অচেনা শহর পর্বঃ১৪

0
2175

#গল্পের_নাম_অচেনা_শহর
#লেখনীতে_Alisha_Rahman_Fiza
পর্বঃ১৪
সামনে থাকা ব্যক্তিটি আর কেউ নয় ইমজাদ অনু ইমজাদের দিকে চোখ বড় বড় করে তাকিয়ে আছে।ইমজাদও অবাকে চরম সীময় ইমজাদ এখন আফসোস করছে যদি সে মায়ের উপর রাগ না করে মেয়ের ছবিটি যদি দেখে নিতো। তাহলে এমন লজ্জায় পরতে হতো না অনুও মনে মনে একই কথা বলছে অনুর লজ্জায় মাথা কাটা যাচ্ছে।অনুর পাশে এসে বসলো ইমজাদের মা আর বললো,
~আপা,আমার কিন্তু মেয়ে অনেক পছন্দ হয়েছে ছবির থেকে তো বাস্তবে অনেক সুন্দর।
অনুর মা হেসে বললো,
~আমার মেয়ে কিন্তু খুব ভালো রান্না পারে ঘরের কাজে কর্মে অনেক পারদর্শী।
ইমজাদের মা বললেন,
~আমার মতামত হ্যাঁ বাকিটা পরে দেখা যাবে।
অনুর মা বললো,
~অনুর বাবা তো নেই ওর মামাই আমাদের সবকিছু দেখা শোনা করে একবার ওনার সাথে পরামর্শ করতে চাই।
ইমজাদের বাবা বললেন,
~অবশ্যই আমরা দুছেলে বড় ছেলের বিয়ে হয়ে গেছে চাকরি ক্ষেত্রে চট্টগ্রামে থাকে বউ নিয়ে।তাই খালি বাড়ি ভালো লাগেনা ভাবলাম ছোট ছেলের বিয়ে দিয়ে দেই ইমজাদ পড়াশোনার পাশাপাশি আমার ব্যবসাও সামলায়।
অনুর মা বললো,
~তা আমরা সবই জানি।
হঠাৎ অনু বললো,
~মা,আমার ভালো লাগছেনা রুমে যাবো।
ইমজাদ একবার অনুর দিকে তাকালো অনুর মুখ খানায় একপ্রকার অস্তিত্ব এসে পরেছে।অনুর মা বললো,
~মেহমান এসেছে আর তুই রুমে চলে যাবি।
ইমজাদের মা বললো,
~থাক অনুর হয়তো ভালো লাগছেনা যাও মা রুমে যাও।
অনু একদন্ডও সেখানে অপেক্ষা না করে রুমে চলে গেলো দরজাটা বন্ধ করে মাথার ঘোমটা ফেলে দিয়ে।বিছানায় বসে পরলো সে বিড়বিড় করে বললো,
~এটা কী হলো ইমজাদ যদি আমাকে ভুল বুঝে একবার যদি ছবিটা দেখতাম তাহলে এসব কিছুই হতো না।
অনুর চিন্তায় মাথা ব্যাথা আরো বেড়ে গেলো সে বালিশে শুয়ে পরলো চোখ বন্ধ করে।ইমজাদ আর ওর বাবা-মা অনুর মায়ের থেকে বিদায় নিয়ে বাসা থেকে বের হয়ে আসলো তখনই ইমজাদ বললো,
~আজ তোমাদের জন্য কতোটা লজ্জা পেয়েছি জানো?
ইমজাদের মা আর বাবা কিছু বুঝলেন না ইমজাদ বললো,
~অনু আমার ভার্সিটির জুনিয়র না জানি মেয়েটা আমার ব্যাপারে কী ভাবছে?আগেই বলেছিলাম এখন আমি বিয়ে করবো না কিন্তু আমার কথা কেউ শুনলো না।
বলেই সে গটগট করে তাদের ছেড়েই হাঁটতে লাগলো ইমজাদের বাবা-মা অবাক চোখে তার যাওয়ার দিকে তাকিয়ে আছে।

_______________________♥______________________

আরাফাত তার বউ এশা আর তাদের পরীকে নিয়ে হাজির হয়েছে ইলহামের বাড়িতে।হেমন্তি পরীকে কোলে নিয়ে বসে আছে পরীও তাকে কম সময়ে আপন করে নিয়েছে এশা হেমন্তির পাশে বসে আছে।ইলহাম,আরাফাত আর আজাদ সাহেব কথায় ব্যস্ত এশা হেমন্তিকে বললো,
~রুমে চলো এখানে আমাদের কাজ নেই
হেমন্তি বললো,
~চলুন ভাবি।
হেমন্তি এশার কোলে পরীকে দিয়ে নিজের রুমে নিয়ে আসলো এশা পরীকে বিছানায় বসিয়ে দিতেই পরী আধো আধো কন্ঠে বাবা বলতে লাগলে।তা শুনে হেমন্তি হেসে পরীর উপর ঝুঁকে বললো,
~শুধু বাবা বলতেই শিখেছে পরীমণি।
এশা বললো,
~বাবার মেয়ে যে তাই বাবাকে পেলে আর কিছুই লাগে না তার।
হেমন্তি বললো,
~মাশআল্লাহ ভাবি পরী অনেক মিষ্টি একটা মেয়ে।
এশা বললো,
~সব আল্লাহর দান আচ্ছা হেমন্তি একটা কথা জিজ্ঞেস করি?
হেমন্তি পরীকে কোলে নিয়ে বললো,
~অবশ্যই ভাবি।
এশা বললো,
~তোমরা বাচ্চার কথা কী ভেবেছো কবে নিবে?
হেমন্তি লজ্জা পেয়ে মাথা নিচু করে বললো,
~ভাবি এসব এখন পর্যন্ত ভাবিনি আমরা।
এশা বললো,
~হেমন্তি,তুমি আবার কিছু মনে করো না আমি এভাবেই জিজ্ঞেস করেছি।
হেমন্তি বললো,
~নাহ ভাবি কী মনে করবো?
তখনই ইলহাম বাহির থেকে বলে উঠলো,
~হেমন্তি খাবার খাওয়ার সময় হয়েছে বাহিরে আসো।
পরীকে কোলে নিয়ে হেমন্তি আর এশা বাহিরে চলে আসে হেমন্তির কোলে পরীকে দেখে ইলহামের এক অদ্ভুত ধারণা হলো সে মনে মনে বললো,
~আমার মেয়েকেও তো এভাবেই হেমন্তি কোলে তুলে নিবে।
পরক্ষণেই নিজ ভাবনার ওপরেই সে হেসে উঠে হেমন্তি চেয়ার টেনে বসে পরলো সবাই এক সাথে খেয়ে নিলো।আরাফাত আর এশা হেমন্তির খাবারের অনেক প্রশংসা করলো।খাওয়া শেষে আজাদ সাহেব বললেন,
~আরাফাত,রাত অনেক হয়ে গেছে তোমরা থেকে যাও পরীও ছোট এতো রাতে যাওয়াটা ঠিক হবে না।
আরাফাত বললো,
~আমরা চলে যেতে পারবো।
ইলহামও বললো,
~থেকে যা।
আরাফাত একবার এশার দিকে তাকালো তারপর বললো,
~আচ্ছা আজ থেকে যাই।
হেমন্তি অন্য রুমটা গুছিয়ে দিলো আরাফাত আর এশার জন্য। হেমন্তি বললো,
~ভাবি আজ পরী আমার কাছেই থাকুক।
এশা হেসে বললো,
~ঠিক আছে।

____________________♥_________________________

হেমন্তির বুকেই পরী ঘুমিয়ে পরেছে ইলহামের জন্য অপেক্ষা করছে সে ইলহাম আরাফাতের সাথে কথা বলছে হলরুমে।হেমন্তি বিছানার মাঝখানে পরীকে শুইয়ে দিলো তখনই দরজা ঠেলে ইলহাম রুমে প্রবেশ করলো।হেমন্তি একবার ইলহামের দিকে তাকিয়ে আবার পরীর দিকে তাকিয়ে রইলো।ইলহাম পাঞ্জাবি খুলে একটা শার্ট বের করে পরে নিলো এরপর বিছানায় পরীর পাশে শুয়ে পরলো হেমন্তিকে সে গভীরভাবে দেখতে লাগলো কখনো সে পরীর গালো কপালে চুমো খাচ্ছে তো কখনো মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছে।ইলহাম বললো,
~পরী অনেক কিউট না?
ইলহামের কথায় হেমন্তি বললো,
~মাশআল্লাহ অনেক মিষ্টি একটা বাচ্চা।
হেমন্তি পরীর ওপর একটা হাত রাখলো ইলহাম সেই হাতের উপর নিজের হাতটা রাখলো।হেমন্তি এতে চমকে উঠলো সে নিজের হাত সরাতে চাইলে ইলহাম বললো,
~থাকনা কিছুক্ষণ এই হাতটা আমার হাতে তাতে কী খুব ক্ষতি হয়ে যাবে?
ইলহামের কথায় হেমন্তি আর কিছুই বললো না সে চুপ করে শুয়ে রইলো এক পর্যায়ে দুজনই ঘুমিয়ে পরলো।
আজ সকাল বেলায় তানভীর চলে এসেছে কেয়াদের বাসায় আফজাল হোসেনই তাকে ডেকে এনেছেন।কেয়া কলেজের জন্য তৈরি হচ্ছে আর বিড়বিড় করে তানভীরকে বকছে।আফজাল হোসেন তানভীরকে বললেন,
~তোমার বাবা ফোন করে বললো যেখানে তুমি এখন থাকছো সেই জায়গাটা বেশি ভালো না তাই আমি বলছি তুমি আমাদের সাথে এখানেই থাকো।
তানভীর বললো,
~না না আঙ্কেল এসবের কোনো দরকার নেই।
পারভীন বেগম বললেন,
~তোমার বাবা অনেক চিন্তিত আর জবে জয়েন করলে একটা ব্যবস্থা করো এখন আমাদের সাথেই থাকো।
আফজাল হোসেন বললেন,
~তোমার আন্টি ঠিক বলেছে।
তানভীর একটু ভেবে বললো,
~ঠিক আছে।
আফজাল হোসেন খুশী হয়ে বললেন,
~তাহলে আজকেই সব জিনিসপত্র নিয়ে চলে আসো।
তানভীর হেসে বললো,
~আচ্ছা আঙ্কেল।
কেয়া এখন পর্যন্ত সবকিছু শুনেই যাচ্ছে সব কথা শুনে কেয়া মাথায় হাত দিয়ে বললো,
~এখন এই উজবুক আমার বাসায়ই থাকবে এখন আমার কী হবে?

চলবে

(বিদ্রঃকেমন হয়েছে জানাবেন। ভুলগুলো ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখার অনুরোধ রইলো🥰🥰।Happy Reading 🤗🤗)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here