#অজানা
#লেখনীতে_তাশরিফা_খান
পর্ব–৩৪
💝
“কিরে সজল? এখনও ডেকোরেশনের লোকগুলো এলো না কেনো? কত কাজ পড়ে আছে। এগুলো শেষ করবে কখন? তাড়াতাড়ি কল কর?”
মি. আফজাল হোসেন ব্যস্ততার সঙ্গে কথাগুলো বলে দ্রুত সামনে আগালেন। অনেক কাজ আছে তার। মি. জাকির খুব ব্যস্ত হয়ে ফোনে কথা বলছেন। আজ খুব ব্যস্ত সে। সজল ফোন হাতে গেটের বাইরে গেলো। ভিতরে মিসেস আঞ্জুমান ও মিসেস তারিন একেজনকে একেক কাজের তাগিদ দিচ্ছেন। তাড়াহুড়ো করে রান্না বাড়া করছেন। আর সবাইকে ঠিকমত সব করার কথা বলছেন। মিসেস আঞ্জুমান কে উদ্দেশ্যে করে বললেন।
“আন্জু সব ঠিকঠাক আছে? আরশ মিস্টি খুব পছন্দ করে। সেমাই, পায়েশ আর নানা রকমের মিষ্টি পিঠা বানাবো। তোর হাতের পায়েশ আরশ খুব পছন্দ করে। ওটা তুই বানাবি।”
হাসি মুখে কথাটা বলেই তিনি একটু থামলেন। মিসেস আঞ্জুমান হাসি মুখে বললেন।
“তুমি ভেবনা আমি করে দিবো।”
মিসেস তারিন মিসেস আঞ্জুমানের দিকে তাকিয়ে বললেন।
“এই আন্জু আরশ উঠছে?”
“জানিনা ভাবি। গিয়ে দেখে আসবো?”
“এদিকে অনেক কাজ আছে। তুই বরং রিবাকে কাউকে পাঠা! দেখ ও কই?”
কথাটা বলেই তিনি কাজে লেগে পরলেন। মিসেস আঞ্জুমান আরিবাকে খুজতে গেলেন।
আজ চৌধুরী বাড়ি ধুৃমধাম করে সাজানো হচ্ছে। সন্ধ্যায় বড় অনুষ্ঠানের আয়জন করছেন মি. আফজাল হোসেন।একমাত্র ছেলে ডক্টরী পাস করেছে। তাও কৃতিত্বর সঙ্গে সেই খুশিতে বিশাল অনুষ্ঠান। যদিও আরশ এটা করতে চায়নি। কিন্তু সবার জোরাজুরিতে রাজি হয়েছে।
” এই রিবা! যা আরশকে ডেকে নিয়ে আয়?”
ওর মায়ের কথায় অবাক হলো আরিবা। বাড়িতে এত মানুষ থাকতে ওকেই পেলো। রাগ নিয়ে বললো।
“আম্মু! এত মানুষ থাকতে বাঘের গুহায় পাঠাতে আমাকে পেলে? তুমি নিজে যাও! আমি পারবো না।”
“আরশকে তোর বাঘ মনে হয়? তুই ওকে বিরক্ত করোছ তাই ও তোকে বকে। কথা না বাড়িয়ে চুপচাপ যাহ! যদি না যেতে চাস তাহলে রান্নাঘরে গিয়ে আমার কাজ কর আমি ওকে ডেকে আনি।”
কি আর করার? আরিবা ঠোঁট উল্টে ওর মাকে বকতে বকতে চলে গেলো। আরশের রুমের সামনে দাড়িয়েই কপাল কুচকালো। ও জানে আরশকে ডাকতে গেলেই জামেলা হবে। আল্লাহর নাম নিয়ে ভিতরে উকি দিলো। দেখলো আরশ খাটে নাই। কই গেছে তা ভেবেই আরেকটু ভিতরে গেলো। এদিক ওদিক তাকিয়ে কাউকেই দেখতে পেলো না আরিবা। ওয়াশরুম থেকে পানির শব্দ পেয়ে বুঝলে আরশ ওখানে। আরিবা এই সুযোগে ভাবলো ওই ডাইরিটা নিবে। যদি আরশ ওয়াশরুম থেকে বের হয়ে যায়? সেই ভয়ে আস্তে করে বাইরে থেকে দরজা লক করে দিলো আরিবা। তারপর ধীতাং ধীতাং করে নাচতে নাচতে স্টাডি রুমে চলে গেলো। স্টাডি রুমের ঢুকেই সব জায়গা খুঁজতে লাগলো কিন্তু ডাইরীটা খুজে পেলোনা। পাশের আলমারি খুলতে গিয়েই দেখলো ওটা লক করা। আরিবা কোমরে হাত গুজে রাগি গলায় বললো।
“মি. খবিশের বংশধর! ওই ডাইরীতে কি এমন গুপ্তধন লুকিয়ে রাখছোছ রে? যে একদম তালা মেরে রাখছোছ? আমিও দেখি কতদিন লুকিয়ে রাখোছ। ওটা যদি না নিছি তো আমার নামও জান্নাতুল ফেরদৌস আরিবা না। হুহ!”
এগুলো বলে আরিবা আবার খুঁজতে লাগলো। হঠাৎ দরজা ধাক্কানোর শব্দে ওর পা থেমে গেলো। হা করে পিছনে তাকিয়ে ভাবলো এবার কি হবে? দাঁত দিয়ে নখ কামরে নিজে নিজেই বললো।
“হায় আল্লাহ এবার কি হবে? মি. খবিশের গোসল শেষ এবার তো আমাকে চিবিয়ে খাবে। কি করবো আল্লাহ?”
এসব ভেবেই আরিবার মাথায় দুষ্ট বুদ্ধি এলো। দোয়া দরুদ পরে আল্লাহর নাম নিয়ে আস্তে করে দরজার সামনে দড়ালো। বুকে ফু দিয়ে দরজা খুলে অবাক হওয়ার ভান করে বললো।
“ভাইয়া! দরজা লক করছে কে?”
আরশ রাগ নিয়ে ভ্রু কুচকে বললো।
” আমি ভিতরে ছিলাম আমি কি করে জানবো?”
” ওহ তাইতো!”
“তুই এখানে কি করোছ? তুই লাগাছ নাই তো?”
আরিবা রাগ নিয়ে বললো।
” এজন্যই বলে কারও ভালো করতে নেই। তোমায় নিচে ডাকছে তাই ডাকতে এসেছিলাম। না আসলেই ভালো হতো। ওয়াশরুমে পড়ে থাকতে। হুহ”
কথাটা বলেই আরিবা এক মিনিটও দাড়ালো না। আরশকে কথা বলার সুযোগ না দিয়েই চলে গেলো। আরশ রাগ নিয়ে ওর দিকে তাকিয়ে আছে। আরিবা যেতে যেতে ঠোঁট বাকিয়ে হাসলো। এই প্রথম আরশকে বোকা বানাতে পেরেছে। ওর কি বুদ্ধি! ও নিজেই নিজের বুদ্ধির তারিফ করছে। নিজের প্রতি খুব গর্ব হচ্ছে ওর।
——————————-
সন্ধ্যা ৭টা। চারদিকে নানা রকম আলোয় ঝলমল করছে। আরিবাদের বাড়ির বাইরে খোলা জায়গা আছে। একপাশে সুইমিংপুল আর এক পাশে ফাঁকা। ওখানেই অনুষ্ঠানের জন্য সাজানো হয়েছে। গাছগুলোতে নানা রকমের ঝিলিক বাতি লাগানো হয়েছে। সুইমিং পুলেও নানা বাতি দিয়ে সাজিয়েছে। পুরো বাড়িটা ও বাড়ির চারপাশ খুব সুন্দর করে সাজানো হয়েছ। প্রায় সব গেস্টরা চলে আসছে। পাশে ওর মা বাবা, কাকা কাকিমনি বসে আছে। আরিবা শুধু ওর বন্ধু-বান্ধবীদের দেখছেনা। দরজার দিকে তাকাচ্ছে বারবার। হঠাৎ তৃনা, জিসান আর শাহীন কে দেখতে পেলো। জিসান ওর কাছে এসেই বললো।
” কেমন আছো পিচ্চি?”
” আলহামদুলিল্লাহ ভালো আছি ভাইয়া! আপনারা কেমন আছেন?”
আরিবা হাসি মুখে উওর দিলো। জিসানও মুচকি হেসে বললো।
“আমরাও ভালো আছি। তোমাকে অনেক সুন্দর লাগছে।”
আরিবা একটু লাজ্জা পেলো। জোরপূর্বক হেসে বললো।
“থ্যাংক ইউ ভাইয়া!”
তৃনা রাগি চোখে জিসানের দিকে তাকালো। জিসান কেশে অন্য দিকে তাকিয়ে গেলো। তৃনা এখন হালকা হালকা জিসানকে পছন্দ করে। জিসান ওর ভালোলাগা, খারাপ লাগা সব খেয়াল রাখে। ওকে সব সময় হাসাতে চেষ্টা করে। তৃনা এখন বুঝতে পারছে আরশের থেকে জিসানেই ভালো। আরশের কাছে এমন ভালোবাসা ও কখনই পেতেনা। তাই নিজেকে বদলেছে। শাহীন এখানে আসার পর থেকেই এদিক ওদিক তাকাচ্ছে। ওর চোখ শুধু শান্তাকেই খুঁজছে। ওই শ্যামবর্নের মেয়ের মধ্যে কি আছে ও বুঝতে পারছেনা। ওকে ওই হাসিটা ঘুমোতে দেয়না। এক পলক দেখার জন্য ও কলেজে গিয়ে দাড়িয়ে থাকে। এখানে এসেও ওকেই খুজছে। শান্তাকে না পেয়ে আরিবাকে জিজ্ঞাসা করলো।
” তোমার বন্ধুরা আসবেনা?”
” হ্যাঁ ভাইয়া আসবে। কেনো?”
“কিছুনা। আরশ কোথায়?”
“সাহেব নিজের রুমেই আছে। হয়তো সাজুগুজু করতে আছে। মনে হচ্ছে বিয়ে করতে যাবে।”
ওরা সবাই হেসে আরিবা আর আরশের মা বাবার দিকে এগিয়ে গেলো। তাদের সাথে কথা বলে দোতলায় পা বাড়ালো। আরিবা সামনে এগিয়ে গেলো। ও চারদিক দেখছে আর ছবি তুলছে। এত সৌন্দর্য দেখে খুশিতে আত্মহারা। গোলাপি কালারের ভারী লেহেঙ্গা টা একহাতে ধরে অন্য হাত দিয়ে পিক তুলছে। খুব বিরক্ত লাগছে ওর। নিজের মাকে বকতে বকতে সামনে আগাচ্ছে। হঠাৎ কারো সাথে ধাক্কা খেয়ে পরতে গেলেই কেউ ওর হাত ধরলো। সামনে তাকিয়ে দেখলো নিদ্র ওর হাত ধরে আছে। আরিবা নিজেকে সামলে ঠিক হয়ে দাড়ালো। নিদ্র হা করে তাকিয়ে আছে আারিবার দিকে। গোলাপি কালারে গোরজিয়াস সাজে খুব ভালো সুন্দর লাগছে আরিবাকে। নিদ্রকে এভাবে তাকিয়ে থাকতে দেখে আরিবা অস্বস্তিতে পরে গেলো। হাতটা ছাড়িয়ে নিয়ে মুখে হাসি ফুটিয়ে বললো।
” ভাইয়া! কেমন আছে?”
ওর কথায় নিদ্রর ধ্যান ভাংলো। মুখে হাসি ফগটিয়ে বললো।
“ভালো আছি। তুমি কেমন আছো?”
” আলহামদুলিল্লাহ ভালো।”
কথাটা বলেই আরিবা নেত্রার দিকে তাকিয়ে বললো।
“কিরে শয়তান্নি? এত দেরি করলি কেনো? ওরা কই?”
নেত্রা কোমরে হাত গুজে রাগ নিয়ে বললো।
“আমি শয়তান্নি? শয়তানতো তুই।”
” ইসস…বললেই হলো? আমার মতো ভালো মেয়ে এই এলাকায় খুঁজে দেখাতো একটা?”
“তোর মতো কোথায় খুঁজে পাবো? তুই তো আস্ত হারামীর খালাতো বইন। তুই এক পিচেই আছোছ বইন।”
“এই তোরা ঝগড়া করিছ না। তোমাকে অনেক সুন্দর লাগছে বিউটি ডল!”
আরিবা লজ্জা পেলো। হাসি মুখে বললো।
“থ্যাংকস্ ভাইয়া।”
” এখানেই দাড়িয়ে থাকবে? নাকি ভিতরে যেতে দিবে?”
“ওহ ভাইয়া সরি! চলেন আলেন!”
হাসি মুখে কথাটা বলে আরিবা সামনে চললো। নিদ্র আর নেত্রাও ভিতরে চলেলো। আরশ রাগি চোখে উপর থেকে তাকিয়ে আছে। বেলকনিতে এসেছিলো বাইরের পরিবেশ দেখতে। কিন্তু এখানে এসে এমন কিছু দেখবে ও ভাবেনি। রাগে চেয়াল শক্ত হয়ে এলো ওর। হাত মুঠ করে রেলিংয়ের উপর ঘুষি দিয়ে বললো।
“সাকিবের সাথে খুব হেসে হেসে কথা বলো, হাত ধরো! কই আমার সাথে তো কখনও ওভাবে হেসে কথা বলোনা? মায়াপরী তুমি অপেক্ষা করো আমি আসছি। তোমার হেসে হেসে কথা বলা ছুটিয়ে দিবো।”
কথাটা বলেই রেগে দ্রুত নিচের দিকে চললো।
💖
ইনশাআল্লাহ চলবে…….