#অজানা
#লেখনীতে_তাশরিফা_খান
পর্ব–৩০
💖
নিজের বারান্দার দোলনায় ভাবলেশহীন ভাবে বসে আছে আরিবা। একটু আগের কথার মনে পরতেই ওর কলিজা শুকিয়ে যাচ্ছে। হৃদপিণ্ড জোরে জোরে বিট করতে লাগলো।
তখন আরশ আরিবাকে কবিতা বলেই ওর দিকে তাকালো। আরিবা ভয়ে চোখ বন্ধ করে দাঁড়িয়ে রইলো। আরশ ওকে চোখ বন্ধ করতে দেখে হালকা করে চোখে ফু দিলো। আরিবা আরও জোরে বন্ধ করে নিলো।
“স্যার! রাতে কি খাবে..”
কটেজে প্রবেশ করতে করতে একথা বলতে ছিলো সজল। ভিতরে ওদের এমন অবস্হায় দেখে কথা আপনা আপনি থেমে গেলো। অবাক হয়ে বোকার মত মুখ করে চেয়ে রইলো। আরশ এদিক ওদিক তাকিয়ে মাথা চুলকে বারান্দায় চলে গেলো। সজল নিজেই লজ্জা পেয়ে গেলো। আরিবা ওর দিকে তাকাতেই ও কান্না মাখা চেহারায় জোর পূর্বক ঠোঁট প্রসারিত করলো। আরিবা আমতা আমতা করে ধরা খাওয়া চোরের মতো এক প্রকার পালিয়ে এলো।
আরিবার দোলনায় বসে এক ধ্যানে দোল খাচ্ছে আর এসব ভাবছে। ভাগ্য ভালো তখন সজল এসে পরেছিলো নাহলে আরশ আর কি করতো কে জানে। আরিবা খুবেই ভয় পেয়েছে। আরশের চাহনি আর কথা বলা সবেই নতুন ছিলো। আরিবার আবার নিজের ভাবনায় আবদ্ধ হলো।
আরশ রাগি চোখে সজলের দিকে তাকিয়ে আছে। সজল মাথা নিচু করে দাড়িয়ে আছে। বসের পার্সোনাল টাইমে চলে আসছে আবার তার প্রেমে বাগড়া দিয়েছে। লজ্জাও লাগছে আবার ভয়ও লাগছে। আরশ রাগ নিয়ে বললো।
“আরেকটু আগে আসতে পারলি না? এত দেরি করে আসলি কেন ভাই? আরেকটু দেরি হলেই আমি গেছিলাম!”
সজল বিদ্যুতের ন্যায় চমকে গেলো। ভাবলো কি আর হলো কি? অবাক চোখে আরশের দিকে তাকিয়ে বোঝার চেষ্টা করছে তার স্যার কি সত্যি সত্যি বলছে নাকি রেগে এমন করছে। সজল অনেকক্ষন পর বুঝলো আরশ রেগে নেই। তাই আস্তে করে বললো।
“স্যার! আরেকটু দেরি হলে কি হতো?”
“আরে তুই যদি না আসতি তাহলে আমি ওকে সবেই বলে দিচ্ছিলাম। ও হয়তো অনেক কিছু বুঝে গেছে।”
আরশের কথা শুনে সজল দাঁত বের করে হেসে বললো।
“স্যার! আমি তো তাহলে একটা থ্যাংক ইউ পাই তাই না?”
আরশ সজলের দিকে রাগি চোখে তাকাতেই সজল আমতা আমতা করে বললো।
“না, বলছিলাম কি স্যার!”
“কি বলছিলে?”
“মানে রিবা ম্যাডাম কে তো আজ না হয় কাল আপনার মনের কথা বলতেই হবে। এখনি বলে দেন! দিনকাল তো ভালো না, অন্য ছেলে মনে ঢুকতে কতক্ষণ? যদি ঢুকে পড়ে? তাছাড়া একটা মেয়ে কাউকে ভালোবাসলে মরে গেলেও অন্য কাউকে ভালোবাসবে না।”
আরশ চমকে তাকালো। ভেবে দেখলো ঠিকই। কিন্তু কি করবে? সামনে বড় ঝামেলা আছে। ওটা শেষ না হতে কিছুতেই ওকে মনের কথা বলা যাবে না। আরশ কিছু না বেলেই ধীর পায়ে বারান্দায় চলে গেলো। পাশের কটেজের বারান্দায় তাকাতেই আরিবাকে দেখতে পেলো। দোলনায় বসে আছে। আঁচল টা মাটিতে লুটোপুটি করছে। চুলগুলো এলোমেলো করে ছেড়ে রেখেছে। দোল খাওয়ার সময় বাতাস বইছে তাতে চুলগুলো আরও এলোমেলো হয়ে যাচ্ছে। কখনও উড়ছে আবার কখনও ওর মুখে আছড়ে পড়ছে। আরশ আরিবার দিকে তাকিয়ে দেখলো ও এক ধ্যানে বসে আছে। আরশের বুঝতে বাকি নেই যে আরিবা কি ভাবছে। ওর ধ্যান ভাঙতে আরশ নিজের কটেজ থেকে চিল্লিয়ে বললো।
“এই রাত্রি বেলা বারান্দায় কি? তাও চুল ছাড়া? এখানে পেতনি আছে জানোছ? ধরে পাহাড় থেকে ফেলে দিবে।”
আরিবা আরশের কথা শুনে ওর দিকে তাকালো। ওর কেমন জানি লাগতে ছিলো। কিন্তু আরশকে স্বাভাবিক দেখে ওর কিছুই মনে হলোনা। মুখ বাকিয়ে বললো।
“আমার জানা মতে পেতনি মেয়েদের ধরে। তোমাকে ধরবে ভাইয়া! তুমি ভিতরে যাও!”
কথাটা বলেই আরিবা খিলখিল করে হেসে উঠলো। ওর হাসি সারা পরিবেশ জুড়ে প্রতিধ্বনিত হতে লাগলো। আরশ চোখ বন্ধ করে সেই মধুর হাসি শুনলো। কিছুক্ষণ পর শব্দ মিলিয়ে গেলো। আরশ ওর দিকে তাকিয়ে বললো।
“সবাই রাতে রেস্টুরেন্টে খেতে যাব। তুই তাড়াতাড়ি রেডি হয়ে আয়!”
কথাটা বলেই আরশ চলে গেলো। আরিবা মুখ বাকিয়ে আরশকে ব্যঙ্গ করে বললো।
” ‘তাড়াতাড়ি আয়’ এহ! আসছে, আমি কি রোবট যে দু মিনিটেই তৈরি হয়ে যাবো? শালা খেকশিয়ালের বংশধর!”
———————————
ওরা সাজেকের নাম করা রেস্টুরেন্ট পেদা টিং টিং এ বসে আছে। সজল আগে এসে খাবার অর্ডার দিয়ে গেছে। সাজেকের হোটেল গুলোতে আগে থেকেই খাবারে অর্ডার দিতে হয়। ওরা আজ সাজেকের স্পেশাল বেম্বো চিকেন অর্ডার করেছে। ওদের সামনে চলে এলো গরম গরম বেম্বো চিকেন। আরিবা মন পুরিয়ে খেলো। খুব মজা হয়েছে এই খাবার। খাওয়া দাওয়া শেষ সবাই নিজেদের কটেজে চলে গেলো।
———————
সকালবেলা হালকা শীতের মধ্যে হাটার মজাই আলাদা। গায়ে ওড়নাটা ভালো ভাবে জড়িয়ে হাটছে আরিবা। ভোরের আলো এখনও ফোটেনি। চারপাশটা আবছা অন্ধকারে ঢাকা। এর মাঝেই সামনে পা ফেলছে আরিবা। উদেশ্য হেলিপ্যাডে গিয়ে সূর্যোদয় দেখা। আরশ আর বাকিরা আরও সামনে। আরিবা চারপাশের সৌন্দর্য দেখে আস্তে আস্তে হাটছে আর ছবহ তুলছে। কিছুক্ষণের মধ্যেই ওরা হেলিপ্যাডে চলে এলো। কিছুক্ষনেই মধ্যে সূর্য উকি দিবে। আরিবা ক্যামেরা নিয়ে তৈরি হয়ে আছে।
অন্ধকার পৃথিবী আস্তে আস্তে আলোকিত হচ্ছে। সূর্যের রশ্মিগুলো পাহাড় চিরে বের হচ্ছে মনে হচ্ছে। পাহাড়ের আড়াল থেকে আস্তে আস্তে সূর্য উকি দিচ্ছে। চারপাশটা লালচে রংয়ে ভরে গেছে। আরিবা মনের আনন্দে ছরি তুলছে রেকর্ড করছে। ওদের মতো আরও পর্যাটক আসছে এই নান্দনিক সৌন্দর্যে দেখতে। আরিবা যতটা ভেবেছিলো তার থেকেও বেশি সুন্দর এই সাজেক ভ্যালি। একদম নজর কারা এর পরিবেশ গুলো। কেউ না আসলে কখনই উপলব্ধি করতে পারবেনা কত মনোরম এর দৃশ্য। আরিবা ছবি তোলায় ব্যস্ত হঠাৎ আরশ ওর পাশে এসে দাড়ালো। আরিবা ঘাড় ঘুরিয়ে আরশের দিকে তাকালো। আরশ ভাব নিয়ে পকেটে হাত দিয়ে সামনে তাকালো। নিজে নিজেই হালকা শব্দ করে বলতে লাগলো।
“সূর্যোদয়ের প্রকৃতি যেমন হেসে উঠে!
তেমনি তুমি আমার হেসে উঠা প্রকৃতি।
বিকেলের সূর্য যেমন আকাশের বুকে
লাল রং একে দেয়, রক্ত জবার মতো!
তেমনি তুমি আমার বিকেলের আকাশের রং।
তুমি আমার অনেক কষ্টে অর্জন করা!
দূর্লভ ফুলের তৈরি মনমাতানো সুগন্ধি।
আর আমি তোমার ভালোবাসার পাহাড়!
ক্ষনিক পরপর মেঘ হয়ে এসে
রিমঝিমিয়ে পরো আমার সংস্পর্শে!”
আরশ এগুলো বলেই চলে গেলো। আরিবা নিরব হয়ে তাকিয়ে আছে। কি বলবে? ভাষাই খুঁজে পাচ্ছেনা। এর উপরে অবশ্যই বলার মত কিছু নাই। এগুলো কি ওকে বলে গেলো? এই কয়দিন ধরে আরশ কি ওকে ইনডাইরেক্টলি ভালোবাসার কথা বলতাছে? ওর বন্ধুদের কথাই কি ঠিক তাহলে? যদি তাই হয় তাহলে আর এসব সাজেক এসে বলবে কেনো? বাড়িতে বসেই তো বলতে পারতো? সাজেক না আসলে হয়তো আরশেই এই রূপ দেখতেই পেতোনা! এমন সব জল্পনা কল্পনা করছে আরিবা।
আরিবারা সবাই সাজেকের মেঘ সজ্জা রেস্টুরেন্ট সকালের খাবার খেলো। অতঃপর সকাল দশটায় সাজেককে বিদায় জানালো। আরিবার খুব খারাপ লাগছিলো। প্রকৃতির এই অপরূপ লীলাভূমি রেখে আরিবার আসতে ইচ্ছে করছিলোনা। কিন্তু কি আর করার যে যেখানেই যাকনা কেনো, নিদির্ষ্ট সময় পর সবাইকেই তার শিকড়ের টানে নিজ জায়গায় ফিরে আসতে হয়।
————————–
“বিউটি ডল আসছে?”
নেত্রা কলেজ থেকে ঘরে ঢুকতেই নিদ্র প্রশ্ন করলো। নেত্রা রাগি চোখে চেয়ে বললো।
” এত ক্লান্তি নিয়ে বাড়ি ফিরলাম কোথায় জিজ্ঞেস করবি কেমন আছি। কি খেতে চাই, তা না অন্য একটা মেয়ের কথা জিজ্ঞাসা করলি। বিয়ের পর তো ভুলেই যাবি ভাইয়া!”
নেত্রার বকবকানি শুনে নিদ্র বিরক্ত হয়ে বললো।
“যা জিজ্ঞাসা করছি তা বল!”
” কাল কলেজে আসবে! কেনো রে? প্রপোজ করবি?”
উৎসুক হয়ে প্রশ্ন করলো নেত্রা। আরশ রহস্যময় হাসি দিয়ে বললো।
“সময় হলেই জানবি। এই শোন আরিবাকে আমার বিষয়ে কিছু বলিস না।”
” আচ্ছা”
” ফ্রিজে আইসক্রিম রেখেছি খেয়ে নিস!”
কথাটা বলেই নিদ্র সামনে পা বাড়ালো। নেত্রা মুখে হাসি ফুটিয়ে বললো।
“থাংকু! বললি না তো কবে প্রপোজ করবি?”
নিদ্র রহস্যময় হাসি দিয়ে চলে গেলো।
💝
ইনশাআল্লাহ চলবে….
(সাজেক ভ্যালি সম্পর্কে কতটা ফুটিয়ে তুলতে পেরেছি আমি জানিনা। তবে আমি যথাসম্ভব চেষ্টা করেছি।)