অচেনা শহর পর্বঃ৩

0
2830

#গল্পের_নাম_অচেনা_শহর
#লেখনীতে_Alisha_Rahman_Fiza
পর্বঃ৩
হিয়া দাড়িয়ে আছে হেমন্তিদের বাড়ির দরজায় কলিংবেল টিপে সে নিজের হাতের ঘড়িটা ঠিক করে নিলো।তখনই কেয়া এসে দরজা খুলে দেখলো হিয়া দাড়িয়ে আছে সে একটা হাসি দিয়ে জিজ্ঞেস করলো,
~কেমন আছো কেয়া?
কেয়া কিছুক্ষণ হিয়ার দিকে তাকিয়ে থেকে বললো,
~আপনি কী আমার হবু দুলাভাইয়ের বোন?
কেয়ার কথায় হিয়া হেসে বললো,
~জ্বী আমিই সেই ভিতরে আসতে পারি।
কেয়া তাড়াহুড়ো করে দরজা থেকে সরে দাড়িয়ে বললো,
~অবশ্যই ভিতরে আসুন আপু।
হিয়া বাসায় প্রবেশ করে বললো,
~হেমন্তি কোথায়?
কেয়া বললো,
~আপু রুমে আছে আপনি বসেন আমি মাকে ডেকে নিয়ে আসছি।
হিয়া সোফায় বসে বললো,
~কেয়া তুমি গিয়ে রেডি হয়ে নেও আজ শপিংয়ে যেতে হবে যে।
কেয়া বললো,
~বিয়ের শপিং।
হিয়া বললো,
~হ্যাঁ।
কেয়া দৌড়ে আগে পারভীন বেগমের রুমে চলে গেলো তাকে সব জানিয়ে সে হেমন্তির রুমে চলে গেলো।পারভীন বেগম রুম থেকে বের হয়ে হলরুমে চলে আসলো হিয়া তাকে দেখে সালাম দিয়ে বললো,
~আন্টি আমি হেমন্তি আর কেয়াকে নিয়ে শপিংয়ে যেতে চাই।
পারভীন বেগম বললেন,
~ওদের যাওয়ার কী দরকার আছে তুমি নিজ পছন্দে সব কিনে আনো।
হিয়া বললো,
~না আন্টি হেমন্তির জীবনের একটা বিশেষ দিন হচ্ছে তার বিয়ের দিন অবশ্যই তার পছন্দ অনুযায়ী সব থাকতে হবে।
পারভীন বেগম হেসে বললেন,
~ঠিক আছে নিয়ে যাও।
তখনই হেমন্তি আর কেয়া রুম থেকে বের হয়ে আসলো হেমন্তি হিয়াকে দেখে একটু লজ্জা পেলো হিয়া মুচকি হেসে বললো,
~হেমন্তি তাড়াতাড়ি তৈরি হয়ে নেও।
হেমন্তি মায়ের দিকে তাকালো পারভীন বেগম চোখের ইশারায় তাকে সব বুঝিয়ে দিলো হেমন্তি মাথা দুলিয়ে নিজ রুমে চলে গেলো।কেয়া বললো,
~দুলাভাই আসেনি?
হিয়া বললো,
~সেটা সারপ্রাইজ থাকুক।
ইলহাম গাড়ি নিয়ে হেমন্তিদের বাড়ির নিচে দাড়িয়ে আছে সেই কখন থেকে তার এখন বিরক্ত লাগছে।সে গাড়ি থেকে নেমে চায়ের দোকানে চলে গেলো সেখানে বসে রইলো আর হিয়ার অপেক্ষা করতে লাগলো।
তখনই তার নজর পরলো একটা ছেলে হেমন্তিদের বাড়ির সামনে দাড়িয়ে আছে আর বার বার হেমন্তিদের বারান্দার দিকে তাকাচ্ছে।ব্যাপারটা ইলহামের কাছে ভালো ঠেকছেনা পরমুহূর্তে নিজের মনের ভুল ভেবে কথাটা উড়িয়ে দিয়ে চায়ের কাপে চুমুক বসালো।ছেলেটা কিছুক্ষণ এভাবেই দাড়িয়ে থেকে সেখান থেকে চলে গেলো ইলহাম আর সেদিকে পাত্তা না দিয়ে হিয়ার অপেক্ষা করতে লাগলো।

_________________♥_____________________

হিয়া,হেমন্তি,কেয়া একসাথে বাসার নিচে এসে দাড়ালো গাড়ির সামনে।হিয়া ইলহামকে না পেয়ে নিজ মোবাইল বের করে ইলহামকে ফোন করতে নিবে তখনই দেখলো ইলহাম চায়ের দোকানে বসে আছে।হিয়া সেদিকে পা বাড়াতেই আবার নিজ জায়গায় দাড়িয়ে গেলো আর হেমন্তির দিকে তাকিয়ে বললো,
~ইলহাম ওই চায়ের দোকানে বসে আছে যাও ওকে ডেকে নিয়ে আসো।
হিয়ার কথা শুনে হেমন্তি আকাশ থেকে পড়লো ইলহাম যে এসেছে তা সে জানতোনা তাহলে হয়তো সে আসতোই না।লজ্জায় তার মাথা কাটা যাচ্ছে আবার তাকে ডেকে আনতে বলছে এতো তাকে মেরে ফেলার বাহানা।কেয়া হেমন্তির কাঁধে হাত রেখে বললো,
~হেমন্তি বেগম যান আপনার শাহাজাদাকে ডেকে নিয়ে আসুন।
বলেই খিলখিল করে হেসে উঠলো সে হিয়া তার তালেতাল মিলিয়ে হাসতে রাখলো।হেমন্তি অসহায় মুখে হিয়া আর কেয়ার দিকে তাকিয়ে রইলো হিয়া হাসি বন্ধ করে বললো,
~যাও ডেকে নিয়ে আসো।
হেমন্তি মাথা নিচু করে বললো,
~আমার অনেক লজ্জা করছে আপু।আপনি গিয়েই ডেকে নিয়ে আসুন
কেয়া বিরক্তি নিয়ে হিয়াকে বললো,
~আপু এই আনরোমান্টিক মেয়ে দিয়ে কিছু হবে না আমি গিয়ে ডেকে নিয়ে আসছি।
হিয়া সম্মতি জানিয়ে সেখান থেকে চলে গেলো ইলহামের কাছে।কেয়া যেতেই হেমন্তি একটা স্বস্তির নিশ্বাস ছাড়লো সে হিয়ার পাশে এসে দাড়িয়ে পরলো আর ভাবতে লাগলো এখন সে কী করবে?
কেয়া ইলহামের কাছে গিয়ে বললো,
~দুলাভাই চলুন আমাদের দেরি হয়ে যাচ্ছে।
কেয়ার কথায় ইলহামের মুখ থেকে সবটুকু চা বেরিয়ে আসলো সবাই ইলহামের দিকে তাকিয়ে আছে।ইলহাম কেয়ার দিকে তাকাতেই চিনতে পারলো তাকে কেয়া মুখ টিপে হেসে বললো,
~চা দিয়ে কী কুলি করছিলেন নাকি যে মুখ থেকে ফেলেদিলেন?
ইলহাম চায়ের কাপটা দিয়ে রুমাল বের করে মুখ পরিষ্কার করে বললো,
~এভাবে কেউ ডাকে?
কেয়া বললো,
~আমি ডাকি।
বলেই সে ইলহামের একহাত ধরে তাকে নিয়ে যেতে যেতে বললো,
~আপনার অপেক্ষায় আপনার বউ দাড়িয়ে আছে।
ইলহাম বুঝতে পারলো কেয়া অনেকটাই চটপটা স্বভাবের তাই সে কিছু মনে করলোনা।
ইলহামকে নিয়ে কেয়া চলে আসলে গাড়ির কাছে কেয়া হেমন্তির পাশে দাড়িয়ে বললো,
~এখন তো যাওয়া যাবে কারণ দুলাভাই চলে এসেছে।
ইলহাম একবার হেমন্তির দিকে তাকালো হেমন্তি তার দিকে একবারও তাকালো।ইলহামের একটু ইগো হার্ট হলো সে সানগ্লাসটা চোখে দিয়ে হিয়াকে বললো,
~গাড়িতে উঠে বস।

____________________♥_____________________

গাড়ি চলছে আপন গতিতে ইলহাম গাড়ি ড্রাইভ করতে ব্যস্ত।পিছনের সিটে হিয়া আর কেয়া কথা বলেই যাচ্ছে হেমন্তি চুপচাপ বসে তাদের কথা শুনছে সে বরাবরই চুপ স্বভাবের মানুষ অতিরিক্ত কথা তার দ্বারা সম্ভব না।হেমন্তিকে পুরোপুরি লক্ষ্য করছে ইলহাম কেয়ার মত কোনো স্বভাবই হেমন্তির মধ্যে নেই সে তো পুরো উল্টো।
হিয়া হেমন্তির দিকে তাকিয়ে বললো,
~শাড়ি লাল কিনলে বেশ সুন্দর দেখাবে বিয়েতে লালটাই সুন্দর।
হেমন্তি কিছু না বলে শুধু মাথা দুলালো কিছুক্ষণ পর তারা শপিংমলে পৌছে গেলো ইলহাম গাড়ি পার্ক করে আসতেই সবাই একসাথে শপিংমলে ডুকে পরলে।প্রথমেই তারা শাড়ির দোকানে চলে গেলো বিয়ের শাড়ি দেখতে দেখতে হেমন্তির একটা শাড়িতে চোখ আটকে যায় কিন্তু সে কিছুই বললো না একবার শুধু শাড়িটাকে ছুয়ে দেখে নিলো।হিয়া আর কেয়ার চোখ এড়িয়ে গেলেও ইলহামের চোখ এড়ালো না ব্যাপারটা।সে হিয়াকে এক সাইডে ডেকে বললো,
~ওই সাইডে মেরুন রঙ্গের একটা শাড়ি আছে সেটা ওর অনেক পছন্দ হয়েছে সেটা প্যাক করে নে।
হিয়া বললো,
~বাহ তাহলে পছন্দেরও খোজ রাখা হচ্ছে।
ইলহাম বললো,
~সবার মুখ আছে কিন্তু আমার মনে হচ্ছে ওর মুখ নেই তাই আমি বলে দিলাম।
হিয়া আলতো হেসে বললো,
~ঠিক আছে ঠিক আছে আমি দেখছি ব্যাপারটা।
হিয়া সেই শাড়িটাও কিনে নিলো তারপর তারা শাড়ির দোকান থেকে বের হয়ে অন্য দোকানে চলে গেলো।
ইমজাদ হেমন্তির জন্য অপেক্ষা করছে ঠিক এই সময় হেমন্তি ক্লাস থেকে বের হয়ে আসে কিন্তু আজ কেন আসছে না সে বুঝতে পারছেনা।
তখনই অনু ক্লাস থেকে বের হয়ে আসলো ইমজাদ গিয়ে তার সামনে দাড়িয়ে বললো,
~কোথায় তোমার বান্ধবী?
অনু একটু ঘাবড়ে গিয়ে বললো,
~আসলে আমাকে আজ কিছুই জানায়নি যে কেন সে আসবেনা।
ইমজাদ বললো,
~সত্যি বলছো?আজ আমি ওর বাসার সামনেও গিয়ে ছিলাম দেখতে পেলাম না ওকে।
অনু বললো,
~হয়তো বাসায় নেই আমি যাই ভাইয়া দেরি হয়ে যাচ্ছে।
ইমজাদ বললো,
~ঠিক আছে যাও আর শোনো আমি দুদিনের জন্য ঢাকার বাহিরে যাচ্ছি হেমন্তিকে জানিয়ে দিও।
অনু মাথা দুলিয়ে সেখান থেকে চলে আসলো ইমজাদ একটু চিন্তায় পরে গেলো হেমন্তিকে নিয়ে।
সে ভাবলো আজ একবার সে হেমন্তিকে ফোন করবে আর ঢাকায় ফিরে আসলেই নিজের মনের কথা সে বলে দিবে।ইমজাদ আলতো হেসে সেখান থেকে রওনা হলো নিজ বাসার উদ্দেশ্যে

___________________♥______________________

শপিং শেষ করতে করতে সন্ধ্যা হয়ে গেলো ৪জনই ক্লান্ত সবাই বাসার উদ্দেশ্যে রওনা হলো।পুরো দিনে হেমন্তিকে ইলহাম অনেকবার খেয়াল করেছে কিন্তু হেমন্তি একদমও ইলহামের দিকে তাকায়নি এটা ইলহামের ধারণা।আসলে ইলহামের ধারণা ভুল হেমন্তি ইলহামকে বহুবার আড়চোখে তাকিয়ে আছে যতবার দেখেছে ততবারই মুগ্ধ হয়েছে।ইলহাম গাড়ি থামালে হেমন্তির বাড়ির সামনে কেয়া আর হেমন্তি গাড়ি থেকে নেমে পরলে হিয়া তাদের বিদায় দিলো।কেয়া আগে আগেই বাসার ভিতরে পৌছে গেলো হেমন্তি বাড়ির গেইটের সামনে দাড়িয়ে একবার ইলহামের দিকে তাকালো।ভাগ্যবসতো ইলহামও সেদিকে তাকায় আর দুজনেরই চোখাচোখি হয়ে যায় হেমন্তি সাথে সাথে চোখ নামিয়ে ভিতরে চলে যায়।ইলহাম হেমন্তির যাওয়ার দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসলো হিয়া বললো,
~তোর হাসা শেষ হলে বাসায় চল উনি অফিস থেকে এসে পরেছে।
ইলহাম হিয়ার দিকে তাকিয়ে বললো,
~তোর চোখ আজকাল বেশি চলে।
হিয়া বললো,
~যা ঘটে তাই দেখে আমার চোখ।
ইলহাম গাড়ি স্টার্ট দিলো রওনা হলো বাসার দিকে।হেমন্তি বাসায় প্রবেশ করতেই দেখতে পায় অনু বসে আছে তাকে দেখে হেমন্তি অনেক খুশী হলো।অনু বললো,
~কেমন হলো শপিং?
হেমন্তি বললো,
~ভালো তুই বস আমি ফ্রেশ হয়ে আসছি।
হেমন্তি আর কেয়া ফ্রেশ হয়ে এসে অনুর সাথে আড্ডা দিতে লাগলো আর শপিং দেখাতে লাগলো
পারভীন বেগম তাদের জন্য খাবার নিয়ে আসলেন অনু ঠিক করলো বিয়ের দিন পর্যন্ত সে এবাসায় থাকবে পারভীন বেগম তার মায়ের সাথে কথা বলে রাখবেন।অনুর মাথা থেকে ইমজাদের কথা সরে গেলো হেমন্তিকে আর জানানো হলো না ইমজাদের কথা।
এভাবেই হলুদের দিন চলে আসলো দুহাতে মেহেদী দিয়ে বসে আছে হেমন্তি আজ রাতে হলুদ পুরো বাসায় মেহমান দিয়ে ভরা।হেমন্তির দাদা বাসার আর নানা বাসার সবাই এসে উপস্থিত হৈচৈ পুরো বাসা জুড়ে।
তখনই পারভীন বেগম হন্তদন্ত হয়ে হেমন্তির রুমে এসে বললেন,

চলবে

(বিদ্রঃকেমন হয়েছে জানাবেন।ভুলগুলো ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখার অনুরোধ রইলো🥰🥰।Happy Reading 🤗🤗)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here