো,
~তোর গার্লফ্রেন্ডকে আজ রাতে ফোন দিয়ে বলবো তুই কতোটা গুড বয়।
ফারহান লজ্জা পেয়ে মাথা নিচু করে ফেললো সবাই একসাথে খাবার খেয়ে নিলো।

______________________♥_______________________

হেমন্তি ইলহামের কথা মতো লাল শাড়ি পড়ে তার জন্য অপেক্ষা করছে একটু আগে ইলহাম ফোন দিয়ে জানিয়েছে সে ২০ মিনিটের মধ্যে বাসায় পৌছে যাবে।হেমন্তি সোফায় বসে আছে তখনই কলিংবেল বেজে উঠলো হেমন্তি দৌড়ে গিয়ে দরজা খুলতেই ইলহামের দেখা পেলো।ইলহাম হেমন্তিকে দেখে একপ্রকার ধাক্কা খেলো লাল শাড়িতে মেয়েটাকে এতো সুন্দর লাগছে যে সে চোখ সরাতে পারছেনা।ইলহামের মন বলছে এই সময় এখানেই থেমে যাক সে শুধু হেমন্তিকেই দেখতে থাকুক।হেমন্তি ইলহামের চাহনি দেখে লজ্জা পেয়ে গেলো শাড়ির আঁচল হাতে নিয়ে তা আঙ্গুল পেচিয়ে নিলো আর বললো,
~ভিতরে আসবেন না?
ইলহামের ধ্যান ভাঙ্গলো সে ভিতরে এসে জুতো খুলে বললো,
~আমি ফ্রেশ হয়ে আসছি।
ইলহামের কথায় হেমন্তি বললো,
~আপনার জন্য একটা পাঞ্জাবি কিনে ছিলাম আজ যদি পরতেন।
ইলহাম বললো,
~কবে কিনলে পাঞ্জাবি?
হেমন্তি বললো,
~আপুর সাথে গিয়ে কিনেছিলাম।
ইলহাম মুচকি হেসে বললো,
~ঠিক আছে পরবো আর শোনো তুমি হিজাবটা বেঁধে নেও বোরখা না পরলেও চলবে রাতে কেউই এতো দেখবেনা আর আমরা গাড়ি দিয়েই যাবো।
হেমন্তি মাথা দুলালো ইলহাম রুমে চলে গেলো ফ্রেশ হতে।হেমন্তি মনে মনে বললো,
~আজকের রাতটা তার জীবনের সবচেয়ে সুন্দর রাত।
কেয়া খাবার আজ নিজ রুমেই খেয়েছে কারণ তানভীর তাকে আজ অনেক বকেছে পড়া পারেনি বলে তাই সে তানভীরের সাথে এক টেবিলে বসে খাবে না বলে প্রতিজ্ঞা করেছে। খাওয়া শেষে সে বিছানায় ঘুমাতে যাবে তখনই দরজায় কেউ নক করলো কেয়া বিছানা ছেড়ে উঠে দরজা খুলতেই দেখে তানভীর।কেয়া মুখ ফুলিয়ে বিছানায় গিয়ে বসে পরলো তানভীর দরজার পাশে দাড়িয়ে বললো,
~কেয়া,তোমায় বকেছি ভালোর জন্য এখন যদি মনোযোগ দিয়ে না পড়াশোনা করো তাহলে ভবিষ্যতে গিয়ে তুমিই কাঁদবে তোমার ফ্রেন্ডরা যখন ভালো ভালো পজিশনে চলে যাবে তখন তুমিই আফসোস করবে এখন তোমার সিদ্ধান্ত আফসোস করতে চাও নাকি সবার থেকে এগিয়ে থাকতে চাও।
বলেই তানভীর রুম থেকে চলে আসলো কেয়া তানভীরের কথা গুলো মনোযোগ সহকারে শুনেছে আর সে বুঝতেও পেরেছে তাই সে সিদ্ধান্ত নিলো সে মনোযোগ দিয়ে পড়বে কিন্তু এই উজবুকটাকে জ্বালিয়ে মারবে।

চলবে☆

(বিদ্রঃকেমন হয়েছে জানাবেন। ভুলগুলো ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখার অনুরোধ রইলো🥰🥰।Happy Reading 🤗🤗)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here