#অজানা
#লেখনীতে_তাশরিফা_খান
পর্ব–৪৫
💝
সকাল বেলা ডাইনিং টেবিলে ব্রেকফাস্ট করতে বসছে আরিবা। আরশ সেজেগুজে শার্টের হাতা ফোল্ড করতে করতে সিড়ি দিয়ে নামছে। খয়েরি রংয়ের একটা শার্ট পড়েছে। ফর্সা শরীরে খয়েরি শার্টটা খুবেই মানিয়েছে। সিলকি চুলগুলো সুন্দর করে সেট করে রেখেছে। আরিবা খাবার রেখে ওর দিকে তাকিয়ে আছে। আরশ এত সাজে কেনো সেটাই বুঝতে পারে না আরিবা। আরশ নেমে আরিবার মাথায় একটা চাটি মেরে বললো।
“কিরে বলদেের মতো করে তাকিয়ে আছোছ কেনো? খুব সুন্দর লাগছে বুঝি? ক্রাশ খাইছোছ তাইনা? সব মেয়েরাতো আজ বেহুঁশ হয়ে পরবে আমায় দেখে।”
আরশ ভাব নিয়ে কথাগুলো বললো। আরিবা মাথায় হাত দিয়ে বিরক্তি নিয়ে আরশের দিকে তাকালো। অগত্যা রাগ নিয়ে চিল্লিয়ে বললো।
“কাকিমনি কিছু বলো তোমার ছেলেকে!”
মিসেস আঞ্জুমান ও মিসেস তারিন রান্নাঘরে ছিলেন। কিছুই বললেন না। মি. জাকির ও মি. আফজাল হোসেন অফিসে গেছে। আরশ চেয়ারে বসতে বসতে বললো।
“আম্মু আমায় কি বলবে রে? সবাই জানে আমি কত স্মার্ট। এটা বলে বুঝাতে হবেনা। তুই নিজেইতো হা করে তাকিয়ে ছিলি। সুন্দর বলেই তাকিয়ে ছিলি।”
“আপনাকে বড় বলে বড় সে নয়, লোকে যারে বড় বলে বড় সে হয়!”
মুখ বাকিয়ে আরিবা কথাটা বললো। আরশ পরোটা নিতে নিতে ডোন্ট কেয়ার ভাব নিয়ে বললো।
“বাহ! আমাদের বাড়িতেও লেখিকা আছে। তাও অন্যের লেখা চুরি করা লেখিকা। লেখিকা লেখিকা ভাব, শুধু লেখকের অভাব!”
কথাটা বলেই আরশ ঠোঁট বাকিয়ে হাসলো। ওর হাসি দেখে আরিবার মেজাজ খারাপ হয়ে গেলো। ও আরশের দিকে রাগি চোখে তাকালো। অগত্যা ওর কাকিমনি উদ্দেশ্যে করে বললো।
“তোমার ছেলেকে কিছু বলো নাহলে খাবার রেখে চলে গেলাম! তোমার ছেলেকেই সব গিলাও!”
মিসেস তারিন রান্নাঘর থেকে তাড়াতাড়ি আসলেন। আরশের দিকে রাগি চোখে তাকিয়ে বললেন।
“এত জ্বালাছ কেনো বলতো? ঠিকি চুপচাপ থাকলে কি হয় তোদের? তোদের জ্বালায় আমরা শেষ!”
“কাকিমনি সব তোমার ছেলের দোষ!”
আরশ একটু পরোটা ছিঁড়ে ওর মায়ের দিকে তাকালো। পরোটার টুকরোটা মুখে দিতে দিতে বললো।
“আম্মু তুমিতো জানো আমি কত ভদ্র। সো আমি দোষ করতেই পারিনা। I’m a Innocent boy.”
আরিবা রেগে ঠোঁট দুটো প্রসারিত করলো। আরশের দিকে তাকিয়ে দাঁতে দাঁত চেঁপে বললো।
“আপনি তো দুধে ধোয়া তুলসীপাতা। দোষ আপনি করতেই পারেন না।”
“এই তো গুড গার্ল! দেরি করে হলেও বুঝতে পারছোছ।”
আরশ পরোটা চিবাতে চিবাতে কথাটা বললো। আরিবা রেগে খাবার রেখে চেয়ার ছেড়ে উঠে দাড়ালো। সিড়ি দিয়ে উপরে যেতে যেতে রেগে বললো।
” মগের মুল্লুক পাইছে। মনে হয় নিজের বাড়ি সব হুকুম চালায়! এহ আসছে!”
আরশ কথাটা শুনে মুচকি হেসে জোরে বললো।
“আমারেই বাড়ি। তুই তো বিয়ে করে অন্য বাড়ি চলে যাবি। তখন তো আমি একাই রাজত্ব করবো।”
আরিবা কলেজ ব্যাগ কাঁধে নিয়ে রেগে জোরে জোরে শব্দ করে চলে গেলো। মিসেস তারিন আরশের দিকে তাকিয়ে বললো।
“মেয়েটাকে রাগিয়ে কি লাভ পেলি বলতো?”
“মা তুমি বুঝবেনা।”
কথাটা বলে আরশ আরিবার পিছনে পিছনে গেলো। আরশকে আসতে দেখে আরিবা কোমরে হাত দিয়ে দাড়ালো। আরশ ওর কাছে গিয়ে বললো।
“আজ সন্ধ্যায় জিসানের বিয়ে। তুইও আমার সাথে যাবি।৩টার মধ্যে বাড়ি থাকবি!”
“আপনার বন্ধুর বিয়ে আমি কেনো যাবো?”
আরিবা ভ্রু কুচকে কথাটা বললো। আরশ বিরক্ত হয়ে বললো।
“আমার পিএ হিসোবে আমার সাথে যাবি বুঝলি?”
“আমি কেনো? আপনার লেনা দেনা কে নিয়ে যান!”
“লেনাও যাবে তুইও যাবি। কথা না বাড়িয়ে কলেজে যা!”
কথাটা বলে আরশ নিজের গন্তব্যের দিকে পা বাড়ালো। আরিবাও কলেজের উদ্দেশ্যে গাড়িতে বসলো।
—————————–
ক্লাস শেষে কলেজের ক্যান্টিনে আড্ডা দিচ্ছে আরিবা, তূর্য শাওন ও শান্তা। বন্ধু মানেই আড্ডা মঝা মাস্তি। পড়াশুনার লাইফটাই জীবনের শ্রেষ্ঠ সেটা বোঝা যায় পড়ালেখা শেষ হলে। বন্ধুরা মিলে একসাথে গল্প করা, হাসাহাসি, মারামারি সবই আনন্দকর। আরিবারা সবাই মিলে ফুচকা খাচ্ছে আর হাসাহাসি করছে। আড্ডার এক পর্যায় তূর্য শান্তাকে জিজ্ঞাসা করলো।
“শাহীন ভাইয়া কিরকম? তোকে বিয়ে করবে নাকি কদিন টাইমপাস করে ছেড়ে দিবে?”
শান্তা কিছু বলতে যাবে তার আগেই আরিবা বললো।
“ছেড়ে দিবে মানে কি? আমরা কি ভাইসা আসছি মামা? কোনো ছাড়া ছাড়ি নাই! দরকার হলে শাহীন ভাইয়াকে তুলে এনে শান্তার সাথে বিয়ে দিবে। যদি পালিয়েও অন্য কাউকে বিয়ে করে তবুও তুলে এনে শান্তার সাথে আবার বিয়ে দিবো। প্রয়োজন হলে শান্তা সতিনের ঘর করবে তবু নো ছাড়া ছাড়ি মামা! কি বলিস শান্তা?”
আরিবার কথা শুনে শান্তার মাথা চক্কর দেওয়ার পালা। তূর্য আর শাওন বড় বড় চোখ করে তাকিয়ে আছে। আরিবা সবার দিকে তাকিয়ে তুড়ি বাজিয়ে বললো।
“আগের দিন নাই মামা! এখন ছেড়ে যাওয়ার চান্স নাই। তোমাদের দিন শেষ এবার আমাদের দিন শুরু। সোজা তুলে এনে বিয়ে করে নিবো। হুহ!
তূর্য হাতে তালি দিতে দিতে বললো।
” বাহ বইন বাহ! তুই একমাত্র মেয়ে জাতির ভরসা। তোর পা টা উচু কর আমি একটু সালাম করি।”
আরিবা সত্যি সত্যি পা উচু করলো। তূর্য ধমক দিয়ে বললো।
“দূর ছেড়ি! বলছি বলেই কি ধরবো নাকি? ছেলে জাতির সম্মান আছেনা? তোরা মেয়েরা পিছিয়েই থাকবি।”
“এই শান্তা চুপ করে আছিস কেনো? কিছু বল? মেয়েরাই দেশের ভবিষ্যৎ বুঝলি? মেয়েরাই দেশের প্রধান মন্ত্রী, শিক্ষা মন্ত্রী, স্পিকার সব কিছু বুঝলি?”
আরিবার কথায় শান্তাও সায় দিলো। শাওন আরিবার দিকে তাকিয়ে বললো।
“ছেলেরাই উপরে। দেখছ না ছেলেরাই নবী হয়, ইমাম হয়। কোনো মেয়ে কিন্তু হয়না। সো ছেলেরাই সেরা প্রমানিত।”
শাওনের কথায় তূর্য হেসে দিয়ে বললো।
“এবার বল কারা উপরে?”
শান্তা চুপ মেরে আছে। আরিবা ভাব নিয়ে বললো।
“আরে মামা লাফালাফি কম করো। ওই নবী আর ইমামদের মেয়েরাই জন্ম দেয় বুঝলা? সো মেয়েরাই সেরা প্রমানিত!”
শান্তা আরিবার কথায় লাফিয়ে উঠলো। তূর্য আরিবার সামনে দু হাত জোর করে বললো।
“মাফ কর বইন! তোর সাথে কথায় পারবো না।”
“এইতো এতক্ষণে লাইনে আসছো মামু!”
ওর কথায় সবাই হেসে দিলো। আরিবা শান্তার দিকে তাকিয়ে বললো।
“জিসান ভাইয়ার বিয়ে আজ জানোছ?”
“হুম জানি শাহীন যেতে বলছে!”
তূর্য হেসে বললো- ” বাহ বাহ শাহীন ভাইয়া থেকে শাহীন?”
ওর কথায় সবাই আবার এক চোট হাসলো। আরিবা আবার বললো।
” তুই যাবি? আমাকে আরশ ভাইয়া যেতে বলছে।”
“হ্যা যাবো।”
শান্তার কথা শুনে শাওন বললো।
“হ্যাঁ হ্যাঁ, তোদেরেই দিন। যাহ বিয়ে খেতে।”
ওর কথায় তূর্যও তাল মিলালো। আরিবা ঘড়ির দিকপ তাকিয়ে তাড়াতাড়ি চলে গেলো। পরা সবাই নিজ নিজ গন্তব্যে চলে গেলো।
——————————-
বিকাল ৫টা। আরিবা, আরশ, শান্তা আর শাহীন মার্কেটে এসেছে জিসানের বিয়ের গিফট কিনতে। আরশ আরিবাকে পছন্দ করতে বলছে। আরিবা সুন্দর একটা নেকলেস পছন্দ করলো। শান্তা একটা হাতের বেসলেট পছন্দ করলো। ওরা সবাই মার্কেট থেকে বেড়িয়ে গেলো। গাড়িতে উঠতে যাবে তার আগেই আরশ বললো।
“আমি ভিতরে একটা জিনিস ফেলে আসছি। ওটা নিয়ে আসছি তোরা এখানেই দাড়া।”
আরশের কথা শুনে শাহীন বললো।
“আমিও আসি তোর সাথে? কি ফেলে আসছিছ?”
“আছে একটা জিনিস! তোর আসা লাগবেনা।”
আরশ শাহীনকে রেখে এক প্রকার জোর করে ওকে রেখেই ভিতরে চলে গেলো। শাহীন অবাক হয়ে বললো।
“ভিতরে ও কি রেখে আসছে?”
আরিবাও এটাই ভাবছে। সবাই এক জায়গায় দাড়িয়ে আছে। দূর থেকে কোনো এক কালো পোশাক পড়া লোক আরিবার দিকে গান তাক করে রেখেছে। এটা আরিবা জানতেও পারলো না আজ ওর সাথে কি ঘটতে চলেছে। লোকটি টিগারে চাপ দিলো। গুলিটা সোজা আরিবার বরাবর আসছে। আরিবার দিন শেষ হতে চললো সেটা আরিবা জানতে পারলো না। কি আছে ওর ভাগ্যে? বিয়ে খাওয়া হবে তো ওর?
💖
ইনশাআল্লাহ চলবে….