অজানা পর্ব-৪২

0
863

#অজানা
#লেখনীতে_তাশরিফা_খান
পর্ব–৪২

💝

শীতের সকাল। কুয়াশায় চারদিক ঢেকে থাকে। কখনও কুয়াশা ভেদ করে সূর্যের রশ্মি দেখা যায় ১০টা কি ১১টায়। সূর্যের আলো শিশির বিন্দুর উপর পড়লে এক ধরনের আলো বিচ্ছুরিত হয়। যা দেখতে খুবেই ভালো লাগে। প্রাকৃতিক নিয়মে শীতের সকালে খুবেই ঠান্ডা লাগে। তখন স্বাভাবিক ভাবে সবাই কম্বলের নিচে থাকতেই পছন্দ করে। তেমনি সকাল বেলা নাক ডেকে ঘুমাচ্ছে আরিবা। ৯টা বেজে গেছে। আলোক রশ্মি কুয়াশা ভেদ করে আরিবার রুমে ঢুকেছে। তাতে আরিবা আরাম পেয়ে আরও শান্তিতে ঘুমাচ্ছে। সামনে ওর টেস্ট পরীক্ষা তাতে ওর হুঁশ নাই। ও পরে পরে ঘুমাচ্ছে। আরশ ডাইনিং টেবিলে এসে দেখলো আরিবা ডাইনিং এ নেই। ওর কাকিমনির দিকে তাকিয়ে বললো।

“কাকিমনি আরিবা কোথায়?”

মিসেস আঞ্জুমান আরশের প্লেটে খাবার দিতে দিতে বলনেন।

“ও এখনও উঠেনি বাবা!”

আরশ গরম চোখের আরিবার মায়ের দিকে তাকালো। প্লেটটা ঠেলে রাগি চোখে উপরে দিকে পা বাড়ালো। মি. জাকির নিচ থেকে চিল্লিয়ে বললেন।

“আমার মেয়েকে কিছু বলবে না আরশ!”

কথাটা আরশ কানেই নিলো না। শুনেও কিছুই বললো না। রাগ নিয়ে তাড়াহুড়ো করে আরিবার রুমের দিকে যাচ্ছে। মিসেস তারিন ছেলের যাওয়ার দিকে তাকিয়ে বললেন।

“ওখানে গিয়ে কি কেলেঙ্কারি বাজায় আবার কে জানে? ওদের জ্বালায় একটুও শান্তি নাই।”

মি. আফজাল হোসেন তার স্ত্রীর দিকে তাকিয়ে বললেন।

“ওরা আছে বলেই এই বাড়িটা জমজমাট আছে। ওরা সারাদিন বাড়িটা মাথায় করে রাখে। কখনো ঝগড়া তো কখনো হাসাহাসি।”

আরশ রাগি চোখে তাড়াহুড়ো করে আরিবার রুমে ঢুকে পরলো। দেখলো আরিবা কম্বল গায়ে দিয়ে আরামছে ঘুমাচ্ছে। আরশ ওকে গিয়ে টেনে তুললো।
আরিবা ঘুমের ঘোরে বলছে।

“আম্মু ছাড়ো এমন করছো কেনো?আমার খুব ঘুম পাচ্ছে।”

এ কথা বলে আরিবা আবার শুয়ে পরলো। আরশ রাগি চোখে ওর দিকে তাকিয়ে থাকলো। কিছুক্ষণ পর আরিবার গায়ে পানি ঢেলে দিলো। আরিবা লাফিয়ে উঠলো। ডিসেম্বর মাস শীত পড়েছে অনেক। তার ভিতর পানি লাগলে তো ঘুম উধাও হয়ে যাবে সাথে রাগও হয় প্রচুর। আরিবা আশেপাশে না তাকিয়ে রাগি গলায় বললো।

“এটা তুমি কি করলে আম্মু? বলছিনা আমার অনেক ঘুম আসছে? আজ কচিং এ যেতে ইচ্ছে করছেনা বলছিতো তাও পানি দিলা কেনো?”

“তোর ঘুম ভাঙ্গতে!”

আরশের কথা শুনে আরিবার ঘুম চলে গেলো। পাশে তাকিয়ে আরশকে দেখে রাগি গলায় বললো।

“সমস্যা কি তোমার? একটু শান্তিতে ঘুমাতেও দিবেনা? আমি তোমার কি ক্ষতি করেছি যে তুমি আমার সাধের ঘুম টা ভেঙে দিলে?”

“কয়টা বাজে?”

আরিবা অবাক হয়ে বললো।

“কয়টা বাজে সেটা জিজ্ঞাসা করতে তুমি আমার ঘুম টা ভেঙে দিলে? এটা তুমি ঘড়িতে দেখতে পারতে নাহয় মোবাইলে আছে। তাছাড়া বাড়িতে কত মানুষ আছে তাদের জিজ্ঞাসা করতে পারতে।”

আরশ ধমক দিয়ে বললো।

“বেশি কথা ছাড়া জীবনে আর কিছু পারোছ না? সকাল ৯টা বাজে। প্রাইভেটে তো গেলি না। কোচিং এ যাবি কখন?”

“ভাইয়া আজ একটুও যেতে ইচ্ছে করছে না!”

“সামনে তোর টেস্ট পরীক্ষা আর তুই পড়ায় অবহেলা করতাছোছ? তাড়াতাড়ি গোসল সেড়ে নিচে আয়! তোকে কলেজে দিয়ে আমি হসপিটাল যাবো।”

আরিবা তারাতাড়ি গোসল ছেড়ে নিচে আসলো। গাল ফুলিয়ে ডাইনিং টেবিলে বসে পড়লো। গাল ফুলিয়ে বললো।

আজ আমার একটুও কোচিং এ যপতে ইচ্ছে করছেনা।”

মিসেস তারিন আরিবার প্লেটে খাবার দিতে দিতে বললেন।

“কোনো?”

“জানি না আমি!”

“তো গাল ফুলিয়ে আছিস্ কেনো?”

আরিবা কিছুই বললো না। চুপচাপ খেতে থাকলো। মিসেস আঞ্জুমান রান্না ঘর থেকে আরিবার দিকে তাকালেন। কিন্তু কিছুই বললেন না। তিনি জানেন কি হয়েছে। ওর থেকে চোখ ফিরিয়ে নিজের কাজে মগ্ন হলেন। আরশ সোফায় বসে ফোনে ব্যস্ত ছিলো মিসেস তারিনের কথায় ফোন থেকে চোখ উঠিয়ে আরিবার দিকে তাকালো। অগত্যা নিজের মায়ের দিকে তাকিয়ে বললো।

“দেইখো এত গাল ফুলাতে ফুলাতে ওর গাল ওমন ফুলে না যায়। তাহলে তো বিয়ে দিতে পারবোনা। সারাজীবন আমার ঘাড়ে বসে খাবে।”

আরশের কথা শুনে আরিবা খাওয়া বন্ধ করে ওর দিকে তাকালো। রাগি গলায় বললো।

“আমার বিয়ে নিয়ে তোমায় কে ভাবতে বলে? আমার বিয়ে না হলে আমার বাবার পয়সায় খাবো। আমার বিয়ের কথা আপনার না ভাবলেও চলবে।”

“ভদ্রভাবে কথা বল। আমি তোর থেকে ছয় বছরের বড়।”

আরশের কথা শুনে আরিবা ভেংচি দিলো। ঠোট ঠোঁট বাকিয়ে বললো।

“মাননীয় ডক্টর সাহেব আমার বিবাহের কথা ভাবিয়া আপনার মূল্যবান সময় নষ্ট করিবেননা।”

আরিবার কথা শুনে মিসেস তারিন হেসে ফেললো। আরিবা হাসতে হাসতে খাওয়ায় মন দিলো। আরশ রেগে ওর দিকে তাকিয়ে আছে। হঠাৎ ওর মাথায় বুদ্ধি আসলো। ফোনটা কানের কাছে ধরে বললো।

“হ্যাঁ লেনা বলো? কি খবর তোমার?

লেনা নামটা শুনতেই আরিবা খাওয়া বন্ধ করে শুনতে লাগলো কি বলে। আরশ আবার বললো।

” আমিও ভালো আছি। এইতো এখনেই আসবো। তুমি একটু ওয়েট করো।”

আরশের কথা শুনে আরিবার খুব রাগ হলো। চোখ মুখ গরম করে খাবারটা রেখে দাড়িয়ে গেলো। ফ্লোরে পা দিয়ে শব্দ করে বাইরে চলে গেলো। আরশ ওর যাওয়ার দিকে তাকিয়ে ঠোঁটের বাকিয়ে হাসলো। অগত্যা আরিবার পিছনে চললো।

——————————

কলেজের ক্যান্টিনে বসে আইসক্রিম খাচ্ছে আরিবা। ওর মাথা গরম আছে এখন। ওর গরম মাথা ঠান্ডা করতে ও আইসক্রিম খাচ্ছে আর রেগে বিড়বিড় করে বলছে।

“শালা খবিশের বংশধর! ওই লেনাকে নিয়ে পরে আছে তাইনা? ওর সাথে হেসে কথা বলা আমি ছুটাবো।”

এটুক বলে আরিবা থামলো। তারপর আরশকে ব্যঙ্গ করে বললো।

“তুমি ওয়েট করো আমি এখনেই আসছি। বেটা হারামী, বান্দর, কুত্তা বিলাই।”

“কিরে কাকে গালাগালি করছিছ?”

শান্তার কথা শুনে আরিবা কপাল কুচকে ওর দিকে তাকালো। রাগ নিয়ে জোরে বললো।

“যাকে ইচ্ছা তাকে বলছি। তোকে তো বলিনি তুই চুপ থাক।”

শান্তা চুপ করে আরিবার সামনের চেয়ারে বসে পড়লো। সিরিয়াস হয়ে বললো।

“কিরে কি হয়েছে? কিসের জন্য এমন মাথা গরম?”

আরিবা কিছুই বললোনা। চুপচাপ আইসক্রিম খেতে লাগলো। একটু পরেই তূর্য এসে ওদের পাশের চেয়ারে বসে পরলো। শাওন চেয়ারে বসতে বসতে বললো।

“কিরে মুড অফ কেন তোদের? বাই চান্স তোদের জামাই টামাই মইরা গেলো নাতো? সেই জন্য শোক দিবস পালন করতে আছোছ?”

আরিবা রাগি চোখে শাওনের দিকে তাকিয়ে বললো।

“তোদের বউ মরছে তাই আমরা তার শোকে মনৌব্রত পালন করতেছি বুঝলি?”

আরিবার কথা শুনে তূর্য বললো।

“আরে ইয়ার বিয়েই তো করতে পারলাম না মরবে কেমনে?মেয়ে টেয়ে দেখ তোরা বুড়া হয়ে যাচ্ছি যে!”

আরিবার আর শান্তা ওর দিকে অবাক চোখে তাকালো। বলে কি ও? ১৮ বছর বয়স তাতেই নাকি বুড়া। কেউ কিছুই বললো না। শান্তা সিরিয়াস হয়ে বললো।

“তোদের একটা কথার বলার আছে।”

তূর্য তাড়াতাড়ি করে বললো।

“বলার থাকলে তাড়াতাড়ি বল?”

শান্তা নিজেকে একটু ঠিক করে নড়েচড়ে বসলো। গলাটা হালকা ঝেড়ে বললো।

“শাহীন ভাইয়া আমায় কাল প্রপোজ করেছিলো।”

কথাটা বলেই শান্তা লজ্জায় মাথা নিচু করে ফেললো।আরিবা ধুম করে ওর পিঠে একটা কিল বসিয়ে দিয়ে বললো।

“কাল প্রপোজ করছে আর তুই আজ বলছিস?”

শান্তা পিঠ ডলতে ডলতে অসহায় ভাবে বললো।

“কাল সময় পাইনি।”

তূর্য শান্তার কাছে এসে ঘুরে ঘুরে ওকে দেখলো। শান্তা ওর দিকে অবাক হয়ে তাকিয়ে জিজ্ঞাসা করলো।

“কিরে ওভাবে ঘুরে ঘুরে আমায় কি দেখোছ?”

“তোর রূপ দেখি বইন। এত সুন্দর তুই কবে হলি যে শাহীন ভাইয়া তোকে প্রপোজ করে?”

শাহীন ওর সাথে তাল মিলিয়ে বললো।

“হ্যাঁ ভাই! আমারও একি প্রশ্ন? আচ্ছা শান্তা! শাহীন ভাইয়া কি দেখে তোর প্রেমে পড়লো?”

” আমি কি জানি সেটা তোরা শাহীন ভাইয়াকেই জিজ্ঞাসা কর। আমায় বলোছ কেনো?”

তূর্য ঠোঁট চেঁপে হেসে বললো।

“তাও বল না? স্টাইল মেরে হেটেছিলি? নাকি ময়দা মেখেছিলি?”

আরিবা এতক্ষন চুপ ছিলো। এবার ওদের দিকে তাকিয়ে বললো।

“ভালোবাসতে কারন লাগেনা। এমনি এমনি হয়ে যায়। কি কারনে কাকে কখন ভালোবেসে ফেলে এটা কেউ বলতে পারেনা।”

ওরা সবাই আরিবার দিকে অবাক চোখে তাকালো। আরিবা ভালোবাসার কথা বলছে? যে ভালোবাসা সহ্য করতে পারেনা সে ভালোবাসার সংজ্ঞা বলছে। তার মানে ওরা বুঝে গেছে ডাল মে কুছ কালা হে। আরিবা শান্তার দিকে চেয়ে বললো।

” তুই কি উওর দিলি?”

শান্তা আস্তে করে ভয়ে ভয়ে বললো।

“কিছুই বলিনি। আজ রেস্টুরেন্টে ডেকেছে। তোরাও সাথে চল প্লিজ?”

আরিবা চেয়ার ছেড়ে উঠতে উঠতে বললো।

“ক্লাস শেষে সবাই যাবো। তার ভালোবাসার পরীক্ষা নিবে। ওকে? এমন পরীক্ষাই নিবো বেটা প্রেম কি জিনিস সেটাই ভুলে যাবে।”

কথাটা বলেই আরিবা রহস্যময় হাসি দিয়ে চলে গেলো। শান্তা কাদো কাদো মুখে সামনে আাগাতে আগাতে ভাবলো। এ না জানি কি করে। ওর সাধের প্রেমের ১২ টা বাজাবে। এই জীবনে মনে হয় ওর প্রেম করা হবেনা। জীবনে শত্রুর দরকার নাই এমন একটা বন্ধু থাকলেই হয়।

💖

ইনশাআল্লাহ চলবে….

(রি চেইক করিনি। অনেক বিজি তাই গল্প দিতে পারিনি গাইস্। ছোট হওয়ার জন্য সরি। কেমন হয়েছে অবশ্যই জানাবে।)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here