#অজানা
#লেখনীতে_তাশরিফা_খান
পর্ব–৪০
💖
বেহুঁশ অবস্হায় বিছানায় শুয়ে আছে আরিবা। পাশে বসে ওকে চেক করছে আরশ। মিসেস আঞ্জুমান ও মি. জাকির মেয়ের চিন্তায় হতাশ। মি. জাকির অসহায় কন্ঠে বলে উঠলেন।
“আমি বুঝিনা মামনি স্টোর রুমের সামনে অজ্ঞান হয়ে পরে থাকে কেনো? এই নিয়ে দু বার হলো।”
মিসেস আঞ্জুমান কান্না জড়িত কন্ঠে বললেন।
“কিরে আরশ! কিছুতো বল? কি হয়েছে ওর? আমার মেয়েটা…”
কথাটা পুরোপুরি বলতে পারলেন না মিসেস আঞ্জুমান। কান্নায় কথাটা গলায় আটকে গেছে। মিসেস তারিন অসহায় কন্ঠে তাকে সান্ত্বনা দিয়ে বললেন।
“কাঁদিস্ কেনো আন্জু! কিচ্ছু হবে না তুই দেখিস! রিবা একদম সুস্থ হয়ে যাবে।”
মিসেস আঞ্জুমান কথা বললেন না। নীরবে চোখের জল ফেলছেন। আরশ এখনও আরিবাকে চেক করছে। মি. আফজাল হোসেন ছেলেকে উদ্দেশ্য করে বললেন।
“কিরে আরশ! কি বুঝলি? মামনির শরীরটা কেমন? হসপিটালে নিতে হবে নাকি?”
আরশ আরিবাকে একটা ইনজেকশন দিতে দিতে বললো।
“সমস্যা নাই। শরীর দূর্বল ওর ঠিক মতো খায় না তো তাই। কাকিমনি ওকে ঠিক মতো খাবার খাওয়াবে। অনিয়ম করলে আমায় বলবে।”
কথাটা বলেই আরশ একটু থামলো। পরক্ষনেই যেতে যেতে বললো।
“মা কাকিমনি তোমরা ওর পাশে থেকো।”
কথাটা বলেই আরশ চলে গেলো। মিসেস তারিন মি. আফজাল ও মি. জাকিরকে উদেশ্য করে বললেন।
“তোমরা গিয়ে শুয়ে পরো আমরা এখানে আছি। যাও!”
মি. জাকির যেতে চাইলেন না। তবুও মিসেস তারিন জোর করে পাঠিয়ে দিয়েছেন। অগত্যা মিসেস আঞ্জুমান ও মিসেস তারিন আরিবার পাশে বসে রইলো।
৩ঘন্টা পর আরিবার জ্ঞান ফিরলো। জ্ঞান ফিরতেই আরিবা চিল্লাচিল্লি শুরু করেছে। চিল্লিয়ে বলছে।
“স্টোর রুমে একজন মহিলা আছে।”
মিসেস তারিন ওকে জড়িয়ে ধরে বললেন।
“রিবা শান্ত হ! স্টোর রুমে কেউ নেই।”
আরিবা তার কথা শুনলো না। তাকে ছাড়িয়ে বিছানা থেকে নামতে নামতে চিল্লিয়ে বললো।
“বিশ্বাস করো একজন আছে। একজন বয়স্ক মহিলা আমায় অনেক কিছু বলতে চাইছে।”
মিসেস আঞ্জুমান মেয়েকে জড়িয়ে ধরলেন। কান্না ভেজা চোখে মিসেস তারিনের দিকে তাকিয়ে বললো।
” আমার মেয়েটার কি হলো? পাগল হয়ে গেলো না তো? আমার মেয়েটা কি সব উল্টাপাল্টা বলছে?”
মিসেস তারিন আরিবাকে আবার জড়িয়ে ধরে বললেন।
” শান্ত হ মা! কেউ নেই ওখানে।”
আরিবা ঘেমে একাকার। তবুও চিল্লাচিল্লি করছে। আরিবার চিল্লাচিল্লি শুনে আরশ, মি. জাকির ও মি. আফজাল দৌড়ে এলো। আরশ এসেই আরিবাকে জড়িয়ে ধরে বললো।
“কি হয়েছে? আমায় বল আমি তোকে সব এনে দিবো?”
” কি হয়েছে মামনি!”
মি. জাকির অবাক হয়ে জিজ্ঞাসা করলেন। আরিবা আরশকে জড়িয়ে ধরে বললো।
“স্টোর রুমে একজন মহিলা আছে। আমায় অনেক কিছু বলবে বলছে।”
আরিবার কথা শুনে ওরা তিন জনেই অবাক হলো। মি. জাকির মেয়ের দিকে এগিয়ে এসে বললেন।
“কি সব বলছো মামনি? স্টোর রুমে কেউ যায়না।”
মি. আফজাল আরিবার মাথায় হাত বুলিয়ে বললেন।
“মামনি তুমি কি কোনো বাজে স্বপ্ন দেখছো?”
আরিবা আরশের দিকে তাকিয়ে বললো।
” আমি সত্যি দেখেছি। এখন দেখতে যাবো।”
আরশ জানে আরিবা না গিয়ে থামবেনা। তাই কিছু না বলে ওকে ছেড়ে দিলো। সবাই বাধা দিতে গেলে আরশ সবাইকে চোখের ইশারায় চুপ থাকতে বলে। আরিবা তাড়াহুড়ো করে স্টোর রুমে গেলো। স্টোর রুমে ঢুকে আলমারির দরজা খুললো। দরজা খুলেই আরিবা অবাক হয়ে গেলো। ভিতরে কোনো গুপ্ত দরজা নেই। আরিবা অনেক খুঁজলো কিন্তু পেলো শুধু আলমারি আর তাতে পরে রয়েছে পুরনো খাতা পত্র। সবাই ওর দিকে তাকালো। আরশ ওকে নিজের দিকে ঘুরিয়ে বললো।
“এবার দেখছেছ তো? রুমে গিয়ে রেস্ট নে।”
আরিবা হতবাগ হয়ে আলমারি দিকে তাকিয়ে রইলো। এটা কি করে হতে পারে? ও তখন সত্যি দেখেছে। এটা কি করে হলো তা আরিবা বুঝতে পারছে না। আরিবা আস্তে করে হেটে গিয়ে চুপচাপ বেডে শুয়ে পরলো। চোখ বন্ধ করে ভাবলো এটা কি আদৌ ওর ভ্রম? ও তো নিজ চোখে দেখছে আলমারির ভিতরে একটা গুপ্ত রুম আছে। আরিবা চোখ বন্ধ করে ভাবলো আগের কথা।
——————————
আলমারির দরজা খুলেই আরিবা অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে। আলমারির ভিতরে একটা গুপ্ত দরজা দেখতে পেলো। আরিবা আস্তে করে দরজাটা খুলতেই ভিতর থেকে মৃদু আলো আসলো। আরিবা প্রচন্ড অবাক হলো। ভালো করে তাকিয়ে দেখলো ভিতরে একটা রুমের মতো। আরিবা অবাক হয়ে ভাবলো স্টোর রুমের এই আলমারির ভিতরে যে একটা আলাদা রুমের মতো আছে এটা কি কেউ জানে না? এটা আসলে আলমারি না। আলমারির সাথে গুপ্ত রুমের দরজা সেট করা। আচ্ছা এই রহস্যের ব্যাপারে ও একাই জানতো না? সবাই কি এর রহস্য সম্পর্কে জানে? আরিবা দাড়িয়ে দাড়িয়ে আকাশ পাতাল ভাবছে। পরক্ষনেই ভাবলো ভিতরে যাবে কি যাবেনা? আরিবার ভিতরে যেতে ভয়ও করছে আবার রহস্য জানতেও ইচ্ছা করছে। অনেক বছর ধরেই ও এর রহস্য খুঁজছে। আজ যখন পেয়েছে এর শেষটা দেখেই ছাড়বে। এসব ভেবেই আরিবা ভিতরে পা বাড়ালো। ভিতরে কি আছে সেটা নিয়েই ভাবছে আরিবা। তবুও ও সামনে আগালো। ভিতরে ঢুকেই ও আরও অবাক হয়ে গেলো। রুমের কর্নারে দেয়াল ঘেষে বসা এক মহিলাকে দেখতে পেলো। মহিলাটি হাটুতে মুখ গুজে মিনমিনিয়ে কাঁদছে। জীর্ণশীর্ণ শরীর মহিলাটির, শরীরের কাপড়টা একেবারে নোংরা হয়ে আছে। মনে হয় দীর্ঘদিন ধরে এই শাড়ুিটা পড়ে আছে। অনেক জায়গা ছিড়েও গেছে। আরিবা মনে মনে ভাবলো এই মহিলাকে এখানে কে রাখবে? কেনোই বা রাখবে? এই মহিলা আমার ভুত নয় তো? পরক্ষনেই আরিবা ভাবলো ভুত বলে কিছু হয়না। ও ফ্লোরে তাকিয়ে দেখলো সারা রুম জুড়েই বিস্কিটের পেকেট। মনে হচ্ছে মহিলাটি এগুলোই খেয়ে বেঁচে আছে। আরিবা আস্তে আস্তে মহিলাটির দিকে এগিয়ে গেলো। ভয়ে ভয়ে মহিলার পাশে বসলো। কাঁপাকাঁপা হাত মহিলার কাঁধে রাখতেই মহিলা হাত ঝাড়া দিয়ে ফেলে দিলো। মাথা নিচু করেই রাগি গলায় বলতে লাগলো।
“কি চাই তোদের আর? আমার সব কিছুতো শেষ করে দিয়েছিস তোরা আর কি শেষ করবি? শুধু আমি আছি নে এবার আমায় মেরে ফেল। তোরা জানোয়ার! তোরা পশুর থেকেও অধম!””
মহিলার কথা বলতে কষ্ট হচ্ছে তবুও রাগ নিয়ে কথা বলছে। যাদের কথাগুলো বলছে তাদের প্রতি মহিলার আকাশ সম ঘৃনা প্রকাশ পাচ্ছে। এগুলো কাকে বলছে কি জন্য বলছে তার কারন আরিবা বুঝতে পারলোনা। অগত্যা জিহ্বা দিয়ে ঠোঁটটা ভিজিয়ে প্রশ্ন করলো।
“আপনি কে? কাদের কথা বলছেন?”
আরিবার কথা শুনে মহিলাটি চমকে মাথা উঠালো। আরিবাকে দেখে খুব ভয় পেলো। ভয়ে এদিক ওদিক তাকিয়ে আরিবার থেকে নিজেকে গুটিয়ে নিলো। আরিবা এতে আরো অবাক হলো। মহিলাটিকে আশ্বস্ত করে বললো।
“আরে ভয় পাবেন না। শান্ত হন! আমি আপনার কোনো ক্ষতি করবো না।”
মহিলাটি তবুও শান্ত হলোনা। আরিবা মহিলার দিকে এগিয়ে বললো।
“কি হয়েছে আমায় নিঃসন্দেহে বলতে পারেন?”
মহিলাটি চুপ করে রইলো কোনো উওর দিলোনা। আরিবা মহিলার হাতটা ধরে বললো।
“আপনার ভয় নেই। আমাকে বলুন কে আপনাকে এভাবে বন্দী করে রাখছে? কেনো রাখছে? আমি আপনাকে সাহায্য করতে পারি। ”
মহিলাটি এবার আরিবার দিকে তাকালো। সাহায্যের কথা শুনে পাগলের মতো করে বলতে লাগলো।
“ওরা খুনি। ওরা সবাই খুনি। আমার স্বামীকে মেরেছে আমার মেয়ে, আমার নাবিলাকে মেরেছে।”
আরিবা অবাক হলো। খুন করেছে? তাহলে ওনাকে বাঁচিয়ে রাখছে কেনো? কারাই বা খুন করলো? আরিবা ভাবনা থেকে বের হয়ে মহিলাটিকে আবার প্রশ্ন করলো।
“ওরা বলতে কারা? আপনি কাদের কথা বলছেন?”
“এই বাড়ির সবাই খুনি! ওরা সবাই অমানুষ!”
আরিবা বিদ্যুতের ন্যায় চমকে উঠলো। এই বাড়ির বলতে ওর বাবা মা, কাকা কাকিমনি, আরশ ভাইয়া এরা খুনি? নাহ কিছুতেই এরা খুনি হতে পারেনা। আরিবা মহিলাটিকে কিছু জিজ্ঞাসা করতে যাবে তার আগেই পিছন থেকে কেউ ওর মুখে রুমাল চেঁপে ধরলো। আর কিছুই মনে নেই ওর।
————————
“কিরে ঘুমাছ নি?”
আরশের কথা শুনে আরিবা চোখ খুললো। আরশের দিকে তাকিয়ে বললো।
“ভাইয়া আমি সত্যি বলছি। ওখানে গুপ্ত রুম আছে৷ একজন মহিলা আছে, যে বলছিলো এই বাড়ির সবাই খুনি।”
“আমি তোর কথা বিশ্বাস করি। কিন্তু তুই তো এইমাত্র নিজের চোখে দেখলি।”
” সত্যি ভাইয়া তখন ছিলো।”
“আচ্ছা আমরা সকালে আবার খুঁজবো। এই ঔষধ টা খেয়ে ঘুমিয়ে পর। তোর শরীর দূর্বল। এমন দূর্বল হলে বার্থডে পার্টি করবি কি করে?”
আরিবা খেতে চাইলো না। তবুও আরশ ওকে জোর করে খাইয়ে দিছে। খাওয়ার কিছুক্ষণের মধ্যেই আরিবা ঘুমিয়ে পরলো। আরশ হতাশ চোখে আরিবার দিকে তাকালো। ওর মাথায় হাত বুলাতে লাগলো। ঘুমন্ত আরিবার দিকে তাকিয়ে আরশের সারা দিনের ক্লান্ত দূর হয়ে গেলো। কি মায়াবী এই চেহারা? দেখলেই ওর মন শান্ত হয়ে যায়। এই মেয়েটাই যে ওর ভালো থাকার ঔষধ তা কি মেয়েটা জানে? আরশ অতি আবেগ প্রবণ হয়ে পরলো। আরিবার কপালে ছোট্ট করে একটা কিস দিলো। অতঃপর আরিবা মুখের দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসে বললো।
এই যে মায়াবী কন্যা!
কোনো এক রুপকথার জগৎ থেকে
তুমি তো এসেছো শুধু
আমার মায়াপরী হতে!
💝
ইনশাআল্লাহ চলবে….