অজানা পর্ব-৪৬

0
813

#অজানা
#লেখনীতে_তাশরিফা_খান
পর্ব–৪৬

💖

আরিবা কিছু বুঝার আগেই কেউ ওকে জড়িয়ে ধরে দ্রুত পাশে সরে গেলো। এত দ্রুত সরেছে যে টাল সামলাতে না পেরে দুজনেই পাশে দেওয়ারের সাথে ধাক্কা খেলো। এর মাঝেই একটা গুলি এসে পাশের দেয়ালে লাগলো। আরিবা এবার বুঝতে পারছে লোকটি ওকে কেনো সরিয়ে দিয়েছে। শান্তা আর শাহীনও আরিবার মতো অবাক। লোকটি কালকের মতোই মুখোশ পড়া। চোখে কালো চশমা। আরিবা কিছু বলতে যাবে তার আগেই লোকটি ওকে ছেড়ে শপিংমলের ভিতরে চলে গেলো। আরিবা তাড়াতাড়ি লোকটি পিছু গেলো। আরিবাকে যেতে দেখে শান্তা আর শাহীন ওর পিছনে গেলো। আরিবা লোকটিকে ধাওয়া করছে চিল্লিয়ে বলছে।

“এই! কে আপনি? দাড়ান! আমায় বাঁচিয়ে লুকিয়ে যান কেনো? কে আপনি? স্টপ!”

লোকটি থামাবে তো দূরের কথা আরও জোরে দৌড়াতে লাগলো। আরিবাও নিজের সমস্ত শক্তি দিয়ে দৌড়াচ্ছে। অবশেষে আরিবা দেখলো লোকটি একটা স্টলে ঢুকছে। আরিবা শাহীন আর শান্তা দৌড়ে ওই স্টলে সামনে গেলো। ভিতরে ঢুকতে যাবে তার আগেই দেখলো নিদ্র স্টল থেকে বের হচ্ছে। ওরা সবাই অবাক হয়ে গেলো। তারমানে ওই লোকটি নিদ্র ছিলো? তাহলে লুকালো কেনো? নিদ্র ওদের দেখে অপ্রস্তুত হয়ে পড়লো। আমতা আমতা করে বললো।

“তোমরা এখানে? এখানে কি করছো বিউটি ডল?”

“আমরা তো জিসান ভাইয়ার বিয়ের জন্য গিফট কিনতে এসেছি। আপনি এখানে কি করছেন?”

আরিবা সন্দেহের দৃষ্টিতে তাকিয়ে কথাটা বললো। নিদ্র এবার মুচকি হেসে বললো।

“আমিও তো জিসানের জন্য গিফট কিনতেই এসেছি।”

আরিবা স্টলের দিকে তাকিয়ে দেখলো ওটা কেডস্ এর স্টল। নিদ্র কি বিয়েতে জুতা গিফট করবে? আরিবা ভ্রু কুচকে বললো।

“ভাইয়া আপনি কি বিয়েতে কেডস্ গিফট করবেন?”

“নাহ! কেনো?”

আরিবা গভীর সন্দেহে বললো।

“তাহলে আপনি কেডস্ এর স্টলে কি করছেন?”

শাহীন আর শান্তাও এবার ভ্রু কুচকে তাকালো। নিদ্র পিছনে একবার স্টলে দিকে তাকালো। অগত্যা আরিবার দিকে চোখ ফিরিয়ে তাকালো। জোর পূর্বক হেসে বললো।

“ওই আর কি এমনি দেখছিলাম। কেনো কোনো সমস্যা?”

“না না ভাইয়া!”

আরিবা আর কিছুই বললোনা। হঠাৎ শাহীনের ফোনে কল আসলো। ফোনটা রিসিভ করতেই ওপাস থেকে আরশ রাগি গলায় বললো।

“কই তোরা? বলছি না দাড়াতে? এত তাড়া তোদের? আমায় রেখেই চলে গেলি?”

“আরে ভাই থাম! আমরা যাইনি শপিংমলের ভিতরেই আছি।”

“শপিং মলের ভিতরে কি করছিস তোরা?”

শাহীন জোরে একটা শ্বাস ছেড়ে বললো।

“সে অনেক লম্বা কাহিনী। তোকে এসে বলছি।”

ফোনটা কেটেই শাহীন হাটা ধরলো। সবাই ওর পিছে পিছে চললো। আরিবা ভাবছে কে ওকে গুলি করলো? কার সাথে ওর শত্রুতা? কালকেও মারতে চাইলো আবার আজকেও মারতে চাইছে। কে সেই লোক? ও তার কি ক্ষতি করছে? আর কে ওকে বাঁচাচ্ছে? কাল আবার আজ? ওই লোকটি সুপার ম্যানের মতো সঠিক সময়ে কি করে চলে আসে? আজ মনে হলো লোকটা নিদ্র ভাইয়া। সে যদি হয় তবে মুখোশ পড়ে কেনো? কার ভয়ে নিজের পরিচয় লুকায়? যদি নিদ্র ভাইয়া না হয় তবে কে? এই অজানা লোক গুলো কারা? এসব ভাবতে ভাবতে আরিবা শপিংমলের বাইরে চলে এলো। আরশ ওদের দেখেই রাগি গলায় বললো।

“সবার এত কি কাজ পড়েছিল যে দল বেঁধে ভিতরে চলে গেলি? জানোস কত সময় লস হয়েছে?”

আরিবা বিরক্তি নিয়ে আরশের দিকে তাকালো। এদিকে ও মরতে মরতে বেঁচেছে আর এই লোক সময় খুঁজছে। আরিবা আরশের দিকে তাকিয়ে রাগি গলায় বললো।

“আপনার কি এমন মূল্যবান কাজ ছিলো যে সময় লস হইছে? এদিকে আমি মরে যাচ্ছি সে খবর আছে আপনার?”

আরিবার কথার কোনো গুরুত্বই দিলো না আরশ। উল্টো ডোন্ট কেয়ার ভাব নিয়ে বললো।

“কেনো রে? তুই কি বিষ খাইতে গিয়েছিলি নাকি ফাঁসি দিতে গিয়েছিলি? মরে যাচ্ছিলি তো বাঁচলি কি করে? কে বাঁচালো? নিদ্র হিরো নাকি?”

আরিবা কিছুই বললো না। অন্য দিকে মুখ ঘুরিয়ে চুপ করে দাঁড়িয়ে রইলো। ও জানে আরশ ওর কথার গুরুত্বই দিবেনা। শাহীন আরশকে সব খুলে বললো। সব শুনে নিদ্র অবাক হয়ে বললো।

“কি বলছে এসব বিউটি ডল? তোমায় কে মারতে চাইবে? তোমার সাথে তো কারো শত্রুতা থাকার কথা না।”

” সত্যি ভাইয়া আমিও এটাই বুঝতে পারছিনা ওকে কে মারতে চাইবে?”

শান্তার কথায় শাহীনও সায় দিলো। আরশ অগ্রাহ্য করে ঠোঁট বাঁকিয়ে বললো।

“বাহ এতো পুরো মুভি! সমস্যা নাই রিবা তোর লাইফে ভিলেনও এসেছে আবার হিরোও এসেছে। তুই তো পুরো হিরোইন হয়ে গেলি। কদিন পর পুরো ভাইরাল হয়ে যাবি।”

আরশের কথায় সবাই অবাক হলো। এত সিরিয়াস একটা বিষয় ও মজায় উড়িয়ে দিলো? আরিবা রেগে চুপচাপ গাড়িতে গিয়ে বসলো। সবাই গাড়িতে বসলো নিদ্র নিজের গাড়িতেই আলাদা গেলো।

আরিবা আজ কালোর উপর সাদা ওয়াস্টোন বসানো গাউন পরেছে। সাথে ম্যাচিং হিজাব পরেছে। আরশ ওর সাথে ম্যাচিং করে কালো শার্ট পরেছে। হাতাটা কনুই পর্যন্ত ফোল্ড করে রেখেছে। সিল্কি চুলগুলো এলোমেলোভাবে কপালে ছড়িয়ে আছে। আরশকে অমেক সুন্দর লাগছে। আরিবা ওর দিকে এক দৃষ্টিতে তো রইলো। হঠাৎ করে কিছুক্ষন আগের কথা মনে হতেই ওর মেজাজ খুব খারাপ হয়ে গেলো। লেনার কথা মনে হতেই মেজার আরও গরম হয়ে গেলো। আরশ ইদানিং ওর দিকে খেয়ালেই করেনা। শুধু লেনা লেনা করে। আজও হয়তো লেনা অনুষ্ঠানে আসবে। এই লেনাকে আজ মজা বোঝাবে ও।

শান্তা আজ নেভিব্লু শাড়ি পড়েছে এই শাড়িটা ওকে শাহীন গিফট করেছিলো। শাহীন ওর সাথে ম্যাচিং করে নেভিব্লু পাঞ্জাবী পরেছে। শাহীন গভীর চোখে শান্তাকে দেখছে। নেভিব্লু কালার শাড়িতে শান্তা কে আজ খুব সুন্দর লাগছে। আজ প্রথম শাড়িতে শান্তাকে ও দেখেছে। শাহীন খুব যত্ন করে শান্তার খোঁপায় গাজরা লাগিয়ে দিলো। শান্তা লজ্জায় লাল হয়ে মাথা নিচু করে ফেললো।

——————————–

একটা কমিউনিটি সেন্টারে জিসান আর তৃনার বিয়ে হচ্ছে। তৃনা জিসানের সাথে থাকতে থাকতে ওকে ভালো বেসে ফেলেছে। ওর সাথে থেকে বুঝতে পেরেছে ভালোবাসার মানে। এটাও বুঝতে পেরেছে আরশ শুধুই ওর ভালোলাগা ছিলো। ভালোবাসা কখনোই রূপ দেখে হয়না। অনেক সময় তার সাথে চলতে চলতে তাকে ভালোলেগে যায়। ভালোবাসার মানুষ যেমনেই হোকনা কেনো তাকে সব সময় সুন্দর লাগে।ভালোবাসার মানুষকে ঘিরে আমরা মুগ্ধ হই বলেই তাকে সুন্দর লাগে। এটাই জাগতিক নিয়ম।

আরিবারা অনুষ্ঠানের ভিতরে প্রবেশ করলো। ভিতরে যেতেই সব মেয়েরা আরশের দিকে তাকিয়ে আছে। আরিবার মেজাজ এমনিতেই খারাপ ছিলো এখন আরও খারাপ হয়ে গেছে। আরশ ভিতরে যেতেই লেনা ওর কাছে দৌড়ে এসেই আরশের গায় ঢলে পরলো। লেনা আরশের সাথে মিলিয়ে কালো শাড়ি পরেছে। খুবেই পাতলা শরীর দেখা যায়। আরিবা ঘৃনায় অন্যদিকে তাকালো। লেনা আরশের গায়ে ঢলে পরে ঢং করে বললো।

“আসতে এত দেরি হলো কেনো স্যার?”

“কিছু না এমনি রোডে জ্যাম ছিলো। আমার শপিং করতে গিয়ে দেরি হয়ে গেছে।”

“স্যার আমায় কেমন লাগছে? আপনিও কালো পড়েছেন আমিও কালো পড়েছি। দেখছেন স্যার আপনার আমার কতো মিল? আমি আপনার মনের কথা কেমনে বুঝলাম বলেন তো স্যার?”

“জানিনা”

“মনের টানে স্যার!”

লজ্জায় লতিয়ে কথাটা বললো লেনা। আরিবার শরীর জ্বলে যাচ্ছে। শব্দ করে বড় বড় পা ফেলে চলে গেলো। আরশ ওর যাওয়ার দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসলো। তৃনাকে আজ অনেক সুনদর লাগছে। লাল কাপরের উপর গোল্ডেন কালার সুতোর কাজ করা একটা লেহেঙ্গা পড়েছে। জিসান তৃনার সাথে ম্যাচিং করে গোল্ডেন কালার শেরোয়ানী পরেছে। আরশ আর শাহীন জিসানের কাছে গেলো। আরশ জিসানের কাছে গিয়েই বললো।

“শালা হারামী! সব কাজ তিনজন মিলে করেছি আর বিয়েটা তুই একা একা করে নিলি?”

শাহীন ধিরীম করে জিসানের পিঠে কিল দিয়ে বললো।

“শালা বেইমান। কথা দিয়ে কথা রাখলি না। বিয়ে করো ভালো কথা আমাদের বাসরের আগে বাসর করলে খবর আছে। আজ তোমার বাসর করা ছুটাবো।”

জিসান একটা ঢোক গিলে অসহায় ভাবে ওদের দিকে তাকালো। ওরা এমন ভাব করলো তাতে বোঝালো ওভাবে তাকিয়ে লাভ নেই আজ বাসর হবেনা। তৃনা তিন বন্ধুর দুষ্টামী দেখে মুচকি মুচকি হাসছে। জিসান ওদের দিকে তাকিয়ে বললো।

“তোরা যেভাবে শালা শালা করছিছ মনে হচ্ছে আমার ডজন খানেক বোন আছে।”

“প্রবলেম কোথায় মামা? না থাকলেও জন্ম নিবে।”

আরশের কথায় জিসান কেসে উঠলো শাহীন আরশ উচ্চ স্বরে হেসে উঠলো। জিসান আর নিদ্রও ওদের সাথে যুক্ত হলো। এভাবেই চলতে থাকলো ওদের হাসি মজা।

আরিবা সেই কখন থেকে একা একা হাঁটছে। কেউ নাই ওর কথা বলার সাথী। শান্তা শাহীনের সাথে ঘুরছে কথা বলছে। আরশ লেনার সাথে ব্যস্ত আরিবার খুব অস্বস্তি হচ্ছে। কোথাও গিয়ে একা থাকাটা খুবেই বিরক্তিকর। লেনার হাসাহাসি আর আরশের গায়ে ঢলে পড়া দেখেই ওর মেজাজ খারাপ হয়ে যাচ্ছে। আরিবার ইচ্ছে করছে লেনা দেনাকে ধোলাই দিতে। কিন্তু আরশ কাছে তাই পারছে না। মনে মনে দোয়া করছে যেনো আরশ সরে যায়। হঠাৎ শাহীন এসে আরশকে ডেকে নিলো। জিসানের বিয়ে পড়ানোর সময় হয়েছে তাই আরশ জিসানের কাছে গেলো। আরিবা এই সুযোগের আশাতেই ছিলো। আস্তে করে হেটে লেনার কাছে গেলো। লেনা হেটে আরশের দিকে যাচ্ছিলো। আরিবা লেনা ল্যাং মারলো। লেনা সবার মাঝে ধীরিম করে পরে৷ গেলো। লেনা পরতেই আরিবা ভীরের মাঝে চলে গেলো। সবাই লেবার দিকে তাকিয়ে আছে। অনেকে আবার হাসছেও। লেনা লজ্জা পেয়ে অনুষ্ঠান ছেড়েই চলে গেলো। আরশ আরিবার কাজ দেখে খুব হাসছে। ও তো এই জেলাস টাই দেখতে চেয়েছিলো। আজ আরশ সাকসেস।

জিসানের বিয়ে সম্পন্ন হলো। আরশ ওর কানে কানে একটা কথা বললো কথাটা শুনে জিসান অবাক হয়ে ওর দিকে তাকালো। মনে মনে ভাবলো এটা কি করে সম্ভব হবে?

————————–

একটা বডিগার্ড তার একজন বসকে ফোন করে বললো।

“আমাদের বিগ স্যার আজও মেয়েটাকে মারতে পারলোনা। সে গুলি করছিলো কিন্তু ওই অজানা লোকটা এসে আজও বাঁচিয়ে দিলো।”

“সমস্যা নাই কাল গাড়ি চাপা দিয়ে মেরে দিবি তুই। এটা বিগ স্যারকে জানানো লাগবেনা ওকে?”

“জি স্যার!”

কথাটা বলেই বডিগার্ড ফোনটা কেটে দিলো। ফোনের ওপাশের লোকটি ফোনটা রেখে সামনের লোককে বললো।

“কাল ওই মেয়ের নিস্তার নেই ও কাল মরবেই।”

কথাটা বলে লোকটি উচ্চ স্বরে হেসে উঠলো। তার কথায় সামনের লোকটিও হেসে দিলো।

কি হবে কাল? আরিবা কি সত্যি মারা যাবে?

💝

ইনশাআল্লাহ চলবে……

(বেশি লাইক কমেন্ট না হলে গল্প লিখতে ভালো লাগেনা।)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here