#অজানা
#লেখনীতে_তাশরিফা_খান
পর্ব–৩৫
💖
আরিবা আর নেত্রা চারপাশ দেখতেছে আর পিক তুলতেছে। হঠাৎ কারো সাথে ধাক্কা খেয়ে আরিবার গায়ে জুস পরে গেলো। রেগে পাশে তাকাতেই দেখলো এক ওয়েটার ওর গায়ে জুস ফেছে। আরিবা রেগে চিল্লিয়ে বললো।
“What the hell? কানা নাকি? কি করেছো এটা?”
ওয়েটার ভয়ে আমতা আমতা করে বললো।
“সরি ম্যাম! আমি দেখতে পাইনি।”
“দেখতে পাওনি তাইনা? চোখ কোথায় রেখে হাটো?”
ওয়েটার মাথা নিচু করে চুপ করে দাড়িয়ে আছে। নেত্রা আরিবার দিকে চেয়ে বললো।
“থাক বকিস না। ইচ্ছা করে কেউ ফেলে নাকি? যাহ! চেঞ্জ করে আয়!”
আরিবা বিরক্তি নিয়ে ওয়েটারকে বকতে বকতে নিজের রুমের দিকে যাচ্ছে। এই ড্রেসটা এখন ওকে চেঞ্জ করতে হবে। ওর কাছল খুব বিরক্তিকর বিষয় এটা। আরশ আরিবাকে আসতে দেখেই ওর রুমের দিকে গেলো। আরশেই ওই ওয়েটারকে পাঠাইছে। আরিবা ওর রুমে ডুকে দরজা লাগাতে গেলেই কেউ দরজা ঢেলে ভিতরে গেলো। অবাক হয়ে তাকিয়ে দেখলো আরশকে। আরশ দরজা লক করে ওর দিকে ঘুরলো। রেগে চেহারা লাল হয়ে আছে। ও বুঝতে পারছেনা আরশ এত রেগে আছে কেনো? এখানেই বা কি করছে? আরশ রাগি চোখে ওর দিকে এগিয়েই ওর দু বাহু খামচে ধরলো। আরিবা অবাক হয়ে আরশের রেগে লাল হওয়া চোখের দিকে তাকিয়ে আছে। ও বুঝতে পারছেনা ও আবার কি করেছে। আরশ ওকে ঝাঁকিয়ে দাঁতে দাঁত চেঁপে বললো।
“ওর সাথে তোর এত কথা কি? ও তোর কি হয়?”
আরিবা খুব ভয় পেয়ে আছে। কাঁপা কাঁপা গলায় বললো।
“কে?”
আরশ রেগে চিল্লিয়ে বললো।
“আমি কথা বললেই ভয় লাগে? আমার সাথে কথা বলতে ইচ্ছা করেনা। ওর কথা খুব সুন্দর তাইনা? তাইতো ওর কথা শুনে হাসি আসে। ও হাত ধরলে খুব মজা লাগে? আর আমি ধরলেই ফোসকা পড়ে যায় তাইনা?”
কথাটা বলেই আরশ আরও জোরে আরিবার বাহু খামচে ধরলো। আরিবা ব্যাথায় কেঁদে উঠলো। কাঁপা কাঁপা গলায় থেমে থেমে বললো।
“বাজে কথা বলবেনা। আমি এমন করিনি!”
“করোছ নি তাইনা? আমি ভুল দেখছি? সাকিব তোর হাত ধরে নি?”
হঠাৎ দরজা ধাক্কানোর শব্দে থেমে গেলো আরশ। দরজার ওপাশ থেকে নেত্রা দরজায় নক করছে আর বলছে।
“কিরে রিবা! ড্রেস চেঞ্জ করতে কতক্ষণ লাগে? শান্তা, তূর্য শাওন এসে পড়েছে। দরজা খোল!”
আরও কিছু বলতে লাগছিলো আরশ কিন্তু ওদের কারনে পারলো না। চোখ রাঙিয়ে দাঁতে দাঁত চেঁপে বললো।
“পরে দেখে নিবো তোকে!”
কথাটা বলেই আরিবাকে হালকা ধাক্কা দিয়ে ছেড়ে দিলো। আরিবা ধাক্কা খেয়ে কয়েক কদম পিছিয়ে গেলো। আরশ রাগ নিয়ে দরজা খুললো। কারো দিকে না তাকিয়েই রাগি চেহারায় গটগট করে চলে গেলো। ওরা সবাই অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে। নেত্রা পুরাই শকে আছে। ওর ভাইয়ের কি হবে? শান্তা মুচকি হেসে ভিতরে ঢুকতে ঢুকতে বললো।
“দরজা আটকে তাহলে ভিতরে রোমাঞ্চ হচ্ছে? আহ কি প্রেম! আমারও করতে ইচ্ছা করছে! এই তূর্য প্রেম করবি?”
কথাটা বলেই শান্তা আয়েশ করে খাটে বসলো। তূর্য মুখটা বাকিয়ে নিজের কলার টান দিয়ে একটু ভাব নিলো। পরক্ষনেই শান্তার সামনে এসে হাত দিয়ে মশা তাড়ানোর মতো করে বললো।
“খেয়ে দেয়ে কাজ নেই তোর মতো পাগলের সাথে প্রেম করবো? আমার পিছে ১০০মেয়ে ঘুড়ে বুঝলি? যাহ ভাগ!”
নেত্রা আর আরিবা কিছুই বলছেনা। নেত্রা ওর ভাইয়ের কথা ভাবছে আর আরিবা টলমলে চোখে ভাবলেশহীন ভাবে দাড়িয়ে আছে। শাওন একবার আরিবার দিকে তাকালো। অগত্যা চোখ ফিরিয়ে ওদের দিকে তাকালো। ঠোঁট চেঁপে হেসে বললো।
“আরে আমরা এসে হয়তো ওদের রোমাঞ্চে ডিষ্টার্ব করছি। দেখলি না আরশ ভাইয়া কত রেগে চলে গেলো আর আরিবা চুপ করে আছে।”
নেত্রা অবাক হয়ে গেলো। আরিবাকে হালকা করে ধাক্কা মেরে বললো।
“কিরে সত্যি নাকি? কি করছিলি তোরা?”
নেত্রার কথায় ওরা আরও হেসে দিলো। আরিবার মন এমনিতেই খারাপ। ওদের কথায় আরও খারাপ হচ্ছে। রাগ নিয়ে সবাইকে ধমক দিয়ে বললো।
” কথা কম বল! নিচে যা আমি চেঞ্জ করে আসছি।”
কথাটা বলেই আরিবা ড্রেস নিয়ে ওয়াশরুমে চলে গেলো। দরজা অনেক শব্দ করে লাগালো যেনো ওর সব রাগ দরজার উপর ঝাড়ছে। ওরা বোকার মতো দাড়িয়ে আছে। কিছুই বুঝতে পারছেনা। কিছুক্ষণ চুপ থেকে সবাই সোফায় বসে পড়লো।
মি. আফজাল হোসেন চৌধুরী মাইক্রোফোন হাতে নিয়ে বললো।
“লেডিস এ্যান্ড জেন্টেলম্যান! সকলের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি। আপনাদের সবাইকে অসংখ্য ধন্যবাদ অনুষ্ঠানে এ্যাটেন্ড করার জন্য।”
এটুকু বলে তিনি একটু থামলেন। মুচকি হেসে বললেন।
“আপনারা হয়তো জানেন এই পার্টি কিসের জন্য। আজ আমি খুব খুশি। আমার একমাত্র ছেলে তানজীম হাসান আরশ চৌধুরী কৃত্বিতের সাথে ডক্টরী পাশ করেছে। আমি আশা করি আমার ছেলে জনগণের উপকার করবে। আপনারা সবাই ওর জন্য দোয়া করবেন। লেটস্ গো, ইনজয় দ্যা পার্টি।”
এগুলো বলেই তিনি মাইক্রোফোন রেখে দিলেন। মিসেস তারিন। এদিক ওদিক তাকিয়ে আরশকে দেখতে না পেয়ে মিসেস আঞ্জুমান কে বললো।
“দেখলি ছেলেটার কাণ্ড? ওর জন্য এই পার্টি, সবাই ওকে খুঁজছে আর ও নিজেই এখানে নাই।”
“কি বলবো ভাবি? আমার মেয়েটাকেও তো দেখছিনা। দুজনে হয়তো একসাথেই আছে। দেখো কোথায় ঝগড়া করতে লেগে গেছে।”
নেত্রার মা আশেপাশে তাকিয়ে বললেন।
“আমার মেয়েকেও তো দেখছিনা। সবাই হয়তো এক সাথেই আছে।”
মিসেস আঞ্জুমান এতে শান্ত গতে পারলেন না। নিজের স্বামীর কছে গিয়ে বললেন।
“এই শোনো? রিবাকে দেখছো? ও কোথায়? ”
মি. জাকির নিজের বিজনেসম্যান পার্টনার আর নিদ্রর বাবার সাথে কথা বলতে ছিলো। মিসেস আঞ্জুমানের কথা শুনে সাইডে সরে আস্তে করে বললেন।
“আছে হয়তো খুঁজে দেখো। আমি সবার সাথে ব্যস্ত আছি।”
কথাটা বলেই তিনি সবার মাঝে ব্যস্ত হয়ে গেলেন। পার্টির প্রতিটা মেয়েই আরশকে খুজেছে। অনেকে আরশকে সামনা সামনি দেখছে আবার অনেকে ফেসবুকে দেখছে। ওর স্মার্টনেস, সৌন্দর্যে আর টাকার জন্য সব মেয়েরাই পাগল। আরশ খুব রেগে আছে। পার্টিতে রেগে যাওয়া যাবেনা তাই নিজেকে যথেষ্ট ঠিক করে গম্ভীর হয়ে পার্টিতে আসলো। সিলভার কালার শার্টের উপর ব্রু কালার ব্লেজার পরছে। এক হাতে ঘড়ি আর অন্য হাতে একটা সিলভার কালার ব্যাসলেটের মতো পড়েছে। অনেক এ্যাটিটিউট নিয়ে সবার মাঝে এগিয়ে আসছে। কারো দিকেই তাকাচ্ছে না। মেয়েরা ওকে দেখেই ফিদা। সবাই ওর দিকে তাকিয়ে আছে। সবার মুখ থেকেই বেরিয়ে গেলো” ওয়াও বিউটিফুল, হাউ কিউট।”
এসব কানে যেতেই আরশ এ্যাটটিটিউট নিয়ে হাত দিয়ে চুলগুলো পিছনে ঠেলে দিলো। অতঃপর ঠোঁট বাকিয়ে হেসে ওর পরিবারের দিকে এগিয়ে গেলো। ওখানে অনেক বিজনেসম্যান রা আছে। আরশ সবাইকে সালাম দিলো। সবাই সালামের উওর দিলো। মাইক্রোফোন হাতে নিয়ে সবার উদ্দেশ্যে একটু কথা বললো। কথা বলে সবার মাঝে আসতেই তাদের মধ্যে থেকে একজন মি. আফজাল হোসেন কে বলেই ফেললো।
” মি. চৌধুরী! ছেলের পড়ালেখা তো শেষ। বিয়ে কবে করাচ্ছেন?”
আরশের খুব রাগ উঠলো। পাশে তাকিয়ে দেখলো ওনার মেয়ে লজ্জায় লতিয়ে যাচ্ছে। আরশ বিরক্তি নিয়ে অন্যদিকে তাকালো। মি. আফজাল হোসেন জোর পূর্বক হেসে বললো।
“সবেমাত্র পড়ালেখা শেষ করলো। আরও কিছুদিন যাক। ভালো মেয়ে পেলেই করাবো ইনশাআল্লাহ।”
ওই লোকটা নিজের মেয়েকে দেখিয়ে বললো।
“এইযে আমার একমাত্র মেয়ে মুন! অনার্স পাশ করেছে রেজাল্ট খুব ভালো। দেখতেও সুন্দর, আমার টাকাপয়সার অভাব নেই আর দুজনকে খুব মানাবে।”
আরশ খুব রেগে ছিলো এবার সত্যি রেগে গেলো। চেয়াল শক্ত করে ওর বন্ধুদের কাছে চলে গেলো। ওখানে গিয়েই রেগে বললো।
“এরা কি পার্টিতে আসে ইনজয় করতে নাকি মেয়ের জন্য ছেলে খুঁজতে?”
শাহীন গা দুলিয়ে হেসে বললো।
“তোকেই শুধু খোঁজে, কই আমাদের তো খুঁজে না? আরে ইয়ার তোর কাছেই দিতে চায় কেনো? আমাকে বললে তো আমি সাথেসাথেই হ্যাঁ বলে দিতাম।”
আরশ ধীরিম করে ওর পিঠে কিল বসিয়ে দিয়ে বললো।
“চল তোকে দেখিয়ে আনি!”
“নারে ভাই এরা সবাই টাকা চায়! আমি তোর মতো বড়লোক বাবার ছেলে নই।”
জিসান ওর দিকে তাকিয়ে বললো।
” তোর বাবার কম আছে?”
“আছে ভাই! তা আমি এই মেয়ের পিছে খরচ করবো কেনো? দেখছোছ কি ছিড়াবিড়া ড্রেস পরে আসছে।”
ওর কথায় সবাই উচ্চ স্বরে হেসে উঠলো। হাসতে হাসতে লুটিপুটি খাওয়ার অবস্থা। হাসির মাঝে শাহীনের চোখ সামনে যেতেই হাসি থামিয়ে দিলো। এক দৃষ্টিতে ওর শ্যামাঙ্গীকে দেখতে লাগলো। যখন আসছে তখন একপলক দেখেছিলো। হঠাৎ কোথায় উধাও হয়ে গিয়েছিলো ও খুঁজেই পায়নি। এখন আবার দেখলো। মনে যেনো এক তৃপ্তি পেলো। আরশ এখনও হাসছে। জিসান ওর কাঁধে হাত রেখে সামনে ইশারা করলো। আরশ সামনে তাকিয়ে অবাক হয়ে গেলো। আরিবা শাড়ি পড়ছে। কিছুক্ষণ মুগ্ধ হয়ে তাকিয়ে ছিলো ওর মায়াপরীর দিকে। হঠাৎ ওর চেয়াল শক্ত হয়ে এলো। আশেপাশে তাকিয়ে দেখলো সব ছেলেরাই হা করে দেখছে ওকে। ওর মায়াপরীকে ও একা দেখবে সবাই কেনো দেখছে। এসব ভেবেই রাগে অস্থির হয়ে গেলো। নিদ্রর দিকে চোখ পরতেই ওর ওর হাত মুঠ হয়ে এলো। আরশ জোরে জোরে শ্বাস নিয়ে মনে মনে বললো। “ওহ তাহলে এই জন্য তুমি শাড়ি পরেছো? আজ তোমার খবর আছে মায়াপরী।” কথাটা বলে সামনে আগাতেই দেখলো নিদ্র ওর কাছে গেছে। নিদ্র কাছে যেতেই নেত্রা সবাইকে বললো।
” তোরা সামনে যা আমি ওর কাছে আছি।”
ওরা যেতেই নেত্রা নিদ্রকে কথা বলার সুযোগ দিয়ে ভিতরে চলে গেলো। নেত্রার কাজ দেখে আরশ রেগে দাড়িয়ে গেলো। রাগে চোখ লাল হয়ে এলো। এই নেত্রার খবর আছে আজ। নিদ্র আরিবার কাছে গিয়ে মুচকি হেসে বললো।
“অনেক সুন্দর লাগছে তোমাকে বিউটি ডল!”
আরিবা জোর পূর্বক ঠোঁট প্রসারিত করলো। পাশে তাকাতেই দেখলো আরশ রেগে তাকিয়ে আছে। আরশকে দেখে ওর কলিজা শুকিয়ে গেলো। নিদ্র কথা বলেই যাচ্ছে কিন্তু সেদিকে ওর খেয়াল নেই। ও ভাবছে আজ ওর কি হবে।
” বিউটি ডল তোমার সাথে আমার জরুরি কথা আছে।”
আরিবা শুনতে পায়নি তাই জোরেই বললো।
“বিউটি ডল!”
নিদ্র জোরে কথা বলতেই ওর ধ্যান ভাঙলো। আমতা আমতা করে বললো।
“হ্যাঁ হ্যাঁ ভাইয়া!”
“বলছি চলো ওই সুইমিংপুলের কাছে যাই।”
আরিবা মুখের উপর না বলতে পারলোনা জোর পূর্বক হেসে নিদ্রর সাথে চললো। আরিবা পিছনে ফিরে দেখলো আরশ রেগে তাকিয়ে আছে। ও সামনে তাকালো। ওই চোখের দিকে তাকালেই ও ভয় পায়। নিদ্র সামনে যেতে যেতে পিছনে ফিরে আরশের দিকে তাকালো। আরশ রেগে বাড়ির ভিতরে চলে গেলো। আরিবা ঢোক গিলে ওর যাওয়ার পানে তাকালো। নিদ্র সুইমিংপুলের কাছে গিয়ে পাশের চেয়ারে বসলো। আরিবাকেও বসতে বললো। নিদ্রর খুব নার্ভাস লাগছে। চুপ করে এদিক ওদিক তাকালো। আরিবা কিছুক্ষণ বসে থেকে বললো।
“ভাইয়া কিছু বলবেন?”
নিদ্র আমতা আমতা করতে লাগলো। কি করে বলবে ও বিউটি ডল কে ভালোবাসে? কখনও তো কাউকে বলেনি। আজ নেত্রা আসার আগেই বলছে আরিবাকে প্রপোজ করতে। এক সাথেই বলে দিতে বলছে। নিদ্র আমতা আমতা করে বললো।
“তোমাকে কিছু কথা বলার আছে। প্লিজ রাগ করবে না।”
“আচ্ছা ভাইয়া বলেন!”
নিদ্র কথাটা বলতে যাবে তার আগেই একটা মেয়ের চিৎকারে থেমকে গেলো নিদ্র। ওরা দুজনেই পিছনে তাকিয়েই অবাক হয়ে গেলো। ওদের পুরো শরীর অবশ হয়ে এলো। এটা কি হলো? কি করে হলো? পার্টির সবাই চুপ করে তাকিয়ে আছে।
💝
ইনশাআল্লাহ চলবে…..





