#অজানা
#লেখনীতে_তাশরিফা_খান
পর্ব–২৮
💝
গভীর ঘুমে মগ্ন হয়ে আছে আরিবা। হঠাৎ দরজায় নক করার শব্দে ঘুম ভেঙে গেলো ওর। এত সাধের ঘুমটা কে ভাঙলো তাকে আজ আম সত্তা বানিয়ে ফেলবে মুড নিয়ে ঘুম থেকে উঠলো। চোখটা খুলেই রুমটা দেখে মনে পড়লো ও সাজেক আসছে। তাড়াতাড়ি করে ঘড়িতে সময় দেখলো। সময় দেখেই ওর মাথায় হাত। চার টা বেজে গেছে। আরশ বলেছিলো বিকালে ঘুরতে যাবে। সবাইকি ওকে রেখে চলে গেলো? এসব ভেবেই আরিবার কান্না পেলো।
“কিরে? দরজা খুলতে এত দেরি লাগে? তুই আসবি নাকি তোকে রেখেই চলে যাবো?”
দরজার বাইরে আরশের কন্ঠ পেয়ে বুঝলো ওকে রেখে যায়নি। অগত্যা লাফ মেরে বেড থেকে নেমে দরজা খুললো। দেখলো আরশ রাগি লুক নিয়ে অন্য দিকে তাকিয়ে আছে। আরিবা আরশের দিকে তাকিয়ে বললো।
“ভাইয়া ৫ মিনিট ওয়েট করো। আমি এখনি ফ্রেশ হয়ে আসছি।”
আরশ আরিবার কথা শুনে ওর দিকে তাকালো। ওকে দেখে ওর রাগটাই চলে গেলো। হালকা ঘুমন্ত চেহারায় আরিবাকে খুব সুন্দর লাগছে। চুলগুলো এলোমেলো হয়ে আছে। ঘুমের কারনে চেহারায় হালকা তৈলাক্ত ভাব হয়ে আছে। শেষ বিকেলের রোদটা চেহারায় পড়ায় চেহারা থেকে আলো বিচ্ছুরিত হচ্ছে। একটু ফোলা ফোলা চোখ দুটো সৌন্দর্যের এক অন্যন্যা। আরশকে এক দৃষ্টিতে চেয়ে থাকতে দেখে আরিবা এদিক ওদিক তাকালো। তাতেও আরশের ধ্যান ভাঙলো না। আরিবা ভাবলো আরশের কি হইছে? দুপুরেও তাকিয়ে থাকতে দেখেছে। তাই আরিবা মাথা চুলকে বললো।
“ভাইয়া কি হইছে! এভাবে তাকিয়ে আছো কেনো?”
আরিবার কথায় আরশের ধ্যান ভাঙলো। হালকা কেশে অন্য দিকে তাকিয়ে বললো।
“কিছুনা। তুই ফ্রেশ হ। আমরা ওয়েট করছি। সময় ১০মিনিট। ”
আরিবাকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়েই আরশ চলে গেলো। আরিবা রাগ নিয়ে বিড়বিড় করতে করতে ফ্রেশ হতে চলে গেলো।
ফ্রেশ হয়ে আসরের নামাজ পড়লো আরিবা। অতপর তাড়াতাড়ি গাউন টা গায়ে দিলো। সাথে ম্যাচিং হিজাবটা কোনো মতে পেচিয়ে চলে এলো। আরিবা দৌড়ে যেতেই আরশ ভ্রু কুচকে ওর দিকে তাকালো। বিরক্তি নিয়ে সজলের দিকে তাকিয়ে বললো।
“বুঝলি সজল! মেয়ে মানেই ঝামেলা। ঘুরতে এসেও এদের জন্য শান্তি নাই। কোথাও গেলে রেডি হতেও এক ঘন্টা।”
আরিবা অবাক হয়ে বললো।
“এক ঘন্টা কই লাগলো? মাত্র ২০ মিনিট! এতে আমি ফ্রেশ হইছি নামাজ পড়ছি তারপর রেডি হইছি।”
“ওই একেই! তোরা মেয়েরাই আস্ত ঝামেলা।”
আরিবা ভ্রু কুচকে আরশের দিকে তাকালো। অগত্যা পাশে দাড়ানো ওর মা বাবা ও কাকা কাকিমনির দিকে তাকালো। অতঃপর মুখে হালকা হাসি ঝুলিয়ে বললো।
“মেয়ে মানেই ঝামেলা তাইনা?”
“হুম”
“তাহলে তোমার মা কাকিমনিও বুঝি ঝামেলা?”
আরশ হালকা কেশে উঠলো। ও বুঝতে পারেনি আরিবা এভাবে ঢিল মারবে। আরশ আমতা আমতা করে বললো।
“আরে গাধী! আমি তো মেয়েদের কথা বলছি। আমার কাকিমনি বা মায়ের কথা বলিনি।”
আরিবা অবাক হয়ে বললো ” আম্মু আর কাকিমনি কি মেয়ে না?”
“জি না”
এবার আরিবা আরও অবাক হলো। বড় বড় চোখে চেয়ে বললো ” তাহলে কি?”
” তারা মহিলা”
আরিবা ভ্রু কুচকে বললো “মেয়ে আর মহিলা কি আলাদা?”
আরশ ভাব নিয়ে বললো ” হুম”
আরিবা রাগ নিয়ে বললো “বললেই হলো? মেয়ে মানেই মহিলা। মহিলা মানেই মেয়ে!”
আরিবা আর আরশের যুক্তি শুনে সবাই ঠোট চেঁপে হাসছে। আরশ মুচকি হেসে আরিবার দিকে একটু এগিয়ে গেলো। অতঃপর চুলটা হাত দিয়ে পিছনে ঠেলে ভাব নিয়ে বললো।
“জি না। মেয়ের বিপরীত শব্দ হলো ছেলে। আর মহিলার বিপরীত শব্দ হলো পুরুষ। দেখ কত পার্থক্য! এবার আমাকে বোঝা এখানে এক কোথায়?”
আরিবা বোকা বনে গেলো। বোকার মত হা করে তাকিয়ে রইলো। আরশ হেসে ওর নাকটা টেনে সামনে চলে গেলো। সবাই আরশের পিছু পিছু চললো। আরিবা নাকে হাত দিয়ে অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে।
“মামনি চলো!”
আরিবা ওর বাবার কথায় তার দিকে তাকালো। তিনি মিষ্টি হেসে বললেন।
“মামনি ওর সাথে তুমি কখনই পারবেনা। ও ধূর্ত চালাক। যার সাথে আমরা পারবোনা তার সাথে ঝগড়ায় লাগাটা বুদ্ধিমানের কাজ নয় বরং বোকামি। তাকে এড়িয়ে চলাটাই বুদ্ধিমত্তার পরিচয়।”
আরিবার মা কিছু পথ গিয়ে পিছনে ফিরলেন। নিজের স্বামী ও মেয়েকে দাড়িয় থাকত দেখে স্বামীর উদ্দেশ্যে হাক ছেড়ে বললেন।
“মেয়েকে আবার কুবুদ্ধি দেওয়া হচ্ছে তাইনা? তাড়াতাড়ি এসো।”
মিসেস আঞ্জুমান এটুকু বলে থামলেন। অতঃপর মেয়ের দিকে গরম চোখে তাকিয়ে বললেন।
“বাবার আল্লাদ পেয়েই মাথায় উঠছো। খাওয়া দাওয়া তো করার নাম নাই। খাওয়ার কথা বললেই চিল্লাচিল্লি। তাড়াতাড়ি আয়!”
আরিবা ও তার বাবা একে অপরের দিকে অসহায় দৃষ্টিতে তাকালো। অতঃপর ঠোঁট উল্টে সামনে চললেন।
বিকেল বেলা সূর্যাস্তের সময়। আরশ সবাইকে নিয়ে কংলাক পাহাড় এসেছে। এটি সুমুদ্র পৃষ্ট থেকে ১৮০০ ফুট উচুতে।সাজেকে সব থেকে ভালো সূর্যাস্ত দেখা যায় এই কংলাক পাহাড় থেকে। সেই উদ্দেশ্যেই সবার আসা। আরিবা তখন থেকেই এদিক ওদিক হাটছে আর ছরি তুলছে। ও যেনো খুশিতে আত্মহারা। উচু পাহাড়ে মেঘেদের আনাগোনা। যতদূর চোখ যায় শুধু পাহাড়। শেষ সীমানায় মনে হচ্ছে আকাশ এসে পাহাড়ের সাথে মিশে গেছে। বিকেলের লাল রোদে সবটা লালচে লালচে লাগছে। সূর্যটা প্রথমে লালচে রং ধারন করেছে। তারপর আস্তে আস্তে সূর্যটা বড় হয়ে পাহাড়ের মধ্যে চলে যাচ্ছে। আরিবার সত্যি সত্যি মনে হচ্ছে সূর্যটা পাহাড়ের মধ্যে ডুবে যাচ্ছে। আরিবার অবাক হয়ে দেখলো সাথে ভিডিও করলো। যাতে ওর বন্ধুদের দেখাতে পারে। আরিবার আনন্দের শেষ নেই। আরিবার মনে হচ্ছে ও সব থেকে উপরে উঠে গেছে। একটু হলেই আকাশ ধরতে পারবে।
আরিবা চোখ প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের মধ্যে থাকলেও আরশের চোখ শুধুই ওর মায়াপরীতে ডুবে আছে। ও শুধু দেখলো এই গোধুলির বেলায় ওর মায়াপরীর আরেক সৌন্দর্য্য। উপভোগ করলো ভালোবাসার আরেক সুখ। আরশ আস্তে করে হেটে আরিবার কাছে গেলো। আরিবা ছবি তোলায় ব্যস্ত। হুট করেই আরশ ওর পিছনে দাড়ালো। এই নান্দনিক পরিবেশে আরশ কাছে আসায় আরিবার শরীরে দোলা দিলো অন্য রকম অনুভুতি। যেটা একেবারেই নতুন। আরিবা আস্তে করে ঘাড় ঘুরিয়ে ওর দিকে তাকাতে গেলো। অগত্যা আরশ ওর কানের কাছে মুখ নিলো। আরিবা তাড়াতাড়ি সামনে ঘুরে জোরে জোরে নিতে লাগলো। আরশ ওর কানে মুখ লাগিয়ে স্বল্প স্বরে বললো।
“এই সৌন্দর্য কি তোমায় মুগ্ধ করেছে?
তবে আমায় কেনো মুগ্ধ করেনি?
আমি কি আমার মাঝে রয়েছি?
নাকি অন্য সৌন্দর্যের মুগ্ধতায় আটকে আছি?
তবে কি করে এই তুচ্ছ সৌন্দর্য মুগ্ধ করবে আমায়?
হে সৌন্দর্যকন্যা! বলো? এর উওর দিবে কি তুমি?”
আরশ কথা বলার সময় বারবার ওর ঠোঁট আরিবার কানে লাগছে। আরিবা হীম হয়ে চোখ বন্ধ করে দাড়িয়ে আছে। কিছুক্ষন পর আরশের উপস্থিতি না পেয়ে চোখ খুললো। পিছনে ফিরে দেখলো। আরশ চলে যাচ্ছে। আরিবা অবাক হয়ে ভাবলো। আরশ এসব ওকে বলছে? সৌন্দর্যকন্যা বলে কি ওকে সম্বোধন করেছে? আরিবা সন্দিহান। কিছুক্ষণ আগের কথা মনে পড়তেই আরিবা লজ্জামাখা মুখে আশেপাশে তাকালো। দেখলো প্রায় মানুষ চলে গেছে। এই সৌন্দর্য দেখতে দেখতে কখন এত সময় চলে গেছে বুঝতেই পারেনি। আরিবা মুচকি হেসে আরশের পিছু চললো।
রাতের বেলা সাজেকের আকাশে থাকে অপরূপ সৌন্দর্য্য। সারা আকাশ জুড়ে কোটি তারার মেলা। মনে হয় হাত বাড়ালেই ধরা যাবে। সবাই মিলে বসে আছে আরিবার বারান্দায়। উদেশ্য আড্ডা দেওয়া। ওদের সাথে সজল ও অন্যান্য লোক (ওদের সাথে যারা আসছে তারা) এড হলো। আরিবা বলছে সবাই মিলে খেলবে। কিন্তু অনেক খুজেও কোনো খেলা পেলোনা। যদিও আরিবা দুটি খেলার নাম বলছিলো কিন্তু আরশ ধমক মেরে দিয়েছে। কারন ওই খেলা সবাই খেলতে পারবেনা। হঠাৎ করে আরিবা সবার মাঝে লাফিয়ে উঠলো। হাসি মুখে বললো।
” পেয়েছি একটা খেলা। যা সবাই খেলতে পারবে।”
আরশ ভ্রু কুঁচকে বললো।
” যদি আগের মতো উল্টো পাল্টা বলোছ তো বুঝবি মজা!”
আরিবা মুকে হাসি ফুটিয়ে আরশকে মুখ ভেংচি দিলো। অগত্যা সবার দিকে তাকিয়ে বললো।
” খেলার নাম হলো শব্দবিন্যাস মানে শব্দ গঠন।”
কেউ কিছুই বুঝলো না। তাই আরিবা আবার বললো।
“আমি বুঝিয়ে বলছি। আমরা প্রথমে গোল হয়ে বসবো। তারপর আরি একটা শব্দ বলবো তারপর আমার পরের জন ওই শব্দটার শেষের অক্ষর দিয়ে আরেকটা শব্দ বলবে। এমন ভাবে পালাক্রমে যেতে থাকবে। যে বলতে পারবেনা সে আউট। বুঝেছো?”
সবাই বুঝে গেলো। আরিবা একটা শব্দ বললো।
“আম”
আরিবার মা বললো।
“মরিচ”
আরিবার কাকি বললো।
“চরম”
এভাবেই ওরা খেলতে লাগলো। আরিবা খুব মজা পাচ্ছে। বাচ্চাদের মতো হেসে উঠছে। আরশ হৃদয় দিয়ে সেই হাসি উপভোগ করছে। সবাই জমিয়ে আড্ডা দিলো। আড্ডা দিতে দিতে আরিবা সবার মাঝে কখন ঘুমিয়ে পড়লো বুঝতেই পারেনি।
—————————–
“ভাইয়া আমার থেকে লুকিয়ে ছিলি কেনো?”
বেলকনিতে দাড়িয়ে আকাশ দেখছিলো নিদ্র। হঠাৎ পিছন থেকে বোনের কথা শুনে পিছনে তাকালো। নেত্রার কথার মানে বুঝেনি। তাই ভ্রু কুচকে বললো।
“কি লুকাইছি? কোন কথা বলছিছ?”
নেত্রা বিরক্ত হয়ে বললো।
“ভাইয়া ঢং করিছ না। আমি জানি তুই আরিবাকে ভালোবাসোছ। তা আমাকে বললি না কেনো? আমাকে বললে কি ক্ষতি হতো তোর? আমি তো আরও উপকার করতাম।”
“কি উপকার করতি শুনি?”
নেত্রা ভাব নিয়ে বললো।
“আমি ওকে বলতাম আমার ভাবি হওয়ার কথা। আমি তো চাই ও আমার ভাবি হোক? আচ্ছা তুই ওকে ভালোবাসছ তা না বলে এমন স্যাকা খাওয়া মানুষের মতো করোছ কেনো?”
নিদ্র চুপ করে রইলো। মনে মনে বললো। ” তোকে কি করে বলবো? আমার ভালোবাসা পেতে হলে তোর ক্ষতি হবে। এটা আমি চাইনা বোন!”
নিজের ভাইকে চুপ থাকতে দেখে নেত্রা আবার বললো।
“চিন্তা নাই। আরিবা কাউকে ভালোবাসে না। আমি বললে ও রাজি হবে। যদিও আরশ ভাইয়া ওকে খুব ভালোবাসে কিন্তু ও আরশ ভাইয়া কে সহ্য করতে পারেনা।”
নিদ্র অবাক চোখে নেত্রার দিকে তাকালো। কি বললো ও? আরশ আরিবাকে ভালোবাসে? তার মানে ওকে ধরে নিয়ে থ্রেট দেওয়া অজানা লোকটা আরশ নয় তো? নিদ্র সব কিছু মিলাতে লাগলো। নেত্রা ওকে চুপ থাকতে দখে বিরক্ত হয়ে চলে গেলো।
💖
ইনশাআল্লাহ চলবে…..