#অজানা
#লেখনীতে_তাশরিফা_খান
পর্ব–৩৩
💖
সবার সামনে আরশের গালে থাপ্পড় মারলো নিদ্র। সবাই অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে। আরশ কিছু না বলে রেগে তাকিয়ে আছে। আরিবা বুঝতে পারছে না আরশ কি করছে? নেত্রাকে পাওয়া যাচ্ছে না শুনেই নিদ্র আরিবাকে নিয়ে পাগলের মতো ওদের বাড়িতে আসে। নেত্রাকে পাওয়া যাচ্ছেনা শুনেই শাহীন, জিসান, আরশ এবং ওদের পরিবারের সবাই নিদ্রদের বাড়িতে এসেছে। নিদ্র বাড়িতে এসে দেখলো ওর মা কেদে অস্হির। মিসেস আঞ্জুমান ও মিসেস তারিন তাকে সান্ত্বনা দিচ্ছে। ওর বাবারও একেই অবস্হা। মি. আফজাল ও মি. জাকির তাকে ওটা ওটা বুঝাচ্ছে। ওর মা বাবাকে কাদতে দেখেই ওর বুক কেপে উঠলো। ওর পা ভেঙে আসছে আর সামনে আগাতে পারছেনা। ওর কলিজার টুকরা বোনটা আজ কোথায় কে জানে। আজ আরিবাকে প্রপোজ করতে না গেলে হয়তো এসব হতো না। যদি নেত্রার কিছু হয় ও নিজেকে কখনো ক্ষমা করতে পারবেনা। ও সার্থপর হয়ে গেলো। এসব ভেবেই ওর চোখ ভিজে এলো। পাশেই আরশকে দেখে ক্ষেপে গেলো নিদ্র। রেগে দৌড়ে গিয়েই ওর গালে থাপ্পড় মারে। কি হলো কিছুই বিঝতে পারছেনা কেউ। অগত্যা আকাশসম অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে। নিদ্র আরশের কলার ধরে রেগে বলতে থাকে।
“আমার বোন কোথায়? কোথায় রেখেছিস আমার বোনকে? শালা! তুই তো জানোয়ারের চেয়েও অধম। আমি ভাবছি আমার বোন তোরও বোন কিন্তু তুই ওকে? বল আমার বোন কোথায়? বল!”
সবাই অবাকের শেষ পর্যায়। সবাই সবার দিকে চাওয়া চাওয়ি করছে। সবার মনে একটাই প্রশ্ন আরশ কি করছে? নিদ্র কেনো ওকে দোষ দিচ্ছে?
আরশ কিছু না বলে রেগে ভ্রু কুচকে ওর কলারের দিকে তাকালো। দেখলো নিদ্র কলারটা খামছে ধরে আছে। আরশের চেয়াল শক্ত হয়ে এলো। রেগে ঘাড় বাকিয়ে নিদ্রর দিকে তাকালো। জোরে জোরে শ্বাস নিয়ে চোখটা বন্ধ করে নিজেকে শান্ত করতে লাগলো। অনেক কষ্টে নিজের রাগকে চাপিয়ে শান্ত স্বরে বললো।
“সাকিব আমার কলার ছাড়!”
“আগে বল আমার বোন কই? আমার বোনকে কিডন্যাপ করে আমাকেই ধমকানো হচ্ছে? কি মনে হয় তোর? কয়দিন চুপ ছিলাম মানে তোর ধমকে ভয় পাই আমি? তোর বাবার টাকা আছে দেখেই তোকে ভয় পাবো? জানোয়ার! বল আমার বোন কই?”
নিদ্র আরশের কলার ঝাঁকিয়ে রেগে কথাগুলো বলছে। আরশ কিছুই বলছেনা। রেগে চেয়াল শক্ত করে দাড়িয়ে আছে। ভিতরে ভিতরে রেগে ফেটে যাচ্ছে আরশ। চাইলে হাতের তুড়ি বাজিয়েই নিদ্রকে মারতে পারে। কিন্তু সবার সামনে তা করবেনা। সবাই বোকার মতো নিরব হয়ে তাকিয়ে আছে। কি হচ্ছে কিছুই বুঝতে পারছেনা। আরিবা সবার মতো নিরব দর্শক। নেত্রা ছোট থেকে ওর সাথে তাকে। ওকে ছাড়া আরিবার ভালো কোনো বন্ধু নেই। নেত্রকে ছাড়া ওর বুকটা ফেটে যাচ্ছে। টলমলে চোখে চেয়ে রইলো ও। শাহীন, জিসান দৌড়ে এসে আরশের কলার ছাড়ালো। জিসান নিদ্রর দিকে তাকিয়ে বললো।
“এই তুই আমাদের বন্ধু ছিলি না? কিভাবে আরশের কলার ধরলি তুই? তুই জানোস না ও কেমন? তোর বোন কে পাওয়া যাচ্ছেনা শুনে ও ছুটে এলো আর তুই ওকেই দোষারপ করছোছ?”
“তুই চুপ থাক জিসান! আমাদের মাঝে আসবিনা। যা বুঝবিনা তা নিয়ে কথা বলতে আসবি না। তোরা ওকে চিনোছ না। ও কত বড় খারাপ তা আমি জানি।”
নিদ্রর কথা শুনে শাহীন রেগে গেলো। নিদ্রর দিকে তেড়ে গিয়ে বললো।
“আমাদের থেকে ভালো কেউ চিনে না ওকে বুঝলি? ওর নামে কিছু বলার আগে ১০ বার ভেবে নিবি।”
“হ্যাঁ, তোরা তো ওর পক্ষেই থাকবি৷ আমার বোনকে পাওয়া যাচ্ছেনা আর তোরা আমায় কথা শুনাচ্ছোছ?”
নিদ্রর মা বাবা অনেকক্ষন ধরে ওদের কথা শুনছিলো এবার নিদ্রর কাছে এসলো। ওর বাবা রেগে বললো।
“আমার মেয়েটাকে পাওয়া যাচ্ছনা আর তোমরা ঝগড়া করছো? এটা কি ঝগড়া করার সময়?”
নিদ্রর মা নিদ্রকে ধরে কেঁদে কেঁদে বললেন।
“আমার মেয়েকে এনে দে বাবা! কোথায় গেলো আমার মেয়ে? কি করে থাকবো ওকে ছাড়া?”
নিদ্র অসহায় ভাবে মায়ের দিকে তাকালো। কি করবে বুঝে উঠতে পারছে না। শক্ত করে মাকে জড়িয়ে ধরলো। সবাই করুন ভাবে চেয়ে আছে ওদের দিকে। সত্যি সবার খুব খারাপ লাগছে।
“কি হয়েছে? সবাই এখানে কেনো?”
হঠাৎ দরজার কাছ থেকে নেত্রার গলার আওয়াজ পেয়ে সবাই ওদিকে তাকালো। দেখলো নেত্রা আর শান্তা হাসি মুখে দাড়িয়ে আছে। নেত্রার মা দৌড়ে মেয়ের কাছে গিয়ে মেয়েকে জড়িয়ে ধরলেন। আরিবা ওর কাছে গিয়ে কেঁদে ফেললো। নিদ্র চোখের পানিটা মুছে নেত্রার দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। নেত্রা কিছুই বুঝতে পারছেনা। এখানে কি হয়েছে। সবার চোখে পানি কেনো? অবাক হয়ে বললো।
“আম্মু কি হইছে? এই রিবা! কাদছিস কেনো? আরে বলবিতো কি হয়েছে?”
নিদ্র ওর দিকে এগিয়ে বললো।
“কিছু হয়নি। কোথায় ছিলি?”
” এই তো ভাইয়া শান্তার বাসায় ছিলাম।”
“তোর ফোন বন্ধ ছিলো কেনো? জানোস কতো বার ফোন দিছি আমরা? কোনো ধারনা আছে তোর?”
নিদ্র রাগ দেখে ভয় পেয়ে গেছে নেত্রা। ও বুঝতে পারছেনা এত রাগের কি আছে। ও কি এমন করছে যে পর ভাই এত রেগে আছে? নেত্রা ভয়ে আমতা আমতা করে উওর দিলো।
“আসলে ভাইয়া ফোনটা পরে ভেঙে গেছে।”
নিদ্র কপাল কুচকে বললো।
“৩ঘন্টা ধরে ওর বাড়িতে কি করছিলি? ফোন ভেঙে গেছে তাহলে ফোন করে জানালি না কেনো?”
“দুজনে মিলে মুভি দেখছিলাম।”
নিদ্র আরও কিছু বলতে গেছিলো কিন্তু তার আগেই ওর বাবা বললো।
“নিদ্র কি শুরু করছোছ? আসতে না আসতেই জেরা করতাছোছ কেনো?”
ও মাও নিজের স্বামীর সাথে তাল মিলিয়ে বললো।
“তাইতো নিদ্র। ও ফিরে নিরাপদে ফিরে এসেছে এতেই আমরা খুশি।”
মিসেস তারিন নেত্রার দিকে তাকিয়ে বললো।
“এখন থেকে কোথাও দেরি হলে সবাই কে জানিয়ে যাবে।”
নেত্রা ঘাড় নাড়িয়ে হ্যাঁ সুচক উওর দিলো। আরিবা ওকে সোফায় বসাতে বসাতে বললো।
“তুই আমাদের অনেক ভয় পাইয়ে দিয়েছিলি। শয়তান ছেরি থাপ্পর দিয়ে তোর দাঁত ফেলে দিতে ইচ্ছে করছে।”
“আরে বইন তুই অন্তত বাদ যা। সবার বকা খেয়ে পেট ফুল হয়ে গেছে। আর নিতে পারবোনা। বেশি হলে পেট খারাপ করবে।”
ওর কথায় সবাই হেসে ফেললো। শান্তা মন খুলে হাসছে। শাহীনের চোখ সেই প্রথম থেকেই শান্তার দিকে। এই মেয়েটার হাসি এত সুন্দর কেনো সেটাই বুঝতে পারছেনা ও। উজ্জ্বল শ্যামলা বর্নের চেহারায় হাসিটা ওর খুব ভালো লাগছে। শাহীনের শ্যামলা রঙ একটুও ভালো লাগেনা। কিন্তু শান্তাকে ওর কেনো ভালো লাগছে ও জানেনা। ও গভীর ধ্যানে পরে গেছে। আরশের কথায় ওর ধ্যান ভাঙলো।
“আরিবা বাড়ি চল! সবাই চলো।”
কথাটা বলেই আরশ সামনে আগালো। সবাই ওর সাথে সাথে চললো। আরশ পিছনে ফিরলো নিদ্র ওর দিকে তাকাতেই ও ঠোঁট বাকিয়ে হাসলো। নিদ্র ওর হাসির কারন বুঝতে পারলোনা। কনফিউজ হয়ে তাকিয়ে রইলো। আরশ গেইট দিয়ে বের হচ্ছে আর ভাবছে আগের কথা। নেত্রা নিদ্রকে প্রোপোজ করার সুযোগ দিয়ে শান্তার বাড়ির দিকে যাচ্ছিলো। পথে ফোন টিপতে টিপতে যাচ্ছিলো আরশ ওর লোক দিয়ে ধাক্কা দিয়ে ফোন ফেলে ভেঙে ফেলে আর ওর মুখে স্প্রে করে দেয়। পরে শান্তাকে ফোন করে বলে ওর বন্ধু রাস্তায় মাথা ঘুরে পরে গেছে। এমন স্প্রে করে যার মেয়াদ ৪ঘন্টা। এসব ভেবেই আরশ রহস্যময় হাসলো।
💝
ইনশাআল্লাহ চলবে…
(রি-চেইক করিনি প্লিজ ভুলত্রুটি মাফ করবেন)