#অজানা
#লেখনীতে_তাশরিফা_খান
পর্ব–১৩
সকাল বেলা। এখনও ঠিক মতো আলো ফোটেনি। এই সুযোগে বাড়ি থেকে বের হয়ে আসছে আরিবা। সব বডিগার্ডরা নাক ঢেকে ঘুমাচ্ছে। দেখেই আরিবার মেজাজ খারাপ হয়ে গেলো। ওদের দিকে আরিবা গরম চোখে তাকালো। কোমরে হাত গুজে নিজে নিজেই বললো।”এরা এমন ঘুমায়? বাবা এদের এত টাকা দিয়ে রাখছে কি করতে? এই বাড়ি থেকে যদি আমায় কেউ চুরি করেও নিয়ে যায় তবুও তো টের পাবেনা। এদের নাক ডাকা বের করবো দাড়া!…” কথাগুলো বলে ওদের দিকে যেতে লাগলো। পরক্ষনেই কোমরে হাত গুজে ভেবে বললো, “না থাক এখন তো আমি নিজেই পালাচ্ছি। ঝামেলা শেষ হোক তারপর এদের মজা বুঝাবো। এখন আমি পালাই। নিজে বাঁচলে জামাইর নাম।” কথাগুলো বলে আরিবা সামনে পা বাড়ালো। শীতের ভাব এখনোও কাটেনি। আরিবার হালকা শীত লাগছে। ওড়নাটা ভালো করে গায়ে জড়িয়ে নিলো। জনমানবশূন্য রাস্তায় হাটতে ভয় লাগছে ওর। আসেপাশে তাকিয়ে তাড়াতাড়ি হাটছে। এইদিন স্টোর রুমের শব্দ শুনে বেহুস হওয়ার পর থেকেই একটা পাতা পরার শব্দেও ভয় পায় ও। ওইদিন সবাই ভয় পেয়ে গেছিলো। সব থেকে বেশি ওর বাবা আর আরশ। ও জানেনা আরশ কেনো এমন ব্যকুল হয়ে গেছিলো। ওইদিনের কথা মনে পরেই ওর গা ছমছম করে উঠলো। হাটার গতি বাড়িয়ে দিলো আরিবা।ওকে ভয় পেলে চলবে না। ওর নিজ গন্তব্যে পৌঁছাতেই হবে কিছুতেই এই বাড়িতে থাকবেনা। ও চলেই যাবে। এসব ভেবেই নিজ গন্তব্যে এগিয়ে গেলো।
ফজরের নামাজ পড়ে এসে সবে দোতলার দিকে পা বাড়াচ্ছিলো নিদ্র। হঠাৎ কলিং বেলের শব্দে চমকে উঠলো। এত সকালে কে আসতে পারে? কোনো খারাপ খবর নাতো? এসব ভেবেই গুটি গুটি পায়ে এগিয়ে গিয়ে দরজা খুললো। দরজা খুলেই চমকে গেলো ও।
“বিউটি ডল”
মুখ থেকে অস্পষ্ট ভাবে বেড়িয়ে এলো। ও স্বপ্ন দেখছে নাতো? দেখলেও ভালো। সেই প্রথম পরীক্ষার দিন দেখেছিলো। স্কুল ড্রেস পরে লাফিয়ে লাফিয়ে পরীক্ষার কক্ষে ঢুকছে। এই কয়েক মাসে আর দেখেনি ও। নিজের প্রান যেনো জুরিয়ে গেলো।
” কেমন আছেন নিদ্র ভাইয়া?”
একথা শুনে চমকে গেলো নিদ্র। সামনে তাকিয়ে দেখলো সাদা ওড়না গায়ে জড়িয়ে দাড়িয়ে আছে আরিবা। তারমানে বিউটি ডল সত্যি এসেছে? কিন্তু এত সকালে কেনো? কি হইছে? বিষ্ময় নিয়ে বললো।
“তুমি সত্যি এসেছো? এত সকালে কেনো? কোনো সমস্যা?”
“নেত্রাকে দেখতে মন চাইছিলো!”
মুচকি হেসে মাথা দুলিয়ে উওর দিলো আরিবা। নিদ্র আরও অবাক হয়ে বললো।
“এত দেখতে ইচ্ছা করছে? আরও পরে আসতে পারতে তাই বলে এত সকালে? একা আসছো?”
“হুম”
“পরে আসলে কি ক্ষতি হতো তোমার? এই সকালেই আসতে হলো?”
নিদ্র রাগি গলায় কথাগুলো বললো। আরিবা কেমন জানি অপমানিত বোধ করলো। তাই আমতা আমতা করে বললো।
“আচ্ছা তাহলে চলে যাচ্ছি।”
“আসছো এখন যাবে কেনো? ভিতরে আস। রাগ করেছি বলে কিছু মনে করো না। একা আসা উচিত হয়নি তোমার। আসার পথে সমস্যা হতে পারতো। বড় হইছো এটুক বোঝা উচিত ছিলো না?”
আরিবা উওর দিলো না। জোরপূর্বক হেসে ভিতরে চলে গেলো। নিদ্রর কিছু বলার আগেই ও দৌঁড়ে সিড়ি বেয়ে উপরে চলে গেলো। নিদ্র মুচকি হেসে নিজের রুমে অগ্রসর হলো।
আরিবা দৌড়ে নেত্রার রুমে ঢুকলো। নেত্রাকে নাক ডেকে ঘুমাতে দেখে ওর মাথায় দুষ্ট বুদ্ধি এলো। নেত্রার কানের কাছে মুখ নিয়ে জোরে “হালুম” বলতেই নেত্রা লাফিয়ে উঠলো। ভুত ভুত বলে চেঁচাতেই আরিবা ওর মুখ ধরে বললো।
“আমি”
ওকে দেখে চমকে গেলো নেত্রা। ভুল দেখছে নাতো? চোখটা ভালো করে মুছে তাকালো। নাহ এতো রিবা! চোখ ছোট ছোট করে তাকিয়ে প্রশ্ন করলো।
“বান্দরনী! এত সকালে তুই এখানো কেন? কি ঝামেলা পাকাইছোছ আবার?”
“আমি ঝামেলা পাকানোর মেয়ে? আমার মতো শান্তশিষ্ট মেয়ে আরেকটা দেখাতো?”
“তুই! তুই শান্ত আবার শিষ্ট? তোর মতো বান্দর তাকলে তো দেখাবো!”
“কি বললি?”
শেষের কথাটা নেত্রা আস্তে করে বলছে বিধায় আরিবা শুনতে পায়নি। সব ফেলে নেত্রা প্রশ্ন করলো।
“এসব বাদ দে! কেনো আসছোছ তা বল?”
“আগে কথা দে কাউকে বলবিনা?”
“আচ্ছা বইন বল!”
“পালিয়ে আসছি!”
আরিবার কথা শুনে চমকে লাফ মারতে গিয়ে খাট থেকে পড়ে গেলো নেত্রা। ব্যাথা পেলেও তাতে ওর খেয়াল নেই। তারাতারি উঠে আরিবার পাশে বসলো। বিস্ময় নিয়ে বললো।
“কার সাথে? কখন প্রেম করলি? আমাকে তো বলোছ নি? সেই ছেলে রেখে আমাদের বাড়ি কেনো?”
নেত্রার প্রশ্ন শুনে আরিবা ঠাসস করে দিলে এক থাপ্পড়। নেত্রা গালে হাত দিয়ে অবাক চোখে বললো।
“মারলি কেনো?”
“বলদ বলদ কথা বলার জন্য!”
” কি বলদামী করলাম?”
“দেখা? কোন আইনে লেখা আছে পালালে ছেলেদের সাথেই পালাতে হবে? না দেখাতে পারলে দিব আরেক থাপ্পড়।”
” না নেই! কেউ কি একা পালায়? সেটা তাহলে তুই দেখা!”
” হুম পালায়, আমি পালাইছি! দেখ ভালো করে দেখ আমাকে!”
“ওহ! বাড়িতে বলে আসছছ নাকি আমি ফোন করে বলবো?”
নেত্রার কথা শুনে দিলো আরেক থাপ্পড়। নেত্রা গালে হাত দিয়ে বোকা বোকা চাহনিতে তাকিয়ে বললো।
“আবার মারলি কেনো?”
আরিবা রাগ নিয়ে বললো।
“এই বলদ! বলে আসলে কি পালানো হতো?”
“ওহ তাইতো! তোর থাপ্পরে সব গুলিয়ে যাচ্ছে বইন। আচ্ছা পালালি কোনো?”
” আজ এসএসসি পরীক্ষার রেজাল্ট দিবে ভুলে গেছোছ?”
নেত্রা বোকা চোখে বললো।
“রেজাল্ট আর পালানোর সাথে কি সম্পর্ক? ”
“টেস্ট পরীক্ষার রেজাল্ট খারাপ হইছে বলে মি. খবিশ আমায় খুব বকছিলো। ফাইনালে খারাপ হলে তো খেয়েই ফেলবে।”
“ওওও”
“কাউকে বলবিনা আমি এখানে, আরশ ভাইয়াকেও না। এবার নিজে ঘুমা আমারেও ঘুমাতে দে? অনেক দূর হেটে আসছি কিছি খেতেও দিলি না। কি কিপ্টা তুই! গুড নাইট!”
“বইন এখন সকাল”
“আমি ঘুমাচ্ছি তাই রাত বুঝলি?”
বলেই আরিবা কাঁথা মুড়া দিয়ে শুয়ে পড়লো। নেত্রা গাল ফুলিয়ে ওর পাশে শুয়ে পরলো।
———————————-
সকালে ঘুম থেকে উঠেই সোরগোল বেঁধে গেলো চৌধুরী বাড়িতে। আরশ একেকটা বডিগার্ডকে মেরে আধমরার মতো করে ফেলছে। তাতেও যেনো তার রাগ কমছেনা। এতগুলো বডিগার্ড থাকতে কি করে তার মায়াপরী উধাও হয়ে গেলো? কিভাবে কেউ ওকে কিডন্যাপ করলো? কার এত সাহস চৌধুরী বাড়ির মেয়ের দিকে হাত বাড়ায়? তানজীম হাসান আরশ চৌধুরীর মায়াপরীর দিকে হাত বাড়ায়? কোনো উওর মেলাতে পারছেনা আরশ। পুলিশে, নিউজ চ্যানেলে খবর দেওয়া হয়ে গেছে। আরশ লোক লাগিয়েছে ওর খোজে। মিসেস আঞ্জুমান মেয়ের চিন্তায় বেহুস হয়ে গেছেন। আরিবার বাবা কোনো মতে ঠিক আছে। সবার মাঝেই বিরাজ করছে শোকের ছায়া। আরশ যেনো নিজের মধ্যেই নাই। রুমে গিয়ে সব তছনছ করে ফেলছে আর মায়াপরী মায়াপরী বলে চিৎকার করছে। শান্তুনা দেওয়ারও কেউ নেই সবার একেই অবস্থা। দেয়ালো টানানো আরিবা হাস্যজ্জ্বল ছবির দিকে তাকিয়ে ফ্লোরে বসে পড়লো আরশ। পরক্ষনেই সিসি ক্যামেরার কথা মনে পড়তেই দৌড়ে ল্যাপটপ অন করলো। তাড়াহুড়ায় সব ভুলে গেছে। কথায় আছে বেশি তাড়াহুড়া করতে নেই তাহলেই ভুল হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। রেকর্ড দেখে আরশের মাথা ঘোরাতে লাগলো। এটা কি করে সম্ভব? তার মায়াপরী পালিয়ে গেছে? কি করে পালাতে পারে? ওর মায়াপরী তো শুধুই ওর, অন্য কারো হতে পারেনা। আরশ অনুভুতিহীন ভাবে সোফায় বসে পড়লে। বিড়বিড় করে কান্না জড়িত কন্ঠে বলতে লাগলো।
“তুমি এটা কি করলে মায়াপরী? আমি কিভাবে এটা সহ্য করবো? সকালে ঘুম থেকে উঠি আবার ঘুমাই তোমার ওই মায়াভরা মুখটা দেখে। এখন আমি কাকে দেখবো? বলো? নাহ তুমি চলে যেতে পারোনা।”
চিৎকার করে হাত দিয়ে ঠ্যালা মেরে ল্যাপটপ ফেলে দিলো। রেগে সোফা থেকে দাড়িয়ে গেলো। তারপর কিছু একটা ভেবে নেত্রাকে ফোন লাগালো।
ফোনের শব্দে ঘুম ভেঙে গেলো নেত্রার। ওর এত সাধের ঘুম কে ভাঙলো? আজ তার খবর আছে। কিন্তু ফোনটা ধরতেই চুপসে গেলো নেত্রা। কি করবে ও? এই দুই ভাই বোন ওকে জালিয়ে মারলো। তাড়াহুড়া করে আরিবাকে ডাকলো। আরশ কল দিছে শুনেই আরিবা লাফিয়ে উঠলো। নেত্রা কলটা রিসিভ করেই সালাম দিলো। আরিবা কান পেতে শুনছে। আরশ সালামের উওর নিয়ে বললো।
“আরিবা তোমাদের ওখানো?”
নেত্রা কাঁপা কাঁপা গলায় উওর দিলো।
“নাতো ভাইয়া। কেনো?”
“ওকে পাওয়া যাচ্ছে না।”
“কি বলেন ভাইয়া? কোথায় গেছে?
“তোমার কন্ঠ এমন কাঁপছে কেনো?”
নেত্রা নিজেকে যথেষ্ট স্বাভাবিক করার চেষ্টা করলো কিন্তু সফল হলোনা। আবারও কাঁপা কাঁপা গলায় বললো।
“ভয়ে কাঁপছে।”
“কিসের ভয়ে?”
আরিবা ধারিম করে নেত্রার পিঠে কিল বসিয়ে দিল। নেত্রা পিঠ ডলতে ডলতে বললো।
“রিবাকে পাওয়া যাচ্ছে না শুনে সেই ভয়ে ভাইয়া।”
“ওহ! আচ্ছা বাই।”
কথাটা বলেই আরশ ফোনটা কেঁটে দিলো। রাগে ফোনটা পাছার দিয়ে বিছানায় ফেলে দিলো। রাগে ওর মাথায় রক্ত টগবগ করছে। বড়বড় পা ফেলে রুম থেকে বেরিয়ে গেলো। আজ কিছুই মানবেনা ও। মায়াপরীর আজ
খবর আছে।
ইনশাআল্লাহ চলবে…..
(গল্পটা কি আপনাদের কাছে ভালো লাগছেনা? তাহলে আর দিবো না এটা। আসলে ২-৩ ঘন্টা সময় ব্যয় করে লিখে রেসপন্স না পেলে লিখার মন থাকেনা। প্লিজ জানাবেন)