অচেনা শহর পর্বঃ২

0
3154

#গল্পের_নাম_অচেনা_শহর
#লেখনীতে_Alisha_Rahman_Fiza
পর্বঃ২
সামনে থাকা ব্যক্তিটি গম্ভীর কন্ঠে বলে উঠলো,
~গতকাল ভার্সিটি আসো নি কেন?
তীর্যক পূর্ণ প্রশ্ন শুনে হেমন্তি পিটপিট করা চোখে ব্যক্তিটির দিকে তাকিয়ে কাঁপা গলায় বললো,
~আসলে গতকাল বাসায় মেহমান এসেছিলো ইমজাদ ভাইয়া।
ইমজাদ হেমন্তির কথায় একটা জোড়ে সোড়ে নিশ্বাস নিয়ে বললো,
~তার জন্য ক্লাস কামাই করেছো তোমার পড়ালেখা তো দেখছি লাটে উঠছে।
ইমজাদ হেমন্তির ভার্সিটিতেই পড়ে ২বছরের সিনিয়র সে সেই প্রথম দিন থেকেই ইমজাদ হেমন্তিকে চোখে চোখে রাখে কেন রাখে তা হেমন্তির জানা নেই।
হেমন্তি ইমজাদকে একটু বেশিই ভয় পায় ইমজাদের হুটহাট আচরণে সে ভয় পেয়ে যায়।ইমজাদ এ বিষয়ে অবগত কিন্তু তার মজা লাগে এভাবে হেমন্তিকে ভয় পেতে দেখে।হেমন্তি ইমজাদের কথা শুনে মিনমিন করে বললো,
~আর কিছুদিন পর জ্বালাতে পারবেন না আমার বডিগার্ড এসে পরছে।
হেমন্তি কথাটা অনেক আস্তে বলায় ইমজাদ ভ্রু কুচকে বললো,
~কিছু বলছো নাকি আমি ঠিক শুনতে পাচ্ছিনা।
হেমন্তি নড়েচড়ে বললো,
~আসলে ভাইয়া আমার ক্লাসের সময় হয়ে গেছে।
ইমজাদ বললো,
~ঠিক আছে যাও ছুটির পর দেখা করবো তোমার সাথে।
হেমন্তি আর একদন্ডও সেখানে না দাড়িয়ে ছুটে চললো ক্লাসের দিকে ইমজাদ হেমন্তির যাওয়ার পাণে তাকিয়ে মনে মনে বললো,
~তোমার এই সরলতাটা দেখে আমি সেই প্রথম দিন ঘায়েল হয়েছিলাম।
হেমন্তি ক্লাস রুমে এসে দেখলো তার বান্ধবী অনু আগে এসেই বসে আছে।হেমন্তি স্বস্তির নিশ্বাস ছেড়ে অনুর পাশে বসে পরলো অনু হেমন্তিকে দেখে বললো,
~কী রে বাঘের খবল থেকে বাঁচতে পেরেছিস?
হেমন্তি মুখটা ছোট করে বললো,
~নাহ তোর সাথে দেখা হয়েছিল?
অনু বললো,
~আবার জিগায় আমাকে তো কাড়ি কাড়ি প্রশ্ন করেছে আমি বলেছি কিছুই জানিনা।
হেমন্তি মুচকি হেসে বললো,
~ভালো করেছিস।
অনু হেমন্তিকে কনুই দিয়ে খোঁচা মেরে বললো,
~তা কথা কতদূর?
হেমন্তি বললো,
~সব ঠিক থাকলে আগামী শুক্রবার কাবিন।
অনু একলাফ দিয়ে বললো,
~কী বলছিস দোস্ত দুলাভাইয়ের ছবি দেখা।
হেমন্তি অনুর চিল্লানো শুনে বললো,
~এমন ভাবে চিল্লিয়ে সবাইকে জানাতে চাস?বস তুই সব কিছু বলছি।
অনু চুপচাপ হেমন্তির পাশে বসে পরলো আর হেমন্তি সব কিছু বলতে শুরু করলো।

_____________________♥______________________

ইলহাম অফিসের কাজে ব্যস্ত রাখছে নিজেকে ইলহামের মতে পারসোনাল লাইফ ভালো না থাকলে পুরো মন দিয়ে প্রোফেশনাল লাইফে কাজ করতে থাকো সেখানেই সব শান্তি মিলবে।ইলহাম ই-মেইল চেক করছে তখনই তার মোবাইলের ম্যাসেজ টোন বেজে উঠলো।অতি মাত্রায় বিরক্ত হয়ে মোবাইল হাতে নিয়ে দেখলো হিয়ার ম্যাসেজ কৌতুহল নিয়ে সেটা অন করেই দেখতে পেলো একজন যুবতীর ছবি।
“লাল রঙ্গের শাড়ি পরে আছে চুলগুলো ছাড়া মাথায় ঘোমটা দেওয়া ঠোটে হালকা লাল রঙ্গের লিপস্টিক মেয়েটির চেহারায় অজানা এক মায়া রয়েছে”
ইলহাম খেয়াল করে দেখে বুঝলো এটা হেমন্তির ছবি।ছবিটার নিচে গোটা গোটা অক্ষরে লেখা আছে
~হবু বউয়ের ছবি মোবাইলে সযত্নে রেখে দিবি বুঝতে পেরেছিস।
ইলহাম মোবাইলটা টেবিলের ওপর রেখে চেয়ারে হেলান দিয়ে চোখ বন্ধ করে রাখলো।মাথায় নানান চিন্তা ঘুরছে সে কী নতুন জীবনে এই মেয়েটাকে নিয়ে সুখী থাকবে?
ইলহাম কিছুক্ষন এভাবেই চোখ বন্ধ করে রইলো কখনো কখনো চোখ বন্ধ করে এই পৃথিবীটাকে দেখলে মনের শান্তি মিলে।
হিয়া ফারুকের সাথে তার শ্বশুর বাড়ি চলে এসেছে বাসার ভিতরে ডুকতেই হিয়ার দেবর রাতুল তাদের সামনে এসে দাড়ালো।হিয়া ফারহানের দিকে তাকিয়ে দেখলো সে স্কুলের ইউনিফর্ম পরে আছে।হিয়া ফারহানের কান ধরে বললো,
~তুই স্কুল থেকে ফিরে ড্রেস কেন চেঞ্জ করোস নি?
ফারহান বললো,
~ভাবিমা,তুমি এভাবে কান টেনো না তো।দেখবে আমার কান একদিন লম্বা হয়ে যাবে
ফারহানের কথায় হিয়া তার কান ছেড়ে বললো,
~এখন এসব বলে লাভ নেই চেঞ্জ করে এসে টেবিলে খেতে বস।আর মা কোথায়?
ফারহান মুখ ফুলিয়ে বললো,
~রুমেই আছে।
হিয়া আর অপেক্ষা না করে সোজা তার শাশুড়ি রেহেনা খানমের রুমে চলে গেলো সেখানে গিয়ে দেখলো রেহেনা খানম কোরআন তিলাওয়াত করছেন।হিয়া মুচকি হেসে রেহেনা খানমের পাশে বসে পরলো রেহেনা খানম তিলাওয়াত শেষ করে কোরআনটা বন্ধ করে বললেন,
~ইলহাম রাজি হয়েছে?
হিয়া মুচকি হেসে বললো,
~বাবা এবার যে টাইট দিয়েছে রাজি না হয়ে যাবে কোথায়।
রেহেনা খানম বললেন,
~অনেক খুশী হলাম শুনে নাহলে তুমি চলে যাবার পর তাদের সামলাবে কে?
হিয়া বললো,
~মা,আপনি আর ফারহান এ বাসায় একা থাকবেন না। বাবা বলেছে আমাদের বাড়িতে থাকতে
রেহেনা খানম বললেন,
~পাগল হয়েছো আর ২টো কাজের মেয়ে রেখেছো আমাদের আর কী লাগবে?
হিয়া রেহেনা খানমের হাত ধরে বললেন,
~মা,হেমন্তিকে সংসারটা সামলাতে আপনি সাহায্য করবেন আমার মা থাকলেও তো তাই করতো।
রেহেনা খানম হিয়ার মাথায় হাত বুলিয়ে বললেন,
~ঠিক আছে তোমার কথাটা আমি রাখলাম।

_____________________♥_____________________

অফিস শেষ করে বাসায় পৌছাতেই ইলহাম একটা বড়সড় ধাক্কা খেলো আজাদ সাহেব তাকে জানালো আগামী শুক্রবার তার বিয়ে তাই যেন অফিস থেকে কিছু দিনের ছুটি নিয়ে নেয় সে।
ইলহাম সব শুনে বললো,
~সব কিছু এতো জলদি কেন হচ্ছে বাবা?
আজাদ সাহেব ছেলের অবস্থা বুঝতে পেরে বললেন,
~তোমার জন্য হয়তো জলদি হচ্ছে আমার জন্য অনেক দেরিতে হচ্ছে।তোমার বিয়েটা কিছু বছর আগে হলে হয়তো তোমার মাও তার বউমা দেখে যেতে পারতেন।
এতটুকু বলে আজাদ সাহেব চুপ হয়ে গেলেন ইলহামের মুখটা কালো হয়ে গেলো।আজাদ সাহেব বললেন,
~আর মাত্র ২দিন বাকি কালকে ছুটি নিয়ে হিয়ার সাথে শপিংএ যাবে আমি কোনো বাহানা শুনতে চাইনা।হেমন্তিকে সাথে নিলে হয়তো আরো বেশি ভালো হয় মেয়েটারও তো পছন্দ আছে।
হেমন্তির নাম শুনে ইলহাম একটু নড়ে উঠে বললো,
~তাহলে আমার যাওয়ার তো কোনো প্রয়োজন দেখছিনা মেয়েদের কাজে আমি গিয়ে কী করবো?
আজাদ সাহেব ছেলের দিকে তাকিয়ে বললেন,
~অবশ্যই তোমার প্রয়োজন আছে তুমি নিজের বউকে কীভাবে সাজাতে চাও সেটা একান্তই তুমি জানো।
ইলহাম বললো,
~ঠিক আছে আমি অফিসে কথা বলে নিচ্ছি কালকে সকালে শপিংয়ে বের হবো।
আজাদ সাহেব বললেন,
~হাত-মুখ ধুয়ে আসো খাবার টেবিলে দেওয়া আছে একসাথে খাবো।
ইলহাম আর কিছু না বলে নিঃশব্দে রুমে চলে গেলো আজাদ সাহেব ইলহামের মায়ের ছবি হাতে নিয়ে বললেন,
~আমার উপর সব দায়িত্ব দিয়ে তুমি নিশ্চিন্তে আছো তাই না খুব জলদি তোমার কাছে চলে আসবো।তোমার গাধা ছেলেটাকে আগে ঠিক পথে আনি তারপর চলে আসবো তোমার কাছে।
কেয়া হেমন্তির সাথে মজা করেই যাচ্ছে যখন থেকে বিয়ে ফাইনালের কথা শুনেছে হেমন্তির পিছে সে পরেই আছে।কেয়ার এমন মজা দেখে পারভীন বেগম তার কান মলে দিয়ে বললেন,
~তোর কী মুখে কিছু আটকায় না সেই কখন থেকে মেয়েটাকে নিয়ে মজা করছিস।
কেয়া বললো,
~উফ মা তুমি সবসময় আপুর সাইড নেও আর মাত্র দুদিন তারপর আপু উড়াল দিয়ে চলে যাবে।
কেয়ার কথাটা শুনে পারভীন বেগমের চোখে পানি চলে আসলো। মেয়েটা চলে যাবে তার থেকে দূরে নতুন জীবন শুরু করবে মনটায় যেমন খুশী লাগছে তেমনি কষ্টও কম হচ্ছে না।
হেমন্তি খাবার টেবিলে ভূনা খিচুরি আর মাংসের তরকারি সাজিয়ে চলে গেলো পারভীন বেগমকে ডাকতে।আজ সে নিজ হাতে সব রেধেছে বাবার পছন্দের খাবার সবাই একসাথে বসে রাতের খাবারটা খেয়ে নিবে।

_________________♥____________________

সকাল সকাল হিয়া চলে এসেছে এ বাসায় ভাইয়ের বিয়ের জন্য সে অনেক এক্সাইটেড। সকালে এসেই ইলহামকে ঘুম থেকে তুলে ফ্রেশ হতে পাঠিয়ে দিয়েছে।
আজাদ সাহেব মেয়ের খুশী দেখে নিজেও আনন্দিত হয়ে বললেন,
~তোর হাসিমাখা মুখটা আমার অনেক ভালো লাগে।
হিয়া বাবার কথায় মুচকি হেসে বললো,
~তোমার ছেলেকে নিয়ে আগে হেমন্তির বাড়ি যাবো।হেমন্তি আর কেয়াকে পিক করে সোজা শপিং মলে চলে যাবো কেমন হয়েছে আইডিয়াটা?
আজাদ সাহেব আলতো হেসে বললেন,
~একদম পারফেক্ট তা ফারুক কোথায়?
হিয়া বললো,
~কাজের শেষ আছে তার আমাকে ভুলে যায় সে এখন।
আজাদ সাহেন বললেন,
~কাজের চাপটা ওর উপর বেশি তাই এমন হচ্ছে।
হিয়া বললো,
~হুম বুঝতে পারছি আমি। দেখে আসি তোমার ছেলেকে নাহলে সেই হাদারাম এভাবেই বসে থাকবে।
বলেই হিয়া ইলহামের রুমের দিকে ছুটলো ইলহাম শার্ট গায়ে দিয়ে বোতাম লাগাচ্ছে হিয়া সেই মুর্হুতে রুমে প্রবেশ করে বললো,
~তোর বউকেও সাথে নিয়ে যাবো গাড়িটা নিয়ে নিস।
ইলহাম আয়নার দিকে তাকিয়ে বললো,
~জানি কাল রাতেই বলা হয়েছে আমাকে।
হিয়া বললো,
~মুখটা এমন করে রেখেছিস কেন?
ইলহাম পিছন ঘুরে হিয়ার সামনাসামনি দাড়িয়ে বললো,
~আমার অতীতটা জানিয়ে দিলে ভালো হতো।
হিয়া ইলহামের কথা শুনে বললো,
~সবার জীবনেই এমন প্রেম ভালোবাসা আসে এগুলো বিয়ের পরও বলা যাবে।
ইলহাম বললো,
~প্রেম ভালোবাসা আসে কিন্তু সেই প্রেম ভালোবাসা প্রেমিককে জেলের ভাতও খাওয়াতে পারে যেটা তোর ভালো মতো জানা আছে।
হিয়া দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বললো,
~২ বছর আগে তোর কোনো দোষ ছিল না ইলহাম।
ইলহাম মৃদু হেসে বললো,
~তা তুই মানতে পারিস এই সমাজ নেই।গাড়িতে অপেক্ষা করছি চলে আসিস
বলেই ইলহাম রুমের বাহিরে চলে গেলো হিয়া তার যাওয়ার পাণে তাকিয়ে বললো,
~যা বলার সঠিক সময়ে আমিই বলে দিবো।

চলবে

(বিদ্রঃকেমন হয়েছে জানাবেন। ভুলগুলো ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখার অনুরোধ রইলো🥰🥰।Happy Reading 🤗🤗)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here