#অজানা
#লেখনীতে_তাশরিফা_খান
পর্ব–৩৮
💝
সকাল ৯টা। লেনা অনেক তাড়াহুড়ো করছে। একেকজনকে একেক কাজ করতে বলছে। রুমের সব কিছু প্রায় গুছানো শেষ কিন্তু ফ্লোরের দিকে তাকিয়েই ওর মেজাজ খারাপ হয়ে গেলো। রেগে সুইপার কে ডেকে বললো।
“এইটা কি করছো? এখনও ফ্লোরটা ভালোভাবে পরিষ্কার করোনি? অলরেডি ৯টা বেঁজে গেল। স্যার এসে পড়বে। সে নোংরা পছন্দ করে না এটা সজল স্যার আমায় বলে দিছে। জানো সে কে? তানজীম হাসান আরশ চৌধুরী। বিখ্যাত বিজনেসম্যানের ছেলে। দেখতে হ্যামস্যাম। শুনেছি অনেক রাগি। তাড়াতাড়ি সব রেডি করো। কুইক!”
লেনা সুইপার কে এসব বলে রুম থেকে বের হলো। লেনা হলো আরশের পিএ। সজল ওকে নিয়োগ করেছে। আরশ আজ ঢাকা মেডিকেলে জয়েন করবে। এটা শুনে হসপিটালের অনেক নার্স, মহিলা ডক্টররা অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছে। ওর সৌন্দর্যে অনেকেই মুগ্ধ। ১০টায় আরশের আসার কথা। আরশ অনেক টাইম মেইনটেইন করে চলে। লেনা নিজেও আরশের উপর ক্রাশ খেয়ে আছে। লেনা ইচ্ছে করেই আরশের পিএ হয়েছে। যদি আরশের পাশাপাশি থেকে ওকে পটানো যায় সেই আশায়। লেনা অনেক সেজেগুজে এসেছে। ছোট ছোট ড্রেস পরে এসেছে।
সকাল ১০ টা। লেনা আর অপেক্ষা করতে পারছেনা। রুমের সামনে দিয়ে শুধু পাইচারি করছে। হঠাৎ সামনে তাকিয়ে ও থমকে গেলো। আরশ ওর রুমের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। লেনা এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে দেখছে আরশকে। ২জন বডিগার্ড আরশের দুপাশে ওর সাথে আসছে। আরশ এ্যাটিটিউট নিয়ে সামনে এগিয়ে যাচ্ছে। কারো দিকেই তাকাচ্ছেনা। আরশ সাদা শার্ট পরেছে। হাতা কোনুই পর্যন্ত ফোল্ড করা। হাতে কালো ঘড়ি। এক হাতে কালো কোর্টটা ধরে রেখেছে। ওর বডি দেখে লেনা হা করে তাকিয়ে আছে। সিল্কি চুলগুলো বাতাসে উড়ছে। সব নার্স পেশেন্টরাও ওর দিকে তাকিয়ে আছে। আরশের কাউকে পাত্তা না দিয়ে ওর রুমে প্রবেশ করলো। আরশ রুমে প্রবেশ করতেই লেনার ধ্যান ভাঙলো। তাড়াহুড়ো করে ভিতরে প্রবেশ করলো। দেখলো আরশ কোটটা চেয়ারের সাথে রেখে এপ্রোন পড়ছে। লেনা হাসি দিয়ে একটু স্টাইল করে বললো।
“হাই স্যার! আর ইউ ফাইন?”
আরশ চেয়ারে বসে একপলক লেনার দিকে তাকালো। অগত্যা চোখ ফিরিয়ে নিয়ে বললো।
“এখানে আপনাকে মডেলিং করতে আনায় হয়নি মিস… কি যেনো? Whatever এখানে এমন ড্রেস আমি এ্যালাউ করবোনা। সো কাল থেকে ঠিক মতো ড্রেস পরে আসবেন। না হয় আসতে হবেনা। আর হ্যাঁ I’m fine”
লেনা কি ভেবেছিল আর কি হলো এটা ভেবেই ওর কান্না পেলো। তবুও মুখে হাসি ফুটিয়ে বললো।
“ওকে স্যার!”
আরশ টেবিলের উপর ফাইল গুলো উল্টেপাল্টে দেখতে লাগলো। ফাইলের দিকে তাকিয়েই গম্ভীরমুখে বলে উঠলো।
“আজ কোনো অপারেশন নেই। পেশেন্টদের ভিতরে পাঠাও।আর হ্যাঁ শৃঙ্খলভাবে একজন একজন করে পাঠাবে।”
“ওকে স্যার!”
লেনা ঢং করে কথাটা বলে হেলেদুলে বাইরে চলে গেলো। আরশ সজলের দিকে তাকিয়ে রেগে দাঁতে দাঁত চেঁপে বললো।
“তুই আর মানুষ পেলিনা? বেছে বেছে এই ঢংগি টাকেই পেলি। দেখ কেমন হেলেদুলে কথা বলে। মনে হয় আমার গায়ে ঢলে পরবে।”
“সরি স্যার! আসলে তখন এমন ছিল না।”
“ওকে সমস্যা নাই। তোরা বাইরে দড়িয়ে থাক!”
“ওকে স্যার!”
আরশ নিজের কাজে ব্যাস্ত হয়ে পরলো। একজন একজন করে পেশেন্ট দেখতে লাগলো। লেনা একটু পর পরেই উকি দিয়ে আরশকে দেখছে। আরশ খুব হাসে হেসে পেশেন্টদের সাথে কথা বলছে। লেনা আরশের হাসিতে আবার ক্রাশ খেলো। এত সুন্দর করে কেউ হাসতে পারে সেটা লেনার একেবারেই জানা ছিল না।
——————————
ক্লাস শেষে ক্লাস রুম থেকে বের হচ্ছে আরিবা। হঠাৎ ওর সামনে একটা ছেলে এসে দাড়ালো। আরিবা এই ছেলেটাকে চিনে। প্রায় দূর থেকে ওর দিকে তাকিয়ে থাকতে দেখেছে। কিন্তু কখনো ওর সামনে আসেনি। কিন্তু আজ ওর সামনে কেনো দাড়িয়ে আছে সেটাই বুঝতে পারছে না। আরিবা শান্তা, তূর্য আর শাওন ওরা একে অপরের দিকে চাওয়া চাওয়ি করছে। ছেলেটা নিরবতা ভেঙে বললো।
“আমি জাহিদ হাসান খান, খান গ্রুপ অফ ইন্ডাস্ট্রির মালিক হাসান খানের একমাত্র ছেলে। চিনেছো নিঃশ্চয়?”
ওর অহংকার করে বলা কথা শুনে আরিবা কপাল কুচকালো। দাঁতে দাঁত চেঁপে গম্ভীর হয়ে বললো।
“আপনার পরিচয় দিয়ে আমরা কি করবো? আমার সাথে ভাব নিবেন না প্লিজ। আমার বাবা কে জানেন? আমাদের ইন্ডাস্ট্রি আপনাদের থেকে দশগুন বড়। চৌধুরী গ্রুপ অফ ইন্ডাস্ট্রি।”
আরিবার কথা শুনে জাহিদ একটু দমে গেলো। গলাটা ঝেড়ে নিজেকে ঠিক করে বললো।
“তোমার সাথে আমার জরুরি কথা আছে।”
“কি কথা এখানেই বলেন?”
শান্তা রাগি গলায় কথাটা বললো। ওর সাথে তাল মিলিয়ে তূর্য বললো।
“আপনাকে অনেক দিন দেখছি রিবাকে ফলো করতে। আপনার মতলব কি বলেন?”
জাহিদ ওদের কথায় পাত্তা না দিয়ে বললো।
“আরিবা তোমার সাথে জরুরি কথা আছে। চলো একা নিরিবিলি কোথাও যাই?”
আরিবা এবার রেগে গেলো। রাগ নিয়ে বললো।
“আমি একা কোথাও যাবোনা যা বলার এখানেই বলেন?”
জাহিদ ওর কথা শুনলো না হাত ধরে একা নিয়ে যেতে লাগলো। আরিবা অবাক হয়ে গেলো। হাত ছুটাতে ছুটাতে বললো।
“এটা কোন ধরনের অসভ্যতা? হাত ছাড়ুন!”
জাহিদ ছাড়ার নামেই নিচ্ছে না। তূর্য শাওন বাঁধা দিতে গেলো জাহিদের বন্ধুরা ওদের আটকে দেয়। আরিবা হাত ছুটাতে চেষ্টা করছে কিন্তু পরছেনা। আরিবা রেগে চিল্লিয়ে বললো।
“আপনি আমায় কোথায় নিয়ে যাচ্ছেন? আপনার সাথে আমার কোনো কথা নাই। আবারও ছাড়ুন আমার হাত! আরশ ভাইয়া জানতে পারলে খুব খারাপ হবে বলে দিচ্ছি।”
জাহিদ ওর কথাই শুনলো না। ওকে টেনে কম্পাসের বাইরে নিরিবিলি স্থানে নিয়ে গেলো। আরিবা হাত ছেড়ে দিয়ে ওর সামনে দাড়ালো। আরিবা চারদিকে তাকিয়ে দেখলো জন মানব শূন্য। আরিবা ভয় পেয়ে দু পা পিছিয়ে গেলো। জাহিদ ওর দিকে আগাতে আগাতে বললো।
“ভয় পেওনা দুটো কথা বলবো।”
আরিবা কিছুই বলছেনা ভয়ে এদিক ওদিক তাকাতে লাগলো। জাহিদ ওর কাছে গিয়ে বললো।
“তোমায় প্রথম দেখেই ভালোবেসে ফেলেছি আমি। তোমার রূপে পাগল হয়ে গিয়েছিলাম। ইচ্ছে করছিলো তখনি তোমায় নিজের করে নেই। ভাবছিলাম তোমায় তখনি আমার মনের কথা বলবো কিন্তু তুমি নাহিদের সাথে যা করলা তা দেখে বুঝলাম তুমি সত্যি অবুৃঝ। এই দৃশ্য দেখে আমার খুব হাসি এসেছিলো। তখন থেকেই তোমায় ফলো করতাম। এখন বড় হইছো এখন বলার সঠিক সময় তাই বললা। I LOVE U… তুমি আমায় ভালো বাসবে?”
কথাটা বলেই ওর হাত ধরলো। খুব বাজে ভাবে হাত ধরে বলতে লাগলো।
“তোমার এই ঝলসানো রূপে আমি পুরতে চাই। আর অপেক্ষা করতে ইচ্ছা করছেনা।”
জাহিদের কথা শুনে আরিবার ঘৃনা লাগছে। কি বিশ্রি কথা? আরিবা ভয়ে কেঁদেই দিলো। কেঁদে কেঁদে হাত ছুটাতে চেষ্টা করছে। ও যতই চেষ্টা করছে জাহীদ আরও জোরে ধরছে। হঠাৎ করেই কতগুলো মুখোশ পড়া লোক এসে হাজির হলো। ওদের দেখেই জাহিদ ওর হাত ছেড়ে দিলো। আরিবা খুব ভয় পেয়ে আছে। মাথা নিচু করে কাঁদছে। লোকগুলো জোর করে ধরে জাহিদকে নিয়ে গেলো। আরিবা ভোজা চোখে মাথা উঠাতেই দেখলো আরশ দৌড়ে ওর দিকে আসছে৷ আরশ ঘেমে একাকার, মনে হচ্ছে খুব তাড়াহুড়ো করে আসছে। আরশ কাছে আসতেই আরিবা ওকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে কেঁদে ফেললো। আরশ হতবাক হয়ে গেলো। আরশ ওকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে বললো।
“ভয় পেয়েছিস? কিছু হয়নি আমি এসে গেছি। আমি থাকতে তোকে কেউ কিছুই বলতে পারবেনা। ও তোর সাথে বাজে আচারন করছে? ”
আরশ জোরে জোরে শ্বাস নিয়ে কথা বলছে। তাড়াহুড়ো করে আসায় ক্লান্ত হয়ে গেছে। আরিবা কিছুই বললোনা। ওকে আরও শক্ত করে জড়িয়ে ধরলো। আরশ ওর বুক থেকে আরিবা মাথাটা উচু করলো। দু হাতে আরিবার দু গাল আগলে ধরে পাগলের মতো করে বলতে লাগলো।
“এই তুই কাদোছ কেনো? একদম কাদবিনা! কান্না থামা! কি হয়েছে বল?”
আরিবা কেঁদেই যাচ্ছে। আরিবার কান্না দেখে আরশের ভিতরটা পুড়ে যাচ্ছে। রাগে আরশের চেয়াল শক্ত হয়ে এলো। আজ জিহাদের হার মাংস আলাদা করে ফেলবে। আরশ আরিবার চোখটা মুছে শান্ত ভাবে বললো।
” আমাকে বলবিনা? বল কি হইছে?”
তূর্য শান্তা শাওন দৌড়ে এলো ওদের কাছে। এসেই শান্তা আরিবা কে ধরে বললো।
” তুই ঠিক আছোছ?”
“ওই শালায় কি করছে রে?”
রাগ নিয়ে কথাটা বললো তূর্য। আরশ আরিবাকে পাশে বসার মতো জায়গা আছে ওখানে বসালো। ওকে পানি খেতে দিয়ে আরশ শাওনের দিকে তাকিয়ে বললো।
“তোমাকে ধন্যবাদ! তুমি আমাকে কল না করলে বড় ক্ষতি হতে পারতো।”
শাওন হাসি মুখে বললো।
“এটা আমাদের দায়িত্ব। বন্ধু হয়ে বন্ধুর উপকারে না আসলে কিসের বন্ধু হলাম?”
আরশ আরিবার পাশে বসলো। ওকে একহাতে জড়িয়ে ধরে বললো।
“কি হয়েছে বল?”
আরিবা ভেজা চোখে সব বললো। সব শুনে ওরা হতবাক। আরশ পুরো রেগে আছে। কপালের রগ গুলো ফুলে উঠেছে। হাত মুঠ করে নিজেকে যথেষ্ট শান্ত করে বললো।
“আমার একটু কাজ আছে। তোমরা আরিবাকে নিয়ে বাড়ি যাও। গেটের সামনে গাড়ি আছে, বডিগার্ড ও আছে।”
ওরা আরিবাকে নিয়ে বাড়ির পথে রওয়ানা হলো। আরশ রেগে ওর গন্তব্যে পা বাড়ালো।
————————————-
রাত ১০ টা। শোফায় বসে টিভি দেখছে আরিবা।
“দর্শক আপনারা দেখছেন আমি এখন আছি ঢাকা মেডিকেলে। বিজনেসম্যান হাসান খানের ছেলে হসপিটালে ভর্তি। তার উপর নির্মম অত্যাচার করা হয়েছে। তার হাত দুটো এমন ভেঙে দিয়েছে যে, এই হাত দিয়ে কখনও কিছু ধরতে পারবেনা বলে জানিয়েছে ডক্টর। কি জন্য তার উপর অত্যাচার করা হয়েছে সেটা তিনি বলতে পারছেন না। কে বা কারা এর সাথে জড়িত তা এখনও জানা যায়নি। আমরা চলে যাচ্ছি হাসান খানের কাছে। দেখি ওনি আমাদের কি বলেন।
স্যার! আপনার কি মনে হয়? কে বা করা আপনার ছেলের সাথে এমন করতে পারে? এটা কি কোনো বিজনেস শত্রুতা নাকি পারিবারিক?”
“দেখুন এ ব্যাপারে আমি কিছুই জানিনা। সরি আপনার কিছু বলতে পারছিনা।”
“স্যার আপনি কি কাউকে সন্দেহ করেন?”
“দেখুন আমি এখন কিছুই বলতে পারবোনা। আমার ছেলে অসুস্থ আর আপনারা জিজ্ঞাসা বাদ করছেন? আমার মন একটুও ভালো নেই প্লিজ পরে আসবেন।”
” দর্শক আপনারা দেখতে পাচ্ছেন এখনও পর্যন্ত এর মূল কারন জানা যায়নি। পুলিশ তদন্ত করছে। তবে অনেকেই ধারনা করছে এটা বিজনেস জনিত শত্রুতা। সঠিক তথ্য জানতে মাই টিভির সাথেই থাকুন। আপনাদের সাথে আছি আমি আশিক হোসেন, মাই টিভি।”
হঠাৎ করে খবর দেখেই আরিবা আতকে উঠলো। জাহিদের ছবি দেখে ভয় পেয়ে গেলো ও। জাহিদের সারা দেহ ক্ষতবিক্ষত, হাতের অবস্হা পুরাই খারাপ। কে করলো জাহিদের এই আবস্হা? আরশ ভাইয়া করেনি তো? আরিবার মনে চলতে থাকলো আকাশ পাতাল ভাবনা।
💖
ইনশাআল্লাহ চলবে…..