#অজানা
#লেখনীতে_তাশরিফা_খান
পর্ব–৪১
💖
রুমে বসে সাজুগুজু করছে আরিবা। একটু পরেই ওর বার্থডে পার্টি। এবার জন্মদিনেও আরশ ওকে সাদা বাবরি গাউন কিনে দিয়েছে। আরিবা খুব না করেছিলো কিন্তু আরশ শুনেনি। ধমক দিয়ে বলেছিলো-“বার্থডে গার্লের জন্য সাদা গাউনেই পারফেক্ট। ” আরশের কথার উপরে আরিবা কিছুই বলতে পারেনি। আরিবাকে পার্লারে সাজতে বলেছে ওর মা আর কাকিমনি কিন্তু আরিবা তাতে নারাজ। ও বাড়িতেই সাজছে। সাজতে সাজতে ভাবলো এই গুপ্ত রুম কি করে উধাও হয়ে গেলো? রাতে ঔষধ খাওয়ার জন্য আরিবার ঘুম ভাংছে ১১টায়। আরশের সাথে গিয়ে তখনও খুঁজে ছিলো কিন্তু কোনো গুপ্ত দরজা পায়নি। কোথায় গেলো কে জানে? ভাবলেই আরিবার মাথা ধরে যায়।আরিবা এসব নিয়ে আর ভাবলোনা। মন দিয়ে সাজতে লাগলো। চেহারায় হালকা মেকআপ দিয়েছে, চোখে গারো কাজল দিয়েছে। গাউনের সাথে ম্যাচিং হিজাপটা পড়ে নিলো। তাড়াহুড়ো করে পার্টির উদ্দেশ্যে সামনে যেতেই ভাবলো ও লিপস্টিক দেয়নি। অগত্যা ড্রেসিং টেবিলের সামনে গিয়ে ভাবলো কোন লিপস্টিক টা দেওয়া যায়। পরক্ষনেই হালকা খয়েরী কালার লিপস্টিক দিলো।
অনেক জমকালো পার্টির আয়োজন করা হয়েছে। চৌধুরী বাড়ির একমাত্র মেয়ে বলে কথা! বড় বড় বিসনেজম্যানদের ইনভাইট করা হয়েছে। সবাই অনুষ্ঠানে এসে গেছে। আরিবার মা বাবা, কাকা কাকিমনি পাশে বসে আছে। আরিবার বন্ধুরা এসে গেছে। জিসান, তৃনা, শাহীন ওরাও এসেছে। শান্তা আসতেই শাহীন ওর দিকে তাকালো। শান্তা গোলাপি একটা গাউন পরে এসেছে। চুল গুলো ছেড়ে রেখেছে। খোলা চুলে ওকে খুব সুন্দর লাগছে। শাহীন বুকে হাত দিয়ে বললো। ” ওহ শ্যামাঙ্গী তুমি আমায় কি যাদু করেছো বলোতো? তোমায় ছাড়া কিছুই ভাবতে পারিনা?” শাহীন আজ খুব করে প্রিপারেশন নিয়ে এসেছে ওকে প্রপোজ করার। শান্তা শাহীনের দিকে তাকাতেই শাহীন চোখ ফিরিয়ে নিলো। শান্তা অনেক দিন ধরেই খেয়াল করেছে শাহীন ওকে ফলো করে। শাহীন দেখতে খারাপ না। উজ্জ্বল শ্যাম বর্নের মধ্যে দেখতে অনেক সুন্দর। শান্তার কাছে ছেলেদের শ্যামলা হলেই ভালো লাগে। আজ শাহীন নেভিব্লু কালার শার্ট পরে এসেছে। এই শার্টে শাহীনকে ওর ভালোই লাগে। শাহীন খুব হাসি খুশি আর মিশুক টাইপের ছেলে। সবার সাথে কথা বললেও শান্তার সাথে কখনও কথা বলেনি। শান্তার খুব ইচ্ছা যে শাহীন ওর সাথে মন খুলে কথা বলুক। বাট শাহীন শুধু তাকিয়েই থাকে কিছু বলেনা। কিছুক্ষন পর শাহীন আবার শান্তার দিকে তাকালো। শাহীনকে তাকাতে দেখে শান্তা লজ্জা পেলো। তাড়াহুড়া করে আরিবার কাছে চলে গেলো। শাহীন মুচকি হেসে জিসান আর আরশের কাছে চলে গেলো।
আরিবার বার্থডে উপলক্ষ্যে আরশ লেনাকেও ইনভাইট করেছে। লেনা পাতলা সিল্কের একটি শাড়ি পড়ে এসেছে। আরশ ছোটো ছোটো ড্রেস পছন্দ করেনা বলেই আজ লেনা শাড়ি পড়ে এসেছে। লেনাকে হেলেদুল আসতে দেখেই আরশ অন্য দিকে চলে গেলো। লেনা এসেই জিসানের কাছে জিজ্ঞাসা করলো।
“জিসান ভাইয়া! আরশ স্যার কোথায়? ”
জিসান ব্যস্ততা দেখিয়ে বললো।
“আমি জানি না। আমার কাজ আছে আমি যাই। তুমি খুঁজে দেখো!”
লেনা খুঁজতে খুঁজতে আরশকে পেয়ে গেলো। হেলেদুলে আরশের কছে চলে গেলো। আরশের কাছে গিয়েই ঢং করে বললো।
“হাই আরশ স্যার! কেমন আছেন?”
আরশ শুনেও না শুনার ভান করলো। লেনা আবার জিজ্ঞাসা করলো। আরশ ভদ্রতার খাতিরে মুখে হাসি ফুটিয়ে বললো।
“এই তো আলহামদুলিল্লাহ ভালো আছি।”
আরশ এটুক বলেই অন্য দিকে তাকালো। লেনা আরশের গায়ে হেলে পরে বললো।
“বলুন না স্যার! আমায় কেমন লাগছে?”
“ভালো!”
আরশ আর কিছুই বললো না। সিঁড়ির দিকে তাকিয়ে দেখলো আরিবা নামছে। আরশের আর কি লাগে এক ধ্যানে তাকিয়ে রইলো ওর দিকে। আরিবা সবার দিকে তাকিয়ে মুচকি হেসে নিচে নামছে। অনেকেই ওকে মুগ্ধ হয়ে দেখছে। আরিবা নিচে নামতেই মি. জাকির মাইক্রোফোন হাতে নিয়ে বললো।
“লেডিস এ্যান্ড জেনটালম্যান! এই হচ্ছে আমার একমাত্র মেয়ে জান্নাতুল ফেরদৌস আরিবা। আজ ওর আঠারো বছর পূর্ণ হলো। সবাই ওর জন্য দোয়া করবেন। যেনো জীবনে অনেক সাফল্য অর্জন করতে পারে। প্লিজ ইনজয় দ্যা পার্টি!”
মি. জাকিরের কথায় আরশের ধ্যান ভাংলো। আরিবা ওর বন্ধুদের সাথে গল্পে মেতে উঠলো। আরশের মাথায় একটা বুদ্ধি এলো। ও আরিবাকে দেখিয়ে দেখিয়ে নেত্রার সাথে কথা বলতে লাগলো। আরশের দিকে তাকাতেই আরিবার দেখতে পেলো আরশ হেসে হেসে লেনার সাথে কথা বলছে। লেনা আবার আরশের গায়ে ঢলে পড়ছে। এসব দেখে আরিবার মাথায় রক্ত উঠে গেলো। দাঁতে দাঁত চেঁপে শান্তাকে বললো।
“দেখ কি সুন্দর ৩২ পাটি দাত বের করে হাসছে। আবার কি ঢলাঢলি করছে। শালা আস্ত লুচ্চা শুধু মেয়ে দেখলেই হলো লুচ্চামি শুরু করে দেয়।”
আরিবার কথায় শান্তা ঠোট ঠোঁট চেঁপে হেসে বললো।
“আরশ ভাইয়া কারো সাথে ঢলাঢলি করলে তোর কি?”
শান্তার কথায় আরিবা থতমত খেয়ে গেলো। ঠিকি তো, আরশ অন্য মেয়েদের সাথে কথা বললে ওর কি? আরিবা আমতা আমতা করে বললো।
“আমি কি বলছি আমার কিছু? সে এমন করলে বাইরে আমাদের মান সম্মান থাকবে। আমার বাবা কাকা কত নাম করা বিজনেসম্যান, বাইরে বের হলেই বলবে ওদের ছেলে খারাপ তখন আমাদের মান সম্মান যাবেনা?”
“তাতে তোর বাবার বা কাকার সমস্যা তারা এসব নিয়ে বলবে। তুই বলবি কেনো?”
” আমিয়েই বলবো। দাড়া লেনা দেনা তোকো আমার পার্টি থেকে বের করছি।”
কথাটা বলেই আরিবা রহস্যময় হাসি দিয়ে শান্তার কানে কানে কিছু বললো। কথাটা শুনে শান্তা হাসি দিয়ে নিজের কাজে চলে গেলো। আরিবা দাড়িয়ে দাড়িয়ে অপেক্ষা করতে লাগলো।
শান্তা রান্না ঘরে দিকে যেতেই কে জানি ওকে টেনে আড়ালে নিয়ে গেলো। শান্তা তাকিয়েই অবাক হয়ে গেলো। দেখলো শাহীন ওর সামনে দাড়িয়ে আছে। শান্তা কপাল কুচকে বললো।
“আমাকে এখানে আনলেন কেনো?”
শাহীন খুব ঘেমে গেছে। এই ঘামাক্ত চেহারা টা শান্তার খুব ভালো লাগছে। শাহীন আমতা আমতা করে বললো।
“তোমার সাথে আমার কথা আছে?”
“হ্যাঁ বলুন!”
শাহীন আবারও চুপ করে রইলো। এদিক ওদিক তাকিয়ে জোরে শ্বাস নিলো। নিজেকে একটু ঠিক করে গলাটা ঝেড়ে বললো।
“দেখো আমি সবার মতো গুছিয়ে কথা বলতে পারিনা। আমি সরাসরি কথা বলতে পছন্দ করি। তোমাকে আমার অনেক ভালো লাগে প্রথম যেদিন দেখিছি ওইদিন থেকেই ভালোলাগে। হয়তো ভালোও বাসি। শ্যামাঙ্গী তুমি কি আমায় ভালোবাসবে?”
শান্তা কিছুই বললো না, থম মেরে দাড়িয়ে রইলো। ও পুরা শকে আছে। শাহীন ওকে ভালোবাসে? ওকে শ্যামাঙ্গী বলে ডাকলো? ভাবতেই শান্তা লজ্জা পেলো। লজ্জায় মাথা নিচু করে দাড়িয়ে রইলো। শাহীন শান্তার হাতে একটা প্যাকেট ধরিয়ে দিয়ে চলে গেলো। শান্তা লজ্জা নিয়ে প্যাকেটটা খুলে সুন্দর একটা রিং দেখতে পেলো। শান্তা মুচকি হেসে নিজের কাজে চলে গেলো। শাহীন ওটা দূর থেকে দেখে তৃপ্তির হাসি দিলো।
আরিবা অনেকক্ষন ধরে শান্তার জন্য অপেক্ষা করছে। ও আসছেনা তাই বিরক্তি নিয়ে আশেপাশে তাকালো। সবাই নিজেদের মাঝে ব্যাস্ত। জিসান তৃনার সাথে কথা বলছে। তূর্য আর শাওন একসাথে হাসাহাসি করছে। ওর মা কাকিমনি অন্য মহিলাদের সাথে কথা বলছে। ওর বাবা কাকা বিজনেসম্যানদের সাথে আলোচনা করছে। আরশের দিকে তাকাতেই ওর মাথায় রক্ত উঠে গেল। এখনও লেনার সাথেই কথা বলছে। আরিবা আরশকে মনে মনে হাজার গালাগাল দিলো। শান্তা একটা গ্লাস এনেই বললো।
“এই নে তোর স্পেশাল জুস!”
আরিবা রহস্যময় হাসি দিয়ে বললো “চল মিশন শুরু করি?”
আরিবা জুসটা নিয়ে লেনার দিকে এগিয়ে চললো। শান্তা ওর পাশেই আছে। লেনার কাছে যেতেই শান্তা ইচ্ছা করেই আরিবাকে হালকা ধাক্কা দিলো। আরিবা ইচ্ছে করে লেনার গায়ে জুসটা ফেলে দিলো। লেনার হাতে জুস পরতেই ও লাফিয়ে উঠলো। আরিবা নেকামো করে বললো।
“সরি আপু আমি দেখতে পাইনি। সরি সরি!”
আরিবার কথা লেনা পুরোপুরি শুনলোনা তার আগেই হাত ঢলতে ঢলতে কান্না ভেজা চোখে বললো।
“আমার হাত জ্বলে গেলো। আমার হাত জ্বলছে। কি দিয়েছো এর মধ্যে?”
আরিবা রাগ করে বললো।
“কি দিয়েছি মানে? এটা অরেঞ্জ ফ্লেবারের জুস বুঝছেন? এটা আমি খাইতে ছিলাম।”
লেনা কিছুই বললো না। কাঁদতে কাঁদতে তাড়াতাড়ি চলে গেলো। আসলে আরিবা জুসে মরিচ মিশিয়ে ছিলো। লেনাকে যেতে দেখে আরিবা ঠোট বাকিয়ে হেসে চলে গেলো। আরশ ওর যাওয়ার পানে তাকিয়ে মুচকি হাসি দিলো। ও জানে এটা আরিবা ইচ্ছে করেই করেছে।
অনুষ্ঠানে নেত্রার পরিবারের সবাইকে ইনভাইট করা হয়েছে। ওর মা বাবা আসেনি শুধু নিদ্র এসেছে। তাও অনেক দেরি করে। নিদ্র আরিবার কাছে গিয়ে বললো।
“হ্যাপি বার্থডে বিউটি ডল! কেমন আছো? নেও তোমার গিফট!”
আরিবা হাত বাড়িয়ে উপহারটা নিলো। অগত্যা মুচকি হেসে বললো।
“আলহামদুলিল্লাহ ভালো আছি। থ্যাংকস্ ভাইয়া।”
আরিবা এবার আরশকে দেখিয়ে দেখিয়ে নিদ্রর সাথে কথা বলছে। আরশ রেগে ওর দিকে তাকিয়ে আছে। আরিবা ওকে পাত্তা না দিয়ে নিদ্রর সাথে কথা বলতে লাগলো। আরশ রেগে আরিবার কাছে এলো। দাঁতে দাঁত চেপে বললো।
“কেক কাটার সময় হইছে। কেক কাটতে চল!”
আরিবা ওর কথাশুনেও না শুনার ভান করলো। আরশ রেগে আরিবার হাত ধরে নিয়ে যেতে লাগলো। এমন জোরে ধরছে যে আরিবা ব্যাথা পাচ্ছে। আরিবা কান্না ভেজা চোখে বললো।
“ভাইয়া ব্যাথা পাচ্ছি।”
“সেই জন্যই তো ধরেছি। নিদ্রর সাথে কথা বলার আগে তোর ভাবা উচিত ছিলো।”
আরশ আরিবাকে এনে কেকের সামনে দাঁড় করালো। সবাই মিলে কেক কাটলো। কেক কাটার পর্ব শেষ হতেই শান্তা স্টেজে উঠলো। মাইক্রোফোন হাতে নিয়ে বললো।
“হাই গাইস! অনুষ্ঠান টা আপনাদের কেমন লাগছে? অনেক জমকালো অনুষ্ঠান তাইনা? আমাদের এই জমজমাট অনুষ্ঠান টা আরো জমাতে এখন গান গাইবে আরিবা এ্যান্ড আরশ। জোরে হাততালি! ”
কথাটা বলেই শান্তা নেমে গেলো। আরিবা আরশ স্টেজে উঠলো। আরিবা সবার দিকে তাকিয়ে সালাম দিলো। অগত্যা ঘাড় ঘুরি আরশের দিকে এক পলক তাকিলো। আবার সামনে সবার দিকে তাকিয়ে গাইতে লাগলো।
“বলনা সাথী বলনা কত থাকবো আমি তোর আশায়
বলনা সাথী বলনা কত থাকবো আমি তোর আশায়
তোর বিহনে আসেনা ঘুম দু চোখের পাতায়”
আরিবার গাওয়া শেষ হতেই আরশ আরিবার দিকে তাকিয়ে গাইতে লাগলো।
“তোরে ছাড়া থাকা যায়না ওরে আয় না কাছে আয় না
দূরে গেলে যাইযে পুড়ে একি শিহরণ
জানিনা জানিনা আমি কিযে করি এখন
বুঝিনা বুঝিনা তোর মনটা পাবো কখন।”
আরশের গাওয়া শেষ হতেই আরিবা আরশের দিকে তাকিয়ে গাইলো।
“জানিনা জানিনা আমি কিযে করি এখন
বুঝিনা বুঝিনা তোর মনটা পাবো কখন।”
দুজনের চোখাচোখি হতেই আরশ আরিবার থেকে চোখ ফিরিয়ে নিলো। সামনে তাকিয়ে মুচকি হেসে গাইতে লাগলো।
“ঘুম ঘুম স্বপনে শুধু তোরি বসবাস
তোকে লিখে দিয়েছি মনেরি নীল আকাশ।”
আরশের সাথে তাল মিলিয়ে আরিবাও গাইলো।
“ঘুম ঘুম স্বপনে শুধু তোরি বসবাস
তোকে লিখে দিয়েছি মনেরি নীল আকাশ।”
আরশ আবারও আরিবার দিকে তাকিয়ে গাইলো।
“তোরে ছাড়া থাকা যায়না ওরে আয় না কাছে আয় না
দূরে গেলে যাইযে পুড়ে একি শিহরণ
জানিনা জানিনা আমি কিযে করি এখন
বুঝিনা বুঝিনা তোর মনটা পাবো কখন
আরিবাও আরশের দিকে তাকালো। দুজন দুজনের দিকে তাকিয়ে একসাথে গাইলো।
“জানিনা জানিনা আমি কিযে করি এখন
বুঝিনা বুঝিনা তোর মনটা পাবো কখন।”
ওদের গানের মাধ্যমেই শেষ হলো অনুষ্ঠান। সবাই নিজ নিজ গন্তব্যে চলে গেলো।
💝
ইনশাআল্লাহ চলবে….
(ভুলত্রুটি মাফ করবেন। কেমন হয়েছে ছোট্ট করে কমেন্ট করতে ভুলবেন না।)