অচেনা শহর পর্বঃ৬

0
2417

#গল্পের_নাম_অচেনা_শহর
#লেখনীতে_Alisha_Rahman_Fiza
পর্বঃ৬
কারণ ইলহাম হেমন্তিকে কোলে তুলে নিলো ইলহামের এমন কাজে হেমন্তির চোখ কপালে উঠে গেলো সে ইলহামের দিকে তাকিয়ে দেখলো ইলহাম অতি সাবধানে সামনের দিকে তাকিয়ে হাঁটছে। হেমন্তি ইলহাম থেকে চোখ সরিয়ে মাথা নিচু করে নিলো লজ্জায়।ইলহাম একবার থেকে পিছন ফিরে দেখলো সবাই তার দিকে তাকিয়ে রয়েছে ইলহাম বিরক্তি নিয়ে বললো,
~বাসায় যাবে না তোমরা?
ইলহামের কথায় ধ্যান ভাঙ্গে হিয়ার সে হাসি হাসি মুখ করে পারভীন বেগমের হাত ধরে বললো,
~আন্টি আমরা আসি আজ তাহলে আগামীকাল সময় মতো আপনারা পৌছে যাবেন।
পারভীন বেগম হেসে বললেন,
~ঠিক আছে মা হেমন্তির খেয়াল রেখো ওর মেডিসিন গুলো ব্যাগেই রাখা আছে।
হিয়া মাথা দুলিয়ে বললো,
~আপনি একদম নিশ্চিন্তে থাকেন আন্টি।
এতটুকু বলে হিয়া সবার সাথে নিচে নেমে গেলো গাড়ির কাছে ফারুক গাড়ির দরজা খুলতেই ইলহাম অতি সাবধানে হেমন্তিকে বসিয়ে দেয় গাড়িতে।শাড়ির আঁচলটা হেমন্তির কোলে দিয়ে সে দরজা বন্ধ করে অন্য সাইডের গেইট খুলে সে বসে পরে হেমন্তির সাথে।হেমন্তি মাথা নিচু করেই আছে তার লজ্জা লাগছে আবার নিজ পরিবারকে ছেড়ে আসার জন্য দুঃখও হচ্ছে।সে বার বার টিস্যু দিয়ে চোখের পানি পরছে।গাড়ি চলতে শুরু করলো হেমন্তি গাড়ির জানালা দিয়ে একবার সবাইকে দেখে নিলো সে ছলছল নয়নে বাবার দিকে তাকালো।গাড়ি রাস্তায় নেমে পরতেই হেমন্তি আবার নিজ জায়গায় বসে পরলো মাথা নিচু করে সে ফুপিয়ে ফুপিয়ে কাঁদছে তার খেয়ালই নেই তার পাশে একজন বসে আছে।
ইলহাম হেমন্তির কান্নার আওয়াজ ঠিকই শুনছে সে মনে করেছিল কান্নাটা হয়তো কমে যাবে কিন্তু তা আরো বাড়ছে তাই সে হেমন্তির একহাত ধরে বললো,
~এতো কান্নার তো কিছু নেই কালই তো চলে আসবে আবার এই বাসায়।
হেমন্তির কান্না থেমে গেলো সে অশ্রুসিক্ত নয়নে ইলহামের দিকে তাকাতেই ইলহাম হেমন্তির মায়াময় মুখটা দেখতে পায়।ইলহামকে এভাবে তাকিয়ে থাকতে দেখে হেমন্তি চোখ সরিয়ে নিলো ইলহাম বললো,
~চোখ লাল হয়ে যাচ্ছে মাইগ্রেনের প্রবলেম থাকলে মাথা ব্যাথা করবে তাই বলছি চুপ করতে।
শেষের কথাটা একটু ধমক দিয়ে বললো ইলহাম তাই হেমন্তি যথাসম্ভব চেষ্টা করলো নিজের কান্নাকে কন্ট্রোল করার।
হিয়া বাসায় পৌছে বরণঢালা তৈরি করে নিলো ফারুক হিয়ার কাছে এসে বললো,
~তোমার ভাই তো পুরো রোমান্টিক হয়ে গেছে।
হিয়া বললো,
~ট্রেনিংটা আপনিই দিয়েছেন।
ফারুক হেসে বললো,
~তা ঠিক বলেছো।
হিয়া একটা স্বস্তির নিশ্বাস ফেলে বললো,
~দেখবেন হেমন্তি ইলহামকে আরো পাল্টে দিবে আমাদের ইলহাম অনেক সুখী হবে ইনশাআল্লাহ।
ফারুক বললো,
~তা তোমার চয়েজ অল টাইম ভালোই হয়।
হিয়া বললো,
~দেখতেই তো পারছেন।
তখনই ফারহান এসে বললো,
~ভাবি, নতুন ভাবি চলে এসেছে দরজায় মা দাড় করিয়ে রেখেছে।
হিয়া বরণঢালাটা নিয়ে তড়িঘড়ি করে বললো,
~চল চল বাহিরে নতুন বউকে বরণ করতে হবে যে।

____________________♥_______________________

বরণঢালা হিয়া রেহেনা বেগমের হাতে দিয়ে বললো,
~মা নতুন বউকে স্বাগতম জানান।
রেহেনা বেগম বললেন,
~আমি কেন?তুমি করো।
হিয়া বললো,
~আপনিই করবেন নাহলে হেমন্তি বাসার দরজায়ই দাড়িয়ে থাকবে।
রেহেনা বেগম হেসে বললেন,
~ঠিক আছে রে পাগলী।
অতপর রেহেনা বেগম হেমন্তিকে বরণ করে ঘরে প্রবেশ করালেন ইলহামের কোলে চড়েই হেমন্তির এই বাসায় স্বাগতম জানানো হলো।হিয়া ইলহামকে বললো,
~হেমন্তিকে সোজা রুমে নিয়ে যা আমি আসছি।
ইলহাম হিয়ার কথা মতো কাজ করলো হেমন্তিকে নিজ রুমে নিয়ে গেলো হেমন্তিকে বিছানায় বসিয়ে দিতেই হেমন্তি রুমের চারপাশে তাকিয়ে দেখলো ঘর পুরো গোলাপের পাপড়ি দিয়ে সাজানো।হেমন্তি মনে মনে বললো,
~একটা বিশেষ রাত আমার জন্য খারাপ হয়ে গেলো।
তখনই ইলহাম বললো,
~তুমি রাতের খাবার খেয়েছো?
ইলহামের আওয়াজে হেমন্তি কেঁপে উঠলো সে ছোট্ট করে বললো,
~হ্যা কিন্তু মেডিসিন নেওয়া হয়নি
ইলহাম বললো,
~হিয়া খাবার নিয়ে আসবে খেয়ে নিবে মেডিসিন আমি নিয়ে আসছি।
তখনই ঘরে হিয়া প্রবেশ করলো তার হাতে খাবার আর মেডিসিন সে বললো,
~তার দরকার নেই মেডিসিন আছে।
ইলহাম বললো,
~তাহলে আমি ফ্রেশ হয়ে আসছি।
হিয়া বললো,
~তুই আমার রুমে চলে যা এখানে হেমন্তি ফ্রেশ হবে।
ইলহাম কার্বাড থেকে শার্ট আর টাউজার নিয়ে হিয়ার রুমের দিকে পা বাড়ালো যাওয়ার আগে হেমন্তিকে একবার দেখে নিলো।
হিয়া হেমন্তির লাগেজ খুলে একটা হালকা শাড়ি হেমন্তির হাতে দিয়ে বললো,
~তুমি মুখ হাত ধুয়ে আসো আমি তোমাকে শাড়ি পড়িয়ে দিবো।
হেমন্তি বললো,
~ঠিক আছে।
হেমন্তি মুখ হাত ধুয়ে আসলো হিয়ার সাহায্যে হিয়া তাকে অতি সাবধানে শাড়ি পড়িয়ে দিলো।তারপর নিজ হাতে খাইয়ে দিয়ে হেমন্তির হাতে মেডিসিন দিয়ে দিলো হেমন্তি সেগুলো খেয়ে নিলো।হিয়া বললো,
~পায়ের ফোলাটা কমেনি একটুও তুমি শুয়ে পরো।
হেমন্তি বললো,
~এখনই শুয়ে পরবো সবাই তো বাহিরে।
হিয়া বললো,
~তাদের কথা ছাড়ো শুয়ে পরো ভালো লাগবে।
হেমন্তি মুচকি হেসে শুয়ে পরলো হিয়া রুম থেকে বাহিরে এসে পরলো আর তার দেখা ইলহামের সাথে এলো।ইলহামকে দেখে হিয়া দরজার সামনে দাড়িয়ে পরলো আর বললো,

_____________________♥________________________

~আমার বকশিশটা দিয়ে তারপর ভিতরে যা।
হিয়ার কথা শুনে ইলহাম ভ্রুকুচকে বললো,
~কীসের বকশিশ?
হিয়া বললো,
~ন্যাকা সাজবিনা একদম ৫০০০ টাকা হাতে রাখ নাহলে বাহিরে দাড়িয়ে থাক সারারাত।
ইলহাম বললো,
~৫০০০ টাকা দিয়ে করবি কী তুই?
হিয়া বললো,
~শপিং করবো,খাবো,ঘুরবো।
ইলহাম বললো,
~আর কতো মোটা হবি রে যেন প্লেন দিয়ে আমেরিকা যাবি সেটা তো তোর ওজনের ভারে নিচে পরে যাবে।
ইলহামের কথা শুনে হিয়া তাকে কিল ঘুসি মেরে বললো,
~এখন তুই ১০,০০০ টাকা দিবি নাহলে আমি গিয়ে তোর রুমে ঘুমিয়ে পরবো।
ইলহাম হাসতে হাসতে বললো,
~ঠিক আছে।
বলেই পকেট থেকে টাকা বের করে হিয়াকে দিয়ে দিলো।হিয়া টাকা দিয়ে বাতাস খেতে খেতে বললো,
~যাক ভালোই ভালোই টাকা দিয়ে দিলি নাহলে তো খবর আনিয়ে ছাড়তাম এখন যা রুমে।
বলেই হিয়া দরজা থেকে সরে দাড়ালো ইলহাম বললো,
~Good night.
বলেই দরজা ঠেলে ভিতরে চলে আসলো হিয়া সেখান থেকে নিজ রুমে চলে গেলো।ইলহাম রুমে ডুকতেই দেখতে পেলো হেমন্তি শুয়ে আছে বিছানায়।হয়তো ঘুমিয়ে গেছে পায়ের নিচে বালিশ দেওয়া আছে।
ইলহাম খেয়াল করলো পায়ের একপাশ লাল হয়ে গেছে সে ধীর পায়ে হেঁটে হেমন্তির পায়ের কাছে বসে পরলো।
হালকা হাতে পায়ে হাত বুলাতেই হেমন্তি কেঁপে উঠলো চোখ খুলে তাকাতেই দেখতে পেলো ইলহামকে তাকে দেখে ধরফড়িয়ে হেমন্তি উঠতে যাবে তখনই পায়ের ব্যাথায় “আহহ” করে উঠলো।
ইলহাম হেমন্তির বাহু ধরে বললো,
~relax আমি বাঘ না যে তোমায় খেয়ে ফেলবো শুয়ে পরো।
হেমন্তি একবার ইলহামের দিকে তাকালো ইলহাম হেমন্তির মাথা বালিশে দিয়ে দিলো।আর বললো,
~ঘুমানোর চেষ্টা করো কোনো কিছুর দরকার পরলে আমাকে ডেকে দিবে আমি এখানেই আছি।
বলেই সে হেমন্তির থেকে দূরত্ব বজায় রেখে শুয়ে পরলো মাঝখানে একটা বালিশ দিয়ে।হেমন্তি ইলহামকে যতো দেখছে ততো অবাক হচ্ছে লোকটা কতো ভালো তার কতো খেয়াল রাখছে।তার বাবা যে তাকে ভুল মানুষের হাতে তুলে দেই নি সেটা সে খুব ভালো করেই বুঝতে পেরেছে।
হেমন্তি মুচকি হেসে চোখ বন্ধ করে ফেললো অন্যদিকে ইলহামও ওপাশ ফিরে শুয়ে পরলো তার ঘুম আসছেনা হেমন্তিকে একবার দেখা উচিত এ ভেবেই সে ঘুরে হেমন্তির দিকে ফিরলো আর দেখলো হেমন্তি ঘুমিয়ে পরেছে।
হেমন্তির শান্ত মুখ খানা দেখে ইলহাম তার দিকে তাকিয়েই শুয়ে পরলো হেমন্তির কথা ভাবতে ভাবতেই ইলহাম চোখ বন্ধ করে ফেলে এক পর্যায়ে ঘুমিয়ে পরে সে।

চলবে

(বিদ্রঃকেমন হয়েছে জানাবেন। ভুলগুলো ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখার অনুরোধ রইলো🥰🥰।Happy Reading🤗🤗)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here